somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃষ্টির দিনে লেখা গল্প

২৭ শে জুন, ২০১১ রাত ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাহাড়ের তলায় বন-বেষ্টিত একখণ্ড সমতল ভূমি। দু পাশে প্রহরীর মতো উঁচু শাল কড়ই গাছের সারি। যদিও এই বনের অনেকটা চাষাবাদ হয়ে যাচ্ছে। মোটর সাইকেল চলাচল শুরু হয়েছে। তাই ঘাসটা উঠে গেছে জায়গায় জায়গায় । তবে এখনো বিকেল থেকে লোকের চলাচল কমে যায়। সেই পথে একটা মেয়ে একলা দাঁড়িয়ে থাকলে অশরীরী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, অথবা উন্মাদ...

বাইরে বৃষ্টি ঝরছিল । দুপুরে একটা ভাতের দোকানে এসে আটকে গেলাম। বস অফিসে নেই। ফেরার তাড়াও কম। তাই পকেটের খসড়া কাগজ বের করে এরকম একটা গল্প শুরু করেছিলাম।

গল্পটাকে শুকনোই রাখলাম। সময় কাল বিকেল থেকে সন্ধ্যা, পশ্চিম আকাশ গোধূলীর রং । হোলি খেলার মতো আমেজ দিলাম দিগন্তে যেটা মিলিয়ে যাবে সোঁদাগন্ধময় জোনাক জ্বলা অন্ধকারে। মেয়েটা এই নেমে আসা অন্ধকারেই থাকুক । কিন্তু শহুরে মেয়ে সে তার কি ভয় পাওয়া স্বাভাবিক না? সে কি এই অন্ধকার থেকে ছাড়া পেতে প্রাণ ভয়ে চিৎকার করবে না, ছুটবে না?

মেয়েটাকে অস্বাভাবিক সাহসী হতে হবে অথবা ভয় বোঝে না এমনই বোকা! সাধারণত বড় লোকের আহ্লাদী মেয়েরা এমন হয়। বড়লোকের দৃশ্যমান পরিচয় বাড়ি আর গাড়ির ব্র্যাণ্ড। ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকায় মেয়েটার বাবা নতুন বাড়ি তুলেছে। কয়েক একর প্লট, আলি-শান সাদা বাড়ি এক নামে যে কেউ চেনে। বারান্দায় ব্যাকব্রাশ করা বাবা মাঝ বয়সী একটা লোক। স্লিপিং গাউন পরে ইংরেজি পত্রিকা দেখছে আর ফোন ধরে কথা বলছে। চরিত্রটিতে সিনেমার বহুবার দেখা একটা বাবাকেই ইন্সটল করে দিয়েছিলাম। শুধু ভিন্ন করতে মুখের পাইপটা ছেঁটে দিলাম। সিনেমার মত বাস্তবেও বড়লোকদের জলসা হয়, আর ছেলে মেয়ের দিকে নজর দেবার সময় তাদের কম থাকে।

মেয়েটি কি তবে বখে গেছে? সে কি ইচ্ছেমত ঘোরে, যার তার সঙ্গে আড্ডা দেয়। কিন্তু তাকে শহর থেকে বহুদূরের গ্রামে আনার উপায় কি?

মনে এল পিকনিক।

****
ধরে নেই পিকনিকে এসেছিল সে বনের পাশে। জায়গাটায় লোকজনের আনাগোনা কম। তাকে দলবিচ্ছিন্ন করে দিতে বাস থামিয়ে ডাকাত টাকাত ও ঢুকিয়ে দেয়া যায়। আর মেয়েটার পিছন লম্বা চুলের এক গুণ্ডা তাড়া করবে আর সে বনের ভিতর একটা ভারী গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকবে।

এসব ভাবনা বাদ দিলাম। গুণ্ডা তাড়া করাটা অশিক্ষিতদের রুচি ।

তারচেয়ে বুদ্ধদেব গুহের মতো কিছু শুকনো পাতা, ফুলের গাছের নাম ঠিক করে ফেললাম যাতে নিসর্গের বর্ণনায় মেয়েটাকে এখানে অবাস্তব মনে না হয়।

তবে সাধারণ স্কুল কলেজ বা পাড়ার পিকনিক হতে পারে। ধরে নেই হৈ চৈ হচ্ছে, আনন্দ হচ্ছে আর সেই কোলাহল থেকে নিস্তার পেতেই মেয়েটা হাঁটতে বের হয়েছিল। বনের প্রান্তে একটা প্রজাপতি উড়ছিল ডোরা কাটা। সেটা সে ধরতে গিয়েছিল। আর সে থেকেই সোনার হরিণের মতো প্রজাপতির পিছন পিছন অনেকটা দুরে আসে। শেষে বনের পায়ে হাটা ট্রেইলে ফিরতে গিয়ে দিক হারিয়ে ফেলে সে।

*****
বানাচ্ছিই যখন নায়িকাকে রূপবতী করে ফেলব। প্রজাপতির ছায়া অনুসরণ করে জলাশয়ের পাশে মেয়েটা দাঁড়াতে পারে। টলমল পানিতে ভেসে উঠতে পারে তার মায়াময় চোখ, উজ্জ্বল শ্যামা গায়ের রঙ। এমনিতেই সে গড়পড়তার মেয়েদের চেয়ে লম্বা , আকর্ষণীয় তার অধর-ওষ্ঠ। সাধু ভাষায় বললে সে পীনোন্নত পয়োধর, অর্থাৎ নদীর মতো ভরাট শরীর।

মেয়েটা এর আগে বহুবার আয়না দেখেছে, প্রশংসাও শুনেছে । সে জানে সে অসুন্দরী নয় আবার গল্পে পড়া রূপবতীও নয়।

তবে আবার থামলাম। পিকনিকের বুদ্ধিও বাতিল হল কেননা পিকনিকের চল উঠে গেছে নব্বইয়ের দশকে। পিকনিক দিয়ে অন্ততঃ কয়েক হাজার গল্প আর কয়েক শত সিনেমা হয়েছে।

****
শেষে সিন্ধান্ত হল যে মেয়েটা খানে এসেছে একাই। আসতেই পারে। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হচ্ছে না। ঢাকা থেকে দেশের শেষ মাথায় যাওয়া এখন কয়েক ঘণ্টার মামলা। তাছাড়া মেয়েরাও সাহসী হচ্ছে দিন দিন।

আজ সকালে মেয়েটির ভীষণ মন খারাপ ছিল। কাল রাতে নিজের চোখে বাবাকে যেমন দেখেছে তাতে আত্মহত্যাই করে বসতো হয়তো । সে কি ভেবে উদ্দেশ্যহীন টিকেট কেটে বসেছিল ট্রেনে। জায়গাটায় অনেক আগে একবার এসেছিল। আর দিনটা একটা কাটিয়ে সন্ধ্যায় ফিরবে। বাড়িতে ওর খালা ছাড়া আর কেউ নেই তার জন্য অপেক্ষা করে। তারা হয়তো খুঁজতে বেরুবে।

খুঁজলে খুঁজুক। ভয় পাবারও কিছু নেই। ওর ব্যাগে একটা ছুরি থাকে। সল্ট পেপার স্প্রে আনিয়েছিল অ্যামেরিকা থেকে। সুতরাং তার ভয়ডর নেই।

আসলে কুড়ি-বাইশ বছরের মেয়েদের ভেতর অন্যরকম পারসোনালিটি থাকে। সব কিছু জয় করার তীব্র ইচ্ছে থাকে। সে বয়সে বরং ছেলেরাই থাকে পিছিয়ে। যাই হোক তার হাত ব্যাগটা যথেষ্ট বড়। সে বই কেনে, ফেলে রাখে ওর ভেতরে। ব্যাগ খুললে বই মিলবে কঠিন দর্শনের বই, আর কবিতার।

মেয়েটার কষ্ট যে তার মা বেঁচে নেই। বাবা ব্যবসার উন্নতির জন্য যে কাণ্ডগুলো করে চলছে সেগুলো একদম ঠিক না। বাড়ির নিচতলায় তালাবদ্ধ বলরুম। বিদেশীদের আপ্যায়ন হয়। মদের পার্টি হয়। অপরিচিত নোংরা মেয়েরাও আসে যায়। রাতে থাকেও। এসব সে দেখে যায়। বাবার বিরুদ্ধে বলার মতো তার শক্তিও নেই। সে পরাজিত হয়, কোথাও একটু দুর্বলতা কাজ করে।

সে পারে না। কিন্তু ঘৃণা হয়। এটা তার মত মেয়ের চরিত্রের সঙ্গে কনফ্লিক্ট করে। কিন্তু দেশি একটা মেয়েই তো সে। স্নেহহীন থেকে সে চুপচাপই জীবন ধারণ করে।

****
কেন সব কাহিনীতেই বনের ভেতর মন্দির বা পোড়ো বাড়ি থাকে তা আমার জানা নই। তবে কাহিনীর প্রয়োজনে একটা মন্দির বসিয়ে দিলাম। মেয়েটা স্টেশনে বসে কাটিয়েছে এক দেড় ঘন্টা। এরপর হাটতে লাগল বনের রাস্তায়। একটা পায়ে হাটা সরু ট্রেইল ঢুকেছে দেখে সে আগ্রহে সামান্য ভিতর ঢুকল। ফুর ফুরে বাতাসে তার বুকের ভারটা নেমে যাচ্ছিল।

দুর থেকে সে দেখল পাতাগুলো ঝকঝকে সবুজ। যেন একটু আগে বৃষ্টি থেমেছে। লাল মরিচের ফুল। পীতরাজ আর কুঁচ ফল বিছিয়ে আসে গাছের তলায়।

তারপর যা দেখল তাতে রক্ত হিম। গাছের আড়ালেই একটা গোখরো সাপ। সে ছুটতে লাগল দিক-বিদিক হয়ে। তার পর বনের ভিতরে পথ হারিয়ে প্রায় ঘন্টা দেড় হাটল। সূর্য ঢলে পড়েছে। হাঁপাতে হাঁপাতে দেখল ভাঙা ইটের দালান। একটা মন্দির। দরজায় ঢেকে আছে শ্যাওলা আর ফার্ণ। কিন্তু মন্দিরটা পরিত্যক্ত নয়। অন্ধকার বাড়ছে। তাতেও বুঝতে পেল মেঝেটা ধুয়ে মুছে রাখা । কাঁচা সিমেন্ট দেখলে মনে হয় নির্মাণ কাজ হয়েছে বেশি দিন না। কেউ সাড়া দিচ্ছে না দেখে সে ভেতরে ঢুকল।

একটা বড় দেবতার মূর্তি। হিন্দু বা বৌদ্ধদের কোন দেবতা নয়। ভোঁতা নাক, মুখের অংশটা ভাঙা আর বিভৎস। বহু প্রাচীন সন্দেহ নেই। প্রদীপদানীতে এক ফুট উঁচু একটা মোটা মোম জ্বলছে । মোমগুলো হাতে বানানো । সে শীতল গলায় ডাকল, কেউ আছেন?

কেউ নেই। বেদীতে কিছু কাগজের টুকরো আর দেশলাই আছে। প্রজাপতির ছবিওয়ালা । বোঝা যায় এখানে কেউ থাকে। আর দেশলাইটাও নতুনই কেনা। মন্দিরে কেউ যেন গতকালও ছিল। নয়তো একটা মগ আর কলসি পাশে রাখা কেন?

বনের ভেতর থেকে একটা পাখি কুক্কা কুক্কা শব্দে ডাকছে । কিচির মিচিরগুলো ঝিঁঝির একটানা শব্দের আড়ালে ডুবে যাচ্ছে। মেয়েটা মোমবাতির পাশে গিয়ে বসে থাকল। আলোয় দেবতাকে তার বন্ধু মনে হল।

****
রহস্যটা ব্যাখা করে না দিলে গল্পটা বড় হয়ে যাবে। মন্দিরটা বৈশাখের প্রথম পূর্নিমায় লোকে লোকারণ্য হয়। উপজাতীয়দের বিলুপ্তপ্রায় একটা গোষ্ঠী এখানে ছিল এক সময়। তারা সরে গেছে উন্নততর অঞ্চলে । তারা অনেকেই ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্টান হলেও ঐতিহ্যটাকে ধরে রাখে। একজন কেয়ারটেকার এই মন্দির দেখা শোনা করে। রাতে মোম জ্বেলে সে চলে যায় মাইল দেড়েক দুরে তার বাড়িতে।

মেয়েটা সারারাত জেগেই থাকল। বাদুর উড়ে যাবার শব্দে কেঁপে উঠল। ব্যাগের ভিতরের ছুরিটা এক মুঠোতে ধরে অপেক্ষায় থাকল কিছুর। মোমটাও অদ্ভুত ঘন্টার পর ঘন্টা জ্বলতেই থাকল।


****
আনুমানিক রাত তিনটায় একটা খুঁট খুঁট শব্দে তার তন্দ্রা কেটে যায়। একটা মানুষ যেন কিছু খুঁড়ছে। যেন কিছু খুঁড়ে দেখার চেষ্টা করছে। কোদালের শব্দ হচ্ছে? কারো কবর? গোরখোদক বা প্রেত?

মেয়েটার ভয় বেড়ে যাবার কথা। তার ভয় সমাধির না। তার ভয় মানুষের। যদি তাকে এখানে দেখে ফেলে কোন পুরুষ? এমন কি সন্ন্যাসীর কাছে কোন একা মেয়ে নিরাপদ নয়।

তার মনে হল শব্দটা সরে যাচ্ছে । যেন কেউ অনেকগুলো কবর খুঁড়ছে।

রহস্যটা শেষ করে দেই। বৃষ্টির দিনে আষাঢ়ে গল্পই যেহেতু সহজই রাখি। ছেলেটা নায়ক সুতরাং সূত্রানুসারে সুঠাম দেহের কেউ। বাবা কাঠ কাটলেও সে সার্কাসে কাজ করে। অর্থের জন্য সে দিবারাত্রি পরিশ্রম করে।

গত রাতে সে স্বপ্ন দেখেছে এক হাঁড়ি গুপ্তধনের , চকচকে মোহর লুকানো মন্দিরের পাশে কোথাও । তাকে যত্নে তুলে নিতে হবে। সে হিসেব মত লগ্ন অনুযায়ী রাতের নির্দিষ্ট প্রহরে এসে গুপ্তধন খুঁজছে।

মেয়েটা উঁকি দিয়ে দেখল টিমটিমে বাতি হাতে একটা ছেলে মাটি খুঁড়ছে। প্রায় সাত আটটা গর্ত করে কিছু পেল না হয় তো। এরপর একটা পদশব্দ উঠে আসছে মন্দিরের ভিতর?

শরীর জমে গেল। ছোরাটা নিয়ে দেয়ালের পাশে স্থির হয়ে বসে থাকল। অন্ধকারে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে চাইল কিন্তু পা উঠল না।

ছেলেটি গুপ্তধন না পেয়ে ক্ষুব্ধ। প্রতারিত। দেবতার কাছে গিয়ে অনুনয় করল। তারপর ধৈর্যের বাঁধ টুটে গেলে, ছুরি দিয়ে দেবতার বুকে আঘাত করতে লাগল পাগলের মতো। ঠুন করে একটা পাথরের খণ্ড উড়ে পড়ল নিচে।

মন্দিরের নিশব্দ রূপে বিদ্রোহী হল ছেলেটা । আর এর পরই পিছন ফিরে দেখল একটা মেয়ে!

সে ভয় পেল না। হেটে গিয়ে বলল, আপনি কিগো? মিয়ি ছিলে হোয়ে জঙ্গলিতে বসি আসিছ?

মেয়েটা বলতে চাইল, আমি দেবী। মানুষের রূপ ধরি এসেছি। আমার থেকে দূরে থাক।

কিন্তু সে বলল না। কেননা দেবতার ঝাল যদি তার উপর পড়ে।

সে সত্যি কথা বলল যে সে এখানে পথ ভুলে এসেছে।
ছেলেটা দুর থেকেই তার দিকে দেখল । দাঁত কেলিয়ে বলল, দিবতা আইজ মিছা কথা বলিছি। আপনিতো দিবির রূপ। দিবি লয়তো?

মেয়েটা ছুরিটাকে পিঠের পিছনে রেখে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত গুনতে লাগল। ছেলেটা দেবতার মোমের কাছে হাটল। দেবতার বেদীর নিচে একটা চিহ্ন আঁকতে আঁকতে বলল, মিয়িছিলি ছলনা করিয়া সর্বনাস ঘটে । ইখানে দিবতা ক্যান পাঠাইলে রে?

মেয়েটা টের পেল একে শহরের ছেলেদের সঙ্গে তুলনা ঠিক হবে না। তুবে সে সহজ হতে প্রশ্ন করল, আপনি কে? কি করেন এই রাতে?

আমি ময়ুন্তী গুত্রের নিতার সন্তান। আমরা এই ধর্ম্ম পালন করিছি। আমার পিশা সার্কাস করা। বাঘ পুষি, হাতি পুষি। খিল দেকাই। আমার শইলে আগুন জ্বলে। দিবতা কয়িছে গুপ্তধন দিবে। যদি না পাইলাম মন্দিরে। তা হলি দিবতা ভুল। দেবতার আদিশে এই রাতে গুপ্তধনের জন্য বাহির হৈয়াছি। আইজ আমার গুপ্তধন মিলতেই হবে।

মেয়েটা সন্দেহ নিয়ে বলল, গুপ্তধন এখানে কেন, খূঁজুন বাইরে গিয়ে।

ঠিক সেই সময় ছেলেটা তার দিকে চেয়ে অট্টহাসি হাসল, হা হা হা হা। মিল গায়িছে। গুপ্তধন। বলে তার দিকে ছুটে আসতে থাকল।

মেয়েটা প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়ে বলল, সাবধান কাছে আসবেন না। আমার হাতে ছুরি। আপনাকে টুকরো করে ফেলব কাছে আসলে। মানুষ খুন করে হলেও নিজে ঠিক থাকব।

-আমি দিবতার আদিশ পালন করিনু মাত্তুর। গুপ্তধন আমার লাগিবেই লাগিবে

ছেলেটি আদিমতম রুচির একজন। তার সঙ্গে কথা বলে লাভ নেই। মেয়েটা সজোরে চিৎকার দিল। দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হলো তার শব্দ কিন্তু কাজ হল না।

একটা নিশ্চিত ধর্ষণের ভয়ে মেয়েটা চোখে পানি এল। সে বুঝতে পারল তার জামাগুলো এখুনি ছিঁড়ে যাবে পেশীবহুল পুরুষের কাছে। যাকে সে কখনো দেখেনি তার কাছে সমর্পিত হতে হবে। আর তার মতো মেয়ে কতটুকুই বা পারবে। এই অন্ধকারে তাকে খুন করে রেখে গেলেও কে জানবে?

তবে মনে হল বাবার নকল সমাজের চেয়ে এই জঙ্গলের একটা পুরুষের কবলে পড়া স্রেফ ভাল। মায়ের মৃত্যুর পর একটি দিন ও তার বাবা তার মায়ের অভাব বোধ করে নি। আর চোখের সামনে বাবার অধঃপতন দেখেছে।

আমি গুপ্তধন পায়ি গিছি। হি হি হি হি। সপন ভুল হয়না। দিবতা ঠিকই কয়িছে - মাথা নাড়ে পাহাড়ী।
না, না---না । মেয়েটা আবারও বলে।
আমি যত্ন করিয়া গুপ্তধন ভোগ করিনু। খারাপি আদমি নাই। ঘাবড়াইছ ক্যানে?

হঠাৎ একটা রোমাঞ্চ ভেসে আসে মেয়েটর ভেতর এই ভয়ঙ্কর মূহর্তে। তার কত বন্ধু রাতের বেলা ফোনে তার রূপের প্রশংসা করেছে। তার চাউনির বন্দনা করেছে, স্তুতি করেছে। ছেলেদের মন তো একই জায়গায়। ভালবাসার কেন্দ্রে কোন মেয়ের শরীর স্পর্শ! আর দেবতার নির্দেশে তাকে যে পুরুষের শক্তির কাছে নত হতে হচ্ছে সেও সুপুরুষ। এত সুঠাম দেহ এমন কি নায়কেরও হয় না, জিমে বছরের পর বছর পড়ে থেকেও এমন কাঠামো বানাতে পারেনি অনেকে।

পুরুষের মতো রমণীরও কি স্বপ্ন থাকে না? ইচ্ছে থাকে না? অচিন রূপবতীও প্রার্থিত হয় পুরুষের। তবে নারীর একজন সুপুরুষ কেন অপ্রার্থিত?

সে চোখ বন্ধ করে ফেলল। ছেলেটা কাছে এসে সপাৎ তাকে আঁকড়ে ধরে। চোখগুলো জ্বলছে । মেয়েটার শরীর কবুতরের মত কাঁপতে থাকে, আর তার কোমল আঙুলের ভাজ থেকে ছুরিটা ঠুন করে মাটিতে পড়ে যায়। সে দুহাতে বুকের সামনে ব্যাগটাকে শক্ত করে জাপটে ধরে। একসময় কাল পাথরের মতো একটা হাত সেই বাঁধের ভেতর ঢুকে হস্তবন্ধন খুলে ফেলে। মেয়েটা আর পারল না। সে বুঝে গেল এখুনি সিমেন্টের বেদীতে নুয়ে পড়বে গাছের ফুল। লাল টকটকে রক্ত ভেসে যাবে জীবনের পরিণতিতে।

*******
মেয়েটি বুনো মাটির গন্ধে পিষ্ট হয়ে যাবে। এ পর্যায়ে এসে আর বলার কিছু নেই। বৃষ্টি থেমে গেছে বলে গল্পটা দ্রুত শেষ করতে চাই।

ছেলেটি সজোরে তার দুহাতের বাধা খুলে তার ভেতর থেকে ব্যাগটা ছিনিয়ে নিয়ে ঝট করে উঠে দাঁড়ালো। খুশীতে চিৎকার করল, মিলা গিছে মিলা গিছে গুপ্তধন। ভিতরের কচকচে অনেকগুলো পাঁচশ-টাকার নোট মোমের সামনে নিয়ে দেবতার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাল । তারপর উদ্দাম নৃত্য করতে করতে দরজা দিয়ে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল।

মেয়েটা শরবিদ্ধ পাখির মতো শুয়ে থাকল নিস্তেজ মেঝেতে । তার কানের পাশে শিবরঞ্জনীর করুণ সুর বেজে যাচ্ছে। বুনো সাপের ছবিটা চোখে ভাসল। সেই লাল মরিচের ফুলের নিচে ছোবল তোলা সাপটা তার দিকে এসেও ফিরে গেল। সে তবুও পালাতে চাইল না বরং ছোবলের জন্য অপেক্ষায় অধীর হয়ে থাকল। মোম নিভছে । তৃষ্ণার্ত হয়ে সে চেয়ে থাকল কলসীর দিকে।

---
ড্রাফট ১.২/ আষাঢ়ে গল্প
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুন, ২০১১ রাত ১২:৪২
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×