somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি, লিমন ও বিবর্তনবাদ (রম্য)

১৮ ই জুন, ২০১১ রাত ৮:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
আমি মিলু। ‘মিলু’ নামটা আমার বাবা-মা, দাদা-নানা, শিক্ষক বা গুরুজনদের কেউ রাখেননি। আমার বন্ধুদের দেয়া নামও নয় এটি। আমি নিজেও রাখিনি। এখন আপনাদের মনের ভিতর একটা প্রশ্ন নিশ্চয়ই ঘুর্ণিপাক খেয়ে উপরে উঠে মুখ গহ্বর দিয়ে বহির্গমনের প্রস্তুতি নিচ্ছে! আপনাদের চোখ কপালে উঠা ভাব দেখে ব্যাপারটা যেহেতু আমি বুঝতে পেরেছি সেহেতু প্রশ্নটি আমার দিকে নিক্ষেপ না করে নিুদেশে চালান করে দিন; উত্তর আমি জানিয়ে দিচ্ছি। আসলে ‘মিলু’ নাম হবার সাথে ঐতিহাসিক বিবর্তনবাদ জড়িত! ডারউইনের বিবর্তনবাদ মানুষের ক্ষেত্রে সঠিক না হলেও আমার নামের ক্ষেত্রে শতভাগ সত্য! আর আমার নামটা তো মানুষের নাম, সেই সূত্রে মানুষের সাথে বিবর্তনবাদের সম্পর্ক থাকতেই পারে। অযথা প্যাঁচাল না পেড়ে ঘটনাটা খুলেই বলি।
জন্মের পর আমি জানতে পারি, আমার নাম রাখা হয়েছে ‘মিয়া মোহাম্মদ মিনহাজুল হাসান মিলন’ (ইংরেজীতে ২৬টি বর্ণ থাকলেও আমার নাম লিখতেই ৩০ টি বর্ণ দরকার!) ‘মিয়া’ শব্দটির প্রতি আমার এক ধরনের ‘নাক সিটকানি’ আছে। আমার কল্পকর্ণে একটা বিদঘুটে আওয়াজ যেন বাজতে থাকে- ‘‘ওই ‘মিয়া’ কী করো?” আর এ কারণে অচিরেই ‘মিয়া’ শব্দটি খসে পড়লো। আরো নানান ধরনের ঘটনা বিপর্যয়, ঘাত-প্রতিঘাতের মুখোমুখি হয়ে আমার নামাংশ খসে পড়তে পড়তে ‘মিলন’ শব্দটি অবশিষ্ট থাকলো। প্রকৃত ব্যাপার হলো, ‘মিলন’ ছাড়া বাকি শব্দগুলো আমার নামের ‘লেজ’ (‘বানরের’ লেজ পিছনে থাকলেও ‘নামের’ লেজ থাকে সামনে!)! বানরের সমগ্র লেজ খসে পড়ে যেমন একদা পূর্ণ মানুষে রূপান্তরিত হলো, তেমনি আমার ‘মিলন’ এর সমগ্র লেজ খসে পড়ে হঠাৎ একদিন ‘মিলু’তে পরিণত হলো। সে মুহূর্তটাও ছিল ঐতিহাসিক। পাবলিক লাইব্রেরীতে বসে পত্রিকা পড়ছি। একজন সুন্দরী তরুণী এসে বসলো আমার পাশে। (বুঝলাম পত্রিকা পড়তে এসেছে। কিন্তু সকল পত্রিকাই তখন কারো না কারো হাতে।) এ ধরনের পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবে পত্রিকা পাঠ ও তার মর্মবিশেষ উপলদ্ধি করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। পত্রিকা বরাবর আমার চোখের সরল রৈখিক দৃষ্টি পুন: পুন: বক্ররেখায় রূপান্তরিত হতে লাগল। আড়চোখের সে চাহনি আমার হৃদয়অভ্যন্তরে একটা ধ্বনি সৃষ্টি করছে- ‘মেয়েরা এতো সুন্দর হয় কেন?’ আমার পত্রিকাটি মেয়েটার দিকে ঠেলে দিয়ে একদৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ‘থ্যাংকস’ দিয়ে সে বললো, ‘আমি মিলা, আপনি?’ মিলা নাম শুনে আমি মিলন বলতে গিয়ে হঠাৎ বলে ফেললাম ‘মিলু’। সেই থেকে আমি মিলন হতে ‘মিলু’ হয়েছি। জানি না ভবিষ্যতে ‘লিমা’ নামের কোন মেয়ের সাক্ষাতে ‘লিমু’ হয়ে যাই কি না!
২.“র‌্যাবের গুলিতে একটি পা হারিয়েছে লিমন। সে এখন পঙ্গু।” খবরটি পড়ে বেদনায় আমার হৃদয় ‘হু হু’ করে উঠলো। তার প্রতি এক ধরনের সহমর্মিতা অনুভব করলাম। এ কথায় আপনারা ভাববেন না- ‘আমি খুব মমতাবোধ সম্পন্ন, মানুষের দুঃখে আমার হৃদয় কাঁদে। প্রকৃত কথা হলো, লিমনের প্রতি এই ‘দরদ’ মানবিক কারণে নয়, নামের কারণে! তার নাম লিমন। আর বিবর্তনবাদে আমার নাম ‘মিলু’ হলেও আপনারা জেনেছেন আমি একসময় ‘মিলন’ ছিলাম। ‘লিমন’ আর ‘মিলন’ এর মধ্যে অক্ষরগত শতভাগ মিল বৈ কি! তবে লিমনের জন্য এই বেদনা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। অল্প সময়ের বিবর্তনে তা এক ধরণের আনন্দে রূপ নিল। আমার বিশেষ দূরদর্শী জ্ঞানে দেখতে পাচ্ছি বিবর্তনবাদের ইতিহাসে আরেক পরিবর্তন আসন্ন। আর লিমন হচ্ছে এই নতুন ইতিহাস রঙ্গমঞ্চের মূল অভিনেতা।
৩.দেখা করতে এসেছি লিমনের সাথে। আমার পরিচয় সাংবাদিক। লিমনকে জিগ্যাস করলাম ‘ঘটনা কী?’ সে বললো, ‘ওরা আমাকে ধরে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় পায়ে গুলি করেছে। আমাকে বিভিন্ন মামলায় জড়াতে চেয়েছিলো। ওদের কথাবার্তায় আমি শুনেছি আমি দশট্রাক অস্ত্র মামলা, একুশে আগষ্ট গ্রেনেড হামলা, জঙ্গিবাদ ও বিভিন্ন বাঘব বোয়ালদের সম্পর্কে ‘চাঞ্চল্যকর’ তথ্য দিয়েছি বলে সংবাদ সম্মেলন করতে চেয়েছিল। কিন্তু তার আগেই একটি পত্রিকা আমাকে নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করায় সে পরিকল্পনা ওরা বাতিল করেছে। তবুও নানাভাবে সন্ত্রাসী সাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে…।
আমি বললাম, তুমি এসব নিয়ে ভেবো না। তোমার জন্য সুখবর আছে। তুমি বিবর্তনবাদের ইতিহাসে আরেকটি অংশ হতে যাচ্ছো। এটা ইতিহাসের গতি। ইতিহাসের গতি কেউ বদলাতে পারে না। রাষ্ট্রের তাই এখানে কিছু করার নেই।
-‘‘আপনার কথা ভাই কিছু বুঝলাম না। ‘বিবর্তনবাদের ইতিহাস’ তার ‘অংশ’-এগুলোর অর্থ কী?” হতবিহবল দৃষ্টিতে ফ্যালফেলে মুখের প্রশ্ন।
-ডারউইনের বিবর্তনবাদ অনুযায়ী বানর থেকে মানুষ হয়েছে। আগামীতে আবার ‘মানুষ’ থেকে ‘অন্য প্রাণী’ হবে। এটাই স্বাভাবিক। ভবিষ্যতের সেই প্রাণীর নাম ‘পঙ্গালিম’। পঙ্গালিমদের এক পা থাকবে। আরো কী কী পরিবর্তন হবে তা এখনো ক্লিয়ার নয়। সময় বলে দিবে।
-‘পঙ্গালিম’ কী প্রাণী?
-পঙ্গালিম শব্দটি পঙ্গু ও ‘লিমন’ শব্দের মিলিত রূপ। পঙ্গু+লিমন=পঙ্গালিম।
-ভাই কি ঠাট্টা করছেন?
আমি কিছু বলি না। চুপ থাকি। দেখি লিমনের চোখে পানি। এ অবস্থায় বেশিক্ষণ বসে থাকার মানে হয় না। আমি বলি, ‘লিমন, আজ উঠি।’ সে তখন বলে, ‘ভাই, আপনি কোন পত্রিকার সাংবাদিক?’
-‘অকালের খবর।’
-‘এই নামে কোন পত্রিকা আছে?’
-না, নেই। তবে ভবিষ্যতে আসবে। ইতোমধ্যে ‘সকালের খবর’ এসেছে। ‘বিকালের খবর’ না থাকলেও ‘দিনের শেষে’ আছে। ভবিষ্যতে ‘সমকালের খবর’, ‘আগামী কালের খবর’, ‘মহাকালের খবর’ও আসতে পারে। সুতরাং ‘অকালের খবর’ নিশ্চই আসবে। তাতে থাকবে ‘পঙ্গালিমদের খবর।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×