somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৈতালের সারমেয় গবেষণার সারমর্ম

২৭ শে জুন, ২০১১ দুপুর ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বৈতাল বাবা মা-র আদরের তৃতীয় সন্তান। যথারীতি তৃতীয় সন্তানেরা হয় বৈতাল তাহা হইতে খুব একটা তফাৎ ছিলোনা। ছাগ শিশুর ন্যায় চঞ্চল ভাব তাহার মধ্যে সর্বদাই বিরাজ করিত, তদুপরি বাল্যকাল হইতে তাহার সহিত ছাগশিশুর তুলনামূলক আচরণ শুনিতে শুনিতে শেষমেষ তাহার জীবনের প্রত্যয় হইলো- কাভি না কাভি সে কাজ করিবে ছাগু লইয়্যা, নহে গাভী। ইতিমধ্যে এক ধবল বিগত যৌবনা ও বর্তমানে গৃহহীনা বিধবা হঠাৎ করিয়া ছাগশিশু পালন লইয়া হই-চই শুরু করিলেন। বৈতালও মজা পাইয়া তাহাদের ভিড়ে সমপৃক্ত হইয়া যাইতে চেষ্টা তদবির করিতে থাকিল। সহসাই তাহার অনুধাবন হইল, সে তাহার মস্তিষ্কের হলুদ অংশের যথার্থ প্রয়োগ করিয়া ছাগশিশু পালন হইতে আরও মহতি কাজ, উন্নতমানের ছাগশিশুর উৎপাদনে লিপ্ত হইতে পারে। ইত্যাবসরে সে ছাগশিশু লইয়া তাহার মহতি গবেষণা শুরু করিল। কিন্তু শিক্ষাজীবনের সমাপ্তির পথেও কোন গবেষণা পত্রে নিজের নাম না দেখিয়া বৈতাল ঠিক করিলো এই হতভাগাদের দেশে আর না! না আছে গবেষণার পরিবেশ, না আছে মন খুলিয়া রুপসীদের সহিত ফিকির করিবার ধান্ধা! সেই থেকে শুরু হইল বৈতালের বিদেশ যাত্রা লইয়া নতুন এক অধ্যায়!

বৈতাল সহসাই হানগুক নামক এক দেশে তাহার বিস্তর গবেষণার ক্ষেত্র বিস্তারের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করে। দেশ হইতে হাজার মাইল পাড়ি দিয়া অধ্যাপকের সহিত আগ্রহ ভরিয়া দেখা করিবার নিমিত্তে দরজায় টোকা দেয়া মাত্রই তাহার বজ্রকন্ঠে আদেশ; দরজার ওপার্শ্বেই দাড়াইয়া থাক, আমার হাতের কাজ শেষ করিবার পরে প্রবেশ করিবে। বেচারা বৈতাল আর বুঝিয়া উঠিতে পারেনা তাহার দোষ খানা কোথায়? হাজার মাইল পাড়ি দিয়া আসায়, দরজায় টোকা দেওয়ায়, নাকি তৃতীয় বিশ্বের এক গর্বিত প্রতিনিধি হিসাবে এই হানগুক দেশে আসায়! দিন যায়, বৈতালের গবেষণার আকাঙ্খা আরও চাঙ্গা হইয়া ওঠে, সাথে এদিক-সেদিকেও নজর এড়ায় না অবশ্য। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরিধেয় বস্ত্র (তাহাকে নাকি মাইক্রো স্কার্ট বলে) সম্বলিত হাস্যরত নাক বোঁচা নারী মুখ গুলো বৈতালের হৃদয়ে উঁকি মারে, হয়তো দাগ কাটিয়াও যায়। কিন্তু বৈতাল তাহার সংযম রক্ষায় অনবদ্য! বিপুল পরিমানে সয়াসস আর ব্রকোলি খাইয়া তাহার যৌনাকাঙ্খা নিবৃত্তি করে।

সহসাই বৈতালের অধ্যাপক এইমর্মে অধ্যাদেশ প্রনয়ন করেন, ছাগ লইয়া যেই গবেষণা চলিতেছিলো তাহা বৈশ্বিক মন্দাজনিত কারনে অর্থাভাবে বন্ধ হইবার উপক্রম। বৈতাল যদি তাহার গবেষণাগারে কাজ চালাইয়া যাইতে চায় তাহা হইলে ছাগ নয় বরঞ্চ সারমেয় লইয়া গবেষনা করিতে পারিবে, অন্যথায় বৈতালকে তাহার গবেষণা হইতে নিবৃত্তি দেয়া হইবে। বৈতাল আর ভাবিয়া পায়না, ছাগ হইতে শেষ-মেষ সারমেয়? চোখ বন্ধ করিলেই সে তাহার দিব্যদৃষ্টিতে দেখিতে পায় লোকে তাহার দিকে আঙ্গুলি উঠাইয়া বলিতেছে, ওইদেখ – সারমেয় গবেষক যায়! অথবা কোন নাক চ্যাপ্টা রমনী তাহার সহিত সারমেয়র তুলনা করিতে লাগিতেছে; এসব মনে পড়িলে তাহার পেট হইতে ক্রমাগত বায়ু নির্গত হওয়া শুরু হয়! তবুও দাঁত চাপিয়া কোমর বাঁধিয়া বৈতাল সারমেয় লইয়া তাহার গবেষণা চালাইতে থাকে। দিন যায়, মাস যায় বৈতাল তাহার গবেষণা লইয়া কিছু পত্র প্রকাশ করিবার মনোঃকামনায় অধ্যাপকের দড়জায় উঁকি দেয়, কিন্তু অধ্যাপক মহোদয় তাহার গবেষণা পত্র ঘ্যাচাং করিয়া কাটিয়া দিয়া আবার নতুন করিয়া শুরু করিতে বলে। সে বৈতালকে আরও, প্রাচ্য দেশীয় দর্শনও মনে করাইয়া দেয় “কামকে দমন কর, কর্মেই মুক্তি”। ইহা শুনিয়া বৈতালের মেজাজ তিরিক্ষি হইলেও সে মনে মনে ইহা ভাবিয়া উৎফুল্লিত হয়, তাহার অধ্যাপক মহোদয়ও নিশ্চয়ই যৌবনকালে যবন দেশ আম্রিকায় তাহার অধ্যাপক কর্তৃক এই ধরনের ‘পুঙ্গা’ খাইয়াছে। বৈতালের মনে সেই আম্রিকিয় অধ্যাপকের প্রতি এক প্রশান্তি কাজ করে।

বৈতালে আজকাল মন বড়ই উচাটন। দিনরাত গবেষণা করিতে করিতে সে তাহার পরিবার পরিজনের সহিত যোগাযোগ রাখিবার সময় পায়না। আবার নিজেকে গবেষক বলিয়া পরিচয় দিয়া জনগনের প্রশংসা কুড়াইলেও দেখিতে পায় মাস শেষে তাহার নগদ নারায়নের সঞ্চয়ী হিসাব শুণ্যের কোঠায়। অথচ বিদ্যালয়ের উচ্চ-মাধ্যমিকে অকৃতকার্য লাফাঙ্গা সেই বালকটি আপিস-আদালতে রুটি চালান বানিজ্য করিয়া টয়োটা-নোয়াহ নামক এক গাড়িতে নিত্যনতুন বান্ধবী লইয়া ঘুড়িয়া বেড়ায় আর মুখচ্ছবি নামক এক সামাজিক যোগাযোগের পাতায় তাহার হাস্যোজ্জল ছবি প্রদান করে, ইহা দেখিয়া বৈতাল মার্ক জুকবার্গ নামক এক ব্যাক্তিকে অভিসম্পাত করে আর তাহাকে মাঝে মধ্যে দুষ্টু ইয়াহুদি বলিয়াও ফোড়ন কাটে।

দৈনিক মতিলাল আলু-তে জনৈক অধ্যাপকের কলাম পড়িয়া বৈতাল ভাবিয়াছিলো সে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা আর পিয়াজডি কাটিয়া বহু অর্থ আভিজাত্যের মালিক হইবে, কিন্তু হায়! এ কি হইল বৈতালের? সে কোনভাবেই বঙ্গদেশে প্রত্যার্পন করিতে চাহে না, ওইদশে চটকদার লোকজন অর্থের মালিক হয় কিন্তু গবেষকদের ভাত নাই! হতাশ হইয়া বৈতালের সংযমের বাধ ভাঙ্গিয়া যায়, বৈতাল অবশেষে বোতল ধরে। তাহাতে লাভ বা ক্ষতি কতটুকু হইয়াছে ইহার হিসাব মিলানো অত্যান্ত দুরুহ হইলেও সঞ্চয় হইতে অর্থ উঠাইয়া বান্ধবী পরিবেষ্টিত অবস্থায় মদ্যপান করিতে করিতে বৈতাল স্মৃতিচারন করে আর ভবিষ্যতের কথা ভাবিয়া সেই সময়টুকুতে শঙ্কায় জর্জরিত হয়না। সে ভূলিয়া থাকিতে চায় ভূত-ভবিষ্যতের অজানা আশঙ্কা, গোপন করিতে চায় দীর্ঘশ্বাস- কিন্তু পারে কি? যদি সারাটি জীবন চলিয়া যাইত এইভাবে, মন্দ হইত না, ভাবে বৈতাল আর আনমনেই হাসিয়া ওঠে একা একা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৩

মন যদি চায়, তবে হাতটি ধরো
অজানার পথে আজ হারিয়ে যাব
কতদিন চলে গেছে তুমি আসো নি
হয়ত-বা ভুলে ছিলে, ভালোবাসো নি
কীভাবে এমন করে থাকতে পারো
বলো আমাকে
আমাকে বলো

চলো আজ ফিরে যাই কিশোর বেলায়
আড়িয়াল... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকরি বয়সসীমা ৩৫ বৃদ্ধি কেনো নয়?

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪২



চাকরির বয়সসীমা বৃদ্ধি এটা ছাত্র ছাত্রীদের/ চাকরি প্রার্থীদের অধিকার তবুও দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ভোটের সময় ঠিকই এই ছাত্র ছাত্রীদের থেকে ভোটের অধিকার নিয়ে সরকার গঠন করে। ছাত্র ছাত্রীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×