somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সনজিতা মা ফিরে আয়!!!গেদু চাচার খোলা চিঠি।

২০ শে জুন, ২০১১ সকাল ৮:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মা সনজিতা,
ফিরে আয় মা...আর লজ্জা দিস না এভাবে।এইত কিছুদিন আগে রুমানাকে নিয়ে চিঠি দিলাম...আমার মেয়েকে যে নর পিশাচ নির্যাতন করেছে তার বিচার চাই...সেই রেশ কাটতে না কাটতেই তুই চলে গেলি।এত অভিমানী ছিলি...তা তো বুঝিনিরে মা।সেই দারিদ্রক্লীষ্ট মুদি দোকানে সারা দিন মা কে সাহায্য করে রাতে পড়তে বসতি...কি হলো আজ তোর?চলে গেলি সেই পড়ার টেবিলের পাশেই মারা যেয়ে?আজ একজন রুমানা,সিমি,ইয়াসমিন,হেনা,ফেলানির মত আরো আরো অনেক মেয়ের দুর্ভাগা বাবা হিসেবে আবারো চিঠি লেখালি।

মা সনজিতা,
কত বয়স ছিলো তোর?বার বছর কি হয়েছিলো?তোর শরীরে কি যুবতী হবার মত কোন লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছিলো?তবুও ডা. আবুবকর উচ্চবিদ্যালয়ের সেই নর পিশাচ প্রধাণ শিক্ষকের লোভাতুর দৃষ্টি এড়ায়নি...সে তোকে বিশেষ ডাকের ফাঁদে ফেলে পাশবিক কাজে বাধ্য করতে দ্বীধা করেনি...কুকুরের কাছে মাংস কি আর হাড্ডি কি...আর তার কাছে মেয়ে কি আর বাচ্চা কি...।নারে মা,লজ্জা আর লাগেনা...আরেকটা যুদ্ধ্যে যাব...বেছে বেছে মারতে হবে...তোদের কে তো স্কুলে পাঠাতে হবেরে মা।এইসব নরপশুকে না মারলে তো ভয়ে আতংকে তোরা স্কুলেই যাবি না।

মা সনজিতা,
আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাহারার কাছে যাব...আমি বলব দেখেন দেশে কি হচ্ছে...আমি বলব দেখেন আজকে আমার ক্লাস নাইনে পড়া মেয়ে গরমের ছুটিতে থাকা স্কুলে প্রধাণ শিক্ষকের ফাঁদে পড়ে জিবন দেয়।মা রে,আমি হাসিনার কাছে যাব...আমি বলব কেন মা তুমি মেয়েদের শাড়ি পরে থাক?আজ যেখানে ক্লাস নাইনে পড়া মেয়েকে শিক্ষক অত্যাচার করে আর পুলিশে ধরতে পারেনা...সেই দেশের প্রধাণমন্ত্রী হয়ে শাড়ি পরা মানায় না...তুমি চুল ছোট ছোট করে...জিন্স প্যান্ট আর শার্ট পরে থাক...যেন কেউ না বুঝে এই দেশের প্রধাণমন্ত্রী একজন মহিলা...একজন মা...একজন মেয়ে।মা রে ,আমি খালেদার কাছে যাব...আমি তাকে বলব তুমি তো মা তোমার ছেলে তারেকের জন্যে হরতাল করেছো...এখন কেন রুমানার জন্যে না...সনজিতার জন্যে না।

মা সনজিতা,
তুই কি জানিস আজকে নারী জাগরনের কবি বেগম সুফিয়া কামালের জন্ম দিন?শুধু জন্ম দিনই না...আজ তার জন্ম শত বার্ষিকী।অথচ আজকে রুমানাকে ফিরতে হচ্ছে চোখ ছাড়াই...একদিকে কবি সারাজীবন নারীদের চোখে জ্ঞানের আলো দিতে চেয়েছেন...আরেকদিকে রুমানা ফিরে আসছে এক চোখে আর দেখতে পারবে কিনা এই অনিশ্চয়তা নিয়েই...।কি জবাব দেব রে মা?আমি বড় অপরাগ হয়ে আজ কলম তুলে নিয়েছি হাতে মা...আমার দুর্বল হাতে অস্ত্র কাজ করবে না...।কেউ একজন কবিকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন... ‘টানবাজারের পতিতালয়ের পতিতাদের পুর্নবাসন কে কিভাবে দেখেন?’ কবি উত্তর দিয়েছিলেন, ‘ভাসা ভাসা ধারণা নিয়ে, মূল সমস্যা অনুধাবন না করে, উপরে উপরে “দরদ” দেখিয়ে পতিতা পুনর্বাসন হয় না’।আজ কি হয়েছে তার পরিণাম?টিভি খুলেই দেখলাম তেড়ে ফুড়ে টানবাজার পতিতা পল্লী উচ্ছেদের নেপথ্যের নায়ক শামীম ওসমান ছুটে যাচ্ছেন আরেক নারী সাংসদ কবরীর দিকে।এই সংবাদ যেন নারায়নগঞ্জে না দেখানো হয় তাই...কিছুক্ষণ বাদেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এটিএন নিউজের সম্প্রচার।মা রে অবাক হবি আরো কিছু শুনলে...এই নেতার সেখানে থাকার কোন অধিকারই নেই...কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে সে সেখানে ছিলো।আজকে কেন একজন শিক্ষক একজন মেয়ে তুল্য ছাত্রীকে তার রুমে ডেকে অশালীন আচরণ করতে পারে তা কি বুঝলি?

মা সনজিতা,

আরো একটা ঘটনা বলি...স্থানের নাম খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়...ডিসিপ্লিনের নাম ইকোনোমিক্স।সেখানকার একজন দরবেশ রুপি স্যারের মনে ধরলো তার একজন ছাত্রীকে উনি বিয়ে করবেন...কিছুতেই কিছু না হওয়াতে একদিন ফাকা রুমে তার হীন চরিত্র কে প্রকাশ করতে দেরি করেন্নি।ছাত্রী তার উপস্থিত বুদ্ধির জোড়ে রক্ষা পেয়েছেন...করেছেন অভিযোগ...কিন্তু কোথায় তার বিচার?দিব্বি সেই হুজুর ক্লাস নিচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছুটির দিনে...বেতন তো পেতে হবে তাইনা?দিব্বি চুপ আছে প্রশাসন...আর লাল ফিতায় আটকায় আছে তার কুকর্মের ফাইল।এমন প্রতিদিন তোর বড় আপুরা কষ্টে আছে...দেখার কেউ নাই...মাঝে মাঝে দুই একটা ঘটনার বিচার হয়...আর বেশির ভাগই থেকে যায় লোক চক্ষুর আড়ালে।যে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের মত জায়গায় এমন ঘটনা ঘটে সেখানে তোর সাথে যা হয়েছে তার কি বিচার হবে?তাই বলি কি মা,তুই চলে আয়...নিরবে চলে গেলে এইসব বড় আপু,বান্ধবী বা ছোটদের আমরা কিভাবে বাঁচাব?



মা সনজিতা,
একটা দেশের প্রশাসনিক ব্যাবস্থা থেকে শুরু করে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যাবস্থা কেমন চলছে তা বুঝা যায়...সেই দেশের নারীরা অন্তত কেমন আছে তা দেখে...এখন তুইই বল কেমন আছে বাংলাদেশ?রুমানার সাথে সাথি আরেকটি মেয়ে অত্যাচারিত হল...সেদিন কত মেয়ের সংবাদ আলোতে আসেনাই বলে আমরা জানিই না তা কে জানে?আর ঠিক কিছুদিন পরেই আসল তর চলে যাবার সংবাদ।এদশে কি আর গ্রামের কোন মেয়ে স্কুলে যাবে?কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে...দুই বেনী করে...মুখে সরল নিস্পাপ হাসি নিয়ে?কেউ কি আর যাবে প্রধাণ শিক্ষকের রুমে উপবৃত্তির টাকা নিতে খাতায় সই করতে?আচ্ছা মা,কোন মেয়ে কি আর তার শিক্ষকের দিকে শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে তাকাতে পারবে?আমি জানি পারবে না।

মা সনজিতা,
ফিরে আয় মা, তোর মা যিনি কিনা স্বামী হারিয়ে তোকে নিয়েই স্বপ্ন দেখছিলেন...তোকে হারিয়ে আজ সে পাগলপ্রায়।হয়ত ভাত মেখে বসে থাকেন দরজায়...মনের ভুলে ফ্যাল ফ্যাল করে সজল আঁখিতে বুঝতে চেষ্টা করেন কি বলতে চাইছে খদ্দের।হয়ত রাতের বেলায়...তোর ছোট ভাইকে বুকের মাঝে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রাখেন...চোখের পানিতে ভিজিয়ে দেন তার গাল...যেন তার মাঝেই তোকে খুঁজে ফেরা।ফিরে আয় মা, আমরা দুজনে মিলে মুদি দোকানটা আবার সাজিয়ে তুলব...হিসাব খাতা করব...সন্ধ্যা হলেই তুই পড়তে বসবি হারিকেনের আলোয়...আমি অল্প দূর থেকে শুনব, ‘মানুষ কে সুশিক্ষিত হবার থেকে স্বশিক্ষিত হবার চেষ্টায় বেশি করা উচিত’

মা সনজিতা,
তোকে ফিরে আসতে বলি কারণ এদেশে একটা বিপ্লব দরকার...যেন কোন ফেলানীকে মরে যেয়ে তারকাটায় ঝুলে আবার তার দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে শুনতে না হয়...সে এই দেশের নাগরীক না।যেন হেনা কে ফতোয়ার ফলে মরে যেয়ে শুনতে না হয় কেন রিপোর্টার সেই সংবাদ ছেপেছিলো।মা ফিরে আয়...যেন আমরা রুমানা ম্যাডামের নির্যাতনকারীকে ধরতে হাইকোর্টে রুল না দিতে দেখি।মা তোকে ফিরে আসতে বলি কারণ অনেক সাহস এসে গেছে এদশের নারী নাত্রীদের...তারা আজ কোন কিছুকেই কিছু ভাবে না...তারা মুখে যা আসে তাই বলে...তারা তো ভালই থাকে...খালেদার নাতনী জাইমা থাকে লন্ডনে...আর হাসিনার মেয়ে পুতুল আমেরিকায়...তাই তোদের নিরাপত্তার ব্যাপার তাদের কাছে কিছুনা।এদেশে একটা বিপ্লব দরকার যেন আর কোন নারী অত্যাচারের শিকার না হয়...বা তার অত্যাচারী যেন বুক ফুলায় ঘুরতে না পারে...যেন তোর সাথে বেয়াদবি করা সেই শিক্ষক কে ধরতে পুলিশের এত দেরি না লাগে।

মা সনজিতা,
এভাবে চলে যেতে কেন হয়েছে আমি জানি...আমাদের দেশের দুই নেত্রীর পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা না থাকতে পারে...সম্মানবোধ না থাকতে পারে...তারা কারণে অকারণে একে অপরের সাথে অশ্লীল ভাষায় কথা বলতে পারেন...এতে তাদের সম্মান না থাকলেও তোর আছে...ছোট শরীরের প্রতি...ছোট মনের...ছোট স্বপ্নের।আমি কি বলে ডাক দেই পেছনে থেকে তোকে মা?শুধু বলি একবার ফিরে আয় মা...যুদ্ধ্যে নামি...!!!

সনজিতা মা ফিরে আয়!!!গেদু চাচার খোলা চিঠি।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১১ সকাল ১০:১৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×