somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

 প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে কালো টাকা ও পুঁজিবাজারের জন্য ছাড় সাময়িকভাবে সমর্থন করল অর্থনীতি সমিতি

২৬ শে জুন, ২০১১ সকাল ৭:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগামী ২০১১-১২ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের আগে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ৪৮ দফা প্রস্তাব দিয়েছিল। এর মধ্যে একটি ছিল শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য অপরিহার্য বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাবধারীদের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা।
অথচ বাজেট প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে গতকাল শনিবার বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি বাজেটে বিও হিসাবধারীদের টিআইএন বাধ্যতামূলক না করাকে সমর্থন জানিয়েছে। আরও সমর্থন করেছে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীর মূলধনি মুনাফা করমুক্ত রাখার অব্যাহত ধারাসহ যাবতীয় সব ছাড়কে।
আবার অর্থনীতি সমিতির লিখিত প্রতিক্রিয়ায় একই সঙ্গে এও বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে সংস্কারের জন্য সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী অনতিবিলম্বে দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। আর তদন্ত কমিটির অন্যতম দুটো সুপারিশ ছিল বিও হিসাবধারীদের জন্য টিআইএন বাধ্যতামূলক ও ব্যক্তির মূলধনি মুনাফায় করারোপ করা।
তাহলে বিষয়টি স্ববিরোধিতা কি না, জানতে চাইলে সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতার স্বার্থে স্বল্পকালীন পদক্ষেপ হিসেবে এটা সমর্থন করা হয়েছে। বাজার স্থিতিশীল হলেই এগুলো আরোপ করার পক্ষে সমিতি। তাই অর্থনীতি সমিতি তাদের আগের অবস্থান থেকে সরে আসেনি।
গতকাল সকালে ইস্কাটনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি মিলনায়তনে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর প্রতিক্রিয়া ও সুপারিশ জানাতে এক অনুষ্ঠানে এ বিষয়টি উঠে আসে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি ও ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিকস যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আবুল বারকাত। মূল বক্তব্য দেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী। অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।
অনুষ্ঠানে সমিতির নেতাদের আরও প্রশ্ন করা হয়, বাজেটে অবকাঠামো তহবিল ও ট্রেজারি বন্ডে অপ্রদর্শিত আয় বা কালো টাকা ১০ শতাংশ বিনিয়োগ করে বৈধ বা সাদা করার যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে, সেটাকে অর্থনীতি সমিতি সমর্থন করে কি না?
এ প্রশ্নের জবাবে সমিতির সভাপতি আবুল বারকাত বলেন, অর্থনীতি সমিতি কখনোই কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করাকে নীতিগতভাবে সমর্থন করে না। তবে দেশে প্রতিবছর ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার সমপরিমাণ কালো টাকা প্রতিবছর সৃষ্টি হচ্ছে। এর পুঞ্জীভূত পরিমাণ কয়েক লাখ কোটি টাকা হবে, যা অর্থনীতিকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করছে। কাজেই এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে বিষয়টি দেখতে হবে।
বারকাত ব্যাখ্যা করে বলেন, দেশে টাকা-ডলার বিনিময় হারের ওপর কালো টাকা ব্যাপক চাপ তৈরি করেছে। কালো টাকার মালিকদের একাংশ তাদের টাকা বিদেশি মুদ্রায় বিশেষত ডলারে রূপান্তর করেছে। ফলে ডলারের দাম বাড়ছে। তবে তা ব্যাংকে যায়নি।
বারকাত আরও বলেন, আবার গত পাঁচ-ছয় মাসে দেশের রিয়েল এস্টেট বা আবাসন খাতেও বড় ধরনের বিনিয়োগ হয়নি। অর্থাৎ অর্জিত কালো টাকা এই খাতেও যায়নি। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, এত টাকা গেল কোথায়?
এর জবাবটাও দেন অর্থনীতি সমিতির সভাপতি। বলেন, ‘নমুনা হিসেবে আমরা কয়েকটি সিন্দুক নির্মাতার কাছ থেকে সিন্দুক নির্মাণ ও বিক্রির তথ্য সংগ্রহ করেছিলাম। তাতে দেখেছি, গত ছয় মাসে তাদের সিন্দুক বিক্রি ৩০০ শতাংশ বা তিন গুণ বেড়েছে। সুতরাং, বলা যেতে পারে, বিপুল পরিমাণ টাকা এসব সিন্দুকে ও লেপ-তোষকের তলায় রয়েছে।’
এই পর্যবেক্ষণের সমর্থনে আবুল বারকাত ব্যাংকে চলমান তারল্য-সংকটের কথা বলেন। বলেন, ব্যাংকে তারল্য-সংকট এক বা দুই সপ্তাহ থাকতে পারে, কিন্তু তিন-চার মাস ধরে থাকতে পারে না। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক স্বীকার করছে না। কিন্তু তারল্য-সংকট আছে। এটা মানতে হবে।
এ রকম একটা অবস্থায় কালো টাকা কীভাবে মূল ধারায় উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের জন্য দ্রুত নিয়ে আসা যায়, সেদিকে চেষ্টা করা অধিক বাস্তবসম্মত বলে মন্তব্য করেন বারকাত। কালো টাকার মালিকদের নির্বিচারে ধরে শাস্তি দেওয়ার মতো বাস্তব পরিস্থিতি এখন নেই বলেও মনে করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্তি সবচেয়ে কম। এখানে সুদের হার পাঁচ থেকে সাত শতাংশ। কাজেই এ দিকটি বিবেচনায় নেওয়া উচিত। অবশ্য এটাও মাত্র ১০ শতাংশ আয়কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার পক্ষে কোনো যুক্তি হতে পারে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ফরাসউদ্দিন আরও বলেন, সঞ্চয়পত্রের ওপর উৎসে আয়কর গতবারের ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করা হয়েছে। তবে এটাকেই চূড়ান্ত করদায় হিসেবে গণ্য করা উচিত। আর মুনাফার বা সুদের হার বাড়িয়ে আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার পক্ষেও মত দেন তিনি। বলেন, এটা সীমিত আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়াবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর মূল্যস্ফীতিকে আগামী অর্থবছরের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন। বলেন, সীমিত ও নির্দিষ্ট বেতনভোগী ও পেনশনভোগী মানুষ এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ফরাসউদ্দিন আরও বলেন, প্রতি অর্থবছর শেষে ঘাটতি কম হয়। কেননা, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন কম হয়। তাই এটায় সন্তুষ্ট হওয়ার কোনো কারণ নেই।
অর্থনীতি সমিতি বাজেটের ঘাটতি অর্থায়নের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে আবুল বারকাত বলেন, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ-নির্ভরতা কমানো উচিত। তা না হলে ব্যাংকের মূল কাজ শিল্প ও ব্যবসায় অর্থায়ন ব্যাহত হবে। আর বিদেশ থেকে কীভাবে সহজশর্ত ঋণ পাওয়া যায় তা আমাদের জানা নেই। কেননা, সুদের হার কম হলেই তা সহজ হয় না।’
এ ছাড়া সমিতি রপ্তানি-মূল্যের ওপর উৎসে করহার এক লাফে তিন গুণ বাড়িয়ে দেড় শতাংশ নির্ধারণের বিরোধিতা করেছে। বলেছে, এটা রপ্তানিকে নিরুৎসাহিত বা রপ্তানিকারকদের অসৎ পন্থা অবলম্বনে বাধ্য করতে পারে।
সার্বিকভাবে অর্থনীতি সমিতি বাজেটের ব্যয়কাঠামোকে ‘রূপকল্প-২০২১’-এর বিনির্মাণের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ উল্লেখ করেছে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×