somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শান্তির সরল সাহস

০৩ রা জুলাই, ২০১১ বিকাল ৫:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





মাত্র কয়েকদিন আগে বাংলা গানের অন্যমাত্রার গায়ক কবীর সুমন তার কনসার্ট করে গেলেন বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে। আমার প্রিয় গায়ক কবীর সুমন কবিও বটে। তার একটি অনন্য গানÑ ‘গান তুমি হও আমার মেয়ের ঘুমিয়ে থাকা মুখ।/তাকিয়ে থাকি এটাই আমার বেঁচে থাকার সুখ।’ জীবনবাদী এ গায়কের জীবনবেদ এ গানটি আমাদের নেতানেত্রীরা শুনেছেন কিনা আমি জানি না আর শুনলেও তারা এ অনন্য সাধারণ সুখের অনুভূতিটি তাদের জীবনে কস্মিনকালেও উপলব্ধি করেছেন কিনা তাও জানি না। আমি যখন এই লেখাটি লিখছি তখন আমার কন্যা সামান্থা আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার পাশে মেঝেতে ঘুমোচ্ছে। তাকে আমি খাটে তার মায়ের পাশে আজকের জন্য ঘুমোতে বলায় তার মুখ ভার হয়েছিল। আমার লেখার কাগজ, টেবিল ল্যাম্প এগুলো সাজিয়ে দিয়ে আমার পাশেই এখন সে ঘুমোচ্ছে। নিতান্তই ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ তুলে লিখছি, ব্যক্তি তো সমষ্টিরই অংশÑ মূলত সমষ্টিতে পৌঁছানোর জন্যই কিংবা বলা চলে সমষ্টির সঙ্গে এই ব্যক্তির ওতপ্রোত সংশ্লিষ্টতা আছে বলেই ধান ভানতে নিজের গীত গাওয়া। আমি আমার সন্তানের কথা বলছিÑ সন্তানের কথা বলেছেন প্রাচীন বাঙালি কবিওÑ ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে।’ আমি তো তারই উত্তরসূরি মাত্রÑ এ আকাক্সক্ষা, এ শুভ কামনা কেবলমাত্র বাঙালির নয়Ñ পৃথিবীব্যাপী সব মানুষের। কবীর সুমন তার গানকে তার কন্যার ঘুমিয়ে থাকা মুখে খুঁজেছেন আমরা আমাদের শান্তির আকাক্সক্ষাকে আমাদের মেয়ের মুখে খুঁজে ফিরিÑ
গোটা বাঙালি জাতি তাদের আন্দোলন, সংগ্রামে দুই নেত্রীর মুখে শান্তির আকাক্সক্ষার অন্বেষণ করে। আর সেটা করে বলেই কোনও সামরিক স্বৈরাচারই তাদের পরাস্ত করতে পারে না। হয়তো সাময়িকভাবে তাদের বিচ্যুত, বিচ্ছিন্ন করতে পারে। এদেশের মানুষের ভালোবাসার অদম্যশক্তি জাতির এ দুই কন্যাকে তার বিভ্রান্তির আবর্ত থেকে টেনে তুলে আনে, এনে দাঁড় করিয়ে দেয় আন্দোলন এবং সংগ্রামের রাজপথে। তাই ব্যর্থ হয় টু মাইনাস থিওরি।
জনআকাক্সক্ষার যে কথাটি বলার জন্য ব্যক্তিগত প্রসঙ্গের অবতারণা সেই আকাক্সক্ষাটির কথাই লিখি এই লেখাটিতে। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২০ তারিখে আমার কন্যাÑ আজই সকালে যে তার বয়স গুনছিল হাতের আঙুলের কর গুনেÑ আট বছর এক মাসÑ সেই সামান্থার জš§। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তার মাকে। সামান্থার জšে§র একদিন আগে কিংবা একদিন পরে আমার স্ত্রীর পাশের বেডের অন্য এক প্রসূতি মা জš§ দেন দুটি কন্যা সন্তানের। সেই যমজ কন্যার মা; যিনি এসেছিলেন রাজশাহীর কোনও প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে, সেই মা তার কন্যাদ্বয়ের নামকরণ করেন আমাদের দুই নেত্রীর নামে। গোটা হাসপাতালে আলোড়ন সৃষ্টি করে এ নামকরণ। সহজ-সরল সেই গহীন গ্রামের গৃহবধূ স্বপ্নেও কল্পনা করেননি তিনি এই নামকরণের মধ্য দিয়ে ওরকম তুমুল আলোচনার বিষয় হয়ে উঠবেন। গহীন গ্রামের সেই গৃহবধূর আকাক্সক্ষাটি ছিল খুবই সামান্য আর তা হলÑ তার যমজ কন্যা হাসিনা-খালেদা কিংবা খালেদা-হাসিনা শান্তি ও সৌহার্দ্যরে মধ্যে বেড়ে উঠবে তার গরিবের সংসারে। সেই নাম মনে না রাখা এক গ্রামের বধূর নির্দোষ আকাক্সক্ষাটি আধা মফস্বল মেট্রোপলিটন সিটি রাজশাহীর নাগরিকদের কাছে ঠাট্টা-তামাশা, বিদ্রƒপের বিষয় হয়ে উঠলেও সেই জননীর একান্ত ইচ্ছায় আন্তরিকতার কোনও অভাব ছিল না। আটষট্টি হাজার গ্রামের মায়েরা তাদের নাড়ি ছেঁড়া ধনের মুখে এমন অপরিমেয় ভালোবাসাতেই প্রিয় মুখ খুঁজে ফেরেন সরল সাহসে।
আমার কন্যার নামকরণ করেন আমার স্ত্রীÑ সামান্থার নামে। সামান্থা স্মিথ ১১ বছর বয়সী এক মার্কিন কিশোরী; যে চিঠি লিখেছিল অখণ্ড সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ইউরি আঁদ্রোপভের কাছে, গত শতকের আশির দশকে। যেন আঁদ্রোপভ পৃথিবীতে পারমাণবিক যুদ্ধের সূচনা না ঘটান। রুশ-মার্কিন এ দুই পরাশক্তি যদি পারমাণবিক বোমা নিয়ে পরস্পরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাহলে আমরা কেউই বাঁচবো না। ধূলিস্মাৎ হয়ে যাবে সমস্ত মানব সভ্যতা। সভ্যতা বিধ্বংসী সেই যুদ্ধ না বাধানোর আকুতি ছিল সামান্থা স্মিথের চিঠিতে। প্রেসিডেন্ট আঁদ্রোপভ সামান্থার সেই চিঠির উত্তর দেন এবং একই সঙ্গে সামান্থাকে নিমন্ত্রণ করেন তার মা-বাবাসহ সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভ্রমণের জন্য। সামান্থা তার মা-বাবার সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নে যায়, সেখানকার মানুষজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলে সে যা উপলব্ধি করে তা দেশে ফেরার পর বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসার জবাবে জানায়, ‘আমি নিশ্চিত যে, সোভিয়েত ইউনিয়নের মানুষ পারমাণবিক যুদ্ধ বাধানোর পক্ষে নন।’ আমার কন্যার মুখে আমার স্ত্রী খুঁজে পেতে চেয়েছেন সামান্থার শান্তি প্রত্যাশী শান্ত-সৌম্য সেই মুখশ্রী। এভাবেই ব্যক্তি হয়ে ওঠে সমষ্টি। ছোট্ট সামন্থাও হয়ে ওঠে বড়।
শেখ হাসিনার সঙ্গে একই মঞ্চে বিশ্ব দারিদ্র্য বিমোচন দিবস পালনের অনুষ্ঠানে শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়া যাননি। সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় একটি মিছিলে দুই নেত্রীর নেতৃত্ব দেয়ার কথা ছিল; সেখানে শেখ হাসিনা যোগ দিতে পারেননি। এগুলো ঘটনা। অথচ তারা যুগপৎ আন্দোলন রচনা করে ডাক দিয়েছেন এরশাদ পতনের, পতন ঘটেছে স্বৈরাচারের। আবার রাজনীতিতে অবস্থানের বিষয়ে তাদের অনমনীয়তার কারণেই পিছু হঠতে বাধ্য হয়েছে একুশ শতকের স্বৈরাচার হয়ে ওঠার চেষ্টাকারী শক্তিও।
এ বছর মহাÍা গান্ধীর জš§দিনে সারা পৃথিবীব্যাপী শুরু হয়েছে শান্তি পদযাত্রা; আগামী বছরে সেটা শেষ হবে। সারা পৃথিবী ঘুরে শেষ হবে সেই পদযাত্রা।
রাজশাহীর কোন গহীন গ্রামে সেই গ্রাম্য জননীর সংসারে তার আদরের যমজ কন্যা; সন্দেহ নেই শান্তি সৌহার্দ্যরে মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠছে। এখন তাদের বয়স ৮ বছর ১ মাস অর্থাৎ নয় বছরে পা রেখেছে তারা। খোঁজ করলে হয়তো সেই যমজ কন্যা দুটিকে আগামী বছরে সমাপ্য বিশ্ব শান্তি লং মার্চের সমাপনী অনুষ্ঠানেও হাজির করা সম্ভব। জানি না সে উদ্যোগ কেউ নেবে কিনা। আমি এই লেখায় তাদের কথা স্মরণ করে তাদেরকে সমষ্টির সড়কে এনে হাজির করলাম মাত্র। এদের সঙ্গে সঙ্গে আগামী বছরে বিশ্ব শান্তি লং মার্চের সমাপনী মার্চে সারা পৃথিবীর শান্তিকামী, শান্তি প্রত্যাশী সমষ্টির সঙ্গে আমাদের দেশের অবিসংবাদী দুই নেত্রীকে আমরা নিশ্চয়ই এক সঙ্গে পাব। প্রাচীন বাঙালি কবির আকাক্সক্ষাকে একটু অন্য স্বরে বলিÑ ‘আমার সন্তান যেন থাকে শান্তিতে।’ দল নয়, দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য নিশ্চয়ই তারা তাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করবেন। এদেশের মানুষ তাদের গভীরভাবে ভালোবাসে; তারা কি সেই ভালোবাসাকে কবীর সুমনের ছোট্ট গানের পঙ্ক্তির মতো করেÑ হƒদয়ের বিরাট ভালোবাসার স্পন্দনে স্পন্দিত হতে দেবেন না? নিশ্চয়ই দেবেন; তারা তো সমষ্টিরই অংশ।

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×