somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নয়নও তোমাকে পাইনা দেখিতে রয়েছ নয়নে নয়নে

১৪ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চারদিকে অন্ধকার নেমেছে। শহরটা কিছুক্ষণের মধ্যে নিঝুম হয়ে যাবে।সবাই যে যার মত করে কল্পবিলাসী হয়ে উঠবে। চাঁদটা হেসে সূর্যের অভাবটা বুঝিয়ে দিবে। অরিত্র জানালার ফাঁক দিয়ে দেয়াল ঘড়িটা দেখছে। ঠিক রাত দশটা বাজে। রোজ দশটায় অরিত্র তার শোয়ার ঘরের পাশের বারান্দায় বসে একটি সিগারেট জ্বালায়। আজ তায় করলো! চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে অরিত্র সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে রাস্তার দিকে তাকায়। রাস্তায় এখন মানুষ হাঁটছে।এখন মানুষের নীড়ে ফেরা হয়নি। কিছুটা দূরে কয়েকটি মেয়েকে দেখা যাচ্ছে আগন্তুক ছেলেদের সাথে কথা বলছে আর হাসছে। বোধহয় খদ্দের খুঁজছে। রাতের ঢাকাটা যতটানা নিষ্পাপ সুন্দর ততটাই নোংরা। পাশের বাড়ির বারান্দায় কানে হেডফোন লাগিয়ে একটি মেয়ে কথা বলছে। মেয়েটিকে প্রতিদিনি দেখা যায়। হয়ত মেয়েটি তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে। মেয়েটির দিকে তাকিয়ে থেকে অরিত্রের মনটা বিষাদে ভরে গেলো । সে সিগারেট টি আর জোরে জোরে ফুঁকতে শ্রেয়ার কথা ভাবে। শ্রেয়া অরিত্রের জীবনের একমাত্র ভাললাগা বা ভালোবাসা। শ্রেয়া বারান্দার মেয়েটার মত স্লিম, লাম্বা ৫.৬” হবে দেখতে শ্যামলা। চোখ দুটি জীবনান্দের বর্ণিত বনলাতা সেন এর মত। বলতে গেলে পরিপাটি সুন্দরী বাঙ্গালী ললনা। যার চোখের মায়ায় যেকোন পুরুষকে পড়তেই হবে। অরিত্রের ও ঠিক তেমনি হয়েছে। ভাললাগার বয়স থকে আজঅব্ধি সেই চোখ দুটির মায়ায় পড়ে আছে। অরিত্রের রুম থেকে গানের আওয়াজ শুনা যাচ্ছে।
“নয়নও তোমাকে পাইনা দেখিতে রয়েছ নয়নে নয়নে,
হৃদয়ও তোমারে পাইনা জানিতে হৃদয়ে রয়েছ গোপনে”
সবুজ গানটি শুনে প্রতি রাতে। সবুজ অরিত্রের পাশের রুমে থাকে। বিবিএ পড়ছে। একই বাসায় থাকে বলে প্রায় সময় অরিত্রের রুমে আশে গান শুনতে ও ছবি দেখতে। দুজনের সম্পর্কটাও ভালো। অরিত্র তাকে “ছোটা ভাই” বলে ডাকে।
গানটা শুনতে অরিত্রের কাছে খুব ভাল লাগছে। ঠিক যেন তার বিষাদ ভরা মনের কথা বলছে। সে সবুজকে ডেকে সিগারেটের প্যাকেট ও লাইটার দিতে বলল। সবুজ লাইটারও সিগারেটের প্যাকেট নিয়ে আসলো। অরিত্র আরেকটি সিগারেট ধরাতে ধরাতে সবুজকে বলল ,
অরিত্র : কেমন আছ ছোটা ভাই।
সবুজ : ভাল ।ভাই আপনি ?
অরিত্র : ক্লাস কর ঠিকমত? নাকি ফাঁকি বাজি কর?
সবুজ : না ভাই। কি যে বলেন। আপনার অফিস কেমন চলছে?
অরিত্র : ভালো ।
সবুজ : ভাই আপনি প্রতিদিন এখানটায় বসে বসে কি ভাবেন মধ্য রাত পর্যন্ত ?
অরিত্র : সময়ের স্তুপে পড়ে থাকা জীবনকে খুঁজে বেড়াই।
সবুজ : ভাই বিয়ে করছেন কবে? দাওয়াত খেতে পারিনা অনেক দিন!
অরিত্র : আমার আবার বিয়ে!! আমার বিয়ে খাওয়ার আশায় থাকলে তোমার জীবন সারছে।
সবুজ : ভাই আমি কিন্তু ভাবি কে দেখেছি? অনেক সুন্দর!! আপনার সাথে অনেক মানাবে।
অরিত্র : ভাবি!! কোথায় দেখেছ?
সবুজ : আপনার নেটবুকে ।ভাই আপনাদের পরিচয় কি ভাবে ?ভাবি প্রথম বলেছে না আপনি?
অরিত্র : যে দিন থেকে রুহ তৈরি হয়েছে দুজনের।[ একটু মেজাজগরম করে বলল ]
সবুজ : ভাই তাহলে আমি যাই!! কালকে ক্লাস সকালে, ঘুমতে হবে।

এই বলে সবুজ চলে গেছে। তখন রাত সাড়ে এগারটা। অরিত্র বসে বসে সবুজের করা শেষ প্রশ্নটা ভাবছে। আসলেইতো যে দিন থেকে রুহ তৈরি হয়েছে সে দিন থেকে বোধয় আমরা একজন একজনের। আমি শ্রেয়াকে ভালোবাসি কথাটা বলেছি হোক সেটা অনেক দেরিতে। কথাটা ভাবতে ভাবতে অরিত্রের মুখটা আর কালো হয়ে গেলো। অরিত্র তার মোবাইলে গান শুনতে শুরু করে।
আমি তোমারি বিরহে রহিব বিলীন ...
তোমাতে করিবো বাস
দীর্ঘ দিবসও দীর্ঘ রজনী দীর্ঘ বরষও মাস
যদি আর ও ফিরে নাহি আসো
যদি আরও কারে ভালোবাসো
তবে...তুমি যাহা চাও ...তাই যেনও পাও
আমি যত দুঃখ পাই ।।


শ্রেয়াতো কখন আমাকে বলেনি ভালোবাসি। তার মানে কি? রুহ তৈরি থেকে শুধুই আমি শ্রেয়ার!!এই ভাবতে ভাবতে দক্ষিণা বাতাস এসে হুহু করে অরিত্রের চোখে কাঁটা বিঁধে দেয়। অরিত্রের চোখ দিয়ে টলটল করে জল পড়তে থকে । অরিত্র দুহাত দিয়ে চোখ মুছে আর আকশের চাঁদ ও তারার মাঝে শ্রেয়াকে খুঁজে বেড়ায়। আর নিজেকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। কেন সে এতটা সময় নিয়েছে ভালবাসার কথা জানাতে? নাকি শ্রেয়া তাকে নিজের যোগ্য মনে করে নি ? নাকি শ্রেয়া সময় নিচ্ছে? নাকি শ্রেয়ার মজা লাগছে আমাকে এই অবস্থায় দেখে?
এই ভাবে কেটে যায় অরিত্রের হাজারো প্রশ্নবিদ্ধ শত রাত। অরিত্র এখন শ্রেয়ার জন্য পথ চেয়ে বসে আছে। অরিত্রের এই ভাবলেশহীনতায় ভালোবাসা।

শ্রেয়াও কি ঠিক সে সময়ে অরিত্রের কথা ভাবছে?
নাকি শ্রেয়াও তার প্রিয় কোন মানুষের জন্য অপেক্ষা করছে ঠিক অরিত্রের মত করে !!!


সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৩
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×