somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একদিন, খলিফা ওমর আল খাত্তাব

২৭ শে জুন, ২০১১ বিকাল ৪:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৬৪০ খ্রিস্টাব্দের রজব মাস। মধ্যাহ্নের বিবর্ণ আকাশে গনগনে সূর্য যেন আরবের মরুভূমির উপর গলিত অনল বর্ষন করছে । যতদূর দৃষ্টি যায় কেবল মরিচিকাময় রুক্ষ ধূ ধূ মরুপ্রান্তর। তবে দূরে একটি মরুদ্যানের আভাসও যেন চোখে পড়ে। তপ্ত বালির উপর একটি উট চলেছে। উটের উপরে উপবিষ্ট খলিফা ওমর আল খাত্তাব । খলিফা চলেছেন জেরুজালেম নগরে। ওখানে সাধু সোফ্রোনিয়াস-এর কাছ থেকে জেরুজালেম নগরের দায়িত্বভার বুঝে নিবেন।
উটের রশি ধরে হাঁটছিল একজন মধ্যবয়েসি আবিসিনিয় দাস। দাসের নাম আবু দাইয়ান। প্রখর রৌদ্রের তাপদাহে আবিসিনিয় দাসটির কৃষ্ণবর্ণের শরীরটি ঘেমে গেছে । তৃষ্ণায় কন্ঠনালী শুকিয়ে গেছে। ঘন ঘন নিঃশ্বাস পরছে তার । পায়ের তলায় উষ্ণ বালি তপ্ত শলাকার মতো বিঁধছে। খালি পায়ে হাঁটতে-হাঁটতে কপালের ঘাম মুছে নিল আবু দাইয়ান। খিদেও টের পায় সে।
উটের উপরে উপবিষ্ট খলিফা একবার চকিতে আকাশের দিকে তাকালেন। তারপর বললেন, ওহে আবু দাইয়ান, এইবার একটু থামো তো বাপু।
আবু দাইয়ান উটের রশি ধরে থমকে দাঁড়াল।
খলিফার ইশারায় উটটি হাঁটু গেড়ে বসল। খলিফা উট থেকে নেমে এলেন। কষ্টসাধ্য যাত্রাপথেও সৌম্যদর্শন খলিফার মুখটি ভারি প্রসন্ন দেখায়। খলিফা আশেপাশে তাকালেন। নিকটেই একটি মরুউদ্যান। সে উদ্যানে খেজুর গাছের সারি এবং জলাশয় রয়েছে দেখে খলিফা দু-হাত তুলে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালেন ।
খলিফা বললেন, চল, আবু দাইয়ান এখন নামাজ সেরে নিই। নামাজ সেরে কিছু খেয়ে নেওয়া যাবে।
খলিফা আবু দাইয়ান এর পাশে বসে জলাশয়ের শীতল পানিতে অজু সেরে নিলেন।
অজু সেরে খলিফা আজান দিলেন।
মধুর দরাজ কন্ঠস্বর খলিফার। আজানের সুর দূরের ধূসর পাহাড়শ্রেণিতে প্রতিধ্বনিত হল। খেজুর পাতারা আন্দোলিত হল বাতাসে । বেহেস্তি সুরের আকর্ষনে কয়েকটি আবাবিল পাখি উড়ে আসে।
আজান শেষ হলে আবু দাইয়ান খেজুর গাছের ছায়ায় চাদর বিছাল। তারপর খলিফার পাশে নামাজে দাঁড়াল। নামাজের পর আবু দাইয়ান খলিফার মুখোমুখি খেতে বসল। একটিই মাত্র রুটি অবশিষ্ট আছে। আর আটটি খেজুর। খলিফা রুটির অর্ধেক ছিঁড়ে আবু দাইয়ান কে দিলেন। খেজুরও সমান ভাগ করলেন খলিফা।

...আবু দাইয়ান এতে বিস্মিত হয় না। সে বেশ কিছুকাল ধরে খলিফার সান্নিধ্যে আছে । অনেক আগেই খলিফার উদারতার পরিচয় পেয়েছে সে । খলিফা সাদাসিদে জীবনযাপন করেন। মসজিদের সিঁড়িতে ভিখেরিদের পাশে ঘুমান। মদিনার অনেকেই আবু দাইয়ান কে দাস বলে ‘তুই তোকারি’ করে। খলিফা আবু দাইয়ান-এর পুরো নাম ধরেই ডাকেন। মদিনার অনেকেই দাস বলে আবু দাইয়ান কে অবজ্ঞা করে। খলিফা সেরকম নন। খলিফা আবু দাইয়ান কে সমকক্ষই মনে করেন।

খেজুর গাছের ডালে একটি আবাবিল পাখি বসে ডাকছিল। খেতে খেতে মন দিয়ে সে ডাক শুনলেন খলিফা । খলিফার মুখে যেন আভা ছড়াল।
খাওয়ার পর দু-হাত তুলে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানালেন খলিফা। তারপর আবদুল দাইয়ান কে বললেন, আবদুল দাইয়ান। এবার তোমার পালা।
আবদুল দাইয়ান এবার উটের পিঠে চরে বসল।
মদিনা থেকে যাত্রা করার পর পালাক্রমে কখনও আবদুল দাইয়ান কখনও খলিফা উটের রশি ধরে হাঁটছেন।
এবার খলিফার উটের রশি ধরে হাঁটার পালা। যেন এই মুহূর্তে খলিফাই দাস আর আবু দাইয়ান প্রভূ। হাঁটতে হাঁটতে প্রখর রৌদ্রে ঘেমে উঠলেন খলিফা । পায়ের তলায় উষ্ণ বালি তপ্ত শলাকার মতো বিঁধছে। তবু খলিফার মুখটি ভারি প্রসন্নই দেখায়। পথের চতুর্দিকে কমলা রঙের বালির সমুদ্র আর দূরে ধূসর রঙের পাহাড়শ্রেণি। প্রাণ ভরে আশেপাশের মনোরম দৃশ্যাবলী দেখছেন খলিফা।
অপরাহ্নে জেরুজালেম নগরের দূর্গপ্রাচীর দেখা গেল ।
আবু দাইয়ান কিছুটা উত্তেজিত হয়ে উঠে বলল, হে আমিরুল মোমেনিন, আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছে গেছি। আপনি এবার উটে চরে বসুন।
খলিফা মৃদু হাসলেন। তিনি সবই বুঝতে পারলেন। জেরুজালেম নগরের শাসক সাধু সোফ্রোনিয়াস যদি আবু দাইয়ান কে খলিফা মনে করে তার কন্ঠেই ফুলের মালা পরিয়ে দেন।
খলিফা বললেন, আমরা মুসলমান। এই সম্মানই তো যথেষ্ট।
আবু দাইয়ান চুপ করে থাকে।
খলিফা উটের রশি ধরে জেরুজালেম নগরে প্রবেশ করলেন।
খলিফার পরনের তালি মারা ময়লা জোব্বা।
প্রসন্ন মুখে অনাবিল হাসি ...

ছোটবেলায় শোনা এই কাহিনীটি নতুন করে যেখানে পেলাম
পুনশ্চ:

খলিফা ওমর প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক এডোয়ার্ড গিবন তাঁর বিখ্যাত
The Decline and Fall of the Roman Empire গ্রন্থে লিখেছেন: “ Yet the abstinence and humility of Umar were not inferior to the virtues of Abu Bakr: his food consisted of barley bread or dates; his drink was water; he preached in a gown that was torn or tattered in twelve places; and a Persian satrap, who paid his homage as to the conqueror, found him asleep among the beggars on the steps of the mosque of Muslims ” (খলিফা ওমর-এর সংযম এবং বিনয়ে কোনও ক্রমেই খলিফা আবু বকর- এর চেয়ে কম নয়। তাঁর খাদ্য ছিল বার্লির রুটি কিংবা খেজুর এবং পানীয় ছিল পানি। বারো জায়গায় তালি মারা জোব্বা পরে খলিফা বয়ান করতেন। একবার একজন পারসিক শাসনকর্তা বিজয়ী খলিফার কাছে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গেলে দেখতে পান খলিফা মসজিদের সিঁড়িতে ভিখিরিদের পাশে ঘুমিয়ে আছেন।)
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মায়ের নতুন বাড়ি

লিখেছেন সাদা মনের মানুষ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২২

নতুন বাড়িতে উঠেছি অল্প ক'দিন হলো। কিছু ইন্টরিয়রের কাজ করায় বাড়ির কাজ আর শেষই হচ্ছিল না। টাকার ঘাটতি থাকলে যা হয় আরকি। বউয়ের পিড়াপিড়িতে কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকার পরও পুরান... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৮










চিত্রকলার কোন প্রথাগত শিক্ষা ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ছোট বেলায় যেটুকু শিখেছিলেন গৃ্হশিক্ষকের কাছে আর পাঁচজন শিশু যেমন শেখে। সে ভাবে আঁকতেও চাননি কোন দিন। চাননি নিজে আর্টিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতা বনাম ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত বিবিধ দোষ

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৪



জাহান্নামের শাস্তির তীব্রতার বিবেচনায় মুমিন ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে অমুসলিম উপস্থাপিত দোষারোপ আমলে নেয় না। আমার ইসলাম সংক্রান্ত পোষ্ট সমূহে অমুসলিমগণ ইসলামের বিবিধ ক্ষেত্রে বিবিধ দোষের কথা উপস্থাপন করে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শ্রান্ত নিথর দেহে প্রশান্তির আখ্যান..... (উৎসর্গঃ বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগারদের)

লিখেছেন স্বপ্নবাজ সৌরভ, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৪২



কদিন আমিও হাঁপাতে হাঁপাতে
কুকুরের মত জিহবা বের করে বসবো
শুকনো পুকুর ধারের পাতাঝরা জামগাছের নিচে
সুশীতলতা আর পানির আশায়।

একদিন অদ্ভুত নিয়মের ফাঁদে নেতিয়ে পড়বে
আমার শ্রান্ত শরীর , ধীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা: ব্লগাররা বিষয়টি কোন দৃষ্টিকোন থেকে দেখছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৯ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪১


ছবি- আমার তুলা।
বেলা ১২ টার দিকে ঘর থেক বের হলাম। রাস্তায় খুব বেশি যে জ্যাম তা নয়। যে রোডে ড্রাইভ করছিলাম সেটি অনেকটা ফাঁকা। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা খুব কম।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×