somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাসায়নিক মেশানো ছাড়া ফল নেই বাজারে

২৫ শে জুন, ২০১১ রাত ৮:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফলের ম-ম গন্ধে ভরপুর চারদিক। ভরদুপুরের খরতাপ উপেক্ষা করে ঢাকার আহসানউল্লাহ রোডের বাদামতলী ঘাটের ফলপট্টিতে ভিড় ব্যবসায়ীদের। তাঁরা কেউ আড়ত মালিক, কেউ পাইকারি ব্যবসায়ী, আবার কেউ বা খুচরা ব্যবসায়ী। আড়ত মালিক ও ব্যবসায়ীরা ঘিরে রেখেছেন আমভর্তি ট্রাক। আর ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়েই উঁচু স্বরে হাঁক_'নকলা আম। শেষ হয়ে যাবে এখুনি।' এই হাঁকে ফলপট্টিতে থাকা আরো অনেক ব্যবসায়ী হুমড়ি খেয়ে পড়েন ট্রাকের সামনে। তাঁরা রীতিমতো প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন আম কিনতে।
'আমে কি ফরমালিন দেওয়া আছে?' পাশে দাঁড়িয়ে এমন প্রশ্ন করতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন আড়তের শ্রমিক সিরাজ। বললেন, 'আপনারে আর আম কিনতে হবে না। শুধু দেখেই যেতে হবে। মেডিসিন ছাড়া কি আর আম আছে?'
অনুসন্ধানকালে ফল ব্যবসায়ীরা নিজ মুখেই বলেছেন, ফল মানেই কেমিক্যাল মেশানো। বাজারে এমন কোনো ফল নেই, যাতে রাসায়নিক মেশানো হয় না। কোনোটার মাত্রা বেশি, কোনোটা কম।
সরেজমিন বাদামতলী ফল আড়তে গিয়ে দেখা যায়, আম, কাঁঠাল, আপেল, মাল্টা, আনারস, কলাসহ নানা ফলে সয়লাব পুরো এলাকা। আড়তদাররা ব্যস্ত কেনাবেচা নিয়ে। ট্রাক থেকে মাল ওঠানো-নামানো করছে কুলিরা। হাজি ট্রেডার্স নামের এক ফলের দোকানের মালিক ইকবাল হোসেন জানান, বাদামতলীতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন রকমের ফল আসে। দেশি সব ফলেই কেমিক্যাল মেশানো হয়। যেমন_'ক্যালসিয়াম কার্বাইড' ছাড়া কোনো আম নেই। কার্বাইড দিয়ে ফলের পচন রোধ করা যায়। অনেক দিন ভালো থাকে।
সেখানে উপস্থিত আরেক ব্যবসায়ী বলেন, 'যদি মনে করি কেমিক্যাল দেব না, তাহলে বর্তমানে যে আম ৩০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করছি, ওই আম কেজিপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করতে হবে। মাল গুদামে রাখার পর একবার পচন ধরলে সব শেষ হয়ে যায়। তখন ব্যবসা লাটে উঠবে। তাই আগে-পরে যখনই হোক, কেমিক্যাল দেওয়া ছাড়া ব্যবসায়ীদের কিছু করার নেই।'
কথা হয় ফরিদপুর থেকে আসা ব্যবসায়ী আমজাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'ভেজাল (কেমিক্যাল) ছাড়া কোনো জিনিস আছে? আমরা জেনে-শুনেই ভেজাল বিক্রি করি।' বাদামতলী এলাকা ঘুরে কথা হয় আম, আপেল, মাল্টাসহ বিভিন্ন ফলের ব্যবসায়ী মোতালেব হোসেন, মোশারফ হোসেন, আশ্রাফ উদ্দিন, আবদুর রহমানসহ অনেকের সঙ্গে। তাঁদের দাবি, আম রাজশাহী, সাতক্ষীরা, মেহেরপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকেই কেমিক্যাল দিয়ে পাঠানো হয়। এমনকি ভারত থেকে আনা আমেও সেখান থেকে কেমিক্যাল দেওয়া থাকে।
আহসানউল্লাহ রোড খানকা শরিফ মার্কেটের সামনে আম বিক্রি করছিলেন শরীফ মিয়া। এক চেয়ারে বসে আরেক চেয়ারে পা মেলে টাকা গুনছেন তিনি। জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, 'যশোরের নকলা। ভালো আম।' এক ক্রেতা আমে কেমিক্যাল আছে কি না জিজ্ঞেস করতেই তিনি রেগে গেলেন। বললেন, 'থাকলে আছে। না থাকলে নাই।'
নদীর ওপারে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে আসা ব্যবসায়ী সোহরাব বলেন, 'ভাই রে, আম কিনে ভরসা পাচ্ছি না। বিক্রি করতে গেলেই ক্রেতারা বলে, ফ্রেশ আম তো?'
আহসানউল্লাহ রোডের বুড়িগঙ্গা ভবনের পেছনে গিয়ে দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ফলের ঝুড়ি। আনারস ও কাঁঠাল পাইকারি বিক্রি চলছে। এ মার্কেটের আশপাশে ঘুরতেই দেখা যায়, বড় মাটির পাতিলে তিন যুবক 'কলা জাগ' দেওয়ার কাজ করছেন। পাতিলের পানিতে কলা চুবানোর কারণ জিজ্ঞেস করলে মাসুদ নামের যুবকটি জানান, এ পানিতে কলা পাকানোর জন্য কার্বাইড আছে। পাশে পলিথিন দিয়ে ঢাকা কলার স্তূপেও কেমিক্যাল মেশানো বলে জানান তিনি।
কথা হয় পাইকারি কলা ব্যবসায়ী মো. সবুর, সালাম, মঞ্জু, আকবরসহ অনেকের সঙ্গে। তাঁরা জানান, কলায় কেমিক্যাল না দিলে ব্যবসায় লাভ হয় না। তাই সবাই জেনেশুনেই এ কাজ করে।
মার্কেটের সামনে ফুটপাতে কাঁঠাল বিক্রি করছিলেন বাবুল সর্দার। কেমিক্যাল দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, তাঁর কাছেই শতাধিক কাঁঠাল রয়েছে বিক্রির জন্য, যার বেশির ভাগই কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো। কাঁঠালের গোড়ায় শিক দিয়ে ফুটো করে একধরনের কেমিক্যাল দেওয়া হয়, যা পচন রোধ করে। কী কেমিক্যাল দেওয়া হয় তা তিনি জানেন না। তিনি আরো জানান, গাজীপুর থেকে ঢাকায় বেশি কাঁঠাল আনা হয়। বাগান থেকে কাঁঠাল পাড়ার পরপরই কেমিক্যাল দেওয়া হয়। শ্যামবাজারের আড়তে হাজার হাজার কাঁঠাল এভাবে কেমিক্যাল দিয়ে গুদামজাত করে রাখা হয়েছে।
পাশেই অবস্থান করা আনারস ব্যবসায়ী শফিকুর রহমান (৬০) বলেন, আনারস আনা হয় রাঙামাটি থেকে। সেখান থেকে কেমিক্যাল দেওয়া অবস্থায় তাঁরা কিনে আনেন। হাসেম আলী, নুর ইসলাম, শিপনসহ কয়েকজন আনারস সংরক্ষণে কেমিক্যাল দেওয়ার কথা বললেও সেটার নাম বলতে পারেননি। ঢাকার বিভিন্ন আড়তে এনে আরেক দফা কেমিক্যাল দিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়।
ওয়াইজ ঘাট বাকল্যান্ড বাঁধ রোডে (বাদামতলী ঘাটসংলগ্ন) ঝাঁকা সাজিয়ে আম বিক্রি করছিলেন ফারুক মিয়া। জানালেন, পাকিস্তানি আম। এক আমের ওজনই এক কেজি। পাকা আমের রং হলুদ। পাইকারি নিলে ৩০ টাকা কেজি। খুচরা ৫০ টাকা। এই আমে কোনো মেডিসিন দেওয়া নেই বলে তাঁর দাবি। পাশেই রয়েছে গোপালভোগ ও ক্ষিরসাপাত আম সাজানো। ফরমালিন আতঙ্কে সেগুলো কম বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি জানান।
ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রপ্তানিকারক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের কোষাধ্যক্ষ হাজি শাহজাহান মিয়া দাবি করেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েই বেশির ভাগ ফল ঢাকায় আনা হয়। আনার সময় কয়েক দফা চেক করা হয়। ফল এনে কোল্ড স্টোরেজে রাখা হয়। এরপর পাইকারি ব্যবসায়ীরা তাঁদের কাছ থেকে কিনে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন।
ফলে কেমিক্যাল দেওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, এ ছাড়া ব্যবসায়ীদের কোনো উপায় নেই। সরকার থেকে এ ব্যাপারে ফল পাকানো ও দীর্ঘদিন ধরে বিক্রির ব্যবস্থা করে দিলে এ অবৈধ উপায়ে তাঁরা ব্যবসা করতেন না। তিনি জানান, আমাদের কী দায় পড়েছে ফলে ফরমালিন দেওয়ার? ব্যবসায়ীরা নিজে বাঁচতে এ কাজ করে, তাই বলে সবাই তো করে না।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ফাঁদ (The Middle Class Trap): স্বপ্ন না বাস্তবতা?

লিখেছেন মি. বিকেল, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৪৫



বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত কারা? এই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে কিছু রিসার্চ এবং বিআইডিএস (BIDS) এর দেওয়া তথ্য মতে, যে পরিবারের ৪ জন সদস্য আছে এবং তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×