আমার সবচেয়ে প্রিয় আর আপন মানুষ সত্তিকার অর্থেই আমার মা। সেই ছোটবেলার অভ্যাস, বাসায় ফিরে ভাত খেতে খেতে সারাদিন কোথায় কি ঘটল, কে কি করল তার বিস্তারিত বিবরণ মায়ের কাছে দিতে না পারলে খাওয়াটাই মাটি হত। এখনও বাসায় ফিরে সারাদিনের ঘটনাগুলো মায়ের কাছে বলি। তবে সবকিছু বলা হয়ে ওঠে না, অনেক কিছু বলতে ইচ্ছাও হয় না। মাঝে মাঝে মনে হয় যেন শুধু নিয়ম রক্ষা করে যাওয়া।
মনে পড়ে, বেশ ক’বছর আগে প্রথম যেদিন মায়ের দুই-একটা পাকা চুল আবিষ্কার করেছিলাম, বুকের ভেতরতা কেমন জানি করে উঠেছিল। মা কি তাহলে বুড়িয়ে যাচ্ছেন? মনটা প্রচণ্ড খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সেদিন বাথরুমে গিয়ে আর রাতের বেলা বালিশে মুখ চেপে অঝোরে কেঁদেছিলাম, সাথে আল্লাহ্র কাছে ক্রমাগত প্রার্থনা মা যেন আমার আগে বুড়ো না হয়। বেশ কিছুদিন লেগেছিল মন স্বাভাবিক হতে। আজ অনেকদিন পর হটাৎ করেই লক্ষ্য করলাম, মায়ের চুল অনেকগুলো পেকে গেছে, চামড়াতেও ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে। আজও মন খারাপ হল। কিন্তু খুব দ্রুতই সামলে নিলাম, মানুষ তো আর চিরকাল একরকম থাকবে না, বয়স হবে, বুড়ো হবে, একদিন চলেও যাবে, এসব নিয়ে মন খারাপের কোন মানে হয় না...
ইদানিং আসলে কোনকিছুতেই আগের মতো মন খারাপ হয় না, ২০ বছর বয়সেই আবেগ-অনুভূতিগুলো কেমন যেন ভোঁতা হয়ে গেছে। বয়সের সাথে বাস্তবতাবোধ বাড়বে স্বাভাবিক, মাঝে মাঝে সেটা একটু বেশীই বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে হয়।