somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

বিএম বরকতউল্লাহ
পড়াশোনা করি। লেখালেখি করি। চাকরি করি। লেখালেখি করে পেয়েছি ৩টি পুরস্কার। জাতিসংঘের (ইউনিসেফ) মীনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড ২০১১ ও ২০১৬ প্রথম পুরস্কার। জাদুর ঘুড়ি ও আকাশ ছোঁয়ার গল্পগ্রন্থের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৬।

পিঁপড়ে ও অহংকারী রাজা

২৭ শে জুন, ২০১১ বিকাল ৩:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক ছিলেন রাজা। পশু-পাখি শিকার করা তাঁর শখ। প্রতি সপ্তাহে তিনি শিকার করতে চলে যান বনে। সাথে থাকে রাজার দেহরক্ষী, পাইক-পেয়াদা।

একদিন একটা পিঁপড়ে এসে বলল, রাজা মশাই আমরা অতি ছোট্ট প্রাণী। এ বনে আমরা আমাদের মতো করে চলিফিরি। কিন্তু আপনি এ বনে এসে আমাদের অনেক বড় তি করছেন। আমরা কী অপরাধ করছি রাজা মশাই?

রাজা নিচের দিকে তাকিয়ে বললেন, কে? কে কথা বলে?
পিঁপড়েটি মাথা উচু করে বলল, রাজামশাই আমি পিঁপড়ে কথা বলছি।

রাজা বললেন, কী তি করছি আমি, শুনি?
পিঁপড়েটি করে বলল, আপনি যখন এ বনে শিকার করতে আসেন, তখন আপনার ও আপনার সাথীদের পায়ের নিচে পড়ে অসংখ্য পিঁপড়ে মারা পড়ে। আমরা ভয়ে ছোটাছুটি করি তারপরও অনেক পিঁপড়ে আপনাদের পায়ের নিচে পড়ে মারা যায়। এভাবে আমরা বাঁচব কিভাবে রাজামশাই?
রাজা ধমক দিয়ে বললেন, আমি হলাম রাজা। শিকার করা আমার শখ। তোর মতো ছোট পিঁপড়ের জন্যে কি আমি শিকার করা বন্ধ করে দেব?

পিঁপড়েটি বলল, আমরা ছোট্ট বলে এতো অবহেলা করবেন না রাজামশাই। আমরা তো আপনার কোনো উপকারেও আসতে পারি। একথা শুনে রাজা হা: হা: হো: হো: করে হাসতে হাসতে বললেন, তোরা করবি আমাদের উপকার? হা: হা: হা:

পিঁপড়েটি বলল, তাহলে আপনার এ-বড় রাজ্যে কি আমাদের একটুও মূল্য নেই?
রাজা বললেন, তোদের আবার কীশের মূল্য-মর্যাদা। তোরা এমনই এক অকেজো আর কমজোর প্রাণী যে, তোরা কোনো উপকার করতে পারস না; এমনকি কোনো ক্ষতিও করতে পারস না। তোরা পায়ের নিচে পড়ে মরলে আমাদের কিছু যায়-আসে না।

পিঁপড়েটি বলল, উপকার না করতে পারি তবে অপকারতো করতে পারি আমরা? এ কথা বলে পিঁপড়েটি পটাপট রাজার পায়ে কুট্টুস করে বসিয়ে দিল একটা কামড়। রাজা ব্যথায় লাফিয়ে উঠে বললেন, এতো বড় সাহস তোর। আমার পায়ে কামড় বসিয়ে দিলি? আমি কোন শক্রুকে বাঁচিয়ে রাখি না। এই ল তোর পুরস্কার। রাজা তাঁর পায়ে পিষে মাটির সাথে মিশিয়ে ফেললেন পিঁপড়েটিকে।



এ পিঁপড়েটির মৃত্যুতে অন্য পিঁপড়েরা খুব কষ্ট পেল। তারা বসে পরামর্শ করতে লাগল -এখন কী করা যায়।

তারা গেল পিঁপড়েরানীর কাছে। খুলে বলল সব।
পিঁপড়েরানী বললেন, আমরা কারও কোনো ক্ষতিও করি না আর উপকারও করি না বলে আমাদের কোনো দাম নেই। এখন আমাদের একটা কিছু করে বুঝিয়ে দিতে হবে যে, শ্রষ্টা আমাদের এমনি এমনি সৃষ্টি করেননি। আমাদেরও জোর আছে, বুদ্ধিও আছে আর দুনিয়াতে আছে আমাদের প্রয়োজন। ইচ্ছা করলে কিছু একটা করতে পারি আমরা।
অন্য পিঁপড়েরা বলল, তাহলে আমরা এখন কী করতে পারি রানী মা?
রানী বললেন, আগে আমাদের এ পিঁপড়ে মারার প্রতিশোধ নিতে হবে।

যেই কথা সেই কাজ।
দলবেধে পিঁপড়েরা চলল রাজপ্রাসাদের দিকে। অসংখ্য পিঁপড়ে অসংখ্য দলে? লেজ তুলে চোটেপাটে হেঁটে চলেছে পিঁপড়ে।


গভীর রাত। রাজা আর রানী ঘুমিয়ে আছেন। রাজা ধড়ফড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে হাতে-পায়ে চুলকাতে লাগলেন। অসহ্য হয়ে রাজা বাতি জ্বাললেন। দেখেন, পিঁপড়েরা দলবেধে তাঁকেই আক্রমণ করছে। সহ্য না করতে পেরে চিৎকার চেঁচামেচি করতে লাগলেন রাজা। রানী লাফিয়ে উঠে বললেন, কী হয়েছে আপনার, এমন করছেন কেন রাজামশাই?

রাজা আঙুলে পিঁপড়ের দল দেখিয়ে বললেন, দেখো, দেখো অবস্থা। ছোট ছোট পিঁপড়েরা কত ভয়ংকরভাবে কামড়াচ্ছে আমাকে। উফ, কী যন্ত্রণারে বাবা। আমাকে বাঁচাও। রানী দুহাতে সমানে পিঁপড়ে মারতে লাগলেন। একটা মারেন তো দশটা এসে কুট্টুস করে কামড়ায়। রাজার সাথে সাথে রানীও লাফালাফি শুরু করে দিলেন। তারপর ডাকতে লাগলেন চাকর-বাকরদের। দৌড়ে এলো সবাই। এসে দেখে রাজা নাচছে আর সমস্ত শরীর চুলকাচ্ছে। রানী ভয়ে পালঙ্কে পা তুলে বসে আছে।

মন্ত্রী পাইক-পেয়াদা ছুটে এসে বলল, রাজামশাই আপনার কী হয়েছে যে এমন করছেন? রাজা বলল, আমার সমস্ত শরীরে পিঁপড়েরা সমানে কামড়াচ্ছে। কুট কুট কুট। জ্বলে-পুড়ে যাচ্ছে শরীর। উফ্, আহ্।

তারা রাজার পিঠ-পেট চুলকিয়ে দিতে লাগলেন। কিন্তু রাজা আর থামে না। রাজা নাচতে নাচতে তাঁর পোশাক খুলে ফেললেন। চাকররা তাঁর শরীর ডলতে লাগল। পিঁপড়ের কামড়ে সমস্ত শরীর লাল হয়ে গেছে। রাজা হঠাৎ হঠাৎ লাফিয়ে উঠেন আর বলেন, সহ্য হচ্ছে না আমার, এতো জ্বালা, এতো যন্ত্রণা। ওরে, আমাকে বাঁচা। আমাকে খেয়ে ফেলল।

পরেরদিন রাজদরবারে বসলেন রাজা। বৈঠকে কথা বলছেন। হঠাৎ করে তিনি লাফিয়ে উঠলেন।
ব্যাপার কি? রাজা মুখ বাঁকিয়ে, পিঠ বাঁকিয়ে, এঁকেবেঁকে চুলকাতে লাগলেন। কোনো আলাপই করতে পারছেন না। পিঁপড়েরা রাজার পকেটে, হাতের চিপায়, পায়ের চিপায়, বগলতলা, কানের চিপায়, জুতোর ভেতরে ছোটাছুটি করে এমনভাবে কামড়াতে লাগল যে আর বসে থাকার যো নেই। চুলকাতে চুলকাতে রাজা বেহুঁশ হয়ে দৌড়ে গিয়ে পড়লেন সামনের এক দীঘির জলে।

পিঁপড়েরা খালি রাজাকেই কামড়ায় আর কাউকে কামড়ায় না। রাজার এ বিপদ দেখে ডাকা হলো কবিরাজ আর বৈদ্যকে। তারা বলল, রাজার পোশাক পুড়ে ফেলতে হবে। পুড়ে ফেলল পোশাক। নতুন পোশাক এলো। কিন্তু এ পোশাক পরেও শান্তি নেই। অসংখ্য পিঁপড়ে বসে আছে সমস্ত পোশাকের ওরতে-পোরতে। পোশাক পরলেই কামড়ায় কুটুর কুটুর কুট।

কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। অবশেষে মন্ত্রীদের পরামর্শে রাজপ্রাসাদে আগুন লাগিয়ে দেয়া হলো। পিঁপড়ের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে পুড়ে ফেলা হলো রাজপ্রাসাদ।

হাফ ছেড়ে বাঁচলেন রাজা। আর ঠোঁট বাঁকিয়ে বললেন, পিঁপড়ে মশাইরা এবার কামড়াবে কিভাবে? সব তো পুড়ে ছাই করে দিলাম। রাজার সাথে মশকরা!


পিঁপড়েরা বলল, আমাদের কয়েক হাজার সৈন্য মারা গেছে। এতে বসে থাকলে চলবে না। আমাদের সংগ্রাম চলবেই। রাজা নতুন বাড়ি বানিয়েছে। যেভাবেই হোক সেই বাড়িতে ঢুকে উচিৎ শিক্ষা দিতে হবে রাজাকে।

রাজা নিশ্চিন্ত মনে শুয়ে আছেন নতুন রাজপ্রাসাদে।
এমন সময় শুরু হলো পিঁপড়েদের হামলা।
রাজা পিঁপড়ের কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে কাপড়-জুতো খুলে পাগলের মতো ছোটাছুটি শুরু করে দিলেন। রাজ্যে প্রচার হয়ে গেল, রাজা পাগল হয়ে গেছেন, রাজা উদোম হয়ে পথে-ঘাটে ছোটাছুটি করছেন। রাজা বদল না করলে দেশে শান্তি ফিরে আসবে না।

রাজা বললেন, সামান্য পিঁপড়ের জন্য আমার এতো বদনাম? রাজাগিরি চলে যাবে আমার, আমি পাগল? তা হতে দেব না। তিনি আদেশ করলেন, বনে আগুন ধরিয়ে দাও। পিঁপড়ের বংশ-করে দেবো ধ্বংস।

রাজকর্মচারিরা বনে আগুন ধরিয়ে দিল। বন পুড়ে ছাই। কিছু মারা গেল আর সকল পশু-পাখি, পিঁপড়ে বন থেকে পালিয়ে চলে এলো লোকালয়ে। হিংস্র পশু-পাখিদের দেখে রাজ্যের মানুষ ভয়ে ছোটাছুটি করতে লাগল। রাজার পাগলামী দেখে সবাই বলল, এবার নিশ্চিত, রাজা পাগল হয়ে গেছেন। রাজ্য বাঁচাতে হলে পাগলারাজাকে নির্বাসনে পাঠানো ছাড়া আর উপায় নেই।
রাজাকে এক বনে নির্বাসন দেওয়া হলো।


রাজা রাজ্যমতা হারিয়ে কাঁদে আর মনের দুঃখে বনে বনে ঘুরে।
রাজার পেটে খাবার নেই। তাঁর মন বেজায় খারাপ হয়ে আছে। তিনি একটা গাছের শিঁকড়ে বসে আছেন। এমন সময় দেখতে পেলেন, তাঁর সামনে দিয়ে পিঁপড়েরা লাইন ধরে হেঁটে যাচ্ছে। ওদের মুখে খাবার। রাজা পিঁপড়ে দেখে ভয়ে পা তুলে বসলেন। আর বললেন, হে ভয়ংকর পিঁপড়ে, তোরা আমাকে রাজা থেকে পথের ভিখারী করেছিস। আর কী চাস তোরা এখানে?

পিঁপড়েরা মুখ তুলে বলল, আমরা তো বনেই থাকি। আপনি কি সেই রাজা, যে পিঁপড়েকে ছোট বলে অবহেলা করতো আর বিনা কারণে পিঁপড়েদের পায়ে পিষে মেরে আনন্দ করতো?
রাজা চুপ করে রইলেন।

পিঁপড়েরা বলল, আমরা তো আপনার অনেক বড় ক্ষতি করেছি রাজামশাই। এবার করব উপকার।
তোমরা আমার কী উপকার করবে ভাই। রাজা অবাক হয়ে বললেন।
পিঁপড়েরা গাছ থেকে টাটকা ফল এনে দিল রাজার হাতে। ক্ষুধার্ত রাজা ফল খেলেন। আর বড় একটা শ্বাস ফেলে বললেন, দুনিয়াতে কেউই খালি খালি আসেনি। কেউ ছোট বলেই খাটো নয়। প্রয়োজন আছে সবার।
রাজা তাঁর ভুল বুঝতে পেরে আফছুছ করতে লাগলেন।

রচনা: ২৬/৬/২০১১
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×