মেয়েটির বুক দুরুদুরু কাঁপছে।ঢাকা থেকে তাকে দেখতে এসেছে ছেলেপক্ষ। মফস্বল শহরের নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে সে। অনার্স পাস করে মাস্টার্স এ ভর্তি হবে ভাবছে। ছেলের সাথে ফোনে কথা বলেছে। বাবা খুশী, পাত্রপক্ষ তাকে পছন্দ করেছে।ছেলে ব্যবসায়ী, ঢাকায় বাড়ী, রেন্ট এ কারের ব্যবসা ও আছে। ও মনের সুখে সংসারের স্বপ্ন দেখে,ঢাকায় গিয়ে কাছের কোনো কলেজে মাস্টার্স এ ভর্তি হবার স্বপ্ন দেখে।
বারান্দার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে মেয়েটি।ওর বিয়ে হল এক মাস ও হয়নি। না, কলেজে ভর্তি হয়নি ও । স্বামী বিয়ের প্রথম রাতেই বলল কলেজে ভর্তি করাবো বলেছিলাম কিন্তু ভেবে দেখলাম পড়াশুনা করে কি করবে যা করেছ তাই যথেষ্ট। তোমাকে তো আর চাকরি করতে হবে না। রান্নাবান্না করবা,ঘরের কাজ করবা,বাচ্চা পালবা এইতো মেয়েদের কাজ। আর আমার ও বয়স হয়েছে, মা আমার বাচ্চাকাচ্চার মুখ দেখতে চায়। । আল্লাহর রহমতে ও অন্তঃসত্তা। ও বাবার বাসায় কখনও রান্না করেনি তাই রান্না করতে প্রথম দিকে বেগ পেতে হয়েছে। শ্বাশুড়ির অনেক কথাও শুনতে হয়েছে সেলাই বা হাতের কাজ জানে না বলে।সেই যে বিয়ের পর এসেছে আর বাবার বাড়ি যায়নি। সারাদিনের কাজ শেষে বিকেল বেলাটা একা একটু সময় পায়, তখন এই বারান্দায় দাঁড়ায়। ব্যবসায়ী স্বামী আসেন রাত ১১ টা বা ১২টার পরে। ছুটির দিনে একটু কাছে পায় তাকে। বিয়ের পর নতুন বউ বলে বাসা থেকে বের হতে পারেনি কোথাও, এরপর পোয়াতির বাইরে যাওয়া মানা। বাড়ির ছাদে যাওয়া নিষেধ। শ্বাশুড়ি প্রায়ই তাকে বিভিন্ন কারনে কথা শুনায়। এত লেখপড়া করে কি লাভ হল বা বাপ মেয়েজামাই কে বিয়েতে কিছু দিতে পারল না অথচ মেয়েকে পড়ালেখা করায় কি লাভ, কি মেয়ে ঘরের কাজকাম জানে না ইত্যাদি, প্রথমদিকে ও অবাক হলেও এখন আর হয়না। বুঝতে পারে এটা শ্বাশুড়ির স্বভাব।দরকার ছাড়া তাই উনার সামনে যেতে,ও ভয় পায়। বাবা ফোন করলে ওর স্বামীর এত ব্যস্ততার কথা বলে যে বাবা তাকে বাড়ি যেতে বলে না।ও ভাল আছে। নতুন জীবনের সাথে অভ্যস্থ হয়ে গেছে সে।