somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধাপরাধী বাবার পরিবেশবাদী কন্যা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

০৫ ই জুলাই, ২০১১ সকাল ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাবা যুদ্ধাপরাধী আত্মগোপনে থাকা প্রয়াত সাবেক প্রতিমন্ত্রী রাজাকার সৈয়দ মহিবুল হাসান। কন্যা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশবাদী হয়েও বাবার '৭১-এর অন্ধকার জীবনের ছায়ায় হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণের ইতিহাস আড়াল করেই ঢাকায় ওঠাবসা করেন সুশীলদের সঙ্গে। ওপরতলার মানুষের সঙ্গেই চলেন-ফেরেন। টিভি টকশোয় বড় বড় কথা বলেন পরিবেশ রক্ষার নামে। সেমিনার, গোলটেবিলে আকর্ষণীয় এই বেলার সুন্দরী নেত্রী মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেন। বলেন না শুধু হবিগঞ্জের চুনারুঘাট-বাহুবলের কুখ্যাত রাজাকার তার বাবা সৈয়দ মহিবুল হাসানের কলঙ্কিত জীবনের কথা। একাত্তরে নিজ এলাকার ত্রাস, পরিবেশ দূষণকারী মহিবুল হাসান পাক হানাদার বাহিনীর দোসর হওয়ায় স্বাধীনতার পর আত্মগোপনে চলে যান। যুদ্ধাপরাধের মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। '৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে হত্যার মাধ্যমে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলে তিনি বের হন। সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের সঙ্গে যোগ দিয়ে বিএনপির এমপি-মন্ত্রী হন। ১৯৮৬ সালে এরশাদের জাপায় যোগ দিয়ে আবার '৯০-এর পতনে আত্মগোপনে চলে যান। ভাতিজা সৈয়দ লিয়াকত হাসান এখন চুনারুঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি। আর সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এলাকায় মাঝেমধ্যে গোপনে যাওয়া-আসা করেন। ঢাকায় প্রথম আলো সিন্ডিকেট থেকে তার যাবতীয় কর্মকাণ্ড চালান। সম্প্রতি এলাকায় সরেজমিন ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া যায়।

অভিযোগ রয়েছে, আদর্শগত কারণে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সবার অগোচরে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন যুদ্ধাপরাধীদের পরিবারের সঙ্গেই। পরিবেশবাদী আইনজীবী হলেও গ্রেফতার হওয়াদের আইনি সহযোগিতা করতে তাদের উপদেষ্টা আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন রিজওয়ানা।

নরপতি গ্রামের কয়েকজন জানান, রিজওয়ানা তার আপন চাচাত ভাই চুনারুঘাটের ৬ নম্বর ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ লিয়াকত হাসানের মাধ্যমে নিজ এলাকায় তার বাবাসহ নিজের আদর্শ বাস্তবায়ন করতে পরোক্ষ মদদ দিয়ে যাচ্ছেন। পরিবারের সমর্থন নিয়েই লিয়াকত একের পর এক অপরাধ করে যাচ্ছেন নির্দ্বিধায়। শাহ্জানুর রহমান ওরফে ডালিম নামের এক ভাগ্নেকে বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম আসামি 'মেজর ডালিম' নামেই গর্বের সঙ্গে ডাকেন রিজওয়ানা।

সৈয়দ মহিবুল হাসান গংয়ের দ্বারা নির্যাতিত পরিবারের অনেকেই রিজওয়ানা ও তার চাচাত ভাই লিয়াকতের ভয়ে কথা বলতে চাননি। আবার অনেকে কথা বললেও রাজি হননি নিজেদের নাম প্রকাশ করতে।

জানা গেছে, '৬৪-এর তৎকালীন প্রাদেশিক নির্বাচনে ফুল প্রতীক নিয়ে মুসলিম লীগের হয়ে পার্লামেন্ট মেম্বার নির্বাচিত হন চুনারুঘাট-বাহুবল আসনে। এরপরই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন মহিবুল হাসান। স্বাধীনতাপন্থিদের ওপর নীরবে স্টিমরোলার চালাতে শুরু করেন। একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় হবিগঞ্জের শান্তি কমিটির আহ্বায়ক হন মহিবুল হাসান। তার দেওয়া নির্দেশ অনুযায়ী হত্যা, লুণ্ঠন, অগি্নসংযোগ, ধর্ষণসহ নানা ধরনের নারকীয় তাণ্ডব চালান হবিগঞ্জ শান্তি কমিটির সেকেন্ড ইন কমান্ড সৈয়দ কায়সার আহমেদ।

চুনারুঘাটের ১ নম্বর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর খান বলেন, স্থানীয় রাজাকারদের তথ্যানুযায়ী সৈয়দ মহিবুল হাসান ও সৈয়দ কায়সারের নির্দেশে পাকবাহিনী আমার ভাই শহীদ আবদুল কুদ্দুস খান ওরফে অনু মিয়াকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। আমার ভাই তৎকালীন ৯ নম্বর পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ফিল্ড ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যুদ্ধ শুরুর কিছুদিন আগে ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন তিনি। পরে যুদ্ধ হয়ে গেলে তিনি কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেন।

তিনি আরও বলেন, ওই সময় মহিবুল হাসানদের দাপটের কারণে গ্রামের কেউ টুঁশব্দ করারও সাহস পায়নি। তবে বিজয়ের আগমুহূর্তে মহিবুল হাসান ও বিজয়ের পর বেশ কয়েকজন শান্তি কমিটির নেতা আত্মগোপনে চলে গেলেও রাজাকারদের দণ্ড দেন মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ হবিগঞ্জ জেলার ডেপুটি কমান্ডার ও সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌরপ্রসাদ রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্বাধীনতার আগে ও পরে মহিবুল হাসান যা করেছেন তা কখনো ভোলার নয়। ভালো অভিনেতা ছিলেন তিনি। মুখে প্রায় সময়ই হাসি থাকলেও তার কাজ ছিল অত্যন্ত জঘন্য। তার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে তৎকালীন এসডিএম কোর্টে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মামলাও হয়েছিল।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ হবিগঞ্জ জেলা কমান্ডার অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী পাঠান জানান, 'মহিবুল হাসানের রক্তই তো রিজওয়ানা হাসানের শরীরে প্রবহমান। এক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে সে কাজ করতেই পারে। এটা খুবই স্বাভাবিক।'

এদিকে, রিজওয়ানার মদদে এলাকায় নানা ধরনের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন তার চাচাত ভাই লিয়াকত হাসান। জঙ্গি-সম্পৃক্ততারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। চেয়ারম্যান হওয়ার করণে ক্ষমতার দাপটে সব অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করেছেন তিনি। শাইলীরাজ গ্রামের হতদরিদ্র ৯০ বছর বয়সী মান্নানের মা রহিমা বিবি ১৪ বার বয়স্ক-ভাতা কার্ডের জন্য আবেদন করেও পাননি। ২০০৮ সালে লিয়াকতের সঙ্গে আপস না করার কারণে স্থানীয় কয়েকটি পরিবারের সদস্যদের ভোটার তালিকায় নাম নিবন্ধনেও সাহস পাননি নিয়োগ পাওয়া মাঠকর্মী। আবার জাল দলিল করে সিপাহ্সালার সৈয়দ নাসিরউদ্দীন (রহ.) মুড়ারবন্দ দরগাহ্ শরিফ দখলের অপচেষ্টা চালিয়েছিলেন লিয়াকত। পরে দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০০৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ওয়াক্ফ প্রশাসকের কার্যালয় আগের রেকর্ডকেই বহাল রাখে। ঐতিহাসিক মুড়ারবন্দ মাজার দখলের অপচেষ্টার বিষয়টি নিয়ে মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।

নরপতি গ্রামের অ্যাডভোকেট কুতুব উদ্দীন জানান, 'তার বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই। ৯০ বছরের বৃদ্ধার সঙ্গেও তিনি প্রতারণা করেছেন। স্বাধীনতার ৪০ বছর পার হয়ে গেলেও লিয়াকতের মতো স্বাধীনতাবিরোধীরা এখনো তৎপর। পাঁচ-ছয়জন জঙ্গিবেশী অপরিচিত লোক সব সময় তার সঙ্গে থাকেন। তার চাচা মহিবুল হাসানের স্বাক্ষর ছাড়া পাকিস্তান আমলে কেউ আইডি কার্ডও পেত না।

মুড়ারবন্দ মাজারের মোতাওয়ালি্ল পীরজাদা সৈয়দ সফিক আহমদ (সফি) বলেন, 'ভালো মানুষের লেবাস পরে একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন লিয়াকত। পবিত্র মুড়ারবন্দ মাজারের পাঁচ একর জায়গা নিজের দখলে নেওয়ার জন্য তাদের পারিবারিক মসজিদে প্রায়ই অপরিচিত জঙ্গিদের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'আমি নিজে সিপাহ্সালার নাসিরউদ্দীন শাহ্র ১৭তম বংশধর হিসেবে সৈয়দ পরিবারের সন্তান। লিয়াকত আমাদের পরিবারের আগে সৈয়দ না লিখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে লেখায় তাদের পরিবার প্রকৃতপক্ষেই সৈয়দ কি না এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই না।'

এদিকে, সৈয়দ লিয়াকত হাসান তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, 'কিছু দুষ্টু লোক হীনউদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এসব ভিত্তিহীন।'


Click This Link
১৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রফেসদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×