somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাওলানা নিজামী সাঈদী ও মুজাহিদকে গ্রেফতারের ১ বছর পূর্ণ হলো আজ: রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বিনা অপরাধে কারাবন্দি তারা

২৯ শে জুন, ২০১১ সকাল ১১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ২৯ জুন। ঠিক এক বছর আগে এই দিনেই জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ ৩ নেতা মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে বানোয়াট মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ। এর জের ধরেই শুরু হয় জামায়াতে ইসলামীর ওপর সরকারের ক্র্যাকডাউন। একে একে গ্রেফতার করা হয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর আমীর রফিকুল ইসলাম খানসহ জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের। শুধু মামলা দিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি সরকার। তাদেরকে দিনের পর দিন রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। নোংরা জায়গায় থাকতে দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক নেতা রিমান্ডে নেয়ার ঘটনা বর্তমান সরকারই দেখালো।
হয়রানিমূলক মামলায় তাদের গ্রেফতার করা হলেও উচ্চ আদালত থেকে তারা সবগুলোতেই জামিনে ছিলেন। কিন্তু যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রশ্নবিদ্ধ আটকাদেশের দোহাই দিয়ে তাদের আটকে রাখা হয়। তবে সম্প্রতি জামায়াত নেতৃবৃন্দকে আরো কয়েকটি নতুন মামলায় জড়ানো হয়েছে।
জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতারের এক বছর পূর্ণ হলো আজ। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ দায়ের করতে পারেনি সরকার। সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ ছাড়াই ১টি বছর কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে বন্দি আছেন দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। কী তাদের অপরাধ? কেন তাদের এভাবে আটকে রাখা হয়েছে, তাদের স্বজনদের একটাই জিজ্ঞাসা।
যে মামলায় গ্রেফতার শীর্ষ নেতৃবৃন্দ
গত বছরের ১৭ মার্চ রাজধানীর মগবাজারে আলফালাহ মিলনায়তনে একটি আলোচনা সভায় জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরীর আমীর রফিকুল ইসলাম খানের দেয়া বক্তব্য বিকৃতির মাধ্যমে প্রতারণাপূর্বক সরকারি দল আওয়ামী লীগ সমর্থিত কতিপয় পত্রিকায় রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সঙ্গে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে তুলনার মিথ্যা অভিযোগে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এ সংবাদকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি রেজাউল হক চাঁদপুরী ২১ মার্চ সিএমএম আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং সিআর-১০২২/২০১০। মামলার ধারা হচ্ছে ২৯৮/১০৯ দঃবিঃ। এ মামলায় জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, ঢাকা মহানগরীর আমীর রফিকুল ইসলাম খান ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের তৎকালীন সভাপতি ইয়াহইয়াকে জড়ানো হয়। ২১ মার্চ মামলা দায়ের করার পর ৩০ মার্চ ৫ জনের বিরুদ্ধে সমন জারি করে আদালত। ২৯ জুন আদালত শিবির নেতা আ.স.ম ইয়াহইয়া ছাড়া ৪ জনের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে। গ্রেফতারী পরোয়ানা জারির সাথে সাথেই জাতীয় প্রেসক্লাবের একটি অনুষ্ঠান থেকে বের হওয়ার পথে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে, রাজধানীর শহীদবাগস্থ বাসা থেকে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে এবং নিজবাড়ি ফরিদপুর যাওয়ার পথে সাভার থেকে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে আটক করা হয়। পরদিন তাদের আদালতে হাজির করা হলে ৩ জনই এ মামলায় আদালত থেকে জামিন লাভ করেন। তবে অন্য মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেয়া হয়।
মাওলানা নিজামী গ্রেফতার হলেন যেভাবে
বিশ্বমাদক বিরোধী দিবস উপলক্ষে গত বছরের এই দিনে ন্যাশনাল ডক্টর্স ফোরাম ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। তিনি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন, বক্তৃতা দেন দীর্ঘক্ষণ। তিনি বলেন, মাদকের অভিশাপ থেকে মানবতাকে বাঁচাতে হলে শুধু রাজনৈতিকভাবেই নয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবেও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বিকেল ৫টায় তিনি বক্তব্য শেষ করে প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জ থেকে বের হন। গাড়িতে উঠেন। ৫টা ১২ মিনিটে গাড়ি চলতে শুরু করে। কিন্তু তার আগেই প্রেসক্লাবের বাইরে তোপখানা রোড এলাকায় পুলিশ অবস্থান নেয়। প্রেসক্লাবের প্রধান ফটকে গাড়ি যাওয়ার সাথে সাথেই সামনে এসে দাঁড়ায় পুলিশ। ডিবির সহকারী পুলিশ কমিশনার ওবায়েদ সামনে দাঁড়ান। তিনি জানান, ওনার নামে ওয়ারেন্ট ইস্যু হয়েছে। উনাকে নিয়ে যাবো। এ সময় জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি হামিদুর রহমান আযাদ এমপি ওয়ারেন্ট দেখতে চান। কিন্তু পুলিশ তা দেখাতে পারেনি। এ সময় পুলিশ মাওলানা নিজামীর গাড়ি ঘিরে ফেলে আশেপাশে থাকা সাধারণ জনতাকে সরিয়ে দিতে থাকে। চলে যায় বেশ কিছু সময়। মাওলানা নিজামী এ সময় নামায পড়ার জন্য সময় চান। এসি ওবায়েদ বলেন, আমরা যেখানে নিয়ে যাবো সেখানেই নামাজের ব্যবস্থা করা হবে। উনাকে সম্মানের সাথেই আমরা নিয়ে যাবো।
বিকেল ৫টা ৩৭ মিনিটে পুলিশের পাজারো (ঢাকা মেট্টো-ঘ-১১-২১৯৩) এ মাওলানা নিজামীকে উঠিয়ে রওয়ানা দেয় পুলিশ। এ সময় মাওলানা নিজামীর পাশে বসেন এসি ওবায়েদ। মাওলানা নিজামীকে বহনকারী গাড়িটি সার্ক ফোয়ারা, শেরাটন মোড় হয়ে ডিবি অফিসে নিয়ে যায়। পরদিন মাওলানা নিজামীকে কোর্টে হাজির করা হয়। যে মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সে মামলায় তার জামিন হলে থেমে থাকেনি সরকার। একের পর এক মামলা আর রিমান্ডে নেয়া হয়েছে বর্ষিয়ান এই নেতাকে।
মাওলানা নিজামীর বিরুদ্ধে যত মামলা
মাওলানা নিজামীকে এ পর্যন্ত হয়রানিমূলক ১১টি মামলায় জড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক মামলায় সম্পূরক চার্জশিটে তার নাম জুড়ে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর পল্টন থানায় ৩টি মামলা, রমনা থানায় ১টি মামলা, উত্তরা থানায় ১টি, কদমতলী থানায় ১টি, রাজশাহীর ফারুক হত্যা মামলা, কথিত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া মামলা, পল্লবী ও কেরানীগঞ্জে একটি করে মামলা রয়েছে। এর মধ্যে পল্লবী ও কেরানীগঞ্জের মামলা দু'টি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়েছে।
চারদলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ এই নেতাকে এসব মামলায় ২৪দিন রিমান্ডে নেয়া হয়। এছাড়া ট্রাইব্যুনালের আদেশে ধানমন্ডির কথিত সেইফহোমে একদিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে মানসিক নির্যাতন করা হয়।
যেভাবে গ্রেফতার হন মাওলানা সাঈদী
গত বছরের এই দিনে বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ৯১৪, শহীদবাগস্থ বাসায় যায় পুলিশ। সাদা পোশাকধারী পুলিশ এ সময় বাসায় গিয়ে জানায়, মাওলানার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে। আমরা নিয়ে যাবো। তবে পুলিশ ওয়ারেন্টের কোন কাগজ দেখাতে পারেননি। এ সময় মাওলানা সাঈদী প্রস্তুতির জন্য সময় চান। এর পর পরই ডিবি পুলিশের সাদা মাইক্রো (ঢাকা মেট্ট্রো-চ-৫১-৬২৭১) তে করে তাকে নিয়ে আসে। সন্ধ্যা ৬টায় তাকে মিন্টো রোডস্থ ডিবি পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে যত মামলা
জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মধ্যে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকেই সবচেয়ে বেশি মামলা দেয়া হয়েছে। তাকে এ পর্যন্ত ১৩টি মামলায় জড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীর পল্টন থানায় ৩টি মামলা, রমনা থানায় ২টি মামলা, উত্তরা থানায় ১টি, কদমতলী থানায় ১টি, রাজশাহীর ফারুক হত্যা মামলা, কথিত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া মামলা, শের-ই-বাংলানগর থানায় ১টি, পিরোজপুরে ২টি এবং কর নিয়ে এনবিআরের ১টি মামলায় মাওলানা সাঈদীকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এছাড়া পিরোজপুরে দায়ের করা ২টি মামলা যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়েছে।
জামায়াত নেতৃবৃন্দের মধ্যে মাওলানা সাঈদীকেই সবচেয়ে বেশী রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় ৩১ দিন রিমান্ডে নেয়া হয় বর্ষিয়ান এই আলেমে দ্বীনকে। এর মধ্যে রমনা থানায় দায়ের করা ২০০৪ সালের হুমায়ন আজাদ হত্যা প্রচেষ্টা মামলায়ই তাকে ১২ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের আদেশে ধানমন্ডির কথিত সেইফ হোমে তাকে একদিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
যেভাবে গ্রেফতার হলেন জনাব মুজাহিদ
ঢাকা থেকে ফরিদপুরের নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে সাভার স্মৃতিসৌধের সামনে থেকে আটক করেছে আশুলিয়া থানা পুলিশ। পরে আশুলিয়া থানায় নেয়ার পর ঢাকা থেকে ডিবি পুলিশের একটি টীম এসে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে।
বিকেল চারটায় উত্তরার বাসা থেকে জনাব মুজাহিদ স্ত্রী তামান্না জাহান ও মেঝো ছেলে আলী আহমেদ তাহকীকসহ ফরিদপুরের নিজ বাড়ির উদ্যেশে রওয়ানা দেন। বিকেল চারটা ৪০ মিনিটে তিনি সাভার স্মৃতিসৌধের সামনে আসলে আশুলিয়া থানার এসআই মনজুর মোরশেদ ও শাহাদাৎ হোসেনের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মুজাহিদের গাড়ি থামিয়ে আধা ঘণ্টা আটকিয়ে রাখে। গাড়ি কেন আটক করা হয়েছে জানতে চাওয়া হলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, উপরের নির্দেশেই এমনটা করা হয়েছে। এসময় তারা গাড়ির চাবিও নিয়ে নেন। মুজাহিদ পুলিশ কর্মকর্তাদের বলেন, আপনারা আইনের লোক। আর আমি নিজেও একজন আইনানুগ নাগরিক। আইনে শ্রদ্ধা করি। আপনারা যেভাবে বলবেন আমি আপনাদের সেভাবেই সহযোগিতা করবো। পুলিশ কর্মকর্তা ঊর্ধ্বতন ব্যক্তির সাথে মোবাইলে কথা বলার পরে বিকেল পাঁচটার দিকে মুজাহিদকে তার নিজ গাড়িতে করেই আশুলিয়া থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। থানায় নেয়ার পর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষে মুজাহিদকে বসিয়ে রাখা হয়। এসময় ওসি সিরাজুল ইসলাম নিজেকে গোপালগঞ্জের লোক পরিচয় দিয়ে বলেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢাকা থেকে ডিবি পুলিশের ঊর্ধ্বতন টীম চলে আসবে। তাদের সাথেই আপনাকে ঢাকা যেতে হবে।
আশুলিয়া থানা থেকে সন্ধ্যা ছয়টায় ঢাকার ডিবি পুলিশের একটি টীম সাদা মাইক্রোবাসে করে (ঢাকা মেট্রো চ ৫৩-২০৯৪) মুজাহিদকে ঢাকা নিয়ে আসে। সন্ধ্যা ৭ টা ১৫ মিনিটে মুজাহিদকে ঢাকায় ডিবি অফিসে আনা হয়।
মুজাহিদের বিরুদ্ধে যত মামলা
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত ১২টি মামলা দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ তাকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় জড়ানো হয়। এ ছাড়া রাজধানীর পল্টন থানায় ৩টি মামলা, রমনা থানায় ১টি মামলা, উত্তরা থানায় ১টি, কদমতলী থানায় ১টি, বিমানবন্দর থানায় ১টি, রাজশাহীর ফারুক হত্যা মামলা, কথিত ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দেয়া মামলা, পল্লবী ও কেরানীগঞ্জে একটি করে মামলা রয়েছে। এর মধ্যে পল্লবী ও কেরানীগঞ্জের মামলা দু'টি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হয়েছে।
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে বিভিন্ন মামলায় ২৭ দিন রিমান্ডে নেয়া হয়। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের আদেশে ধানমন্ডির কথিত সেইফ হোমে তাকে একদিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
মুহাম্মদ কামারুজ্জামান
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাপ্তাহিক সোনার বাংলার সম্পাদক মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে গত ১৩ জুলাই হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ পর্যন্ত ৮টি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় ১৫ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দেয় আদালত।
আবদুল কাদের মোল্লা
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা গত ১৩ জুলাই হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ পর্যন্ত ৭টি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় ১৫ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দেয় আদালত।
আরো যারা গ্রেফতার আছেন
এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রাজশাহী মহানগরী আমীর আতাউর রহমানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এখন কারাগারে আছেন। সর্বশেষ শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর মজলিশে শূরার সদস্য ড. রেজাউল করিম এখন ৪ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।
আইনজীবীর বক্তব্য
জামায়াত নেতৃবৃন্দের আইনজীবী এডভোকেট আবদুর রাজ্জাক দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে যতগুলো মামলা দেয়া হয়েছে, সবগুলোই রাজনৈতিক হয়রানিমূলক। শুধুমাত্র তাদের আটকে রাখার জন্যই মামলাগুলো সাজানো হয়েছে আর কিছু কিছু মামলায় অযৌক্তিকভাবে জড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, এসব হয়রানিমূলক মামলায় তারা জামিনে রয়েছেন। তারপরও তাদের কেন আটকে রাখা হয়েছে? তবে সম্প্রতি তাদেরকে নতুন করে কয়েকটি মামলায় জড়ানো হয়েছে। তিনি বলেন, আসলে বিরোধীদের দলনের কৌশল হিসেবেই সরকার জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে কারাগারে আটকে রেখেছে। এক বছর হয়ে গেলো এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ দায়ের করতে পারেনি সরকার। এ থেকেই বুঝা যায়, রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্যই তাদেরকে মামলায় জড়ানো হয়েছে।
জামায়াতের বক্তব্য:
জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, গত বছরের ২৯ জুন জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে একটি হাস্যকর মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা সারা জীবন ইসলামের জন্য কাজ করে গেছেন, তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দেয়ার মামলায়। তিনি বলেন, এ মামলায় তাদের জামিন হলেও তাদেরকে একের পর এক মামলায় জড়িয়ে আটকে রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এসব মামলা দিয়েই তারা ক্ষান্ত হয়নি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের মীমাংসিত ইস্যুতে আটকে রাখা হয়েছে। সুস্পষ্ট কোন অভিযোগ ছাড়াই তাদেরকে একটি বছর বিনা অপরাধে আটকে রাখা মানবাধিকারের চরম লংঘন। এটা কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, যুদ্ধাপরাধ আইন করা হয়েছিল পাকিস্তানের ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের জন্য। কিন্তু এখন সেই আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে, এদেশের স্বনামধন্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে, যারা সারা জীবন দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য। তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই বলেছেন এই আইনটি একটি কালো আইন। আন্তর্জাতিক মহলও একে ভালো আইন বলেনি। তারপরও বিচারের নামে প্রহসন করে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে আটকে রাখা হয়েছে। ৩০ মাসে সরকারের ব্যর্থতা, দেশ বিক্রির ষড়যন্ত্র ঠেকাতে তারা যেন জনগণকে সাথে নিয়ে সোচ্চার ভূমিকা পালন করতে না পারে, এই জন্যই তাদের আটকে রাখা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, জনগণ অবশ্যই আন্দোলনের মাধ্যমে নেতৃবৃন্দকে বের করে আনবে।
এটিএম আজহার বলেন, তারা অযৌক্তিকভাবে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে আটকে রাখা হয়েছে, তার বড় প্রমাণ, জামায়াতে ইসলামীকে জনমত সৃষ্টি করতে বাধা দেয়া হচ্ছে। জনমত সরকারের পক্ষে নেই বলেই তারা রাজপথে জামায়াতে ইসলামীকে ভূমিকা পালনে বাধা দিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এতো মামলা দিয়েও তারা যখন মনে করেছে, জামায়াত নেতৃবৃন্দকে কিছু করতে পারবে না, তখনই মাওলানা নিজামীকে ৭ বছরের পুরনো মামলা চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক মামলায় জড়ানো হয়েছে। তিনি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
৪৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×