somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৯৭৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও একজন জিয়াউর রহমান । ইতিহাস কথা বলে ....

১৪ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৩:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরিকল্পনা এমন ভাবে করা হয়েছিলো যেখানে জিয়াউর রহমান যেন সামরিক প্রেসিডেন্ট নন , বেসামরিক পোশাকে সামরিক প্রেসিডেন্ট হতে পারেন । নির্বাচনকে সামনে রেখে জিয়াউর রহমান ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকেন জনগনের সমর্থন আদায়ের জন্যে । যদিও তার ক্ষমতার উৎস ছিল সামরিক বাহিনী কারণ তিনি একাধারে সামরিক বাহিনীর প্রধান ও প্রতিক্ষা বাহিনীর কমান্ডার ইন চীফ ছিলেন ।

১৯৭৭ সালে তিনি শাষনতন্ত্রে কিছু পরিবর্তন আনেন নতুন সংশোধনীর মাধ্যমে , যেখানে ছিলো "বিসমিল্লাহে-রাহমানুর-রাহিম " সহ আরও কয়েকটি পরিবর্তন । এই সংশোধনীতে উল্লেক্ষযোগ্য যে পরিবর্তনটি আনা হয় তা হলো বাংলাদেশের জনগনকে এখন থেকে 'বাঙালী' নয় 'বাংলাদেশী' বলা হবে । ১৯৭২ সালে শেখ মুজিবর রহমান যখন তাঁর দেশবাসীকে বাঙালী হিসেবে উল্লেখ করেন তখন নয়া দিল্লীতে এই ব্যাপারে বেশ উদ্বেগ পরিলক্ষিত হয় । দিল্লীর কর্তা ব্যাক্তিরা মনে করতেন বাঙালী জাতীয়তাবাদের প্রভাব তাদের পশ্চিম বাংলাতেও পড়বে এবং তার ফল খারাপ হতে পারে ,যার কারণে জিয়াউর রহমানের সংশোধীত 'বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ' দিল্লীতে সমর্থন লাভ করে খুব সহজে ।

১৯৭৮ সালের নির্বাচনে জয় লাভের জন্যে এই কার্যক্রমগুলো অনেক ফলপ্রসু ছিল । তবে প্রেসিডেন্ট নির্বচনে নিশ্চিত জয় লাভের সম্ভবনা থাকা সত্বেও জিয়াউর রহমানের পক্ষে কিছু কারচুপি ও কৌশলের আশ্রয় নেওয়া হয় । সে সময় অভিযোগ ওঠে বিরোধী দল গুলোকে নির্বাচনে অংশ গ্রহনের জন্যে মাত্র ৪০ দিনের নোটিশ এবং ২৩ দিনের প্রচারনার সুযোগ দেওয়া হয় । অন্যদিকে নিজের নির্বাচনী প্রচারণার জন্যে সরকারী প্রশাসন যন্ত্রকে পুরোপুরি কাজে লাগান তিনি । টিভি- রেডিও এবং সংবাদপত্রকেও বাধ্য করা হয় বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জন্যে ।

ভোটের আগে জিয়া চাইতেন , তার পক্ষে যেন শতকরা ৭০ভাগ ভোট দেখানো হয় । তবে পরবর্তিতে নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন সত্যি কিন্তু তার এই প্রেসিডেন্ট হবার ব্যাপারটি অবৈধ বলে অভিযোগ ওঠে এবং এই অভিযোগের পেছনে এতই শক্তিশালী প্রমান ও তথ্য ছিলো যে তিনি এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতা করারই যোগ্য ছিলেন না ।

জিয়া কর্তৃক ঘোষনাকৃত প্রেসিডেন্সিয়াল অডির্ন্যন্স ১৯৭৮ অনুযায়ী --
সেই ব্যাক্তি প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দীতা কর‌তে পারবেন না -----


(১) যদি তার বয়স ৩৫ এর কম হয় ,
(২) যদি তিনি এম.পি নির্বাচনের অযোগ্য হয়ে থাকেন ,
(৩) যদি সংবিধান অনুযায়ী তিনি প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বহিস্কৃত হয়ে থাকেন ,

এমনকি , সংবিধান অনুযায়ী সেই ব্যাক্তি প্রার্থী হতে পারবেন না , যিনি সরকারী চাকুরি থেকে বেতন গ্রহন করে থাকেন । অর্থাৎ সংবিধান অনুযায়ীও জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট প্রার্থীও হতে পারেন না কারণ ঐ সময়ে তিনি সামরিক বাহিনীর গুরুত্বপুর্ন পদে অধিষ্ঠিত থেকে বেতন গ্রহন করতেন ।

জিয়াউর রহমান এই সব বাঁধা কাটিয়ে ওঠার জন্যে ২৯শে এপ্রিল ১৯৭৮ সালে ত্রয়োদশতম সংশোধনী পাস করান ।
(১) চীফ মার্শাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর কমান্ডার ইন চীফ হবেন এবং তিনি প্রত্যক্ষভাবে বা তার বাহিনী প্রাধনের মাধ্যমে এই সব বাহিনী নিয়ন্ত্রন, নির্দেশনা ও পরিচালনা করবেন ।

(২) চীফ মার্শাল এখন থেকে বেতনভোগী সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচিত হবে না ।

কিন্তু ১৯৭৮ সালের ২র মে নমিনেশন জমা দেবার আগেও এমনকি নির্বাচনের দিন পর্যন্ত সরকারী কাজপত্র অনুযায়ী তিনি চীফ অব আর্মী স্টাফ এর মত বেতন ভুক্ত চাকুরিতে বহাল ছিলেন এবং এইটা ছিলো সংবিধান অনুযায়ী নিয়ম বহির্ভুত এবং অবৈধ
এছাড়া জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে অদ্ভুতভাবে কয়েকটি গেজেট নোটিফিকেশন ইস্যু করেন । ২৮শে ফেব্রয়ারী ১৯৭৯ সালে গেজেট নোটিফিকেশন নং ৭/৮/ডি-১/১৭৫-১৬০; অনুযায়ী তিনি নিজেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত করেন ।

৯ই এপ্রিল ১৯৭৯ সালে গেজেট নোটিফিকেশন নং ৭/৮/ডি-১/১৭৫-২৭০; অনুযায়ী আগের নোটিফিকেশন বাতিল করে আবার নতুন ভাবে নিজেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত করেন যা ২৮শে এপ্রিল ১৯৭৯ সালে কার্যকর হবে ।

আবার ৯ই এপ্রিল ১৯৭৯ সালে অন্য একটি নোটিফিকেশন নং ৭/৮/ডি-১/১৭৫-২৭১; অনুযায়ী তিনি নিজেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদ থেকে অবসর গ্রহন করান , যা কার্যকর হবে ২৯-৪-১৯৭৮ সালে ।

এই সব বে-আইনী কার্যকলাপের কোন সুস্পস্ট ধারনা না পাওয়া গেলেও কারও বুঝতে বাকি থাকে না যে তিনি কি চাইছিলেন ?

ধরণা করা হয় এই সব কার্যকলাপের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান এমন অবস্থার সৃষ্টি করতে চান , যাতে তিনি সারা জীবন প্রেসিডেন্ট পদে বহাল থাকতে পারেন ।

পরবর্তিতে খোন্দকার মোশতাক বলেছিলেন - জিয়াউর রহমানের গণতন্ত্র একনায়কতন্ত্রের চেয়েও ভয়ংকর ছিলো ।



সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৩:২৯
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয় অংশ)

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:০৫


আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
আমাদের সদ্য খনন করা পুকুরটা বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেল। যা মাছ সেখানে ছিল, আটকানোর সুযোগ রইল না। আমি আর দুইবোন শিউলি ও হ্যাপি জালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×