somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জ়েনেভা কনভেনশান (Geneva Convention)।

১৮ ই জুন, ২০১১ রাত ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অধিকাংশ বিশ্বাসীদের মতে মানুষের নৈতিকতার জন্য ধর্ম অপরিহার্য্য।কিন্তু ধর্ম ছাড়াই গড়ে উঠেছে বিভিন্ন দেশের এবং আন্তর্জাতিক আইন ব্যাবস্থা।যে দেশের নাগরিকেরা আইনের প্রতি যত বেশী শ্রদ্ধাশীল সে সমস্ত দেশে দুর্নীতি তত কম, পক্ষান্তরে ধর্মে নৈতিকতার কথা বলা হলেও তা কিন্তু দুর্নীতি বা অপরাধ কমাতে পারে নি। জেনেভা কনভেনশান ধর্মীয় বিধান ছাড়াই গড়ে ওঠা এমনই এক দলিল।

সংক্ষেপে এখানে তা তুলে ধরার চেস্টা করলাম। অন্যদিকে যুদ্ধ সম্পর্কে ধর্মের বিধান বা নির্দেশনা কি তা ভবিষ্যতে তুলে ধরার চেস্টা করব।

জেনেভা কনভেনশান হল এক আন্তর্জাতিক মানবাধীকার আইন যা যুদ্ধরত ব্যাক্তি বা যুদ্ধে আক্রান্ত ব্যাক্তিদের জন্য এক আচরনবিধি। এতে রয়েছে ৪টা চুক্তি এবং ৩টি অতিরিক্ত অনুচ্ছেদ।এককভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ১৯৪৯ সালের চুক্তিকেই জেনেভা কনভেনশান হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।

১৮৬২ সালে হেনরী ডুন্যান্ট তার বইয়ে যুদ্ধের ভয়াবহতা তুলে ধরেন। ডুন্যান্ট প্রস্তাব করেন ১) যুদ্ধকালীন সময়ে স্থায়ী মানবাধীকার ত্রান সংস্থা গঠন এবং ২) বিভিন্ন দেশের সরকার সমুহের অংশগ্রহন, এই ত্রান সংস্থার নিরপেক্ষ মর্যাদা দান এবং আক্রান্ত এলাকা গুলোতে ত্রান কাজের অনুমতি। ফলশ্রুতিতে জন্ম নেয় আন্তর্জাতিক রেডক্রস এবং জেনেভা কনভেনশান।২০০১ সালে ডুন্যান্ট নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

১৮৬৪ সালে ১২ দেশের সরকারের অংশ গ্রহনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় জেনেভা কনভেনশানের। প্রথম কনভেনশানে যুদ্ধক্ষেত্রে আহত এবং অসুস্থ্য সৈন্যদের রক্ষার ব্যাপারে বলা হয়।েরপর ১৯০৬ সালে দ্বিতীয়, ১৯২৯ সালে তৃতীয় এবং ১৯৪৯ সালে চতুর্থ জেনেভা কনভেনশান। ১৯৭৭ সালের সংযোজিত হয় অনুচ্ছেদ ১ এবং ২ এবং ২০০৫ সালে তৃতীয় সংযোজন।

যুদ্ধ মানেই ধ্বংস, মানবিকতার পরাজয় আর প্রযুক্তির জয়। প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে যুদ্ধাস্ত্রের ধ্বংশক্ষমতা বাড়ছে। জেনেভা কনভেনশান এবং তার সংযোজন অনুচ্ছেদ গুলো যুদ্ধে বর্বরতা এবং হিংস্রতা কমাতে জন্ম নিয়েছিল।

যে সমস্ত ব্যাক্তি জেনেভা কনভেনশানের আওতাভুক্তঃ-
• বেসামরিক লোক ,
• ধর্মীয় ব্যাক্তিবর্গ ,
• স্বাস্থ্য কর্মী
• যুদ্ধাহত সৈন্য
• অসুস্থ্য সৈন্য
• যুদ্ধবন্দী,
• ধংসপ্রাপ্ত বিমানের বৈমানিক,
• ডুবে যাওয়া যুদ্ধ জাহাজের নাবিক।

উপরোক্ত ব্যাক্তিদের অধিকার এবং তাদের প্রতি আচরনবিধিঃ-

• শারীরিকভাবে লাঞ্ছনা করা যাবে না।
• সম্মান হানি করা যাবে না
• পারিবারিক অধিকার ক্ষুন্ন করা যাবে না।
• ধর্মীয় অধিকার এবং আচরন নিশ্চিত করতে হবে।
• সর্বদা মানবিক ব্যবহার করতে হবে
• তাদেরকে সব ধরনের হিংসাত্বক ব্যবহার, ভয় দেখানো, অসম্মান, এবং সাধারনের কৌতুহল থেকে রক্ষা করতে হবে।
• মহিলাদের সম্মান করতে হবে
• ধর্ষন, জোরপুর্বক অসামাজিক কাজে বাধ্য করা এবং যে কোন ধরনের অশোভনীয় আচরন(indecent assault.) করা যাবে না।
• স্বাস্থ্য, বয়স, এবং লিঙ্গের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখাবেন বিজয়ীরা।

উপরোক্ত ব্যাক্তিদের প্রতি ধর্ম, জাতি(Race), বা রাজনৈতিক পার্থক্যের কারনে বিজয়ীরা ভিন্নভাবে আচরন করবেন না।

বিজয়ীরা উপরোক্ত ব্যাক্তিদের নিয়ন্ত্রন করতে পারবেন এবং নিরাপত্তার খাতিরে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিতে পারবেন।- আর্টিকেল-২৭, ৪র্থ জেনেভা কনভেনশান।

যুদ্ধ এবং সশস্ত্র সংঘর্ষ বন্ধ হওয়ার পর যুদ্ধবন্দীদের যথাশীঘ্র সময়ে দেশে ফেরত পাঠাতে হবে

যুদ্ধবন্দীদের চিকিৎসা, বিচার,ত্রান, বাসস্থান, অর্থনৈতিক সহায়তা, বিজয়ীরা নিশ্চিত করবেন
– তৃতীয় জেনেভা কনভেনশান।

এ পর্যন্ত জেনেভা কনভেনশানে সাক্ষরকারী দেশের সংখ্যা ১৯৪, জেনেভা কনভেনশান এ সাক্ষরকারী এবং অনুমোদনকারী(Ratification)সরকার সমুহ কনভেনশান মেনে চলতে বাধ্য। এর লঙ্ঘন আন্তর্জাতিক আদালতের বিচার অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য।যদিও বিচারের রায় সর্বদা কার্য্কর করা সম্ভব হয় না তবুও অপরাধীদের বিচারের ব্যাবস্থা রয়েছে এবং বিভিন্ন দেশের জেনেভা কনভেনশান লঙ্ঘনকারী যুদ্ধাপরাধীদের আন্তর্জাতিক আদালতে দন্ড কার্যকর করাও হয়ে থাকে।


২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×