somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ট্রানজিটের চূড়ান্ত প্রস্তুতি

২৯ শে জুন, ২০১১ রাত ২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ট্রানজিট ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থানপত্র তৈরির চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নেতৃত্বে প্রায় ১৫ মন্ত্রণালয় এ কাজ করছে। তবে বিশেষত কাজ করছে ৬টি মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চিঠি পাওয়ার পর গত দুই সপ্তাহে এ সংক্রান্ত তিনটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। লক্ষ্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের আগেই ট্রানজিট বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান চূড়ান্ত করা।

সূত্র জানায়, আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকগুলোতে ট্রানজিট বাস্তবায়নে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জনবলসহ অবকাঠামোগত কী কী সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে তার পর্যালোচনা করা হয়। এখন কী কী সুবিধা বিদ্যমান আছে, কতটা আরও প্রয়োজন, প্রয়োজন মেটাতে সম্ভাব্য পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। নিরপত্তা ও বাণিজ্যকভাবে লাভবান হওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানপত্রে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই এ অবস্থানপত্র চূড়ান্ত হবে। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে জানানো হয়েছে, ড. মনমোহনের সফরসূচি চূড়ান্ত না হলেও তার এ সফরে ট্রানজিট বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে আগামী ৬ জুলাই ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা এলে তাকে ট্রানজিট ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান সুস্পষ্ট করতে চায় প্রধামন্ত্রীর কার্যালয়।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুষ্ঠিত ভিন্ন দুটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ভারত-বাংলাদেশের বিদ্যমান নৌ ট্রানজিট, এর ফি, চার্জ, রেল ট্রানজিট, মোটর ভেহিক্যাল এগ্রিমেন্টস ইত্যাদি বিষয়ে অবস্থানপত্র তৈরির। এ জন্য আগেই গঠিত কোর কমিটির প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে শীঘ্রই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানোর তাগাদা দেওয়া হয়। কোর কমিটির পক্ষ থেকেও ইতিবাচক সাড়া দেওয়া হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত দুই সপ্তাহ আগে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর আগমন নিশ্চিত হলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চিঠি পাঠিয়ে প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চায় অর্থ, বাণিজ্য, নৌপরিবহন, যোগাযোগ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। পরে বিভিন্ন আরও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে পররাষ্ট্র ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের ওই চিঠিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় মনে করে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে ট্রানজিট সংক্রান্ত ইস্যু সম্পর্কে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করা দরকার। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এক বছরের জন্য নবায়ন করা নৌ ও বাণিজ্য প্রটোকলের চুক্তি ২০১২ সালের ৩১ মার্চ শেষ হবে। এই প্রটোকলের আওতায় ভারত বাংলাদেশের সাতটি নৌ রুট ব্যবহার করে। এরমধ্যে দুটি রুট সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। প্রটোকলের আওতায় নৌরুট রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ভারত ২০০৯-১০ অর্থবছরে সোয়া চার কোটি টাকা দিয়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে দেওয়ার কথা সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। এ ছাড়া পাইলটেজ চার্জ, ক্যানেল চার্জ, বার্থিং চার্জ ও ল্যান্ডিং চার্জও দিতে হয় ভারতকে। নৌ প্রটোকলে বাংলাদেশ ও ভারতের সমান সমান বা ৫০ অনুপাত ৫০ ভাগ মালামাল বহনের কথা বলা হলেও বাংলাদেশের জাহাজ প্রায় ৯৯ শতাংশ পণ্য পরিবহন করে। এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ ট্রানজিট বাস্তবায়ন হলে কী পরিমাণ চার্জ হওয়া উচিত এবং সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের আরও কোনো অবকাঠামো সুবিধার প্রয়োজন আছে কিনা।

রেল ট্রানজিট প্রটোকলের বিষয়ে প্রধামনমন্ত্রীর উপদেষ্টার চিঠিতে বলা হয়, ১৯৭৮ সালে রেল প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়। ওই প্রটোকলের আওতায় বাংলাদেশের রেল মিটারগেজে ভারতের রাক্সোল ও যুগবাণী স্টেশন পর্যন্ত যেতে পারত। ভারত ওই রুটে ব্রডগেজ স্থাপন করায় ২০০৫ সাল থেকে ওই রুট বন্ধ হয়। তাই ট্রানজিটের লক্ষ্যে রাধিকাপুরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে বাংলাদেশ সরকার বিরল-রাধিকাপুর সেকশনে ব্রডগেজ স্থাপনের প্রকল্প নিয়েছে। রোহানপুর-সিঙ্গাবাদ রেল রুটটি ব্যবহার উপযোগী হলেও প্রটোকলে রুটটি উল্লেখ না থাকায় তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে ভারতের কাছে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় প্রস্তাব পাঠিয়েছে। আর ভারত তা নেপালে পাঠিয়েছে। নেপালে উত্তরের অপেক্ষা করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে আরও কোনো ভাবনা আছে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছে আন্তঃমন্ত্রণালয়।

আরও বলা হয়, আখাউড়া-আগরতলা দিয়ে ট্রানজিট করতে সেখানে রেল সংযোগ স্থাপনে ভারত সরকার রাজি হয়েছে। বাংলাদেশ এখন সেখানে জমি অধিগ্রহণ করবে। তবে এ বিষয়ে কোনো অস্পষ্টতা থাকলে দূর করতে হবে। অপরদিকে, আশুগঞ্জ দিয়ে ইতোমধ্যেই ভারতীয় বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ওডিসি (ওভার ডাইমেনশনাল কার্গো) পরিবহন হয়েছে। তবে সেখানে পূর্ণাঙ্গ নৌবন্দর ও স্থায়ী শুল্ক কার্যালয় স্থাপনের লক্ষ্যে উপযুক্ত জায়গা এখনো পাওয়া যায়নি। এটা প্রয়োজন।

চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়, ভারত বাংলাদেশে একটি খসড়া প্রটোকল পাঠিয়েছে। সেটি মন্ত্রণালয়গুলোতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেওয়া হয়েছে। এ গঠিত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে উপদেষ্টার চিঠিতে।

সূত্র জানায়, কোর কমিটি ইতোমধ্যেই তাদের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে। কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, রাস্তা মেরামত, দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ এবং পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতির জন্য খরচ নেওয়া যায়। এ হিসাবে প্রতি ১০০ কিলোমিটারের জন্য ট্রাকপ্রতি ১১ দশমিক ২ ডলার এবং যাত্রী বহনকারী বড় বাসের জন্য ৫ ডলার নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। তবে কাস্টমস ফি না নেওয়ার মত দিয়েছে কোর কমিটি। নৌপথে জাহাজ চলাচলের ওপর কোনো ফি থাকবে না। আর ট্রানজিটের অবকাঠামো নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ট্রানজিট সংক্রান্ত সমীক্ষা প্রতিবেদন উল্লেখ করে বলা হয়, শুরুতে প্রতি বছর ভারতীয় পণ্য পরিবহন থেকে বাংলাদেশের আয় হবে ৫ কোটি ডলার বা ৩৫০ কোটি টাকা। ৫ বছরের মধ্যে ট্রানজিটের উপযোগী অবকাঠামো পুরোপুরি গড়ে তোলা সম্ভব হলে পরবর্তী বছরগুলোতে আয় হবে ৫০ কোটি ডলার বা ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর দীর্ঘমেয়াদে এ আয় বেড়ে দাঁড়াবে ১০০ কোটি ডলার বা প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা।
সূত্র
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×