somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

'সুদ' নামক বস্তুটির ভয়াবহ তান্ডবলীলা - ৬

১৯ শে জুন, ২০১১ বিকাল ৪:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-----------'সুদ' নামক বস্তুটির ভয়াবহ তান্ডবলীলা-৫ এর পরঃ

১০.৫ বহুমাত্রিক ক্ষতির পঞ্চম স্তরঃ

এবার চলুন দেখা যাক, পৃথিবীতে আমাদের অস্তিত্বের উপর, আমাদের শরীরে রোগ ব্যধী তৈরী করাতে এবং পৃথিবী হতে আমাদের অতিদ্রুত চিরবিদায় করে দিতে এই পূঁজিবাদী ব্যবস্থা আর তার অন্যতম নিয়ামক সুদের ভূমিকা কোথায়। অনেকে হয়তো খুবই অবাক হচ্ছেন উপরের কথাগুলো শুনে। কিন্তু এটাই বাস্থবতা। আপনাকে আমাকে এই ধরাধাম হতে মৃত্যুর ঘোর অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে এই নষ্ট ব্যবস্থা আপনারই অজান্তে। কাজটি হচ্ছে খুব আস্তে আস্তে আর এই অকল্যানে পরিপূর্ণ ব্যবস্থার সাথে নিজেদের জড়িয়ে ফেলার কারনে আজ তাই এর ক্ষতির এতসব আঙ্গিক আমাদের চোখে পড়ছেনা। কারো কারো চোখে পড়লেও কিছু বলছেনা বা করছেনা কারন এতে তার রুটি-রুজি জড়িত।

যাই হোক আমার অনেক দিনের জমে থাকা কিছু চিন্তা, এমন সব বিষয় যা হয়তো অনেকে কখনো ভাবেননি, আস্তে আস্তে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করছি শুধুমাত্র একটি কারনেঃ যাতে আমরা সবাই এই কথাটা সূর্যের উপস্থিতিতে দিনের আলোর মত, পঞ্চইন্দ্রিয় দিয়ে গ্রাহ্য নিখাদ কোন বস্তুর মত কিংবা ঘোর অন্ধকারেও নিজের অস্তিত্বের উপস্থিতির উপর আস্থা আর বিশ্বাসের স্থিতির মত এ কথা জেনে বুঝে নিতে পারি যে এই নষ্ট ব্যবস্থা থেকে মুক্তি আবশ্যক!!!

আমরা দেখে এসেছি যে এই জঘন্য পূঁজিবাদী ব্যবস্থায় কিভাবে ধনী আরও ধনী আর গরীব আরও গরীব হয়। আমরা দেখেছি কিভাবে অর্থ ধনিক শ্রেণীর হাতে গিয়ে জমা হয়। আমরা আরও দেখেছি কিভাবে প্রাথমিক পণ্যদ্রব্য মূল্য সংযোজন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য বাজারে বেশী দামে বিক্রয় হয় আর জনগনের জন্য নাভিশ্বাসের কারন হয়। এত সব কিছু হয় বাজার হতে অতিরিক্ত মুনাফা তুলে নেয়ার অভিপ্রায়ের কারনে। এই অভিপ্রায়ও কিন্তু আমরা দেখেছি এই পঙ্কিল ব্যবস্থা আস্তে আস্তে মানুষের মধ্যে স্বার্থপরতার বীজ বপন করার মধ্য দিয়ে প্রতিস্থাপন করে দেয়।

অতিরিক্ত বা বেশী মুনাফা করার জন্য পূঁজিপতিকে ‘মূলধন-ঘন’ (capital intensive) বিনিয়োগ করতে হয়। অর্থ্যাৎ যন্ত্রপাতি যা উৎপাদনের জন্য আবশ্যক সেই গুলোতে বেশী অর্থ খরচ করতে হয়। আর বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে এই সব যন্ত্রপাতি দিন দিন এত উন্নত হচ্ছে যে সয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে (automated mechanism) এইগুলো উৎপাদন করতে পারে। মানুষের কাজের কোন প্রয়োজন পড়েনা। এতে করে বেকার পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে আরেক দফায়। অথ্যাৎ, এই সুদী অর্থব্যবস্থায় যেহেতু পূঁজি ইতিমধ্যে যার অনেক সে নতুন করে বড় আকারে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ পায়, ঐ ব্যক্তি (পূঁজিপতি) অতিরিক্ত বা বেশী মুনাফা করার জন্য বড় আকারের ঋণ গ্রহন করে। ‘শ্রম-ঘন’ (labour intensive) বিনিয়োগের পরিবর্তে বেশী মুনাফা করার জন্য ‘মূলধন-ঘন’ (capital intensive) বিনিয়োগ করে। পূঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় ‘law of large number’ বা ‘বড় অংকের নীতি’ বলে একটি কথা আছে। এই ব্যাপারটি আপনিও জানেন। ওরা শুধু একটা নতুন নাম দিল আরকি! পেয়াজ ১ কেজি কিনলে হয়তো প্রতি কেজির জন্য দাম দিতে হবে ধরেন ২০ টাকা। কিন্তু আপনি যদি পাইকারি বাজার থেকে এক পাল্লা (৫ কেজি) একসাথে কিনেন দাম দিতে হবে মনে করেন ৫০ টাকা। অর্থ্যাৎ এক কেজির দাম তখন পড়ে ১০ টাকা; ২০ টাকা নয়। কেন?? কারন একসাথে বিক্রয় করে বিক্রেতা বড় অংকের অর্থ একসাথে পান; এতে তার ‘একক প্রতি প্রচেষ্টার বিপরীতে আয়’ (marginal effort to income) বেড়ে যায়। তেমনি পূঁজিপতি বৃহৎ অংকের বিনিয়োগ করে, কম দামে বেশী প্রাথমিক পণ্যদ্রব্য ক্রয় করে, সংয়ক্রিয় যন্ত্রপাতির মাধ্যমে সেগুলোকে প্রক্রিয়াজাতকরণ করে বাজারে সরবারহ করে থাকে। বাজারে দাম বৃদ্ধিতে সে কিভাবে অবদান রাখে তা আমরা আগেই দেখেছি।

দেখুন, এই ‘বড় অংকের নীতি’ প্রয়োগ ছাড়া তার অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের সম্ভবনা নিতান্তই কম। অন্যদিকে এই নীতি প্রয়োগ করতে হলে তাকে বিশাল বিনিয়োগের মাধ্যমে মূলধনী যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে হবে, প্রচুর পরিমানে প্রাথমিক পণ্যদ্রব্য ক্রয় করে তা মূলধনী যন্ত্রপাতির মাধ্যমে প্রক্রিয়াজাতকরণ করতে হবে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঋণের প্রয়োজন পড়বে। আর আমরা আগেই দেখেছি যে পূঁজিপতি ছাড়া সমাজের অন্যান্যরা যারা আর্থিক বিবেচনায় অপেক্ষাকৃত খারাপ অবস্থায় আছে তারা ঋণের ভাগ পান না। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাজার হতে অর্থের সাথে সাথে প্রাথমিক পণ্যদ্রব্যও পূঁজিপতির হাতে চলে যায়। এক কথায় পূঁজিপতি একটি দেশের অর্থ এবং পণ্যদ্রব্য দুটির-ই ভোগ দখলের ক্ষমতা পেয়ে যান। এতে বাজারে পণ্যদ্রবের দাম দুই দিক হতে বৃদ্ধি পেতে থাকে তা আমরা আগেই দেখেছি। লক্ষ্য করুন, আপনার সামনে এ ঘটনাগুলো কিন্তু ঘটেই যাচ্ছে। আগেও ঘটেছে। এখনও ঘটছে। কিন্তু আপনি কখনো আমরা এখানে কথাগুলো সহজ করে যে ভাবে বলছি এ ভাবে ভাবেননি। কারন আপনি এই প্রক্রিয়াটিকেই স্বাভাবিক বলে ভেবে বসে আছেন। মুদ্রার এ পিঠ ও পিঠ দু’ পিঠ-ই থাকে।

খেয়ালে রাখুন, প্রাথমিক পণ্যদ্রব্য (ধান, ফল, তরী-তরকারী, গাছ-গাছালি ইত্যাদি যা সরাসরি উৎপাদন প্রক্রিয়ার প্রথম স্তরেই উৎপাদিত হয়) মূলতঃ আসে প্রকৃতি থেকে। মানুষ নিজে গবেষণাগারে এখন পর্যন্ত এই ব্যাপারে বেশী দুর যেতে পারিনি। পূঁজিপতির বিশাল অংকের বিনিয়োগের জন্য বিশাল অংকের অর্থ সরবারহ করে ব্যাংক। সেই বিশাল অংকের অর্থ নিয়ে বিশাল অংকের প্রাথমিক পণ্যদ্রব্য বাজার হতে তুলে নিয়ে আসে (তুলে নিয়ে আনা বল্‌লাম; কারন টাকার জোরে সে এ রকম অনেক কিছুই করে)। পূঁজিপতির এই বিশাল বিনিয়োগের কারনে স্বাভাবিক ভাবেই একদিকে প্রাথমিক প্রাথমিক পণ্যদ্রব্যের উপর চাপ বৃদ্ধি পায় আর অন্যদিকে কলকারখানার উৎপাদন বৃদ্ধির কারনে বিপুল পরিমানে পরিবেশ দূষণকারী বর্জ্য পদার্থ নির্গত হয়। আজকের দিনের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ঃ বৈশ্বিক উষ্মতা (global warming) বৃদ্ধির অন্যতম মূল, প্রধান এবং গোড়ার কারনই হল এই প্রক্রিয়া। পৃথিবীতে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন করতে এভাবেই এই পূঁজিবাদী ব্যবস্থা অবদান রেখে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আবার দেখুন, পূঁজিপতি তার কারখানায় প্রক্রিয়াজাতকরণ করে যে পণ্য বাজারজাত করছে, তার সিংহ ভাগ কখনো কখনো পুরোটাই রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়। এক দিকে আপনি সরাসরি প্রাকৃতিক বস্তুর প্রাকৃতিক স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আর অন্যদিকে রাসায়নিক দ্রব্যাদি আপনার শরীরে মরণ ব্যাধি ঘাতক রোগের সৃষ্টি করছে।

সমস্যা যদি এখানেই শেষ হয়ে যেত তাও মনকে কিছুটা বুঝ দিতে পারতাম! কিন্তু না, এর প্রভাব আর বিস্তার আরও অনেক ব্যাপক। আমরা শুরুর দিকে দেখে এসেছি যে কিভাবে এ নষ্ট অর্থব্যবস্থা মানুষের মধ্যে স্বার্থপরতার বীজ বুনে দেয়। আর সেই বীজ থেকে মানুষ নিজের অগোচরেই ‘দুনিয়াটা মস্ত বড়, খাও দাও ফুর্তি কর’-এর গাছ জন্মিয়ে ‘ভোগবাদী’ জীবনধারায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। ‘বস্তুবাদী’ এই চিন্তাই পৃথিবীতে মানুষকে ভাল-এর চেয়ে মন্দ, ন্যায়ের চেয়ে অন্যায়কে প্রধ্যান্য দিতে মানসিক সহায়তা প্রদান করে। আর তখনই সে দরকারের চেয়ে অ-দরকারী, প্রয়োজনের চেয়ে বেশী পন্য সামগ্রী ভোগ করতে উঠে পড়ে লাগে। নাওয়া, খাওয়া, ঘুম সবকিছুর বিনিময়ে হলেও সে নিজের আওতায় যতটুকু সম্ভব তার পুরোটাই ভোগে প্রবৃত্ত হয়। এতে করে দেখুন নতুন নতুন রোগের ব্যাপক বিস্তার হচ্ছে পৃথিবীতেঃ ডায়বেটিস, হাইপারটেনশন এবং তা থেকে উদ্‌গত যাবতীয় রোগ ব্যাধি, উচ্চ রক্তচাপ, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি। এত কাল রাস্তা ঘাটে আপনি ‘সর্ব রোগের ঔষধ’-এর নাম শুনেছেন। আর এখন শুনলেন ‘সর্ব সমস্যার মাতা’-এর নামঃ ‘পূঁজিবাদ’ বা ‘ধনতন্ত্র’ এবং ‘সুদ’ যা এর অস্তিত্বের প্রধান নিয়ামক।

---বাকি অংশঃ 'সুদ' নামক বস্তুটির ভয়াবহ তান্ডবলীলা-৭ এ দেখুন (শীঘ্রই আসছে ইনশা-আল্লাহ্‌)
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১১ বিকাল ৪:১৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বেনজিরের হালচাল

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:০৫

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত।




স্ত্রী জিশান মির্জা এবং দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে অঢেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙালী মেয়েরা বোরখা পড়ছে আল্লাহর ভয়ে নাকি পুরুষের এটেনশান পেতে?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:২০


সকলে লক্ষ্য করেছেন যে,বেশ কিছু বছর যাবৎ বাঙালী মেয়েরা বোরখা হিজাব ইত্যাদি বেশি পড়ছে। কেউ জোর করে চাপিয়ে না দিলে অর্থাৎ মেয়েরা যদি নিজ নিজ ইচ্ছায় বোরখা পড়ে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমকে হত্যা করায় আপনার কেন দুঃখিত হওয়া উচিত নয়।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২৪ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮

সোহান ছিল ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের ঈশ্বরা গ্রামের মহাসিন আলীর ছেলে ও স্থানীয় শহিদ নূর আলী কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল বিকেল ৫টার দিকে ঈশ্বরবা জামতলা নামক স্থানে তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেন্ডার ও সেক্স

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৪ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৫২

প্রথমে দুইটা সত্যি ঘটনা শেয়ার করি।

২০২২ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দিতে জেলা পর্যায়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। মৌখিক পরীক্ষার ঘটনা। দুজন নারী প্রার্থী। দুজনই দেশের নামকরা পাবলিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×