somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কার্ল ফ্রিডরিখ গাউস: পর্ব- ১ গণিতের একজন অসাধারন প্রতিভাবান

২৮ শে জুন, ২০১১ দুপুর ২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইয়োহান কার্ল ফ্রিডরিশ গাউস (জার্মান ভাষায়: Johann Carl Friedrich Gaus) (এপ্রিল ৩০, ১৭৭৭ - ফেব্রুয়ারি ২৩, ১৮৫৫) অসামান্য প্রতিভাবান জার্মান গণিতবিদ এবং বিজ্ঞানী, যার গণিত এবং বিজ্ঞানের প্রায় সকল বিভাগে অবদান আছে । তাকে "গণিতের যুবরাজ" ও "সর্বকালের সেরা গণিতবিদ" বলা হয়। গণিতের যে সব বিষয়ে তার অবদান আছে সেগুলোর মধ্যে আছে সংখ্যা তত্ত্ব, গাণিতিক বিশ্লেষণ, অন্তরক জ্যামিতি, চুম্বকের ধর্ম, আলোকবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান, ইত্যাদি। গণিত এবং বিজ্ঞানের বহু শাখায় তার প্রশংসাযোগ্য প্রভাব ছিল, যে কারণে তাঁকে ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী গণিতবিদদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

গাউস ছোটবেলা থেকেই অসম্ভব প্রতিভাবান ছিলেন । ছোটবেলার তার গাণিতিক প্রতিভা নিয়ে অনেক গল্প শোনা যায়। তিনি কৈশোরেই তাঁর প্রথম গুরুত্বপূর্ণ গাণিতিক আবিষ্কারগুলো সম্পাদন করেন। ১৭৯৮ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ ডিসকিশিয়নেস অ্যারিথমেটিকা লেখা সমাপ্ত করেন, যা ১৮০১ সালে প্রকাশিত হয়। তাঁর এই কাজ গণিতের একটি পৃথক শাখা হিসেবে সংখ্যাতত্ত্বের ভিত্তি স্থাপন করে এবং আজও এর প্রভাব অপরিসীম।

কার্ল ফ্রিডরিখ গাউস ১৭৭৭ সালের ৩০ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন বর্তমান লোয়ার সাক্সনির অন্তর্গত ব্রাউনশভিগে। তাঁর পিতামাতা ছিলেন নিতান্তই খেটে-খাওয়া শ্রেণীর। শৈশবেই তিনি তাঁর গাণিতিক প্রতিভার পরিচয় দিতে শুরু করেন। তার অসাধারণ প্রতিভা সম্বন্ধে বেশ কিছু গল্প প্রচলিত আছে। কথিত আছে মাত্র তিন বছর বয়সে তিনি তার বাবার হিসাবের খাতার ভুল ধরে দেন মনে মনে গণনা করে। তার সম্বন্ধে আরেকটি বহুল প্রচলিত গল্প হচ্ছে- একবার তার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দুষ্টু ছাত্রদের ব্যস্ত রাখবার জন্যে ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত সংখ্যাগুলো যোগ করতে বলেন। গাউস তার শিক্ষককে অবাক করে দিয়ে মুহুর্তের মধ্যেই সঠিক উত্তরটি বের করে ফেলেন।

গাউসের যোগ করার পদ্ধতিটি ছিল অত্যন্ত সহজ - তিনি লক্ষ্য করেন ধারাটির দুই বিপরীত দিক থেকে পদ নিয়ে জোড়া তৈরি করতে থাকলে তাদের যোগফল সমান থাকে 1 + 100 = 101, 2 + 99 = 101, 3 + 98 = 101, এবং এভাবে সম্পূর্ণ যোগফলটি দাঁড়ায় 50 × 101 = 5050। তবে এই গল্পটির বিস্তারিত বিবরণ কিছুটা অনুমান করা বলেই মনে করা হয়; কিছু লেখক, যেমন জোসেফ রটম্যান তার বই এ ফার্স্ট কোর্স ইন এলজেবরাতে ঘটনাটি আদৌ ঘটেছিল কিনা তা নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

গাউসের বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা ব্রাউনশভিগের ডিউকের নজর কাড়ে, যিনি তাকে কলোজিয়াম কারোলিনামে (বর্তমান টেকনিশে উইনিভার্সিতেত ব্রাউনশভিগ) এ পড়ালেখা করবার সুযোগ করে দেন। তিনি ১৭৯২ থেকে ১৭৯৫ পর্যন্ত সেখানে অধ্যয়ন করেন এবং তারপর গোটিগেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭৯৫ থেকে ১৭৯৮ পর্যন্ত পড়েন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় গাউস বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপপাদ্য নতুন করে আবিষ্কার করেন এবং ১৭৯৬ সালে তিনি প্রথমবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেন; তিনি প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে যেসব সুষম বহুভুজের সংখ্যা ফার্মা প্রাইম (এবং, সেই সাথে যেসব বহুভুজের বাহুর সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন ফার্মা প্রাইম ও 2 এর ঘাতের গুণফল) তাদের কম্পাস ও দাগ-না-কাটা রুলার ব্যবহার করে আঁকা সম্ভব। এ আবিষ্কারটি গণিতের ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ছিল; অঙ্কণের সমস্যা গণিতবিদদের প্রাচীন গ্রিক আমল থেকেই ভাবিয়ে আসছিল, এবং এই আবিষ্কারই গাউসকে ভাষাবিজ্ঞানের পরিবর্তে গণিতকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে অনুপ্রাণিত করে। গাউস তার এই উদ্ভাবন নিয়ে অত্যন্ত গর্ববোধ করতেন এবং তার ইচ্ছে ছিল তার স্মৃতিফলকে একটি সুষম হেপ্টাডেকাগন (সতেরভুজ) খোদাই করা থাকবে। তবে কারিগররা এতে অপারগতা প্রকাশ করে, কারণ সতেরভুজ খোদাই করা বেশ কঠিন ব্যাপার ছিল, এবং এই শ্রমসাধ্য সপ্তদশভুজকে ভালোভাবে লক্ষ্য না করলে বৃত্তের সাথে পার্থক্য করা যেত না। ১৭৯৬ সালটি ছিল গাউস এবং সংখ্যাতত্ত্ব উভয়ের জন্যেই অন্যতম সফল একটি বছর। মার্চের ৩০ তারিখ তিনি হেপ্টাডেকাগন অঙ্কনের একটি কৌশল উদ্ভাবন করেন। তিনি মডুলার এরিথমেটিক আবিষ্কার করেন, যা সংখ্যাতাত্ত্বিক হিসাব-নিকাশ বহুগুণ সহজতর করে।তিনি 8 এপ্রিল কোয়াড্রাটিক রেসিপ্রোসিটি নিয়মটি প্রমাণ করেন। এই অসাধারণ সাধারণ সূত্রের মাধ্যমে কোন দ্বিঘাত সমীকরণ মডুলার পাটীগণিতের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব কিনা তা নির্ধারণ করা যায়। 31 মে তিনি মৌলিক সংখ্যা উপপাদ্যটি অনুমান করেন, যা মৌলিক সংখ্যার বন্টন সম্বন্ধে ধারণা প্রদান করে। গাউস আরও আবিষ্কার করেন যে, সকল ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যাকে সর্বোচ্চ তিনটি ত্রিভুজীয় সংখ্যার যোগফল হিসেবে প্রকাশ করা যেতে পারে; এই উদ্ভাবনের তারিখটি ছিল ১০ জুলাই এবং এ সম্বন্ধে তার ডায়েরিতে লেখা ছিল সেই বিখ্যাত শব্দগুচ্ছ, "ইউরেকা! num = Δ + Δ + Δ." অক্টোবর 1 তারিখে তিনি সসীম ক্ষেত্র সহগ বিশিষ্ট বহুপদীর সমাধান সংখ্যার ওপর একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন, যা ১৫০ বছর পর ভেইল অনুমিতির জন্ম দেয়।

(চলবে......)

তথ্যসূএ:
http://www.wikipedia.org/
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কথাটা খুব দরকারী

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ৩১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৩৪

কথাটা খুব দরকারী
কিনতে গিয়ে তরকারি
লোকটা ছিল সরকারি
বলল থাক দর ভারী।

টাকায় কিনে ডলার
ধরলে চেপে কলার
থাকে কিছু বলার?
স্বর থাকেনা গলার।

ধলা কালা দু'ভাই
ছিল তারা দুবাই
বলল চল ঘানা যাই
চাইলে মন, মানা নাই।

যে কথাটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×