ভাষাকে আর জোরের সঙ্গে প্রকাশ করতে বাংলা ভাষাতে অনেক প্রবাদ এর ব্যবহার হয়ে আসছে ।আমাদের রোজনামচার জীবনযাত্রায় নানা সময়ে বিভিন্ন প্রবাদের সাহায্য নিয়ে প্রতি নিয়ত আমাদের ভাষাকে অলংকৃত করে চলেছি। যেমন :- অলস বেক্তি বোঝাতে “ ঠুটো জগন্নাথ” , ভণ্ডকে “ বিড়াল তপস্বী”,খুব বন্ধুত্ব বোঝাতে “হরিহর আত্মা” কারোর প্রতীক্ষায় দু চার ঘণ্টা বসে থাকতে হলে “শবরীর প্রতীক্ষা” প্রভৃতি প্রবাদ আমরা নানা ক্ষেত্রে ব্যবহার করে চলেছি ।
আজ আমি এরূপ বহুল চর্চিত প্রবাদ এর উত্পত্তি এবং এই সকল প্রবাদের পেছনে লুকিয়ে থাকা কিছু পৌরাণিক গাথা (রূপকথাও বলতে পারেন )আপনাদের সামনে তুলে ধরব । আজকের পর্বে থাকবে মান্ধাতার গল্প । এই গল্পটি আসলে প্রবাদ বাক্য,“মান্ধাতার আমল” নামক প্রবাদের উত্পত্তির গল্প ।
মান্ধাতার গল্প ( প্রকৃত প্রবাদ মান্ধাতার আমল ) :-<
কে এই মান্ধাতা ?
মান্ধাতা ছিলেন সূর্য বংশের এক রাজা ।শ্রী রামচন্দ্রের জন্মের অনেক আগে তিনি জন্মেছিলেন । এই জন্যই সাধারণ মানুষ পুরনো দিনের কথা প্রসঙ্গে এই প্রবাদ বাক্যটি বাবহার করে থাকেন । এ তো গেল প্রবাদটির ব্যবহার প্রসঙ্গ, এবার আসা যাক এর আড়ালে লুকিয়ে থাক পৌরাণিক গল্পটি সম্পর্কে ।
রাজা মান্ধাতার জন্ম বৃত্তান্তটি খুব মজার । ।শ্রী রামচন্দ্রের পূর্ব পুরুষ রঘুবংশের অনেক আগে এই বংশের রাজারা রাজত্ত্ব করতেন । মান্ধাতার পিতা ছিলেন যুবনাস্ব এবং মাতা ছিলেন কালনিমি । রাজা যুবনাস্ব বিয়ে করলেও সংসারে তেমন মন ছিল না , তাই তো রাণীর মনেও কোনো সুখ নেই । তাদের দীর্ঘদিন কোনও সন্তান ছিল না । একদিন রাজা যুবনাস্ব তপস্যা করে গৃহে ফিরে যোগীদের প্রণাম করে বললেন , আমাকে আশীর্বাদ করুন আমি যেন পুত্র লাভ করি । কিন্তু যোগীমহাপুরুষরা বললেন যেহেতু তুমি যোগী তাই তুমি পুত্র কন্যা লাভ করতে অক্ষম । তখন রাজা তাদের কাছে উপায় বিধান চাইলেন , তখন যোগীমহাপুরুষগণ রাজার পুত্র লাভের জন্য যজ্ঞের আয়োজন করে বললেন, যজ্ঞ শেষে যজ্ঞের প্রবিত্র জল রানী পান করলে রাজা পুত্র লাভ করবেন । তাদের অজ্ঞাক্রমে সেই প্রবিত্রজল রাণীর শয়নকক্ষে রাখা হল বটে, এবং ঠিকও হল রানী পরদিন প্রভাতে সেই প্রবিত্র বারি পান করে পুত্র লাভ করবেন । কিন্তু হায় বিধির বিধান, সেই দিন রাত্রে রাজা যুবনাস্ব পিপাসার তাড়নায় ভুল বশত সেই যজ্ঞের বারি পান করলেন । পরদিন সকালে রানী সেই জল পান করতে গিয়ে দেখলেন যে পাত্র ফাকা পড়ে আছে , তিনি পড়লেন মহাফাপরে কী করবেন কিছু বুঝে উঠতে পড়লেন না , রাজন ও নিজের ভুল বুজতে পেরে অতি লজ্জিত হলেন কিন্তু ততক্ষণে যা হবার তা তো হয়ে গেছে , রাজা পুরো ঘটনা যোগীদের খুলে বলতে তারা অতিশয় শঙ্কিত হয়ে বললেন – সর্বনাশ এ কী কান্ড করেছে রাজা যুবনাস্ব!? এ বারি যে পান করবে তার গর্ভে পুত্র সন্তান জন্মাবেই ।
এর পর ঘটলো সেই অতি আশ্চর্য ঘটনা ঠিক দশ মাস পর রাজার গর্ভে পুত্র সন্তান জন্ম নিল এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গে রাজা যুবনাস্ব প্রাণ হারালেন এই ভাবে আবির্ভাব হল পরবর্তি রাজা মান্ধাতার ॥
আজ এই পর্যন্ত পরবর্তি সময়ে সময় পেলে এই বিষয়ে আরও কিছু মজাদার তথ্য গল্প আকারে আপনাদের সামনে তুলে ধরব বলে আসা করছি ।
তথ্য সূত্র : শ্রীমতি বন্দনা গুপ্তের লেখা “প্রবাদের আড়ালে” বইটি ।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:০৩