somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একদিন, যিশু খ্রিস্ট ...

০২ রা জুলাই, ২০১১ সকাল ১১:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জেরুজালেম শহরের পুবদিকে জৈতুন পাহাড় । যিশু প্রায়ই শিষ্যদের নিয়ে জৈতুন পাহাড়ে যান । প্রিয় শিষ্যদের উপদেশ দেন । কখনও একত্রে সংগীত করেন। গতকাল রাত্রেও শিষ্যদের সঙ্গে জৈতুন পাহাড়ে গিয়েছিলেন যিশু। শিষ্যরা শলোমনের একটি পরমগীত গাইছিল:

হে আমার প্রিয়! দেখ, তুমি সুন্দর,
হাঁ, তুমি মনোহর,
আর আমাদের শয্যা হরিদ্বর্ণ।
এরস বৃক্ষ আমাদের গৃহের কড়িকাষ্ঠ
দেবদারু আমাদের বরগা।
আমি শারোণের গোলাপ
তলভূমির শোশন পুষ্প।

শলোমনের পরমগীত শ্রবণ করে যিশু গভীর আমোদ বোধ করেন।

আমি শারোণের গোলাপ
তলভূমির শোশন পুষ্প।

আহা।
তাম্মুজ মাস। বেশ গরম পড়েছে। অনুচ্চ পাহাড়শ্রেণি উষ্ণ হয়েছিল। বাতাসে ভাসছিল গন্ধকের কটু গন্ধ । পাহাড়ের ধাপে জলপাই কুঞ্জ । সে কুঞ্জে অবশ্য ঝিরঝির বাতাসে কাঁপছিল জলপাই পাতারা । পাহাড়ের ঢালে একটি প্রাচীন সমাধি ক্ষেত্র এবং গেথসেমানি উদ্যান । সেসবের উপর ঝরে ঝরে পড়ছিল নক্ষত্রের নিষ্প্রভ আলো।
ভোর।
যিশু মন্থর গতিতে শিষ্যদের নিয়ে জৈতুন পাহাড় থেকে নেমে আসছেন।
ভোরের বাতাসে জলপাই কুঞ্জে জলপাই পাতার ঘন গন্ধ ভাসছিল । বুক ভরে শ্বাস নিলেন যিশু। মুখ তুলে একবার ভোরের আকাশের পানে তাকালেন। মনে মনে বললেন, সদাপ্রভু সবাইকে ভালোবাসেন। তারপর প্রাচীন সমাধি ক্ষেত্রের সামনে এসে দাঁড়ালেন যিশু । যারা চলে গেছে তাদের জীবনের কথা স্মরণ করে বিষন্ন হলেন। মনে মনে বললেন, ধন্য যারা আত্মাতে দীনহীন, কারণ স্বর্গরাজ্য তাদেরই।
গেথসেমানি উদ্যান ফুটেছিল তাম্মুজ মাসের হরেক রকম ফুল ।
সেই বিচিত্র সৌরভের সঙ্গে যিশুর নিজস্ব পবিত্রতার সৌরভ মিশে একাকার হয়ে গেল ।
পাহাড় থেকে নেমে এসে অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটছেন যিশু। একবার জেরুজালেম নগরের প্রধান উপাসনালয়ে যাবেন। ভোরবেলা উপাসনালয়ে লোকেদের উপদেশ দেন যিশু । এই নগরের লোকেরা সব সীমাবদ্ধ গন্ডিতে আবদ্ধ হয়ে রয়েছে ; তাদের চেতনাকে এক আলোকিত স্তরে পৌঁছে দিতে চান যিশু । মানুষের এত সংকীর্ণ হলে চলবে কি করে? মানুষ এক মহৎ পরিকল্পনা ফসল, মহাকালের প্রতিবিম্ব, পবিত্র আত্মার আধার। মানুষ কেন নিজেকে সীমাবদ্ধ সীমানায় আটকে রেখে আত্মার অবমূল্যায়ন করবে ?
যিশু দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন।
যিশু উপাসনালয়ের প্রাচীরবেষ্টিত ছাদবিহীন অঙ্গনে প্রবেশ করলেন।

...জেরুজালেম নগরটি রোমক শাসনাধীন। রোমক শাসনে হিব্রুদের সঙ্কট দিন দিন ঘনীভূত হয়ে উঠছে। যে কারণে এত ভোরেও উপাসনালয়ে ভিড়। যিশু কে দেখেই লোকেরা ছুটে এল। রোমক শাসনে তারা ক্লান্ত। তারা মুক্তির পথ খুঁজছে। যিশুর হাতে স্বর্গীয় আলোর অনির্বাণ মশাল। লোকে আজ আলো চায় ... আলো। মুক্তির আলো। তবে মুক্তিদাতাকে লোকে পরখ করেও নিতে চায় ...

যিশু একটি পাথরখন্ডের উপর বসলেন। স্বর্গীয় যুবকের বসার ধরনটি অপূর্ব। পরনে দীর্ঘ শুভ্র বসন। ঈষৎ লালচে দীর্ঘ চুল। নীলাভ চোখ। মুখময় ঈষৎ লালচে শ্মশ্রু । ভিড়ের উপর একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে যিশু বললেন, শক্রকে ভালোবেস। আর, ভবিষ্যৎ নিয়ে ভেবে অযাথা উৎকন্ঠিত হয়ো না।
উপস্থিত জনতার ভিড়ে গুঞ্জন উঠল।কি এর মানে? শক্রতো রোমকগন। কিন্তু, তারা তো নির্যাতনকারী। নির্যাতনকারী রোমানদের ভালোবাসা সম্ভব কি ভাবে? আর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে নিষেধ করছেনই-বা কেন? তাহলে কি... তাহলে কি ... কোনও দিন নিষ্ঠুর রোমাকরা যিশুর বাণীকে গ্রহন করবে? হা, ঈশ্বর! সে রকম কি ভাবা যায়?
যিশু বললেন, যেরূপ বিচারে তোমরা বিচার কর, সেইরূপ বিচারে তোমরাও বিচারিত হবে। আর ধন্য যারা দয়াশীল, কারণ তারা দয়া পাবে।
উপস্থিত জনতার ভিড়ে গুঞ্জন উঠল। কথাগুলি কি সত্যি? একেবারে অজানা কথা নয়, তবে বলার ধরনে নতুনত্ব রয়েছে। যিশু আরামিয় ভাষায় নতুন প্রকাশ-ব্যঞ্জনা এনেছেন।
যিশু বললেন, ধন্য যারা আত্মাতে দীনহীন, কারণ স্বর্গরাজ্য তাদেরই। আর আর, সদাপ্রভু সবাইকে ভালোবাসেন।
উপস্থিত জনতার ভিড়ে গুঞ্জন উঠল।
অনেকেই ‘সাধু’, ‘সাধু’ বলে উঠল।
যিশু কি বলতে যাবেন- ঠিক তখনই কয়েকজন ফরীশী কে আসতে দেখলেন তিনি। ফরীশীরা প্রাচীনপন্থি এবং অতিশয় ধর্মান্ধ। এদের শাস্ত্রের বাইরে যাওয়ার সাহস কিংবা বোধবুদ্ধি নেই। ফরীশীদের সঙ্গে একটি মধ্যবয়েসি নারীও রয়েছে। দু’জন বৃদ্ধ ফরীশী নারীকে দু’দিক থেকে ধরে রেখেছে। তাতে নারীটির মাথার কাপড় সরে গেছে । এবং ঢেউ তোলা দীর্ঘ সোনালি চুল ছড়িয়ে পড়েছে । ভয়ার্ত ফ্যাকাশে মুখে নীলাভ চোখের মনি তিরতির করে কাঁপছিল । যিশু স্পষ্ট দেখলেন। যিশু কৌতূহল বোধ করলেন।
একজন ফরীশী বলল, এই নারীটি ব্যভিচার করার সময় ধরা পড়েছে।
যিশু নারীর দিকে তাকালেন। নারীটি মাথা নামিয়ে নিল। যেন এতগুলি পুরুষের সামনে লজ্জ্বায় মাটির সঙ্গে মিশে যেতে চাইছে।
যিশু দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। মনে মনে বললেন, মানুষের এই অপ্রতিরোধ্য তৃষ্ণা ...
একজন ফরীশী বলল, মোশি (মুসা নবী) এ ধরনের অপরাধে পাথর মারার আজ্ঞা আমাদের দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আমরা আপনার মতামত জানতে চাই।
যিশু আপনমনে হাসলেন। এরা আমাকে পরখ করতে এসেছে। আমার মতামত যথাযথ মনে না- হলেই এরা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা করবে। এরা সব কপট, ভন্ড এবং ধর্মান্ধ!
ফরীশীরা সমস্বরে বলল, হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমরা এ ব্যাপারে আমরা আপনার মতামত জানতে চাই।
জেরুজালেমের লোকে সামনে তাদের মুক্তিদাতাকে পরখ করার সুযোগ এসেছে। তারাও সমস্বরে বলল, হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমরা এ ব্যাপারে আমরা আপনার মতামত জানতে চাই।
যিশু কী যেন ভাবলেন। তারপর বললেন, তোমাদের মধ্যে যে নিষ্পাপ, সেই প্রথমে একে পাথর মারুক।
পুরুষেরা একে একে উপাসনালয়ের প্রাচীরবেষ্টিত ছাদবিহীন অঙ্গন ছেড়ে চলে গেল।
শূন্য চত্বরে রইলেন কেবল যিশু আর সেই নারী ...
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×