somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সফলদের স্বপ্নগাথা : জীবনটাকে নিতে হবে হালকাভাবে,জেরি ইয়াং ল

০৭ ই জুলাই, ২০১১ সকাল ৮:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


void(1); জেরি ইয়াং । ইয়াহু এর সহ প্রতিষ্ঠাতা । ২০০৯ সালে ইউনিভার্সিতি অব হাওয়াইয়ের সমাবর্তনে তিনি এই বক্তব্যটি দেন ।



প্রথমে ধন্যবাদ জানাই চ্যালেন্সরকে ।
সম্মানিত অতিথি,শিক্ষকেরা,গ্রাজুয়েটদের আলোহা ( শুভেচ্ছা ) !

অনেক কঠিন পড়াশোনা শেষ করে,অসংখ্যা পরীক্ষা দিয়ে মনে প্রানে পড়াশোনা করে,আজ যারা এ পর্যায়ে এসেছে,তাদের সামনে আমাকে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়েছে এর কারন শুধু এই নয় যে আমি এ এলাকার পুরনো বাসিন্দা । এর কারন হলো ইয়াহুর সাথে আমার সম্পৃক্ততা ।
১৯৯৪ সালে আমি যখন আমার ষ্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তড়িৎ প্রকৌশলের ওপর পিএইচডি গবেষনা করেছিলাম,তখনই আমি ইয়াহু শুরু করি । মানে,আমার আসলে পিএইচডি ডিগ্রি নেই । এরপরও আমি সম্মানসুচক ডক্টরেত ডিগ্রী পেতে যাচ্ছি আজ কোন গবেষনা ছাড়াই ! অসাধারণ !

আজ আমাকে ডাকা হয়েছে তোমাদের সঙ্গে কিছু সময় কাটানোর জন্যে । নিজের জীবনে বিশেষ কিছু অভিঞ্জতা তোমাদের সাথে ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্য । আ জ আমি তোমাদেরকে পাচটা বিশেষ পরামর্শ দেবো ।

প্রথমটি হলো:
পত্রিকার শিরোনাম দেখেই নিরাশ হবেনা ।
'বেকারত্বের সংখ্যা বেড়েই চলেছে', 'চাকরির বাজার কমে আসছে অর্থনৈতিক মন্দায় '। তোমরা হয়তো মনে করেছ এসব হেডলাইন হয়তো আজকের পত্রিকার । কিন্তু আসলে তা না, এগুলো সেই ১৯৯০ সালের কয়েকটি পত্রিকার হেডলাইন । সে সময় আমিও মনের মত চাকরি খুজে পাচ্ছিলাম না । কিন্তু আমি মার্ক টোয়েনের একটি কথা কখনো ভুলিনি । তিনি বলেছিলেন,মানুষ সুখী হওয়ার জন্য একেবারে শুন্য থেকে অজানার পথে পাড়ি দেয় । একটা বিষয় সবসময় মনে রাখবে তোমরা, তা হলো শুন্য থেকে অসীমের শুরু হয় । তোমরা বরং একদিক থেকে ভাগ্যবান যে এই অর্থনৈতিক মন্দার সময় পড়াশোনা শেষ করে চাকরির বাজারে ঢুকেছ । এ কারনেই তোমরা সুযোগ পাবে অর্থনীতি পুনর্নির্মাণে অংশ গ্রহন করার ।

দ্বিতীয় কথা:
জীবনে যা করবে তাই ফেরত পাবে । শুধু মেধা থাকলেই সাফল্য পাওয়া যায়না । সাফল্য পেতে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয় । ম্যালকম গ্ল্যাডওয়েল তার বইয়ে লিখেছেন,যে কোন বিষয়ে বিশেষঞ্জ হতে হলে ওই বিষয়ে অন্তত ১০ বছর বা ১০ হাজার ঘন্টা সময় দিতে হবে । একজন শিল্পী আর একজন গুনী শিল্পীর মধ্যে পার্থক্য করে দেয় কিন্তু এই পরিশ্রমই ।
আমি তাইওয়ান থেকে আমার মায়ের হাত ধরে ছোট বেলায় আমেরিকায় এসেছিলাম । ১০ বছর বয়সী আমি তখন শুধু শু মানে জুতা কথাটি ইংরেজীতে বলতে পারতাম । কিন্তু আমি মোটেই ভেঙ্গে পড়িনি । আমি অনেক পরিশ্রম করতাম,অনেক বেশী পড়াশোনা করতাম । হ্যা,এটা সত্যি, এর অনেক দিন পর ইয়াহু শুরু করার সময় ভাগ্যের সহায় অপশ্যই পেয়েছিলাম । কিন্তু এই ভাগ্য সহায় হয়েছিলো আমার প্রবল পরিশ্রমের কারনেই । সেই সঙ্গে আমার পরিপার ও বন্ধুদের উৎসাহতো ছিলই । এমনকি আমি যখন আমার মাকে বললাম,আমি আর পিএইচডি গবেষনা করবনা । ইন্টারনেটে বিঞ্জাপনের একটা কাজ শুরু করব । তখন তিনি আমার এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সন্দিহান থাকলেও কোন আপত্তি না করেও সমর্থন দেন । আর এত বছর পর আমার সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে কোন অভিযোগ করার সুযোগও এখন খুজে পান না আমার মা ।

javascript:void(1);

তৃতীয় কথা:
যত প্রতিকুলতাই আসুক,নিজের কাছে যা ভাল মনে হয়,তাই-ই করো ।
আমি আর ডেভিড ফ্লিও তখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের থিসিসের কাজ করছিলাম । আমাদের গবেষনার বিষয় ছিল কীভাবে কম্পিটার চিপস আরো শক্তিশালী করা যায় । সে সময়ই আমরা ওয়েব জগৎ সম্পর্কে জানতে পারি । আর সত্যি সত্যিই এর প্রেমে পড়ে যাই । আমরা আমাদের গবেষনার সব কাজ ফেলে রেখে ইয়াহু তৈরীতে লেগে পড়ি । আমরা কখনো ভাবিনি একদিন ইয়াহু এত বড় বিজনেস জায়ান্ট হয়ে যাবে । তখন আমাদের এটা ভেবে মজা লাগত যে কত মানুষ আমাদের ইয়াহু ব্যবহার করছে ! খুবই ভাল লাগত তখন । যদি দেখ,কোন কিছু তোমার ভবিষ্যতের জন্য ভাল হবে,অথচ এটা তোমার সাধ্যের বাহিরে হবে,তাহলে একটাই উপদেশ-সেই কাজটি অপশ্যই করো,প্রচুর পরিশ্রম করে হলেও ।

চতুর্থ কথা:
বাইরের জগৎ সম্পর্কে জানতে হবে । বিশ্ব ভ্রমন করে যেমন বাইরের জগৎ সম্পর্কে জানা যায় । তেমনি ইন্টারনেটে লগইন করেও জানা যায় । পৃথিবী দেখতে হবে,জানতে হবে মানুষের ধর্ম,সংস্কৃতি সম্পর্কে । সুতরাং বেরিয়ে পড়ো,পৃথিবীটাকে দেখো । পৃথিবীটাকে চেনো,পৃথিবীর মানুষকে জানো । মনিষী অগাষ্টিন বলেছেন, "পৃথিবী হলো বিশাল একটা বই,আর যারা পৃথিবী ঘুরে দেখেনি তারা এই বইয়ের শুধু একটা পাতা পড়েছে ।"

পাচঁ নাম্বার কথা :
জানার কোন শেষ নাই-তাই সব কিছু সম্পর্কেই জানতে হবে । যত বেশী জানবে জীবনের সফলতার পথে তত এগিয়ে যাবে । আমি কলেজের পড়ার সময় মুঠোফোন ছিলনা,ইন্টারনেট ছিলনা । ভাবতেও অবাক লাগে, তখন কিভাবে দিন পার করতাম,পড়াশোনা করতাম !
আমার দুটো ছোট মেয়ে আছে । আকাশ কেন নীল,সেটা জানার জন্য ওরা আর আমাকে জিঞ্জেস করেনা । কারন এখন ওদের হাতে আছে ইন্টারনেট । দুনিয়া এখন ওদের নখদর্পনে । কোন কিছু না জানার অজুহাত ওরা এখন আর দিতে পারবেনা ।
গুপ্তধনের ভান্ডার তোমাদের সামনে !
তথ্যপ্রযুক্তি পাল্টে দিচ্ছে দুনিয়াকে ।
তোমাদের হাতের কাছে কী আছে,সেটা তোমরা বুঝতেই পারছ ।
তোমরা জানার আগ্রহ কখনো হারাবেনা । জানতেই থাকবে,শিখতেই থাকবে ।
শেষ এবং সবচেয়ে জরুরী কথা : জীবনটাকে হালকা ভাবে নাও ।
তোমরা কি জানো, "ইয়াহু" নামটা আমরা কোথা থেকে পেয়েছি ?
যদি ডিকশনারীতে খুজে দেখ,তাহলে এর অর্থ পাবে 'নেতিবাচক অন্য কিছু ।'
আমি আর ডেভিড ফ্লিও তো আমাদের থিসিসের কাজ ছেড়ে এরকম কিছুই করছিলাম ইয়াহু তৈরীর সময় ।
তাই আমরা এটার নাম দিয়েছিলাম 'ইয়াহু !' এমনকি এখনো আমাদের ইয়াহু অফিসের সাজ সজ্জা দেখলে যে কেউ অবাক হবে । একেবারে হালকা চিন্তা ভাবনা নিয়ে সাজানো আমাদের জীবন ।
আমি মনে করি,জীবনটাকে যদি হালকা ভাবে নিতে না পারো,তবে তুমি জীবনটাকে নষ্ট করছ ।
আজ থেকে তোমাদের নতুন জীবনের পথে যাত্রা শুরু হচ্ছে । সামনের জীবনটা অনেক সুন্দর । কিন্তু তোমাদের মনে নিশ্চয় অনেক জিঞ্জাসা আর সংশয় রয়েছে । জীবনটা কী, সেটা জানার চেষ্টা রয়েছে । তাহলে তোমাদের বিখ্যাত মনীষী রালফ রালফ ওয়ালডো এমারসনের একটা কথা শোনাই,"জীবন হলো অনেকগুলো শিক্ষনীয় বিষয় সমন্ময়, যে বিষয়গুলো জানতে পুরো জীবনটা পার করতে হবে "।
তাহলে আর ভাবনা কিসের !
জীবনতো অনেক বড় ! তোমার দায়িত্ব হলো এই জীবনের অচেনা-অজানা পথে হেঁটে যাওয়া । ভাবনা মুক্ত থাক,শিখতে থাক,জানতে থাক । তবে জীবনের এ যাত্রায় তোমার কাছের মানুষদের কথা কখনো ভুলে যেও না । কারন তারা জানে তুমি কে,তুমি কী করতে পার । তুমি তাদের কাছে অনেক কিছু । জীবনের পথে যাদের পাশে পেয়েছ তাদের কখনো ভুলে যেওনা ।
এবার তাহলে বিদায় জানাই গ্র্যাজুয়েটদের । ভালো থাকো । মাহালো ! (ধন্যবাদ )


সুত্র : ইন্টারনেট । ইংরেজী ধেকে অনুবাদ । ফয়সাল হাসান

লেখাটি প্রথম আলো থেকে বিনা অননুমোদিতে নেয়া । যা ০৬/০৭/২০১১ তারিখে "স্বপ্ন নিয়ে" পাতায় প্রকাশিত হয়েছিলো । ।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১১ সকাল ৮:২৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×