somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অবরুদ্ধ ১৯ ঘন্টার ভ্রমন

০৬ ই জুলাই, ২০১১ রাত ৮:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৮ অক্টোবর, ২০০৬।
দিনটি অনেকেরই মনে থাকার কথা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এই দিনে ডাকা অবরোধে ঢাকাতে মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটে এবং দেশ জুড়ে অরাজকতা শুরু হয়!
আজকে হরতালের দিনে আমারও ১৯ ঘন্টার একটি ভ্রমণ কাহিনির কথা মনে পড়ে গেল! তখন সবে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় সেমিস্টার এ পড়ি! ঈদ এর পর ক্লাস শুরু হবার কথা ছিল ২৯ তারিখে! কোনো ক্লাস কামাই দিয়া যাবে না। তাই নিজের বাড়ি কুষ্টিয়া থেকে ঢাকা আসার জন্য বাস এর টিকেট কাটা ছিল ২৮ তারিখের। অবরোধের কথা জানার পর সেই দিনের টিকেট বাতিল করে ২৭ তারিখ দিবাগত রাতে ট্রেনে ঢাকায় আসার সিদ্ধান্ত নেই। হিসাব মতে ট্রেনটির পৌছানোর কথা ২৮ তারিখ সকাল ৮টার ভিতর! তাহলেই আমরা সুবিধা মতো যার যার বাড়ি পৌছাতে পারব! এই ভেবে আমরা পোড়াদহ স্টেশনে রাত দেড়টাই পৌছে যাই আমরা পরিচিত মোট ৬ জন! স্বভাবতই আমরা কোনো টিকেট পাইনি এবং সেই সাথে ট্রেন পৌছাল ১ ঘন্টা দেড়িতে! আমাদের মতো চিন্তা করে অনেকেই এই ট্রেনটিকেই বেছে নিয়েছেন ঢাকাই যাওয়ার একমাত্র পথ হিসেবে। তাই অনেক কস্ট করে কোনো রকমে উঠে পড়লাম এবং আমাদের জায়গা হলো ফাস্ট ক্লাস কেবিনের সামনের করিডরে! কোনো রকমে আমি সহ কয় এক জন পা ভাঁজ করে বসে পড়লাম আর বাকি সবাই দাঁড়িয়ে হেটে সময় পার করতে ব্যস্ত থাকল! শুরু হলো আমাদের ঢাকার পথে যাত্রা!

এরি মাঝে আমাদের মশা বন্ধু আমাদের সাথে খেলাই মেতে উঠলেন আর আমরাও তেক্ত বিরক্ত হতে আরম্ভ করলাম! এভাবেই ট্রেন এগিয়ে চলছিল এক স্টেশন থেকে আর এক স্টেশনে। তবে বিপত্তি দেখা দিল ভোর হবার পর থেকেই! কারণ এতক্ষনেও আমরা ঢাকার দিকে অরধেক পথ ও পাড়ি দিতে পারিনি। তাই ঢাকাতে আমরা পৌছাবো কখন সেই নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলাম। সেই সাথে শুরু হল বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রিদের ট্রেনে উঠার জন্য যুদ্ধ এবং ট্রেন এর যাত্রা বিরতি! ট্রেনে উঠার মতো অবশিস্ট জায়গা ছিল না তবুও মানুষ যে যেভাবে পারে ছাদে হোক আর ভিতরে হোক ঠেলাঠেলি করে উঠার চেস্টা করতে লাগল। এজন্য ট্রেনের ভিতরের মানুষ জন ট্রেনের জানালা দরজা বন্ধ করে দিতে লাগল! এমতাবস্থাই একটি স্টেশনে সকাল ৯টার দিকে ট্রেন অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। তখন আমাদের বগিতে কয় এক জন মানুষ কোনভাবে জানালা খুলে ভিতরে আসতে সক্ষম হয় আমাদের বাধা দিয়া সত্তেও। তখন আমাদের বগিতে ২ জন সহযাত্রি তাদের চর থাপ্পর দিয়ে আবার ট্রেন থেকে বের করে দেই জানলা দিয়েই এবং জানলা গুলা আবার আটকিয়ে দিয়া হই! কিন্তু বিধিবাম! ট্রেন এরও যাত্রা বিরতি সেখানে শেষ হয় না সহজে এবং সেই মানুষ গুলা তাদের সাথে আরও কিছু স্থানীয় মানুষ নিয়ে লাঠি শাবল দিয়ে ট্রেনের জানালা ভাঙতে আরম্ভ করে! ইতোমধ্যে আমরা আমাদের সেই ২ জন সহযাত্রি কে লুকিয়ে ফেলি। তখন স্থানীয় মানুষগুলো জানালা ভেঙ্গে ঢুকে তাদের খুজতে আরম্ভ করে এবং আমাদেরও মাইর দিয়ার হুমকি দেই! শেষ পর্যন্ত কোনমতে তাদের বুঝিয়ে ট্রেন থেকে নামিয়ে দিয়া হয়। এরপর আবার ট্রেনটি তার নিজস্ব ধীর গতিতে চলতে আরম্ভ করে। এক একটি স্টেশনে ট্রেনটি আধাঘন্টার বেশি যাত্রাবিরতি দিয়ে এবং বিভিন্ন বাধা পাড় করে চলতে থাকে আর যাত্রিরা ক্ষুধাই ক্লান্তিতে সময় গুনতে থাকে। ইতিমধ্যে আমরা ঢাকা থেকে মোবাইল ফোনে জানতে পারি ঢাকার সেই খুন খারাবির কথা। ১২টা নাগাদ আমরা টাঙ্গাইলের একটি স্টেশনে এসে পৌছায়। সেখানে স্থানীয় অবরোধ পালনকারিরা ট্রেনটি যেতে বাধা দেই এবং আটকিয়ে রাখে! ইতিমধ্যে আর একটি ট্রেন এসে সেখানে হাজির হয়। অবশেষে যাত্রীদের অনেক অনুনয় বিনয়ের পর ২ ঘন্টা পরে ট্রেন দুটিকে যেতে অনুমতি দিয়া হয়। তখন আমাদের ট্রেনটির সাথে অপর ট্রেন এর বগি গুলো লাগিয়ে এক সঙ্গে ২টি ট্রেন এর যাত্রি নিয়ে আবার ট্রেনটি রওনা দেয়। রওনা দিয়ার সময় মানুশের উচ্ছাস ছিল দেখার মতো। মনে হয় যেন সবাই কিছু বিজয় করে নিয়ে বাড়ি ফিরছে। এরপর একটি স্টেশনে থামলে আমরা নিজেদের খাবারের সন্ধানে গেলে পানি ছাড়া আর কিছু পাওয়া সম্ভব হয় না! তখন ট্রেনটির অবস্থা ছিল সেইরকম। প্রায় ২০ হাজার যাত্রী ছিল এই ট্রেনে। অবশেষে আমরা বিকাল ৫টার দিকে পৌছায় জয়দেবপুর স্টেশনে। কিন্তু এরপর ট্রেনটির সিকিউরিটির কারণ দেখিয়ে ট্রেন মাস্টার আর যেতে অপারগতা প্রকাশ করে। এরপর বাকি পথটুকু যাওয়ার ইতিহাস আরও করুণ। সেখানেই স্থানীয় হোটেলে আমরা খাবারের কাজটুকু সেরে নেই। শরিরে একটু বল পেলে এরপর আমরা ঢাকার পথে রওনা দেই কখনো পায়ে হেটে কখনো ভ্যান কখনো রিক্সাতে। অবশেষে আমরা রাত ৯টার দিকে অনেক কস্টে নিকুঞ্জে আমার এক কাজিনের বাসাই পৌছায়। এরপর ক্লান্তিতে তখনি আমি ঘুমিয়ে পরি এবং সকাল বেলা, ঘুম থেকে উঠে বনানিতে আমার বিশ্ববিদ্যালয় এ যেয়ে জানতে পারি যে চার দিনের জন্য সব ক্লাস বাতিল করা হয়েছে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এটি আমার প্রথম ব্লগ লেখা। সুতরাং ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। B-)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জুলাই, ২০১১ রাত ৮:১৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×