somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

রুমানার দৃষ্টিশক্তি, লিমনের পা ও বাংলাদেশের চোখ

২৫ শে জুন, ২০১১ সকাল ৯:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রুমানার দৃষ্টিশক্তি, লিমনের পা ও বাংলাদেশের চোখ
ফকির ইলিয়াস
==================================
না, রুমানা মনজুর আর তার দৃশষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন না। ডাক্তাররা স্পষ্ট বলেছেন, যদি পান তবে তা মিরাকল! বড় হতাশ হয়ে ফিরেছেন রুমানা। তিনি আর তার মেয়ে দেখতে পাবেন না কোনো দিনই!
বড় মর্মান্তিক সংবাদ। এর চেয়ে ভয়াবহ খবর একটি দেশের জন্য, একটি সমাজের জন্য আর কী হতে পারে? এই দেশ যাচ্ছে কোথায়? আমাদের সামাজিক অবক্ষয়ের আর কোন সিঁড়ি পার হবো আমরা ?
ডাক্তারদের অভিমত শোনার পর, সব সময়ই জড়িয়ে ধরে রেখেছেন আদরের একমাত্র সন্তান আনুশেহকে। সারাক্ষণই কেঁদেছেন। কখনো উচ্চৈস্বরে আবার কখনও নীরবে চোখের জল ফেলেছেন। বাবাকে বারবার প্রশ্ন করেছেন, “এই চোখে কি আর আলো ফিরবে না? আমি কি আর দেখতে পাবো না? এই আমার প্রাপ্য ছিল?” কী এমন অপরাধ ছিল তার যে তার চোখ দুটো অন্ধ করে দেয়া হলো। বড় আশা নিয়ে তাকে ভারতে নেয়া হয়েছিল। ফিরেছেন আশাহত হয়ে। তবে দেশে ফিরেই আবারো নির্যাতনকারী স্বামীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন তিনি।
বিমানবন্দরে রুমানা সাংবাদিকদের বলেন, আমি এ নির্যাতনের বিচার চাই। যে আমার দুটি চোখ নষ্ট করে দিয়েছে, আমার শরীরে অমানুষিক আঘাত করেছে তার যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার দুই চোখ অন্ধ হয়ে গেছে। আমার মেয়েটি এখনো অনেক ছোট। আমার এ অবস্থায় মেয়ের কী হবে? বিমানবন্দরে রুমানার বাবা মেজর (অব.) মনজুর হোসেন বলেন, চেন্নাইয়ের দুটি বিশেষায়িত চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে রুমানাকে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে তিনজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ বলেছেন, রুমানার দুটি চোখই নষ্ট হয়ে গেছে। চেন্নাইয়ের শংকর নেত্রালয়ের ডা. প্রমোদ ভেন্ডে ও ডা. বিজয় আকন্দের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, রুমানার চোখের ‘আই বল’ ও ‘রেটিনা’ কাজ করছে না। বাইরে থেকে চোখে আলো ফেললে মস্তিষ্ক সেই আলোর সঙ্কেত ধরতে পারছে না। এ কারণে রুমানার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। কান্নাজড়িত কণ্ঠে মনজুর হোসেন বলেন, যে নরঘাতক আমার মেয়ের দুটি চোখই অন্ধ করে দিয়েছে, আমি সেই দানবের বিচার চাই। তার যেন উপযুক্ত বিচার হয়।
বিভিন্ন কাগজে রুমানার যে ছবিটি ছাপা হয়েছে, তা দেখলে গা শিউরে ওঠে। তার নাকের ডগা থেঁতলে গেছে। চেনাই যায় না। কী অপরাধ ছিল তার! তার স্বামী হাসান সাঈদ যা বলছে, তার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে একটি কথাই বলা যায়। আর তা হচ্ছে, বনিবনা না হলে হাসান তাকে ডিভোর্স দেয়ার প্রক্রিয়া করলো না কেন? এই যুগে এসে একটা শিক্ষিত দাবিদার মানুষ এমনটি করতে পারলো?
বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি কোথায় চলেছে, সে প্রমাণ আমরা কিছুদিন আগে লিমন হোসেনের ঘটনায় দেখেছি। গুলিতে লিমনের পা গেছে। তারপরও গ্রেপ্তার হয়েছে লিমন। তার জামিন নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া করা হয়েছে। পা হারা একজন লিমনকে ঘিরে রেখেছে পুলিশ! যদি সে পালিয়ে যায়! কী অদ্ভুত যুক্তি! পুলিশি পাহারায় লিমনের ছবিটি কাগজে দেখে আমার মনে হয়েছে, পুরো বাংলাদেশটিই যেন আজ পা-হারা। আর সেই পা-হারা বাংলাদেশকেই পাহারা দিচ্ছে রাষ্ট্রপক্ষ।
এই পাহারা যদি সরকার জনগণকে দিতো, তাহলে অনেক শান্তি পেতো বাংলাদেশ। না, সেই নিরাপত্তা কোনো সরকারই দেশের মানুষকে দিতে পারেনি। লিমনের ঘটনা এই দেশে বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার জন্য শীর্ষ পদস্থদের অনেক কিছুই করতে হয়! কিন্তু কথা হচ্ছে, একজন দরিদ্র ছাত্র গুলি খেয়ে পা হারানোর পরও তাকে এতো ভয় পেলো কেন রাষ্ট্রপক্ষ?
বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ঘটনাটি ছিল এরকমÑ গত ২৩ মার্চ লিমন মাঠ থেকে গরু আনতে বাড়ির বাইরে যায়। পথে স্থানীয় শহীদ জমাদ্দারের বাড়ির সামনে র‌্যাব-৮-এর একটি দল তাকে সামনে পেয়ে শার্টের কলার ধরে নাম জিজ্ঞেস করে। এ সময় লিমন নিজেকে ছাত্র বলে পরিচয় দেয়। কিন্তু র‌্যাবের এক সদস্য কথাবার্তা ছাড়াই তার বাঁ-পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে দেন। পঙ্গু হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকরা লিমনের পা কেটে ফেলে দেন। পরে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক মোখলেসুর রহমান জানান, র‌্যাবের গুলিতে পা হারানো বরিশালের কলেজ ছাত্র লিমন হোসেন ঘটনার শিকার।মোখলেসুর রহমান বলেন, লিমন অল্প বয়সের একটি ছেলে। তাকে আমরা খারাপ কিংবা দুর্র্ধর্ষ সন্ত্রাসী বলছি না। অবশ্য তদন্তে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা আছে বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া অন্য কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। লিমন ঘটনার শিকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, তাকে সন্ত্রাসী মোরশেদ জমাদ্দারের অনুসারী মনে করা হয়েছে। জমাদ্দার একা নন, তার অনেক সহযোগী আছে। তদন্তে তাদের সবার নাম উঠে আসবে। র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, লিমনের ঘটনা তদন্তে র‌্যাব সদর দপ্তর থেকে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সরজমিন তদন্ত করে যতো দ্রুত সম্ভব র‌্যাব সদর দপ্তরে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, র‌্যাবের পাশাপাশি একজন ম্যাজিস্ট্রেটও ঘটনাটি তদন্ত করছেন। ঘটনার পর র‌্যাব-৮ এর জমা দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে অভিযান পরিচালনাকারী কোনো র‌্যাব সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
সম্প্রতি নিউইয়র্ক এসেছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল- লিমন হোসেন বিষয়ে। তিনি উত্তরে বলেন, বিষয়টি তদন্তাধীন। তাই আমি কিছুই বলবো না। লিমন হোসেন আদালতে সুবিচার পাবেন, সেটা গোটা দেশবাসীর প্রত্যাশা। কারণ সুবিচার লিমনকে পেতেই হবে। সুবিচার পেতে হবে রুমানাকেও। আমরা ইতোমধ্যে জেনেছি, রুমানাকে যে পাষ- আক্রমণ করেছে, তার হাত অনেক লম্বা। অনেক রাঘব বোয়াল তার আত্মীয়। আমাদের চারপাশে এই যে কালোশক্তির দাপট, সেই দাপট কি ক্রমশ অন্ধ করে দেবে বাংলাদেশের চোখ? সেই প্রশ্নটি আসছে খুব সঙ্গত কারণে।
ধর্ষিত হেনার কথা আপনাদের মনে আছে? শরীয়তপুরের মেয়ে হেনা। শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার ঘটনা। কিশোরী হেনার ওপর হামলা করে তাকে ধর্ষণ করে তারই প্রতিবেশী সম্পর্কে ভাই হিসেবে পরিচিত এক পাষ-। এরপর হেনার চিৎকার শুনে সবাই ছুটে এলেও ধর্ষকের স্ত্রী তাকে নির্যাতন করে গোপন অঙ্গ ঝলসে দেয়। হেনার বিরুদ্ধে গ্রাম্য সালিসের বিচার করে ফতোয়া জারি করে তাকে দোররা মারা হয়। দোররা মারার সময় সে মাটিতে পড়ে যায়। কিন্তু নির্যাতনের যন্ত্রণায় হেনাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে তিনদিন পর সে মৃত্যুবরণ করে। এই হত্যার বিচার কী বাংলাদেশে হয়েছে ? সেই ধর্ষক এখন কোথায়? এমন অনেক কথাই জানতে চাওয়া যায়। জবাব দেবে কে? কী জবাব দেবে?
মহীয়সী নারী বেগম সুফিয়া কামালের জন্মশতবার্ষিকী পালিত হলো। মনে পড়ছে ইংল্যান্ডে ‘বাংলা সাহিত্য পরিষদ’ আয়োজিত একটি সাহিত্য সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল। সেই অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলার সুযোগ আমার হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন- শিকল ভাঙতে হবে। মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। বেগম সুফিয়া কামালের জন্মশতবার্ষিকীতে প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বেগম সুফিয়া কামালের কাছে আমি ব্যক্তিগতভাবে ঋণী।
হ্যাঁ, আপনি ঋণী তো বটেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। কারণ আমরা দেখেছি এই মহান মানুষটি কীভাবে আপনাকে স্নেহ করতেন। কীভাবে মিছিলে দাঁড়াতেন জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধাবনত হয়ে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আসুন না আমরা সেই মহীয়সী সুফিয়া কামালের স্বপ্নের সিকিভাগটি হলেও পূরণ করি। আসুন না আমরা বাংলাদেশের চোখজোড়াকে রক্ষা করি। না করতে পারলে এই জাতিটাই যে রুমানার মতো অন্ধ হয়ে যাবে। লিমনের মতো পঙ্গু হয়ে যাবে।
২২ জুন ২০১১
----------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ / ঢাকা / ২৫ জুন ২০১১ শনিবার

ছবি- কলেন ক্লার্ক



৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×