somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিয়মিত কুরআন পড়ুন এবং অবশ্যই বুঝে পড়ুন

২৯ শে জুন, ২০১১ সকাল ৮:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্পূর্ন লেখাটি একবার পড়ার জ্ন্য অনুরোধ করছি।
"আপনি আমার সেই বান্দাগনকে সুসংবাদ দিন,-যাহারা এই কালামকে মনযোগ দিয়া শোনে, তারপর উহার ভাল ভাল কথাগুলো অনুসরণ করে; ইহারাই তাহারা যাহাদিগকে আল্লাহ হেদায়েত করিয়াছেন এবং ইহারাই তাহারা- যাহারা জ্ঞানবান।" সুরা যুমার (৩৯) আয়াত : ১৮
সমস্থ প্রশংসা সেই আল্লাহ সুবহানুহা তাআলার যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং মানবজাতীর পথ প্রদর্শনের জন্য আমাদেরকে দান করেছেন সবচেয়ে বড় নিয়ামত বিশ্ময়কর গ্রন্থ আল-কুরআন।
প্রিয় পাঠক,
রাসুল (সা:) বলেছেন যে, "আমি তোমাদের জন্য দুটি জিনিস রেখে গেলাম, একটি হলো আল্লাহর কিতাব ও অন্যটি আমার সুন্নাহ, যতদিন তোমরা এই দুইটি আকঁড়ে ধরে রাখবে ততদিন তোমরা পথ ভ্রষ্ট হবে না। সুতরাং এই দুটি ধরে রাখার অর্থ হলো ইহার জ্ঞান অর্জন করা এবং সে অনুযায়ী কাজ করা। আর কোরআন হাদীসের জ্ঞান অর্জন প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর জন্য ফরজ করা হয়েছে।
অথচ অত্যন্ত দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, আমরা কোরআন থেকে জ্ঞান অর্জন করার জন্য মোটেও প্রস্তুত নই, বরং কোরআনকে নিদৃষ্ট কিছু আনুষ্ঠিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রেখেছি।

আজ মুসলিম সমাজে প্রচলিত যে, কোরআন শরীফের একটি হরফ না বুঝে পড়লেও ১০ নেকি ছওয়াব। এই কথাটি মুসলিম সমাজে ব্যাপকভাবে চালু হয়েছে যে হাদিস থেকে তা একটু বিশ্লেষন করা প্রয়োজন। ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা:) বলেছেন, যে আল্লাহর কিতাবের একটি অক্ষর করাআ করেছে বা পড়েছে তার নেকি মিলবে। আর নেকি হলো আমলের ১০ গুন। আমি বলছি না যে, আলিফ লাম মীম একটি অক্ষর বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর এবং মীম একটি অক্ষর। (তিরমিযি, দারেমী, তিরমিযি হাদিসটিকে গরীব সহি বলেছেন)।

উপরিল্লিখিত হাদিসটিতে করাআ বা পড়া বলতে কি বুঝানো হয়েছে? পড়া দুই রকমের হতে পারে। ১. বুঝে পড়া এবং ২. না বুঝে পড়া। তবে এ কথা সর্বজন স্বীকৃত যে, পড়া বলতে অবশ্যই বুঝে পড়ার কথা বলা হয়ে থাকে। আর উপরের হাদীসটিতে করাআ শব্দের শাব্দিক অর্থও না বুঝে পড়া নয় বরং বুঝে পড়া। আর পৃথিবীর কোন বই না বুঝে পড়লে সে বই পড়ার কোন উদ্দেশ্য অর্জন হয় না বা কোন প্রকারের জ্ঞান লাভ হয় না, ফলে তার ফলাফল হয় শূন্য, তা সে যত গুরত্বপূর্ন বইই হোক না কেন। তবে আল কোরআন যেহেতু মহান আল্লাহ তায়ালার বাণী তাই এটি না বুঝে পড়লেও কিছু ফায়দা থাকতে পারে, তবে এ ব্যাপারে কোরআন-হাদীসের পর্যাপ্ত তথ্য অন্তত আমার এই ক্ষুদ্র জ্ঞানে নেই।

যে কোন অতিগুরুত্বপূর্ণ একটি বইটি কেউ না বুঝে পড়লে সেই গুরত্বপূর্ণ বইটি তার কাছে হয়ে যাবে একেবারে গুরত্বহীন, আর সবচেয়ে বড়কথা না বুঝে কেউই কোন কিছু পড়ে না, আর যে ব্যক্তি উক্ত বইটি পড়ে বুঝতে পারবে তার কাছে বইটির গুরুত্ব হবে অপরিসীম। এটাই বাস্তবতা। আর ইসলামকে বলা হয় বাস্তব ধর্ম। এখানে অবাস্তবতার কোন স্থান নেই।

তবে কোরআন না বুঝে পড়লেও কোরআন পড়ার হক আদায় হয়ে যায় অথবা ব্যাপক সোয়াব হয় এ তথ্যটি মুসলিম সমাজে ব্যাপকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে তা আমাদের জীবনে কি প্রভাব বিস্তার করেছে তা একটু জানার চেষ্টা করি এবং বোঝার চেষ্টা করি যে, আল্লাহ প্রদত্ত মানবজাতীর জন্য সবচেয়ে বড় করুনা থেকে আমরা কিভাবে বঞ্চিত হচ্ছি।

যে মুসলিমটি কোরআন শেখার প্রয়োজনীয়তা উপলদ্ধি করেছে সে শুধুমাত্র অতটুকু শিখেছে যে কোরআন শরীফ শুদ্ধ করে পড়া যায়। অর্থ বোঝার চেষ্টা করেনি বা গভীরভাবে জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করেনি, অথচ সেই ব্যক্তিটি পৃথিবীর অন্য কোন বই না বুঝে পড়ে না। সে হাদিস না বুঝে পড়ে না, ফিকাহ শাস্ত্র না বুঝে পড়ে না, ইসলামের ইতিহাস না বুঝে পড়ে না, ফিজিক্স, কেমিষ্ট্রি, বায়োলজি না বুঝে পড়ে না, খবরের কাগজ না বুঝে পড়ে না, এমনকি ফালতু একটি গল্পের বইও না বুঝে পড়ে না। কারন সে ভালকরেই জানে যে, না বুঝে পড়লে তা হয়ে যাবে মূল্যহীন। একজন ডাক্তার তার ডাক্তারী বিদ্যার বই থেকে গভীর জ্ঞান অর্জনের জন্য অত্যন্ত মনযোগসহকারে বুঝে পড়ে এবং সে অনুযায়ী রোগের চিকিসা করে, কিন্তু সে যদি না বুঝে ডাক্তারী বিদ্যার বই গুলো হাজারো বার খতম করে তবে তা তার বা সমাজের কোন উপকারে আসবে না। তখন তাকে একজন চিকিসক না বলে গাধাই বলা উচি কারন তখন সে হবে সেই গাধার মত যে পিঠের উপর বইয়ের বোঝা বহন করে অথচ সে জানে না যে তাতে কি লেখা আছে। আর যারা আল্লাহর কিতাব বোঝেনা এবং না বোঝার কারনে আমলও করে না তাদেরকে আল্লাহ তায়ালা ঐ বোঝা বহনকারী গাধার সাথে তুলনা করে নিকৃষ্ট করেছেন। "যাদেরকে তাওরাত (আমাদের জন্য কোরআন) বহন করতে দেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে যারা তা বহন করেনি, তারা হলো সেই গাধার মত যে কিতাব বহন করে নিয়ে বেড়াই।" -সূরা জুমা (৬২) : আয়াত-৫

কোরআন ও হাদীসে জ্ঞান অর্জনকে ফরজ করা হয়েছে এবং জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারে ব্যাপক উrসাহ দেওয়া হয়েছে। আল কোরআনে সূরা যুমার (৩৯) ৯ নং আয়াতে এরশাদ করা হয়েছে "বল, যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান হতে পারে?", এছাড়া আল কোরআনের আরো অনেক স্থানে বলা হয়েছে যে, "অন্ধ আর চুক্ষুমান কখনোও সমান হতে পারে না" এছাড়া রাসুল (সা:) বলেছেন, "জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর জন্য ফরজ" (ইবনে মাজা) এছাড়াও অনেক হাদীসে জ্ঞান অর্জনের জন্য জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। অথচ "না বুঝে পড়লেও প্রতি অরে ১০ নেকি" এ কথা জ্ঞান চর্চার পথে একটি বিরাট বাধা, যে জ্ঞান অর্জনকে ফরজ করা হয়েছে সেই ফরজ পালনের ক্ষেত্রে এই না বুঝে পড়া একটি প্রকাশ্য বাধা। আল্লাহ ও রাসুল (সা:) এর হুকুমে বাধাদানকারী কোন বিষয় আল্লাহ ও রাসুল (সা:) এর হুকুম হতে পারে কি? সুতরাং উক্ত হাদীস অনুযায়ী আল্লাহর কিতাব থেকে একটি অক্ষর পড়লে ১০ নেকি পাওয়া যাবে- তা অবশ্যই বুঝে পড়ার কথা বলা হয়েছে, না বুঝে পড়লে নয়। কারন না বুঝে পড়লে কোরআন তেলোয়াতের হক আদায় করা সম্ভব নয়। আর কোরআন অনুযায়ী কোরআন তেলোয়াতের হক আদায় না করে তেলোয়াত করলে সে ব্যক্তি বিশ্বাসী বা ঈমানদ্বার নয়। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, "যাহাদিগকে আমি দান করিয়াছি কিতাব, আর তাহারা উহা তেলোয়াত করিতেছে হক সহকারে, এইরূপ লোকই উহার প্রতি ঈমান আনে" - সুরা বাকারা (২) : আয়াত-১২১। সহজ আরবি, একেবারে সুস্পষ্ট বক্তব্য, কোরআন পড়তে হবে হক সহকারে অর্থাr যারা হক আদায় করে তেলোয়াত করে তারাই ঈমানদার। কোরআন পাঠের হক কি? যে কোন ব্যবহারিক গ্রন্থ পাঠের হক কি? হক হচ্ছে ১. শুদ্ধ করে পড়তে পারা, কেননা শুদ্ধ করে না পড়তে পারলে বিশেষকরে কোরআনের অর্থও বদলে যেতে পারে। ২. অর্থ বুঝতে পারা, ৩. সে অনুযায়ী কাজ করা এবং ৪. সেই জ্ঞানকে অন্যের নিকট পৌছানো বা অন্যকে জানানো ইত্যাদী। যদি বর্তমানে মুসলিম জাতিকে প্রশ্ন করা হয় যে, কোরআন শরীফ শুদ্ধ করে না পড়লে কি গুনাহ না সওয়াব? সকল মুসলিমের উত্তর হবে- অবশ্যই গুনাহ, আচ্ছা যদি কোরআনের কথা অনুযায়ী কাজ না করা হয় তবে কি গুনাহ না সওয়াব? সকল মুসলিমের উত্তর হবে- অবশ্যই গুনাহ, আচ্ছা কোরআন জানার পর যদি তা গোপন করি বা কাউকে না জানানোর চেষ্টা করি? সকল মুসলিমের উত্তর হবে- অবশ্যই গুনাহ, কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয় ভাই মসুলমান অর্থ না বুঝেই যদি কোরআন পাঠ করা হয়? তাহলে কি সওয়াব না গুনাহ? অধিকাংশ মুসলিমের উত্তর হবে- অবশ্যই সওয়াব, শুধু তাই নয় তাও আবার দশ গুন। আগের গুলোর উত্তর ঠিক আছে, কিন্তু যেটি সর্বাপক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অর্থা কোরআন তেলোয়াতের সবচেয়ে বড় হক সেটির বেলায় ঠিক উল্টা কথা চালূ হয়ে গেছে বা শয়তান একথাটি ব্যাপকভাবে চালু করে দিতে সক্ষম হয়েছে, কারন সে আমাদের প্রকাশ্য শত্রু আর সে চায় আমরা কোরআনের জ্ঞান থেকে দূরে থাকি। কারন কোরআনের জ্ঞান থেকে যাকে দূরে রাখা যাবে তাকে পথ-ভ্রষ্ট করা তার জন্য অত্যন্ত সহজ, আর এ জন্যই আল্লাহ সুবহানুআ তায়ালা কোরআন পাঠের আগে বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার জন্য নির্দেশ করেছেন। কারন কোরআনের জ্ঞান থেকে মানুষকে দুরে রাখাই শয়তানের সবচেয়ে বড় কাজ। ফলে কোরআনের জ্ঞান থেকে আমরা যত দূরে সরে যাচ্ছি শয়তান তত খুশি হচ্ছে, আর শয়তানকে খুশি করার অর্থই হলো আল্লাহকে অখুশি করা। হাদীসে বর্ণিত আছে, ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বর্ণিত রাসুল (সা:) বলেন, একজন জ্ঞানী ব্যক্তি শয়তানের নিকট হাজারো আবেদ অপেক্ষা ক্ষতিকর। (তিরমিযি ও ইবনে মাজা) ফলে কোরআনের জ্ঞান থেকে মানবজাতিকে দূরে রাখার সকল ধরণের কৌশল অবলম্বনে সে সদা ব্যস্ত। আর এ ভাবে শয়তানের চক্রান্তে কোরআনের জ্ঞান থেকে মুসলিম জাতি আজ অনেক দুরে সরে গেছে। ফলে মুসলিম জাতি আজ পৃথিবীর বুকে এক নিকৃষ্ট ও লাঞ্চিত জাতিতে পরিনত হয়েছে। কারন তারা জানে না যে তারা কি পড়ছে? কি পথ-নির্দেশ আছে তাদের জন্য আল-কোরআনে? আর সে কারনেই কোন এক ব্যবসায়ী হয়ত সকালে তেলোয়াত করেছে কোরআনের সেই আয়াত যেখানে বলা হয়েছে ওজনে বা পরিমাপে কম দেওয়ার ভয়াবহ পরিনাম সম্পর্কে, সেই ব্যবসায়ী কোরআনের ঐ আয়াতটি পড়ে কোরআন পাকে চুমু খেয়ে চলে গেল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এবং শুরু করলো মাপে কম দেওয়া। তার মধ্যে কোন রিয়াকশন বা প্রতিক্রিয়া হলো না, প্রতিক্রিয়া হবে কি করে? কারন সে তো বোঝেনি যা সে পড়েছে। ঠিক এমনিভাবে একজন সূদখোর, একজন ঘুষখোর, একজন পরচর্চাকারী, একজন বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী, একজন ভেজালকারী বা এই ধরনের কঠিন অপরাধী হয়ত নিয়মিত কোরআন তেলোয়াত করছে কিন্তু কোন প্রতিক্রিয়া নেই। ফলে মুসলিম সমাজ আজ পাপ দিয়ে ভরে গেছে।

মহাগ্রন্থ আল কোরআনে আল্লাহ তায়ালা কোরআন নিয়ে চিন্তা গবেষনার জন্য জোর তাগিদ দিয়েছেন এবং যারা এটা করে না তাদেরকে তিরষ্কার করেছেন। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন "ইহা একটি বরকতময় কিতাব যাহা আমি আপনার প্রতি এজন্য নাজিল করিয়াছি যে, মানুষ উহার আয়াত সমূহে গভীরভাবে চিন্তা করে"। সুরা ছোয়াদ (৩৮) : আয়াত-২৯। এই বরকতময় কিতাব যদি আপনি নাই বোঝেন, তাহলে এর বরকত আপনি পাবেন কিভাবে? ডাক্তারী বিদ্যার একটি বই একজন ডাক্তারের কাছে খুবই গুরত্বপূর্ণ কারন সে বইটা পড়ে, বোঝে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে বা চিকিrসা করে। কিন্তু ডাক্তারী বিদ্যার ঐ গুরুত্বপূর্ণ বইটি যদি কোন অশিক্ষিত কাউকে দেওয়া হয় যে বইটি পড়ে বোঝে না তার কাছে ঐ বই এর মূল্য বাদামের ঠোঙার কাগজের মূল্যের চেয়ে বেশি কিছূ হবে না। কারন না বোঝার কারনে এর কোন কল্যাণ সে পাবে না।

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে কোরআনের আয়াত নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার নির্দেশ দিয়েছেন, অথচ না বুঝে পড়া চিন্তা-গবেষনার সম্পূর্ণ বিপরীত কাজ। আর যে ব্যক্তিটির বোঝার ক্ষমতাই নেই সে কিভাবে চিন্তা-গবেষনা করতে পারে? সুতরাং আল্লাহর আদেশের বিপরীত কোন কাজ অর্থাr না বুঝে পড়া কতটুকু সওয়াব এর কাজ তা সহজেই অনুমেয় এবং তাহা রাসুল (সা:) এর কথা হতে পারে না। তবে সকল ক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন যে, বান্দার সাধ্যের অতিরিক্ত কোন কাজ দয়াময় আল্লাহ কাহারো উপরে চাপান না। সুতরাং একান্ত ইচ্ছা সত্বেও বা আন্তরিক প্রচেষ্টা সত্বেও অথবা সম্পূর্ণ নিরুপায় হয়ে আল্লাহর কোন নির্দেশ পালন করতে ব্যর্থ হলে তিনি সর্বদায় ক্ষমার ঘোষনা দিয়ে রেখেছেন। ফলে একান্ত ইচ্ছা সত্বেও কোন ব্যক্তি যদি কোনভাবেই কোরআন শেখার সুযোগ না পায় তবে সেক্ষেত্রে আল্লাহ গফুরুও রাহিম, তিনি মা করবেন, কিন্তু আপনি বি.এ পাশ করেছেন, এম. এ পাশ করেছেন, বড় ডাক্তার হয়েছেন, ইঞ্জিনিয়ার হয়েছেন অথচ কোরআন বোঝেন নি বা কোরআনের জ্ঞান অর্জন করেননি, সে সেক্ষেত্রে ক্ষমা পাওয়ার প্রশ্নই আসবে না যদি না ক্ষমা প্রার্থনা না করেন।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, "তবে কি ইহারা কোরআনে গভীরভাবে চিন্তা করে না, নাকি অন্তর সমূহের উপর তালা লাগিয়া গিয়াছে? সূরা মুহাম্মদ (৪৭) : আয়াত-২৪। কোরআন নিয়ে চিন্তা না করার জন্য আল্লাহ রিতিমত তিরষ্কার করেছেন, আর যারা অর্থই বোঝে না তারা চিন্তা গবেষনা করবে কিভাবে? অর্থাr এখানে পরিষ্কারভাবে বলা যায় যে, ইচ্ছাকৃতভাবে না বুঝে কোরআন পড়ার অর্থই হলো আল্লাহর আদেশকে সরাসরি অমান্য করা। আল্লাহ তায়ালা যেখানে চিন্তা-গবেষনা করার কথা বলেছেন সেথানে আমরা নুন্যতম অর্থ বোঝার প্রয়োজনীয়তাও উপলব্ধি করতে পারছি না। রাসুল (সা:) বলেছেন, "যারা কোরআন পড়বে কিন্তু কোরআন তাদের হলকুমের নীচে নামবে না, তারা ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে এমনবেগে যেমন বেগে তীর ধনুক হতে বের হয়ে যায়"(বুখারী, মুসলিম, মুয়াত্তা) এই হাদীসে যেখানে বলা হচ্ছে যারা না বুঝে কোরআন পড়বে তারা তীরের বেগে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে, সেখানে না বুঝে কোরআনের একটি হরফ পড়লে ১০ নেকি সওয়াব পাওয়া যাবে একথা একেবারে অর্থহীন এবং বিপরীতধর্মী। রাসুল (সা:) আরো বলেছেন, ”হুযাইফা (রা:) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা:) বলেছেন, কোরআন পড় আরবদের সুর ও স্বরে এবং পরিহার কর আহলে ইসাক ও আহলে কিতাবের সুর। শীঘ্রই আমার পর এমন লোকেরা আসবে যারা কোরআনে গান ও বিলাপের সুর ধরবে কিন্তু কোরআন তাদের হলকুমের নীচে নামবে না। তাদের অন্তর হবে দুনিয়ার মোহে মোহগ্রস্থ এবং তাদের অন্তরও যারা ঐ পদ্ধতি পছন্দ করবে। (বায়হাকী ও রাজিন)। অন্য একটি হাদীসে বলা হয়েছে যে, "জ্ঞান দু'প্রকার। একপ্রকার হলো সেই জ্ঞান যা মুখ অতিক্রম করে অন্তরে পৌছায়। এ জ্ঞানই কিয়ামতে কাজে আসবে। অন্য প্রকার জ্ঞান মুখ পর্যন্তই থাকে, অন্তরে পৌছায় না। এ জ্ঞান কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে মানুষের বিরুদ্ধে প্রমান হিসাবে দাড়াবে" (দারেমী)। সুতরাং হাদিস অনুযায়ী ১০ নেকি সওয়াব পাওয়া যাবে কেবল বুঝে পড়ার ক্ষেত্রে। তবে এখানে অবশ্যই উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, কোরআন শেখার সময় বা হেফজ করার সময়ের প্রসঙ্গ আলাদা। কারন শেখার সময় বা হেফজ করার সময় যদি নিয়ত থাকে যে, আমি কোরআন শিখে বা মুখস্থ করার পর তা বোঝার চেষ্টা করবো এবং সে অনুযায়ী কাজ করবো তাহলে অবশ্যই আল্লাহ সুবহানুহা তায়ালা ও রাসুল (সা:) এর সন্তষ্টি অর্জন করা সম্ভব।

আর সবচেয়ে বড় কথা হলো আল্লাহ তায়ালা সমূদয় সৃষ্টিতে অনর্থক কোন কিছু বা খেলার ছলে কোন কিছু সৃষ্টি করেন নি বা বিনা উদ্দেশ্যে মানব জাতীর জন্য কোন বিধি-বিধান দেন নাই বা কোন কাজ করার আদেশ দেন নাই। আল্লাহর প্রতিটি বিধি-বিধান বা আদেশ-নিষেধের মধ্যে মানব জাতির জন্য অবশ্যই কোন না কোন কল্যান আছে। আর মানব জাতির জন্য যাহা কল্যাণকর বা উপকারী প্রকৃতপে সেটিই সওয়াব বা সেই কাজটিই সওয়াবের অন্তভূর্ক্ত। আর এ কারনে আল্লাহ তায়ালা আমাদের দোয়া করতে শিখিয়েছেন "হে আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়ায় কল্যাণ দান কর এবং আখেরাতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাদেরকে দোযখের আগুন থেকে রা কর"। সুতরাং আল্লাহ তায়ালার প্রতিটি আদেশ-নিষেধ আমাদের দুনিয়ার জন্য কল্যাণকর এবং আখেরাতের জন্যও কল্যাণকর। আমাদের কল্যাণের জন্যই আল্লাহর সমস্থ বিধি-বিধান। আমাদের কল্যাণ ব্যতিত বা নিরর্থক কোন কিছু দয়াময় আল্লাহ সৃষ্টি করেন নি বা অকারনে কোন কিছু তিনি আমাদের জন্য প্রেরণ করেন নি। এ পসঙ্গে কোরআন পাকে এরশাদ হয়েছে, "আর আমি আসমান ও জমিন এবং তদুভয়ের মধ্যে যাহা কিছু আছে তাহা অযথা সৃষ্টি করি নাই। ইহা তাদের ধারণা যাহারা কাফের; কাফেরদের জন্য বড়ই সর্বনাশ" সুরা ছোয়াদ (৩৮) : আয়াত-২৭। অর্থাr আল্লাহ তায়ালা বিনা উদ্দেশ্যে কোন কিছূ সৃষ্টি করেন নি, আল্লাহর প্রতিটি সৃষ্টির একটি উদ্দেশ্য আছে, আল্লাহর মানবজাতির জন্য প্রেরিত প্রতিটি বিধি-বিধানের উদ্দেশ্য আছে। নামাজের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে পাপ ও অশ্লিলতা থেকে বিরত রাখা, রোযার উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের মধ্যে তাকওয়া সৃষ্টি করা, এভাবে আল্লাহর প্রতিটি বিধি-বিধানের উদ্দেশ্য আছে। মাবজাতির জন্য কোরআন নাজিলের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে ”সিরাতুল মুস্তাকিম” সরল পথ প্রদর্শন করা অর্থাr পথ-ভ্রষ্টতা থেকে মানব জাতিকে বিরত রাখা। যারা ইহা অনুসরণ করবে তারা সরল পথ প্রাপ্ত হবে। আর ইহা অনুসরণের জন্য কোরআন পড়তে হবে। সুতরাং কোরআন পড়া বা কোরআন তেলোয়াতের উদ্দেশ্য হচ্ছে কোরআন বুঝে কোরআনের জ্ঞান অর্জন করে সে অনুযায়ী কাজ করে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ নিশ্চিত করা কিন্তু অর্থছাড়া বা না বুঝে কোরআন পড়লে কি এই উদ্দেশ্য সাধন হয়? সুতরাং কোরআন তেলোয়াতের কোন উদ্দেশ্য থাকবে না বা উদ্দেশ্যহীন ভাবে কোরআন পড়লে কি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।

আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, না বুঝেই শুধু কোরআন খতম হচ্ছে শতশত বার অথচ খতমকারী ব্যক্তিটি কোরআন বুঝছে না ফলে কোরআন পাঠের মূল উদ্দেশ্য আজ চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। কি বিশ্ময়কর ব্যাপার একজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ কোরআন পড়েছে অথচ সে জানে না তাতে কি লেখা রয়েছে। এমনিভাবে একজন ব্যক্তি যদি হাজার বারও না বুঝে কোরআন পড়ে তবে তার কতটুকু লাভ? কারন সে তো উপলব্ধি করতে পারবে না, সে তো মৃতের মত। শ্রষ্টার প থেকে মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামত বরকতময় এই মহাগ্রন্থ আল-কোরআন, যার প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে মানব জাতির জন্য শুধুই কল্যাণ, যাহা শান্তিকামীদের জন্য শান্তির পয়গাম, যাহা বিপদগ্রস্থ ও হতাশাগ্রস্থদের জন্য আশারবাণী, যাহাতে আছে জ্ঞানীদের জন্য জ্ঞানের অফুরন্ত ভান্ডার, যাহাতে আছে পুরো মানবজাতির সকল সমস্যার সমাধান- সেই মহিমাম্বিত আল কোরআনের জ্ঞান থেকে শয়তান আজ কিভাবে মুসলিম জাতিকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে তা আজ চিন্তার সময় এসেছে। সময় এসেছে শয়তানের সমস্থ ষড়যন্ত্রকে ছিন্ন করে কোরআনের জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে মুসলিম জাতি আবার সঠিক পথে ফিরে আসার, সময় এসেছে ফিরে আসার কোরআন ও সুন্নাহর কাছে তার ইহকালিন কল্যাণ ও পরকালিন মুক্তির জন্য।

আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান দ্বারা যতটুকু বুঝেতে পেরেছি তা মানুষের কাছে পৌছানোর চেষ্টা করেছি। আমার অজ্ঞতার কারনে বা জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারনে অনিচ্ছাকৃত কোন ভূল বক্তব্য প্রদান করলে পরম করুনাময় আল্লাহ তায়ালার নিকট মার্জনা প্রার্থনা করছি এবং দোয়া করছি, হে প্রভূ, আমার জ্ঞানকে আরো বাড়িয়ে দাও। আমিন।

বিজ্ঞ পাঠকের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ যদি আমি কোরআন-হাদীস অনুযায়ী আমার কোন কথা ভূল হয়ে থাকে তবে দয়া করে সঠিক রেফারেন্স সহ অবশ্যই আমাকে জানালে আমি কৃতজ্ঞ থকবো।

কাজী আবুল বাসার
ই-মেইল : [email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১১ বিকাল ৩:০৯
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×