somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কি দিচ্ছি? কিসের আশায় দিচ্ছি?

০১ লা জুলাই, ২০১১ দুপুর ২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেসবুকে উপরের শিরোনামের এই লেখাটা পড়ে খুব ভাল লাগল। তথ্যবহুল মনে হল। তাই শেয়ার করছি।
_______________________________________________
কানকো ফিলিপ্স এর চুক্তি নিয়ে "টোকাইদের" হইচই দিনদিন বেড়েই চলেছে, তবু সরকার সেই চুক্তি জনসমুখে আনতে নারাজ। দেশ উন্নয়ন এর গোপন পদ্ধতি সবাই জেনে যাবে যে! টোকাইগুলা আসলেও কিছু বোঝে না। সরকার শুধু এটা জানিয়েছেন চুক্তিটা ২০০৮ এ করা চুক্তির অনুরুপ। আসুন দেখি, সেই চুক্তিতে সরকারের সাথে টোকাইদের বিরোধটা কোথায়-

১।সরকার যেখানে বলছে আমরা পাব উত্তোলিত গাসের ৫৫ ভাগ, টোকাইরা বলছে সেটা নাকি ২৫-৩০ ভাগ। হিসেবটা অবশ্য এমন কিছুই না। আসলে উত্তোলিতি গাসের ৫৫ ভাগ কানকো পকেটস্থ করবে উত্তোলোন খরচ বাবদ। বাকি ৪৫ ভাগের আমরা ৫৫ ভাগই পাব (যেটা মুল গাসের ২৪,৭৫ ভাগ!)। টোকাইরা কেন যে এক লাইন বেশি বোঝে?!

২।টোকাইদের আরেকটা আপত্তি গ্যাস রপ্তানিতে। সরকারের বক্তব্য রপ্তানির ব্যাপারটা চুক্তিতে কেবল রাখার জন্য রাখা! এর পেছনে যুক্তি হল- কানকো চুক্তি অনুযায়ী প্রথমে সরকারের কাছে গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব দিতে বাধ্য থাকবে। ছয় মাসের মধ্যে সরকার কিনতে ব্যর্থ হলে, সেটা রপ্তা্নি করা যাবে। আর আমাদের গাসের যে চাহিদা তাতে রপ্তানির সুযোগ কানকো পাবে না। এবার একটু অঙ্ক না কষলেই না।

সমুদ্রে আলোচিত গ্যাস ক্ষেত্রের আনুরুপ গ্যাস ক্ষেত্র থেকে ইন্ডিয়া ১৪ ট্রিলিয়ন এবং মালদ্বীপ ৭ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পেয়েছে। গড় না ধরে আমারা যদি ৭ ট্রিলিয়ন ও ধরি তবে বছরে শতকরা ৭.৫ হারে উত্তোলন করলে বাৎসরিক উত্তোলন ৫২৫ বিলিয়ন ঘনফুটে দাঁড়াবে,অর্থাৎ দৈনিক ১.৪৪ বিলিয়ন ঘনফুট । (চাহিদা থাকলেও এর বেশি হারে উত্তোলন করলে গ্যাসক্ষেত্রটি পরিত্যক্ত হতে পারে, এই তথ্য আমরা জেনেছি বিদেশিদের হাতে সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্রটি বিসর্জন দিয়ে)

আর আমাদের দৈনিক ঘাটতি বর্তমানে ০.৫ বিলিয়ন ঘনফুট। যেহেতু গ্যাস জমিয়ে রাখার কোন ব্যবস্থা বা পরিকল্পনা আমাদের নেই কাজেই ১.৪৪-০.৫ অর্থাৎ প্রতিদিন ০.৯৪ বিলিয়ন ঘনফুট গাসের রপ্তানির অনুমতি দিতে আমরা বাধ্য হব। টোকাইদের মাথায় কত প্যাঁচ!

৩। সরকারের সবচেয়ে বড় যুক্তি দেশে এখন তীব্র জ্বালানি সঙ্কট। অতএব যাই পাই তাই লাভ। আমাদের সামনে আর কোন বিকল্প নাকি সরকারের চোখে পড়ছে না। অথচ বাপেক্সের এর মতে সমুদ্রের গ্যাস বাদ দিলেও শুধু স্থল ভাগের গ্যাসক্ষেত্র গুলোর উৎপাদন বাড়িয়েই দেশের বর্তমান ঘাটতি দূর করা সম্ভব,এ জন্যে বাপেক্সের চাই কিছু যন্ত্রপাতি আর নগদ টাকা।

কিন্তু আমাদের সরকার দেশি বাপেক্সের কথায় ভরসা পায় না, যতটা পায় বিদেশি কানকোর কথায়! পাবে নাই বা কেন? তারা যে অভিজ্ঞ। আশ্চর্যের ব্যাপার হল দক্ষ বিদেশি কোম্পানি গুলা ইতোমধ্যে আমাদের তিনটি গ্যাসক্ষেত্রে দক্ষতার সাথে আগুন জালিয়ে প্রায় ৫০০০০ কোটি টাকার শ্রাদ্ধ করেছেন। এক্ষেত্রে কানকোর সুনাম তো জগতজোড়া। আর অদক্ষ বাপেক্স আজ অবধি বড় কোন দুর্ঘটনা ছাড়াই আমাদেরকে গ্যাস সরবরাহ করে আসছে। আর ১৯-২০ বছরের পুরানো যন্ত্র দিয়ে যে কিনা হাল আমলে (এই দুই সপ্তাহ আগেও) নতুন গাসক্ষেত্র আবিষ্কার করে এহেন জাদুকরকে কি বিশ্বাস করা যায়?

৪।এরপরও সরকার পক্ষের যুক্তি ফুরায় না। কারন কে না জানে আমাদের দেশটা গরিব, গ্যাস তোলার এত টাকা আমরা কোথায় পাব? প্রশ্ন হল এত টাকাটা আসলে কত টাকা? কানকো এখানে বিনিয়গ করবে ১.২ বিলিয়ন ডলার মানে প্রায় ৮০০০ কোটি টাকা। টাকাটা একবারে লাগবে না, লাগবে ধাপে ধাপে। যদি সম্পূর্ণ প্রজেক্ট ৮ বছরেও শেষ করা যায় তবে বছরে লাগবে ১০০০ কোটি টাকা। ১,৬৪,০০০ কোটি টাকা যে দেশের বাজেট সেখানে কি এটা খুব বেশি?

আর সমুদ্রে গ্যাস না তুলে যদি আমরা স্থল ভাগের গ্যাসের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চাই তবে সেটা মাত্র (এককালীন) ৭৭০ কোটি টাকার ব্যাপার। যদি এটাও আমাদের সাধ্যের বাইরে হয়, তবে ৫৭০ কোটি টাকা শুল্ক মউকুফ করে সাংসদদের গাড়ি এনে দেয়া হয় কোন যুক্তিতে, আর কেনইবা ১২০০ কোটি টাকা খরচ করে বিমানবন্দরের নাম পরিবর্তন করা হয় সেটাই টোকাইদের মাথায় খেলে না।

এত কথার ভিড়ে যেটা বলাই হয়নি সেটা হল, এত কিছুর পরও যদি কানকো আমাদের কাছে আমাদেরই গ্যাস বিক্রি করে, তবে সেটা আমাদের কিনতে হবে আন্তর্জাতিক দামের চেয়ে কিছু কমেই- মাত্র ৩ ডলারে(২১০ টাকা) প্রতি ঘনফুট। যেটা বাপেক্স আমাদেরকে দেয় ২৫-৫০ টাকায় !

যারা এখনও ভাবছেন, এইসবে আমার কি? খেয়ে দেয়ে আপনার আর বহুত কাজ আছে, তবে একটু হিসাব করবেন, আপনার ওই খাওয়া দাওয়া তথা রান্নার গ্যাসটা কোথা থেকে আসবে? না না ,আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে নয়, আজ না ভাবলেও মাত্র বিশ বছরের মাথায় এটাই আপনাকে ভাবতে হবে, যখন করার কিছুই থাকবে না, অন্তত আমাদের মত টোকাইদের তো নয়ই।

অতএব আসুন , ফুলবাড়ি কয়লাখনির মত সমুদ্রবক্ষের গ্যাসক্ষেত্র রক্ষায় সোচ্চার হই। বিদেশিদের হাত থেকে আমাদের জাতীয় সম্পদকে বাঁচাই।
__________________________________________________

পোস্ট টি এখান থেকে নেয়া হয়েছে Click This Link

__________________________________________________

সবশেষে আমার নিজের কিছু কথা বলি। আমার মনে হয় এত আন্দোলন এত আলোচনা, সমালোচনা এই সব কিছুর উপরে সবচেয়ে বড়ো কথা হল আমরা কেন নিজেরা নিজেদেরকে বিশ্বাস করতে পারিনা? কেন নিজেদের উপর ভরসা করতে পারিনা?

আমরা জানি যে বাংলাদেশীরা পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান জাতি। কিন্তু আমরা তা মানি না কেন?? আমাদের সমস্যা কি? হয়তবা আমরা সেভাবে সুযোগ পাইনা বলে নিয়মিত বড় কিছু করতে পারিনা। কিন্তু সুযোগ পেলে আমরা তো ঠিকই দেখিয়ে দিতে পারি যে আমরা কি পারি আর কি না পারি। অতীতে এবং বর্তমানেও এরকম অসংখ্য উদাহরন রয়েছে।

আসলে বিদেশী কুচক্রীদের হাতে দীর্ঘদিন যাবত মানসিকভাবে আটকে থেকে থেকে আমরা নিজেদের অস্তিত্বকে আর মেধাকে প্রায় হারিয়ে ফেলেছি। কিন্তু আর না। এবার আমাদেরকে সবার আগে নিজেদের অস্তিত্বকে, নিজেদের মেধাকে খুজে বের করতে হবে। এবং সবার আগে নিজেদের উপরে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। নাহলে এই অন্ধকার থেকে মুক্তি নাই।
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×