somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন দুর্গ-নগর উয়ারী-বটেশ্বরে আবিষ্কৃত হয়েছে বৌদ্ধ পদ্মমন্দিরের গর্ভগৃহ।

২৬ শে জুন, ২০১১ সকাল ৯:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন দুর্গ-নগর উয়ারী-বটেশ্বরে আবিষ্কৃত হয়েছে বৌদ্ধ পদ্মমন্দিরের গর্ভগৃহ।
বৌদ্ধ পদ্মমন্দিরের অস্তিত্ব নিশ্চিত

আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন দুর্গনগর হিসেবে আলোচিত নরসিংদীর উয়ারী-বটেশ্বরে এবার আবিষ্কৃত হয়েছে বৌদ্ধ পদ্মমন্দিরের গর্ভগৃহ। এতে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়েছে, এটি ছিল বৌদ্ধ পদ্মমন্দির। আবিষ্কৃত নিদর্শনের ভিত্তিতে প্রত্নতাত্তি্বকদের ধারণা, সপ্তম শতকে মধুপুর গড় অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার ঘটে। মন্দিরটি বাংলাদেশে আবিষ্কৃত প্রথম বৌদ্ধ পদ্মমন্দির। সম্প্রতি উয়ারী-বটেশ্বর খনন এলাকার শিবপুর উপজেলার মন্দিরভিটায় মন্দিরটি চিহ্নিত হয়।
উৎখননকাজের দলনেতা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সুফি মুস্তাফিজুর রহমান গতকাল শনিবার দুপুরে উয়ারী-বটেশ্বরের দশম ধাপের খননকাজের সমাপনী দিনে এসব তথ্য জানান। সমাপনী দিনে খনন এলাকা পরিদর্শনে আসেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সেখানে জানানো হয়, গত বছর খনন করে ইট নির্মিত ১০ দশমিক ৬ মিটার বর্গাকার পদ্মমন্দিরটির সন্ধান পাওয়া যায়। আদি নির্মাণ যুগের ইট বিছানো মেঝের অংশবিশেষ উন্মোচিত হলেও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করতে এ বছর পুনরায় খনন করা হয়। এ পর্যায়ের খননকালে পদ্মমন্দিরের গর্ভগৃহ আবিষ্কৃত হয়। গর্ভগৃহটি মন্দিরের প্রাচীন স্তরের নিদর্শন। এর পাশাপাশি তিন পাশে প্রদক্ষিণপথ, বারান্দা, প্রবেশপথ এবং স্থাপত্য কাঠামো ও বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, এটি বৌদ্ধ পদ্মমন্দির। এ রকম মন্দিরের বৈশিষ্ট্য হলো, মাঝখানে প্রতিমা থাকে, যাকে বলে গর্ভগৃহ। আবিষ্কৃত গর্ভগৃহটি মন্দিরের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত। আয়তন হচ্ছে, চার বর্গমিটার।
মন্দিরের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে ইট বিছানো একটি বেদি রয়েছে। আটটি পাপড়িযুক্ত একটি পদ্ম অনেকটা অক্ষত রয়েছে। পদ্মের উপস্থিতি মন্দিরটিকে পদ্মমন্দিরের (লোটাস টেম্পল) মর্যাদা দেয়। বৌদ্ধ ধর্মে পদ্ম খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এবং বহুল ব্যবহৃত। বৌদ্ধ ধর্মের আটটি শুভলক্ষণ প্রতীকের মধ্যে পদ্ম একটি। পদ্মের আটটি পাপড়ি হয়তো বা বৌদ্ধ ধর্মের অষ্টমার্গের প্রতীক। বৌদ্ধ ধর্মের নিদর্শনে চার ধরনের পদ্ম পাওয়া যায়। সাদা, লাল ও গোলাপি রঙের পদ্ম ফুল ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করে। আবিষ্কৃত পদ্মটি লাল। এই পদ্ম প্রেম, সহানুভূতি ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিভূ। এ ছাড়া হৃদয়ের নানা আনুষঙ্গিক অনুভূতি এর মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়। আপেক্ষিককাল নিরূপণ পদ্ধতিতে প্রত্নতাত্তি্বকরা এ মন্দিরের বয়স নির্ধারণ করেছেন সপ্তম শতক।
উয়ারী-বটেশ্বরের অস্থায়ী জাদুঘর এলাকায় সংক্ষিপ্ত সমাপনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, 'খনন, সংরক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে উয়ারি-বটেশ্বরের প্রত্ননিদর্শন তুলে ধরতে হবে। আমাদের ধারণা প্রমাণিত হলে বিশ্বের কাছে আমরা খুবই প্রাচীন সভ্য জাতি হিসেবে পরিচিত হব।' তিনি বলেন, বিষয়টি উপলব্ধি করে সরকার খননকাজে সহযোগিতা দিয়ে আসছে। সরকারের পক্ষ থেকে এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে। দেশবাসীর সামনে উয়ারী-বটেশ্বরের প্রত্নতাত্তি্বক গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য তিনি স্থানীয় পাঠান পরিবার, বিশেষ করে হাবিবুল্লাহ পাঠান ও তাঁর বাবা হানিফ পাঠানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দেন, এখানকার ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মানুষজনের দায়িত্ব রয়েছে।
অধ্যাপক সুফি মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, উয়ারী-বটেশ্বর নগর ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল। আরো প্রত্ননিদর্শন পাওয়ার অপার সম্ভাবনা রয়েছে এখানে। এখন প্রয়োজন শুধু খনন করে তা বের করে আনা। প্রত্নতাত্তি্বক খনন একটি জটিল, সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল এবং যৌথ প্রয়াসভিত্তিক কাজ। এরই মধ্যে ভূতত্ত্ব বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধাতব ও বস্তুবিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ ভূতাত্তি্বক জরিপ অধিদপ্তর, স্থাপত্য বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের পরমাণু গবেষণাকেন্দ্র উয়ারী-বটেশ্বরে গবেষণায় অংশ নিয়েছে।
উৎখননকাজের উপনেতা মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ১৮৮৫ সালে নরসিংদীর শিবপুরের আশ্রাফপুর গ্রামে দুটি তাম্র শাসন, একটি ব্রোঞ্জচৈত্য পাওয়া যায়। এর রহস্য উদ্ঘাটন হয় ১৯০৫ সালে। ওই সালে তাম্র শাসনের পাঠোদ্ধার করা হয়। তাম্র শাসন থেকে জানা যায়, সমতটের রাজা দেবখড়ক এ অঞ্চলে চারটি বিহার ও বিহারিকা নির্মাণের জন্য ভূমি দান করেছিলেন। প্রত্নতাত্তি্বকরা ধারণা করেছেন, রাজা দেবখড়কের তাম্র শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল বিহার ও বৌদ্ধ পদ্মমন্দির। সম্প্রতি খনন করতে গিয়ে শিবপুরের জানখারটেক বিহার এবং ধুপিরটেকে বৌদ্ধ পদ্মমন্দির আবিষ্কৃত হয়েছে।
ঐতিহ্য অন্বেষণের ট্রাস্টি নূহ-উল-আলম লেনিনের সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রাহক হাবিবুল্লাহ পাঠান। মন্ত্রী এর আগে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার জানখারটেক দুর্গ এলাকা এবং একই উপজেলার কামরাব এলাকায় আবিষ্কৃত বৌদ্ধ পদ্মমন্দির দেখতে যান। দুর্গ এলাকায় নির্মিত অস্থায়ী জাদুঘরও ঘুরে দেখেন তিনি।
এ সময় উৎখননকাজে অংশ নেওয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৩০ সালে স্থানীয় স্কুলশিক্ষক হানিফ পাঠান প্রথম এই স্থান সুধীসমাজের নজরে আনেন। পরবর্তী সময়ে তাঁর ছেলে হাবিবুল্লাহ পাঠান স্থানটির গুরুত্ব তুলে ধরে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন। ২০০০ সালে বঙ্গীয় শিল্পকলাচর্চার আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের আর্থিক সহায়তায় খননকাজ শুরু হয়। সর্বশেষ ২০১০ সালের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তায় দশম ধাপের খননকাজ শুরু হয়। চলতি জুন মাসে শেষ হয়।
খনন করতে গিয়ে বের হয়ে এসেছে আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন নগরের মানব বসতির ৬০০ মিটার বাই ৬০০ মিটার বিস্তৃত দুর্গ এলাকা, ইটের স্থাপত্য, প্রশস্ত রাস্তা, পার্শ্বরাস্তা, দুর্গপ্রাচীর, পরিখা, অসম রাজার গড়, লৌহ নির্মিত হস্ত-কুঠার, বল্লম, পোড়া মাটির নিক্ষেপাস্ত্র, তাবিজ, ছাপাঙ্কিত রৌপ্য মুদ্রা, উত্তর ভারতীয় কালো মসৃণ মৃৎপাত্র, কাচের পুঁথি, বাটখারা, গর্তনিবাস, মুদ্রাভাণ্ডার, নবযুক্ত মৃৎপাত্র, ধাতব চুড়ি বা তাম্র বালা, পোড়া মাটির চাকতি প্রভৃতি। সর্বশেষ খননে ধুপিরটেকে বৌদ্ধ পদ্মমন্দির এবং ইটের স্থাপত্য বের হয়ে এসেছে। ইটের স্থাপত্য বিহার ও বিহারিকার সাক্ষ্য বহন করে, যা উয়ারী-বটেশ্বরের প্রাচীন ইতিহাসের ধারণাকে স্পষ্ট করে। ধারণা মতে, এসবের বয়সকাল খিস্টপূর্ব ৬০০ থেকে ১০০ বছর আগের, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন।
উয়ারী বটেশ্বরে পদ্ম মন্দিরের অস্তিত্ব মিলল
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×