সাংবাদিক পেটানোর ঘটনায় দলের ভেতরে বাইরে ব্যাপক সমালোচনা ও পাল্টাপাল্টি মামলার মধ্যেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছেন পটুয়াখালীর সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি।
Published : 23 Jul 2013, 01:42 PM
মঙ্গলবার দুপুরে তিনি টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিকালে স্পিকারের সঙ্গে আলাপ করে এ বিষয়ে জানাব।”
এরপর বেলা ২টা ২০ মিনিটে জাতীয় সংসদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কক্ষে ঢুকতে দেখা যায় ক্ষমতাসীন দলের এই সংসদ সদস্যকে।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার দলের একটি বড় অংশ সালমান এফ রহমানের পক্ষে কথা বলছে। এ কারণে নৈতিকভাবে আমার মনে হয়েছে আমার পদত্যাগ করা উচিৎ। যেহেতু এটি সাংবিধানিক বিষয়, এ কারণে আমি স্পিকারের সঙ্গে আলোচনা করতে এসেছি।”
এর দুই ঘণ্টা আগে রনি এক ফেইসবুক পোস্টে লেখেন- “Probably I am going to resign. I feel, I should face the conspiracy as general public. Our media might colored my MP post our my party. In Sha Allah, I would prove what was real fact before the picture.
“I would invite media personalities to make a equal level playing field for me and my opponent. Amar mukh bondho kore to onnokay sujog kore dayar modhay ar ja houk justice, transparency and democracy er nomuna hotay pare na.”
সংবিধানের ৬৭ (২) অনুচ্ছেদে বলা আছে-) কোনো সংসদ সদস্য স্পিকারের কাছে সইযুক্ত পত্রে পদত্যাগের কথা জানাবেন এবং স্পিকার তা গ্রহণ করলে ওই সদস্যের আসন শূন্য হবে।
বর্তমান সরকারের সময়ে এর আগে গাজীপুরের আওয়ামী লীগ নেতা তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য তথ্য সংগ্রহের জন্য শনিবার পল্টনে রনির কার্যালয়ে গিয়ে মারধরের শিকার হন ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সাংবাদিক ইমতিয়াজ মমিন সনি ও ক্যামেরাম্যান মহসিন মুকুল।
ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, সংসদ সদস্য রনি নিজেই প্রতিবেদক ও ক্যামেরাপার্সনের ওপর চড়াও হয়ে লাথি মারছেন।
ঘটনার পর ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ রনিকে আসামি করে একটি মামলা করে।
এরপর রনি পাল্টা মামলা করেন, যাতে দুই সংবাদিকসহ ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের অন্যতম মালিক ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানকেও আসামি করা হয়।
ইনডিপেনডেন্টের করা মামলায় রনি রোববার বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন। হাই কোর্ট থেকে জামিন নেন সনি ও মুকুলও।
শনিবারের ঘটনার পর বেসরকারি টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা এক বিবৃতিতে রনিকে বর্জনের জন্য টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানায়।
এছাড়া সোমবার প্রেস ক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা রনিকে গ্রেপ্তারের জন্য এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দেন। তার সংসদ সদস্য পদ বাতিলেরও দাবি জানানো হয়।
সমালোচনা আসে রনির নিজের দলের ভেতর থেকেও।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেন, “রনির ঘটনা দুঃখজনক, অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্ক্ষিত।”
এজন্য এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে সংসদ ব্যবস্থা নিতে পারে বলেও হানিফ উল্লেখ করেন।
অবশ্য রনি আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ের নেতা নন বলেও মন্তব্য করেন হানিফ।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও সোমবার বলেন, “গণমাধ্যম ও রাজনীতিবিদের সম্পর্ক অবিভাজ্য ও অবিচ্ছেদ্য। গণমাধ্যমের প্রতি তার (রনি) এ আচরণ অশোভন ও অনভিপ্রেত।”
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের টিকিটে পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন গোলাম মাওলা রনি।
তবে অল্প দিনের ভেতরেই তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠার খবর আসে গণমাধ্যমে। আয়কর বিবরণীতে সম্পদের তথ্যে গড়মিল পেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনও তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে।
এর আগেও সাংবাদিকদের নিগৃহীত করার অভিযোগ উঠেছে পটুয়াখালীর এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে।
২০০৯ সালে পটুয়াখালীর গলাচিপায় নদী দখল করে বিপণী বিতান তৈরির কথা বিভিন্ন দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে রনির সমর্থকদের হাতে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক নিগৃহীত হন। পরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলাও করেন তিনি।
তবে তিনি আলোচনায় আসেন সৈয়দ আবুল হোসেনের মন্ত্রিত্ব পাওয়া নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে ‘গল্প’ বলে। ওই গল্পে তিনি হাস্যরস করে বলেন, দৌড় জিতে মন্ত্রিত্ব পেয়েছিলেন আবুল হোসেন!