somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পলাতকা... (অষ্টম পর্ব)

২৪ শে জুন, ২০১১ বিকাল ৪:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যূথীর সাথে এখন আমার ফোনে নিয়মিত কথা হয় কিন্তু তা রবিন জানেনা। রবিনকে জানানো খুব প্রয়োজন। অবশ্য ইদানিং যূথীর সাথে আমার যেসব কথা বার্তা হয় তার বেশির ভাগই বিড়াল বিষয়ক। একটা জিনিষ খুব করে লক্ষ্য করলাম যূথী শুধু শুধু যে বিড়ালদের পছন্দ তার নয় বিড়াল বিষয়ক যাবতীয় খুঁটি নাটি তথ্য সবই তার নখ দর্পে। বিড়ালের মন মর্জি কখন কি রকম থাকে তার সব কিছু যূথী জানে। ক্ষুধা লাগলে কোন স্বরে ডাকে, আদর পেতে কোন স্বরে ডাকে বা কতটুকু রেগে গেলে কেমন করে চিৎকার করে তাও যূথী জানে। যূথীর কাছ থেকে বিড়াল বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ যেসব তথ্য পেলাম তা হলো আমাদের দেশে মোট ৮ প্রজাতির বিড়াল বা কেট পাওয়া যায়। এগুলো হল বন বিড়াল, সোনালী বিড়াল, গেছো বাঘ বা লাম চিতা, চিতা বাঘ, বাঘ, মেছো বাঘ বা মেছো বিড়াল, চিতা বিড়াল ও মারবেল বিড়াল।

১। বন বিড়াল (Jungle Cat): বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই এই বন বিড়াল পাওয়া যায়। গ্রামের ঝোপঝার, নলখাগরা, চারণভূমি ও বাদাবনে এরা বসবাস করে এবং বসতি সংকোচন ও বেপরোয়া নিদনের ফলে এই বাংলাদেশে আজ বিপন্ন।

২। সোনালী বিড়াল (Golden Cat): বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রামের চিরসবুজ ও আংশিক চিরসবুজ বন এবং বনের পাশের তৃণভূমি অঞ্চলেও এদের পাওয়া যায়। ব্যাপক হারে বন নিধনের কারনে এটি আজ মহাবিপন্ন বা বিলুপ্তির একদম কাছাকাছি।

৩। গেছো বাঘ বা লাম চিতা (Clouded Leopard): পার্বত্য চট্টগ্রামের বনভূমিতে পাওয়া যায় তবে গাছপালা ও বন না থাকায় তা আজ মহাবিপন্ন বা বিলুপ্তির একদম কাছাকাছি অবস্থানে দাঁড়িয়ে।

৪। চিতা বাঘ (Leopard): এটি আজ বাংলাদেশে আদৌ আছে কিনা না বিলুপ্ত সন্দেহ আছে। ক্ষিপ্র গতিতে গাছ থেকে গাছে বিচরণ করে বেড়ানো এবং হরিণ, বানর, শুয়োর শিকার করে বেড়ানো এই প্রাণীটি আজ মহাবিপন্নের কাতারে যার প্রধান কারণ খাবারের অভাব, বন ধ্বংস, দেখা মাত্র হত্যা।

৫। বাঘ (Tiger): একসময় বাংলাদেশের সর্বত্র থাকলেও আজ সুন্দরবন ছাড়া কোথাও নেই যদিও পার্বত্য চট্টগ্রামে আছে বলে ধারনা করা হয়। সুপ্রিয় চাকমা নামে একজন গবেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধীনে পিএইচডির কাজে পার্বত্য চট্টগ্রামে এই বাঘ সহ সব বিড়ালের সন্ধান বা সার্ভে করছেন গত এক বছর ধরে।

৬। মেছো বাঘ বা মেছো বিড়াল (Fishing Cat): শহরের বাইরে যে কোন জায়গায়, মানুষ্যবসতির পিছনে ঝোপ ঝাড় ও সুন্দরবনে এই মেছো বাঘ বা মেছো বিড়ালের বসবাস। মানুষ এটাকে দেখা মাত্র হত্যা করার করনে তা আজ মহা বিপন্ন।

৭। চিতা বিড়াল (Leopard Cat): এটার সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমান তথ্য জানা নেই কারন এটা খুবই কম এবং এখন এই প্রজাতির বিড়াল দেখা যায় না বললেই চলে।

৮। মারবেল বিড়াল (Marbled Cat): এটা এতই কম যে এর সম্পর্কেও যথেষ্ট তথ্য আমাদের দেশের প্রাণিবিজ্ঞানীদের কাছে নাই। সিলেটের শ্রীমঙ্গলের সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা থেকে তোলা একবার দুইটা বাচ্চা মারবেল বিড়ালের ছবি দেখেছিলাম। এটা ১৮৪৬ সালে পার্বত্য জেলা গুলোতে দেখা যেত বলে তথ্য আছে। মানে এটা বিলুপ্ত প্রায়।

যুথীর দেয়া তথ্য থেকে বুঝতে পারছি আমাদের দেশে বিড়ালরা ভালো নেই সবাই বিপন্নের তালিকায় চলে এসেছে এক দিন যদি সব প্রজাতির বিড়াল বিপন্ন হয়ে যায় তবুও কিছু বিড়াল থেকে যাবে আর তা যূথীর হৃদয়ে। আমি এতো দিন জানতাম বিড়াল হলো বাঘের গোত্রীয় কিন্তু যূথীর তথ্যানুযায়ী এখন দেখছি বাঘই হচ্ছে বিড়ালের গোত্রের একজন... কি আশ্চার্য্য ! যূথীর এই অতি বিড়াল ভক্তির কারনে তার ভার্সিটির বন্ধুরা তাকে বিলাইয়ের মা, বিলাই, বিড়াল, বিল্লি, বিল বলে ডাকা ডাকি করে অবশ্য তাতে যূথীর কিছু আসে যায় না সে বরং আরো খুশী। যূথীর সাথে কথা বলার সময় আমি চেষ্টা করি বিড়ালের প্রসঙ্গটা এড়িয়ে চলতে কারণ বিড়াল নিয়ে বাড়া বাড়ি আমার পছন্দ হচ্ছে না কিন্তু যূথী প্রতিটা কথার প্রসঙ্গে বিড়ালকেই অবধারিত ভাবেই টানবেই। আমরা কারো টেলিফোন রিসিভ করে সাধারণত হ্যালো বলি কিন্তু যূথী তার পরিচিত জনের ফোন রিসিভ করে বলবে মিঁউ মিঁউ... এবং এই মিঁউটা এতো বেশি বাস্তব যে মনে হবে কোন প্রশিক্ষিত বিড়াল বুঝি টেলিফোন রিসিভ করলো। একদিন রাতে তার সাথে আমার কথা হচ্ছে...

- হ্যালো...
- মিঁউ মিঁউ...
- কেমন আছো ?
- ভা-লো আছি, আপনি কেমন আছেন ?
- হুম, আমিও ভালো আছি। তুমি কি করছিলে ?
- একটা এ্যাসাইনমেন্ট তৈরী করছিলাম।
- ও তাহলে কি আমি তোমার কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করলাম...
- আরে না না না আমার কাজ শেষ।
- ভালো। আচ্ছা তুমি কি কবিতা লেখো ?
- না। আমি কবিতা বুঝিনা।
- আমিও বুঝিনা তবে পড়তে ভালো লাগে। তুমি ডায়েরী লিখো ?
- নিয়মিত লিখিনা তবে মাঝে মধ্যে লিখি।
- তোমার লেখা ডায়েরীর পাতা থেকে দু-এক পৃষ্ঠা আমাকে পড়ে শোনাবে ?
- আচ্ছা দাঁড়াও ডায়েরীগুলো আমার আলমারীতে তুলে রাখা, বের করে তোমাকে শোনাচ্ছি...

১৪.৩.২০১০, সন্ধ্যা ৭.১৬ মিনিট।
প্রিয় লাল্টু... (সদ্য প্রয়াত প্রিয় বিড়ালদের একজন)
তুমি আজ আমাদের মাঝে নেই ভাবতেই আমার হৃদয়টা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। যত বারই তোমাকে নিয়ে ভাবি ততবারই আমার হৃদয় ভেঙ্গে যাচ্ছে। তোমাকে যে করবে শুইয়ে রেখে এসেছি আমি জানিনা তুমি আসলেই ওখানে আছো নাকি তুমি অশরীরি ভাবে আমার পাশেই আছো। তুমি যেখানেই থাকনা কেন তুমি শান্তিতেই থাকো এটাই কামনা করি। লাল্টু তুমি ত দেখেছো তোমাকে বাঁচানোর জন্য আমি বা আমরা চেষ্টার কোন ত্রুটি করিনি। কিন্তু মহান আল্লাহ পাক চাননি তুমি আর আমাদের মাঝে থাকো তাই তিনি তোমাকে আমাদের মাঝ থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন। লাল্টু, তুমি যখন অসুস্থ্য হয়ে সব রকমের খাবার দাবার বন্ধ করে দিয়েছিলে তুমি নিশ্চয় দেখেছো আমিও কিছু খেতে পারিনি। তোমাকে না খাইয়ে আমি কি কখনো খেয়েছি ? লাল্টু, আমি আজও ঠিক মতো খেতে পারিনা, যখনি খেতে বসি তখনি মনে হয় আমার পায়ের কাছে তুমি ঘোর ঘোর করছো। তখন আর মুখে কিছু তুলতে পারিনা। লাল্টু তুমি কি জানো আমাদের পাশের বাসার বাসিন্দা তোমার প্রেমিকা এখনো নিয়মিত আমাদের বাসায় আসে কিন্তু তোমাকে না পেয়ে বিষন্ন মন নিয়ে ফিরে যায়। জ্যাকসন, বল্টু, বিল্লী, তুষি, পুষিরা এখনো তোমার জন্য চোখের জল ফেলে। তোমার খাবারের বাটি, বিছানা, জামা কাপড় গুলো তুলে রেখেছি যত্ন করে। জানি তুমি কখনো আর ফিরে আসবে না। কিন্তু তোমার স্মৃতি আমার কাছে আজীবন থেকে যাবে। তুমি কি জানো তোমার সব ছবিগুলো আমার ফেসবুকে সব বন্ধুদের সাথে শেয়ার করেছি তারা যখন জানতে পেরেছি তুমি আর নেই তখন তারাও যে কত সমবেদনা জানিয়েছে তা তুমি না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেনা। তোমার একটা ছবি আমার প্রোফাইলে দিয়ে রেখেছি কি সুন্দর দেখাচ্ছিলো তোমাকে সেই ছবিতে... আহ ! লাল্টু... তুমি যেখানেই থাকো ভালো থেকো। আমি আর লিখতে পারছিনা আমার খুব কান্না পাচ্ছে। আমি এখনো একটু কাঁদবো...
চলবে...

সুমন আহমদ
সিলেট।
২৫শে জুন ২০১১ খৃষ্টাব্দ।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেট্রোরেল পেয়েছি অথচ হলি আর্টিজানে নিহত জাপানিজদের ভুলে গেছি

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৫ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১১

জাপানে লেখাপড়া করেছেন এমন একজনের কাছে গল্পটা শোনা৷ তিনি জাপানে মাস্টার্স করেছিলেন৷ এ কারণে তার অনেক জাপানিজ বন্ধু-বান্ধব জুটে যায়৷ জাপান থেকে চলে আসার পরেও জাপানি বন্ধুদের সাথে তার যোগাযোগ... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুদ্ধে নিহত মনোজ দা’র বাবা

লিখেছেন প্রামানিক, ২৫ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৭১ সালের এপ্রিলের ছব্বিশ তারিখ। দেশে তখন ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছে। উচ্চ শিক্ষিত এবং কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের নিয়েই বেশি সমস্যা। তাদেরকে খুঁজে খুঁজে ধরে নিয়ে হত্যা করছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিয়ে থেতে ভাল্লাগে।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৫ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৯

আমার বিয়ে বাড়ির খাবার খেতে ভালো লাগে। আমাকে কেউ বিয়ের দাওয়াত দিলে আমার খুসি লাগে। বিয়ের দিন আমি সেজে গুজে বিয়ে বাড়িতে আয়োজন করা খাবার থেতে যাই। আমাদের এলাকায় বর্তমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুর সামনের পাতার ৯টি পোষ্টে শুন্য (০ ) মন্তব্য।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৫ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০



আজকে সকালে একটু দেরীতে ( নিউইয়র্ক সময়, সকাল ৮:২১ ) সামুতে লগিন করলাম; লগিন করে আজকাল প্রথমে নিজের লগিন স্ট্যাটাস পরীক্ষা করি: এখনো সেমিব্যানে আছি। মোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

উসমানীয় সাম্রাজ্যের উসমান এখন বাংলাদেশে

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৫ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২০



জনপ্রিয় ''কুরুলুস উসমান'' সিরিজের নায়ক Burak Ozcivit এখন বাংলাদেশে। বিগত কয়েক বছর ধরে তার্কির অটোমান সাম্রাজ্যের বিভিন্ন সুলতানদের নিয়ে নির্মিত সিরিজগুলো বিশ্বব্যপী বেশ সারা ফেলেছে। মুসলিমদের মাঝেতো বটেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×