বৃষ্টি ও ঘাসফড়িং
আমার নাম বৃষ্টি।আমার জন্মের সময় নাকি অঝর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছিলো।তাই বাবা শখ করে এই নাম রেখেছিলেন।যখন হামাগুড়ি দিতে শিখেছি তখন নাকি বৃষ্টি হলেই হামাগুড়ি দিয়ে বারান্দায় চলে যেতাম।জমা জলে হাত,পা ছড়িয়ে বসে থাকতাম।মা টের পেলেই ছুট্টে গিয়ে কোলে তুলে নিতেন।তারপর যখন ফ্রক পড়ে সারা বাড়ি দৌড়ে বেড়াতাম,নির্ঘুম সুনসান দুপুরে খেলনাবাটি খেলতাম একা একা, তখনও একফালি মেঘ আমাকে চুপি চুপি ডেকে যেত।স্কুল থেকে ফিরে তিথি,মিতুলের সাথে এক্কা-দোক্কা খেলতে খেলতে হঠাৎ চোখ চলে যেত ঈশানীতে...সব ভুলে আকাশের দিকে চেয়ে থাকতাম। মায়ের বকুনির ভয়ে বৃষ্টি নামবার আগেই ছুট্টে পালাতাম উঠোনের দক্ষিণ দিকের ঝাঁকড়া জামরুল গাছটার তলে।গাছটার তলটা ভিজতোনা অনেক্ষণ।তারপর একসময় ডালপালার ফাঁক দিয়ে চুঁইয়ে পড়ত মোটা মোটা জলের ধারা।আমি ভিজে যেতাম।অতঃপর মায়ের সেই বকুনি।
এরপর শরীর জুড়েও বৃষ্টি নামল।প্রতিটি পরোতে পরোতে জমে থাকা কত কালো মেঘ। আর কি তীব্র কৌতূহল।আমি ভিজতে লাগলাম।ভিজতে লাগলাম রবীন্দ্রনাথের বর্ষার গানগুলোর সুরের ধারায়।কত রূপে,কত মাধুর্যে তখন আমার পৃথিবীতে শুধুই বৃষ্টি।আকাশ-বাতাস ছাপিয়ে, কদম কেয়ার গন্ধে মাতানো থৈ থৈ করা বৃষ্টি।
আমি তখন অষ্টাদ্বশী,তণ্বী মেয়ে।আমি তখন দুই বিণুনী,লাল পাড়-সাদা শাড়ি।মনের আকাশে যখন এমনই কত সুপ্ত মেঘ ক্রমশ ঘনীভূত হয়ে একটা অজানা জগতের উপর আচ্ছাদন করে রেখেছিলো,তখনই একটা ঝাঁকড়া চুলো ছেলে হঠাৎ একদিন রিক্সা থামিয়ে একটা সাদা কাগজের টুকরো ভাঁজ করে আমার হাতে দিয়ে বলল,-“পড়ে দেখবে।“
আমার সেদিন হাত-পা কাঁপছিলো।হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়েছিলো বহুগুণ।বাড়ি ফিরে এসে বিছানার উপর শরীরটা ছুঁড়ে দিয়েছিলাম।ভিজে গিয়েছিলো বালিশ।সেদিন আকাশে কোন মেঘ ছিলোনা।তবুওকি কোথাও বৃষ্টি হচ্ছিলো?
তখন আমি একটা সাদা পৃষ্ঠা ছিলাম,সব কিছুই যার বুকে দাগ কেটে যেত খুব সহজেই।সে-ও আলতো ছোঁয়ায় দাগ কেটেছিলো।পেলভ তার স্পর্শ।স্কুল ছাড়িয়ে,বড় মাঠ ছাড়িয়ে শীর্ণ নদীটার ওপর যে ছোট সাঁকোটা, সেখানে রোজ সে দাঁড়িয়ে থাকতো।আমার বড় ভয় করতো।তবুও নিজেকে কেন জানি আটকে রাখতে পারতাম না।ওর উপর খুব নির্ভর করতাম।নিজের প্রতিটি শ্বাস-প্রশ্বাসের থেকেও ওকে বেশি বিশ্বাস করতাম।ওর কোমল ঘেরাটোপের নিরাপত্তায় নিজেকে সঁপে দিতাম নির্দ্বিধায়।প্রতিদিন সূর্্য উঠতো।আবার গোধূলীর আলোয় রাঙিয়ে কখন যেন হারিয়েও যেতো।আমার চোখে তখন আরও ব্যাপৃত এই পৃথিবী।আরও রঙীণ পশ্চিমের আকাশ।তারই মাঝে সে আমাকে উপহার দিয়েছিলো কবিতাময় সন্ধ্যা। প্রত্যেকটা মুহূর্ত আরও ছন্দময়।আমাকে সে শিখিয়েছিলো কিভাবে শীতের রুক্ষতায় পাতা ঝরা বন উদ্গ্রীব হয়ে বসে থাকে একবুক আশা নিয়ে বসন্তের জন্য।কিভাবে জোনাকিরা ঘাপটি মেরে থাকা অন্ধকারের গুহাগুলোয় সাঁঝবাতি জ্বেলে দেয়।কেমন করে ঐ দূরের দিগন্তরেখায় আকাশ আর মাটি ছোঁয়াছুঁয়ি খেলে।
এভাবেই কোন একদিন আমাদের মাথার ওপর মেঘ করে আসে।ধীরে ধীরে ধূসর ছায়ার আবডালে আমাদের ঋজু শরীর অনেক্ষণ।চেয়ে ছিলাম নির্বাক আদিগন্ত কৃষ্ণকায় চোখের দিকে।সেদিনও আমি ঝরেছিলাম-একটানা।সে আমায় বলেছিলো-
“মেঘবালিকা-তোমার জন্যে সন্ধ্যা নামায় দিনের আকাশ,
তোমার জন্যে পড়ছে গলে এক পৃথিবী,
তোমার জন্যে উঠছে জেগে বিদীর্ণ ঘাস।।“
তারপর এক আকাশ মেঘ নিয়ে সত্যিই পৃথিবীটা গলে পড়লো।আমাদের ঘিরে শুধুই ঝাঁপসা জলের ধারা।এই পৃথিবী শুধুই আমাদের।শুধুই মেঘবালিকার।শুধুই বৃষ্টিকণার।
হা হা হা।আজ বড্ড হাসি পায়।হাসি পায় সেই নাটুকে দিনগুলোর কথা ভাবলে।হাসি পায় নিজের ছায়াকে দেখলে।মেঘ জড়ো হতে দেখলে।বৃষ্টি দেখলে।বড্ড ঘেন্না হয়।
তিনটি বছরে আরও কতশতবার আকাশ ঢেকেছে মেঘে।বৃষ্টিকণা জমে থেকে ঝরে গেছে জারুলের পাতায়।ছোট নদীটাও আর শীর্ণ থাকেনি।উদ্দাম প্রবাহিনী হয়ে ছুটে চলেছে দুর্ণিবার বেগে-সামনের সবকিছু ভেঙেচুড়ে।নড়বরে সাঁকোটাও গেল বছর ভেঙেছে।ওখানে এখন মানুষ সমান উলুখাগড়ার বন।পাল্টে গ্যাছে একলহমায় সবকিছু-ঠিক তারই মতন।
চিঠিটা অনেক্ষণ পড়েছিলো বিছানার ওপর।তাতে খুব পরিচিত হাতের লেখায় একজন অপরিচিতের হাস্যকর জবানবন্দী।সে খুব সুখে আছে শহরের কোন এক শ্রেয়সী’কে বিয়ে করে।আমাকেও সুখী হবার কথা বলে তার কি আকুল অনুনয়!খুব হেসেছিলাম সেদিন।বহুদিন পর প্রাণ খুলে হেসেছিলাম।চিঠিটা অনেক্ষণ পড়েছিলো বিছানায়।তারপর একটা দমকা হাওয়ায় উড়ে গিয়ে জানালার গ্রীলে টিকটিকির মুখে পড়া ফড়িং-এর মত অনেক্ষণ ছটফট করেছিলো।তারপর উড়ে গিয়ে মিশেছিলো গহীন অন্ধকারে।
আমি কারও মেঘবালিকা নই।আমি নই কোন রোদেলা দিন।আমি বৃষ্টি। ঝরে পড়ার জন্যই যার জন্ম।ঠান্ডা হাওয়া বইছে।দূরে কোথাও বৃষ্টি হচ্ছে।আমিও ঝরে পড়ব।পড়তেই থাকব... পড়তেই থাকব।
আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন
মসজিদ না কী মার্কেট!
চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷
আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন
আকুতি
দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন
ক- এর নুডুলস
অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।
ক
একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু
২-১ : আলিফ-লাম-মীম
আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন