somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাতির প্রতি হুগো শ্যাভেজ

১০ ই জুলাই, ২০১১ রাত ৩:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


'আমি সময় হতে বেশি আশা করি। বেশি আশা করি বিগত ও ভবিষ্য হতে। উচ্চতর গতিতে' (স্যিমন দ্যা বলিভার) ।

কয়েক সপ্তাহ আগে আমার শারীরিক পরিস্থিতির অবনতির পর মানুষ যেভাবে আমার প্রতি মনোযোগী ছিলেন আজ এখানে দাঁড়িয়ে ভেনিজুয়েলা ও বিশ্বের সব মানুষের জন্য ঘোষণা পাঠ করার সময়ও তারা সমানভাবে মনযোগী।

গত ৫ থেকে ৭ জুন ব্রাজিল ও ইকুয়েডরে সফল সফরের পর কিউবায় আসি। সহযোগিতার নতুন চুক্তি কিউবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করেছে। আমি স্বীকার করছি, শুধু বা-হাঁটু পরীক্ষা করানোর পরিকল্পনা ছিল, ওই চোট এখন অনেকটাই কেটে গেছে।

পুরো জীবনে সেভাবে নিজেদের শরীরের যতœ নেয়া হয়ে উঠেনি। দার্শনিকরা যাকে বলেন মৌলিক ত্রুটি সেটিই সারা জীবন করে এসেছি। স্বাস্থ্যের ব্যাপারে অবহেলা করেছি, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ছিলাম ভীষণ অমনোযোগী। তবে যে বিপ্লবের জন্য ৩০ বছর ধরে কাজ করেছি তাতে এক মুহূর্তের জন্যই ছাড় দেইনি। নিশ্চিত, সংযত যে গুরুত্বদায়িত্ব আমার উপর ন্যস্ত ছিল তা পূরণে একাগ্র ছিলাম পুরোটা সময়।

৮ জুন সন্ধ্যায় হাভানায় আবারো দেখা হয় ফিদেল ক্যাস্ত্রোর সঙ্গে। স্থান কালের সীমানা অনেক আগেই অতিক্রম করেছেন তিনি। আমার বা-হাঁটুর কতটা পীড়া দিচ্ছিল বুঝতে মোটেও অসুবিধা হয়নি ফিদেলের। আমি হাটুর চোট থেকে নিস্তারের পথ খুঁজছিলাম। তিনি একজন চিকিৎসকের মতোই আমাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেসাবাদ করেন, আমিও রোগীর মত তার সব প্রশ্নের উত্তর দিই। সে রাতেই আমি দেখেছি কিউবা বিপ্লবের পর তাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার বিপুল অগ্রগতি। পরীক্ষণ ও রোগ নিরুপণের অসামান্য মিশ্রণে কিউবা চিকিৎসা খাতে অনেকদূর এগিয়ে গেছে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর শ্রোণী অঞ্চলে একটি টিউমারের ব্যাপারে সতর্ক করে দেন চিকিৎসকরা। ১১ জুলাই সকালে তারা জরুরি একটি অপারেশনের কথা বলেন, তবে সাধারণ সংক্রমণের ঝুঁকির ব্যাপারেও সতর্ক করে দেন। পরে এ ব্যাপারে ঘোষণা দেয়া হয়। এই ঘোষণা সংহতির একটি জলন্ত প্রমাণ যা আমাকে প্রতিটি সেকেন্ড স্পর্শ করে আছে।

অপারেশনের পর অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে নিবিড় চিকিৎসা শুরু হয়। এটি খুবই কার্যকরী এবং আমার লক্ষ্মণীয় উন্নতি হয়। সাধারণভাবে উন্নতি হলেও অন্য সেলগুলোর ব্যাপারে একধরনের সন্দেহ দানা বাধে এর আগে যেগুলো চিহ্নিত হয়নি।

এর পরপরই সাইটো-ক্যামিকেল, সাইটোলজিক্যাল, মাইক্রোলজিক্যাল এবং অন্যাটমির সংমিশ্রনে বিশেষ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়। সে সময় ধরা পড়ে শরীরের ওই অংশে টিউমার রয়েছে, এবং সেখান থেকে ক্যান্সার ছড়াতে পারে। যে কারণে দ্বিতীয় আরেকটি অপারেশন জরুরি হয়ে পড়ে। উদ্দেশ্য ছিল ওই টিউমার পুরোপুরি অপসারণ করা।

এটি একটি বড় অপারেশন ছিল, ঝুঁকি থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়। বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা নেয়ায় ধীরে ধীরে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে বিভিন্ন সেলের বিরুদ্ধে লড়াই এখনো চলছে।

অসুস্থতার মধ্যেও আমি বলিভারিয়ান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। সব সময় তারা বিভিন্ন বিষয় সম্পর্ক আমাকে অভিহিত করেছেন, আমিও তাদের সব জানিয়ে আসছি। ভাইস প্রেসিডেন্ট কমপানেরো এলিয়াস জাওয়া এবং সরকারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে।

ভেনিজুয়েলা ও বিশ্বের অগণিত দেশের মানুষ, সরকার ও রাজ্য প্রধানরা আমার ব্যাপারে যে উৎসাহ দেখিয়েছেন তাতে আমি কৃতজ্ঞ। তাদের এই ভালোবাসা, সংহতি নতুন যুদ্ধ জয়ে আমাকে অনুপ্রেরণা জুগাবে, শক্তি দেবে। ধন্যবাদ জানাই কিউবা, কিউবার জনগণ, ফিদেল ক্যাস্ত্রো ও চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত সব মানুষকে।

প্রথম মুহূর্ত থেকে আমি প্রচারিত প্রতিটি বুলেটিনের সত্যনিষ্ঠতার ব্যাপারে দায়বদ্ধ ছিলাম। বিশেষ দুটো কারণে, প্রথমটি চিকিৎসা-বিজ্ঞান ও দ্বিতীয়টি ভালোবাসা কারণে। প্রথমটির ব্যাপারে অর্থ্যাৎ চিকিৎসা বিজ্ঞানের ব্যাপারে আমরা ইতিমধ্যে কথা বলেছি। আর দ্বিতীয়টির ব্যাপারে বলার আগে আমি স্মরণ করছি বিক্ষুব্ধ ১৯৯২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির কথা। সে দিন ভেনিজুয়েলার সঙ্গে কথা বলার কোনো বিকল্প ছিল না। ২০০২ সালের সৌভাগ্যপূর্ণ ১১ এপ্রিলের কথাও আমার মনে পড়ছে। তুরিয়ামোর একটি নৌঘাঁটি থেকে আমার প্রিয় দেশবাসীর প্রতি বার্তা পাঠিয়েছিলাম। সেদিন আমি ছিলাম নিপতিত, কারারুদ্ধ এক প্রেসিডেন্ট। এটা ছিল ব্যথা জাগানো কোনো সঙ্গীতের মতো, বেরিয়ে আসছিলো যেন কোনো অতল গহ্বর থেকে।

এখন এই নতুন কঠিন সময়ে ফিদেল ক্যাস্ত্রো জানালেন ক্যান্সার সেলের কথা। আমি প্রভু, সিমন বলিভার, আমার মা এলেনা, দ্য স্পিরিট অব সাভানা, ফুরেন্টিনো করোনাডোকে বলেছি তোমাদের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি দিতে, অতল কোনো পথে নয়, অন্ধকার কোনো ক্যারাভ্যান থেকে নয়, নয় কোনো তারাহীন রাতে। আরেকটি গহ্বর থেকে উঠে এসে ঢালে দাঁড়িয়ে আমি তোমাদের সঙ্গে কথা বলছি। সূর্যোদয়ের সময় আমি তোমাদের সঙ্গে কথা বলবো, যা নিজেকে উদ্ভাসিত করে।

সবশেষে আমি তোমাদের বলতে চাই, আমার অতল গহ্বরে যাওয়ার সময়ে তোমরা আমার পাশে থেকো না। আমি তোমাদের নতুন কোনো সম্মেলনে যোগ দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। যেখানে আমাদের প্রিয় কবি অ্যালি প্রিমেরা অনন্তকাল ধরে গান গাইছেন। আমাদের যেতে দাও, যেতে দাও, আমাদের পিতা বলিভারের সঙ্গে, অগ্রণীদলে, চিম্বুরাজো আরোহন অব্যাহত রাখতে।”

ধন্যবাদ তোমাদের, আমার ফিরে আসা পর্যন্ত

হাভানা, ৩০ জুন

তথ্যসূত্র : গ্রানমা
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৩:১৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×