somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাদকাসক্তি ও নিরাময়: করণীয় প্রসঙ্গ ---এমএম নিজামউদ্দীন

২৮ শে জুন, ২০১১ বিকাল ৩:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২৬ জুন ছিল মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ নিয়ন্ত্রক দপ্তর (ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম) ১৯৮৭ সাল থেকে দিনটিকে পালন করে আসছে। বাংলাদেশেও দিবসটি বিভিন্ন সংগঠনের সভা-সেমিনার সিম্পোজিয়াম-আলোচনার মাধ্যমে পালিত হয়েছে। বেরিয়েছে র‌্যালিও। কিন্তু আমাদের দেশে এখন যেহারে মাদক আসছে, তাতে এ দিবসের কোনো তাৎপর্য নেই। ‘মাদক নয়, স্বা¯ে’্যর কথা ভাবুন’Ñএই মূল ভাবনা নিয়ে ২০১০ সালে শুর“ হওয়া মাদকবিরোধী প্রচারণা চলছে বিশ্বব্যাপী। প্রচারণায় বলা হ”েছ, ড্রাগ ইজ দ্য পারফেক্ট কিলার অব দ্য সোসাইটি (মাদক হ”েছ সমাজের প্রকৃত ঘাতক)। পৃথিবীর সর্বত্র মাদক তার ভয়াবহ থাবা বিস্তার করে সমাজকে তলিয়ে দি”েছ অন্ধকারের দিকে। এ বছরের প্রতিপাদ্য হ”েছ গ্লোবাল অ্যাকশন ফর হেলদি কমিউনিটিস উইথআউট ড্রাগ (মাদকমুক্ত স্বা¯’্যবান সমাজের জন্য বিশ্বব্যাপী কর্মসূচি)। আর এর জন্য পরিবার, বিদ্যায়তন এবং সামাজিক কাঠামো সুসংহত করার দিকে অধিকতর গুর“ত্ব দেওয়ার কথা বলা হ”েছ। বাংলাদেশে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বেশ কিছু হত্যা-নৃশংসতার সঙ্গে মাদকাসক্তির যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া গেছে। এক সরকারি হিসাবমতে, বাংলাদেশে মোট মাদকাসক্তের সংখ্যা ৪৬ লাখেরও বেশি। বেসরকারি সূত্রমতে এ সংখ্যা ৭০ লাখের কাছাকাছি। এদের মধ্যে প্রায় ৯১ শতাংশ কিশোর ও যুবক। অন্যদিকে নারী মাদকাসক্তের সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। এটি কিন্তু প্রায় পাঁচ বছর আগের হিসাব। বর্তমানে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি। সরকারও চা”েছ মাদকাসক্তের সংখ্যা কমাতে। বিভিন্ন সময়ে আইন প্রয়োগকারী সং¯’ার সদস্যরা উদ্ধার করছে হাজার হাজার বোতল ফেনসিডিল ও অন্যান্য মাদক। পুড়িয়ে-গঁড়িয়ে নষ্ট করা হ”েছ সেসব মাদক। কিন্তু আমরা এর বিপরীতে দেখছি দেশে মাদকের সালতামামি। অনেক মাধ্যমে সংবাদ আসছে- মাদকে সয়লাব হয়ে যা”েছ দেশ। সরকারের এই উদ্ধার অভিযান কার্যত কোনো ফল দি”েছ না। এটার মূল কারণ হলো- উৎসে আঘাত না হানলে এর মূলোৎপাটন করা যাবে না। মাদক বাংলাদেশে খুব একটা তৈরি হয় না। এর বেশিরভাগই আসে বিদেশ থেকে। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে দেদারছে আসছে ফেনসিডিল। আর এর বিষাক্ত ছোবলে দেশের যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যা”েছ। মূলত আমাদের যেটা মনে হয়, সেটা হলো-মাদকের আগমন বন্ধ করতে হবে। দেশে মাদকের আগমন বহাল রাখলে কোনোদিনই এর ছোবল বন্ধ করা যাবে না। বিশ্ব স্বা¯’্য সং¯’ার সহায়তায় পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৮ বছরের ওপরে ০.৬৩ শতাংশ মানুষ মাদকাসক্ত। হাসপাতাল ও পুনর্বাসনকেন্দ্রগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ১৮ বছরের নিচে যাদের বয়স, তাদের মধ্যে এ হার আরও বেশি। কেন মানুষ মাদক গ্রহণ করে তর“ণেরাই বা কেন বেশি আসক্ত হয়, এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী গবেষণা হয়েছে বিস্তর, এখনো হ”েছ। মাদকাসক্তির কারণ হিসেবে দৈহিক, মানসিক ও সামাজিক এই তিন ধরনের কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। আর তাই মাদকাসক্তির চিকিৎসা ও প্রতিরোধেও তিনটি ত্রেকে সমান গুর“ত্ব দেওয়ার কথা নির্দেশিত হয়েছে। যক্ষ্মা বা ম্যালেরিয়ার চেয়ে মাদকাসক্তি কোনো অংশেই কম ভয়াবহ নয়। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় এই মাদকাসক্তি নিয়ে নেই কোনো অভিন্ন জাতীয় চিকিৎসা নীতিমালা বা ন্যাশনাল গাইডলাইন। আর এই নীতিমালা না থাকার সুযোগ নি”েছ বিভিন্ন কথিত পুনর্বাসন সং¯’া এমনকি অপচিকিৎসকরা। কারও কারও প্রচারণায় দেখা যায়, কেবল ‘আধ্যাÍিক’ প্রক্রিয়ায় তারা মাদকাসক্তি নির্মূল করছে, কেউ-বা কেবল ‘ব্যায়াম’ দিয়ে সারিয়ে তুলছে মাদকাসক্তির মতো একটি রোগকে। আবার কোনো কোনো মহল মাদকাসক্তিকে রোগ বলতে নারাজ। যদিও আমেরিকান সোসাইটি অব সাইকিয়াট্রিক মেডিসিন, বিশ্ব স্বা¯’্য সং¯’া প্রকাশিত ইন্টারন্যাশনাল কাসিফিকেশন অব ডিজিজ ও বিশ্বের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা মাদকাসক্তিকে নির্দেশিত করেছেন ‘ক্রনিক রিলান্সিং ব্রেইন ডিজিজ’ অর্থাৎ ‘দীর্ঘমেয়াদি এবং বারবার হতে পারে এমন একটি মস্তিষ্কের রোগ’ হিসেবে। এই ‘মাদকাসক্তি কোনো রোগ নয়’ যারা বলে তারা প্রচলিত বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসার বিপরীতে ‘এসো নিজেরা করি’ ধাঁচের চিকিৎসাপদ্ধতি আবিষ্কার করেছে এবং এক অর্থে প্রতারণামূলক বাণিজ্য করছে। তাদের মধ্যে অনেকেই ছিল আগে মাদকসেবী। ফলে মাদকসেবনকে কোনো রোগ হিসেবে স্বীকার করার প্রবণতা তাদের মধ্যে থাকে না। তারা মাদকাসক্তিকে রোগ না বলে সমাজ, পরিবার ও সঙ্গকে দায়ী করে একধরনের আÍতৃপ্তিতে তুষ্ট থাকে। মাদকাসক্তির চিকিৎসা ও প্রতিরোধে অবধারিতভাবে দৈহিক-মানসিক-সামাজিক সব েেত্রর সমন¦য় প্রয়োজন। সেখানে কোনো কোনো েেত্র দেখা যায়, কেবল ‘ওষুধভিত্তিক’ দৈহিক চিকিৎসা করে অথবা ওষুধ বাদ দিয়ে কেবল ‘কাউন্সেলিং’ দিয়ে মাদকাসক্তির খণ্ডিত চিকিৎসা করা হ”েছ। ফলে পুনরায় আসক্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়েই যা”েছ। অভিভাবকেরা চান দ্র“ত নিরাময়, কিন্তু মনে রাখতে হবে, মাদকাসক্তি নিরাময়ে সংপ্তি পথের কোনো সুযোগ নেই। ডিটক্সিফিকেশন, উইথড্রয়াল লণ দূরকরণ, মটিভেশন, কাউন্সেলিং, সামাজিক ও পেশাগত পুনর্বাসন, পরবর্তীকালে পুনরাসক্ত না হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যব¯’া গ্রহণ ইত্যাদি দীর্ঘমেয়াদি পথ পরিক্রম করে মাদকাসক্তির চিকিৎসা করা প্রয়োজন। আবার কোনো কোনো মাদকাসক্তি পুনর্বাসনকেন্দ্রের বির“দ্ধে রয়েছে নানা অভিযোগ রোগীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা, মাদক সরবরাহ করা, অবৈধ ও নিষিদ্ধ ওষুধ প্রয়োগ করে চিকিৎসা করা ইত্যাদি। এসব কারণে ই”ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক অভিভাবক তাঁর সন্তানকে চিকিৎসার আওতায় আনতে চান না। ফলে তাঁর সন্তানের জীবন হয়ে পড়ে বিপন্ন। মাদকাসক্তি চিকিৎসার বর্তমান অব¯’া পরিবর্তন করতে একটি জাতীয় চিকিৎসা নীতিমালা প্রণয়ন করা প্রয়োজন, যার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট সবাই অভিন্ন পদ্ধতিতে সব ত্রেকে (দৈহিক-মানসিক-সামাজিক) যথাযথ গুর“ত্ব দিয়ে মাদকাসক্তির চিকিৎসা করবেন, সমাজকে বাঁচাবেন আসন্ন ধ্বংসের হাত থেকে। এর পাশাপাশি সরকারকে মাদকের আগমন কঠোরহস্তে দমন করতে হবে। বাজারে সরবরাহ না থাকলে অনেকে এমনিতেই মাদক সেবন থেকে বিরত হবে। অন্তত যারা নতুন করে অভ্যস্ত হতে চলেছে, তারা সরে যাবে। নতুন করে আসক্ত হওয়ার সংখ্যাও কমে যাবে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×