somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বর্গ-নরকের ভুল থিওরী

১৮ ই জুন, ২০১১ দুপুর ১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


#
স্বর্গপ্রাপ্তি নিয়ে কখনো ভাবিত ছিল না রহমান।
যদিও তার নামটা সেকেলে, অনেকের নামের শেষাংশে রহমান থাকে, তবে এটি তার নামের শেষাংশ নয়, তার নামই রহমান তবু সে সেকেলে না বরং অনেক আধুনিক। আসলে নাম দিয়ে কাউকে বিচার করা যায় না, বিচার করতে হয় তার কাজ দিয়ে, আমরা রহমানকে তার কাজ দিয়েও বিচার করতে ব্যর্থ হই, কারণ সে এখনো বলার মতো কিছু করতে পারেনি। তবু তাকে আধুনিক বলা যায়, তার পোশাক-আশাকের কারণে, তার ক্লিন শেভড গাল, উজ্জল চোখ, ফেইস-ওয়াস ধোঁয়া মুখ, নির্ভুল ইংরেজী উচ্চারণের কারণে।

বড়লোক বাবার ছেলে বলা যায় না তাকে; উচ্চ মধ্যবিত্ত এই স্ট্যাটাস্টাই তার পরিবারের সাথে মানানসই। সে পড়াশোনায় ভালো, ক’দিন পর বের হবে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে। সবকিছু চলছিল ঠিকঠাক মতো, রেলগাড়ি রেললাইনেই ছিল, পৌঁছোবার কথা ঠিক প্ল্যাটফর্মে। এর মাঝে কোথাও ক্রসিং এর জন্য থামা লাগছে না, নিশ্চিত পথচলা। কিন্তু হঠাৎ করে থামা লাগল, এক্কেবারে হার্ড ব্রেক। রহমান গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, এক নারীকে বহনকারী ট্রেন মুখোমুখি লাইনে এসে গিয়েছিল।
তারপর অনেকটা বাংলা সিনেমার মতোই ঘটনা, প্রেমের সূচনা; যা আমাদের চিন্তায় ফেলে দেয় হয়ত বাংলা সিনেমাগুলো পুরোপুরি বানোয়াট না। এরপর তাদের ট্রেন থেমে থাকে, কখনো এদিক-সেদিক ঘুরতে যায়, মানুষ দেখে, প্রকৃতি দেখে, সাধারণ দৃশ্য দেখে কাটিয়ে দেয় ঘন্টার পর ঘন্টা। এভাবেই চলছিল, গন্তব্য ঠিক ছিল; শুধু যেখানে একা পৌছানোর কথা সেখানে এখন একসঙ্গে দুজন পৌঁছাবে।

একসময় বাসায় জানাজানি হলো। রহমান নিজেই তার বাসায় জানাল, সে বিয়ে করতে চায়। তার পছন্দের মেয়ে আছে। বাসায় সবাই খুব খুশী হলো, সবাই বলতে রহমানের বাবা-মা। ও একা, আর কোনো ভাইবোন নেই। বাবা ছেলের বউ নিজে ঠিক করবেন, ধুমধাম করে বিয়ে দিবেন, সবাই বলবে বিয়ের মতো বিয়ে হচ্ছে- এমন একটা স্বপ্ন ছিল তার। এখন যেহেতু ছেলের বউ নিজে ঠিক করতে পারলেন না, তাই বাকিটুকু দিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করার পরিকল্পনা করতে থাকেন।

প্রথমেই জরুরী হয়ে পড়ে, একটা কমিউনিটি সেন্টার যার বাহ্যিক সৌন্দর্যেই সবাই মোহিত হবে, অতিথিরা ঢোকার সময়ে সতর্ক হয়ে যাবে- কোনো এলেবেলে জায়গায় আসিনি, একটু ভদ্রভাবে চলতে হবে, স্যুট-টাই পরিহিত লোকজন টাইয়ের নট ঠিক করে নিবে, কিশোরীরা তাদের আকর্ষণীয় লাগছে কি’না এই ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আয়না খুঁজবে, কিশোরেরা আসন্ন উৎসবের কথা চিন্তা করে হৈ-চৈ শুরু করে দিবে। ওদিকে রহমানের মা চিন্তিত হয়ে পড়েন মেয়ের স্বভাব কেমন, মেয়ে কি একসাথে থাকতে পারবে, নাকি পারবে না- নানাবিধ ভাবনায়। তাই সেই ভাবনার ঠিক মাঝেই তার হাজব্যন্ড মানে রহমানের বাবা এসে তার পরিকল্পনার কথা জানালেও তিনি কিছুই বুঝে উঠতে পারেন না। কোনো উত্তর না পেয়ে এবার তিনি রহমানের রুমে চলে যান, রহমান তখন ফোনে রোমান্টিক সুরে বলছিল, এই তোমাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করছে, তাই সে বাবাকে ঢুকতে দেখে খানিকটা লজ্জা পেয়ে যায়।
তাড়াহুড়ো করে বাবা বলেন, বল তো এখন কোন কমিউনিটি সেন্টার ঠিক করা যায়?
এখন-ই কেন?
হাত নেড়ে নেড়ে উত্তর দেন ওর বাবা। আরে এখন না তো কখন? এখন থেকে কাজ শুরু করতে হবে।
বাবার আহ্লাদে রহমান আমোদিত হয়, আবার তখন অন্যপ্রান্তে তার নায়িকা কাছে আসার অপেক্ষায় বসে আছে। কিছুটা দোটানায় পড়ে গিয়ে রহমান বাবাকে পাশ কাটানোর জন্য বলে বসে, বাবা তুমি যাই ঠিক মনে কর, তাই হবে।
এ কথাশুনে বিভ্রান্তি আরো বেড়ে যায় বাবার। তিনি ধীরে ধীরে বের হয়ে এসে বারান্দায় গিয়ে বসেন।
নানা ভাবনায় তার অস্থিরতা বাড়তে থাকে। এই মুহূর্তে ভাবতে থাকেন, তিনি কি পোশাক পড়বেন, সেটা নিয়ে। ইঞ্জিনিয়ার সন্তানের পিতা, প্রেজেন্টেশন ভালো হওয়া চাই। আবার তার কমিনিউটি সেন্টারের কথা মনে পড়ে যায়। তিনি আবার ছটফট করতে থাকেন।

রাতের ঢাকা ঘুমিয়ে আছে। ল্যাম্পপোস্টের উজ্জ্বল আলোয় মৃত রাজপথ। ঢাকা শহর, তাই উড়ে না জোনাকি। তিনি ভাবলেন, বিয়েবাড়ির লাইটিং হবে জোনাকি দিয়ে। হাজার হাজার জোনাকি আলোকিত করবে অনুষ্ঠান। মানুষ তাকিয়ে থাকবে অবাক হয়ে। টিভি চ্যানেল থেকে লোক আসবে। মানুষ অবাক বিস্ময়ে তালি দেবে। এই অভিনব আইডিয়ার জনক হিসেবে তিনি এবং এই বিয়ের অনুষ্ঠান হয়ে উঠবে কিংবদন্তী।

রাতে আকাশে মেঘ করেছে, কালো হয়ে আছে সমস্ত আকাশ। রহমান, নাদিয়ার সাথে কথা বলাতে ব্যস্ত। সে টের পেল না, কেউ টের পেল না তাদের বাড়ির বারান্দায় শত শত জোনাকি, কয়েকটা প্রজাপতি দেখা যাচ্ছে। মনে হয় বিয়ে বাড়ির গন্ধ পেয়ে চলে এসেছে তারা।

রহমানের বাবার অবশ্য জোনাক পোকার লাইটিং দেখে যাওয়া হলো না। পরদিন সকাল বারান্দায় পাওয়া গেল মৃত অবস্থায়।
তার কয়েকদিন পর থেকেই রহমানের মাথায় স্বর্গ- নরকের থিওরী নতুন করে ঢুকতে শুরু করে এবং সে স্বর্গপ্রাপ্তি নিয়ে ভাবিত হয়ে পড়ে।

#

মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েনি রহমানের, তবে মাথা থেকে আকাশ সরে গেছে। সূর্য সরাসরি আলো দিয়ে আঘাত করতে থাকে। তার মাথা-ব্যথা হয়। নাদিয়া পাশে এসে দাঁড়ায়। মা’র মুখে কথা নেই, চোখে প্রাণ নেই। একবার শুধু বলেছিলেন তোর বাবার সাথে স্বর্গে দেখা হবে তো? অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে যায় রহমানের বিয়ে।

এই ঘটনার বেশ ক’দিন পর, নাদিয়া বলে, মা কি বলেছিল খেয়াল আছে?
কী?
তোর বাবার সাথে স্বর্গে দেখা হবে তো?
হুম, বলেছিলেন। তো কী হয়েছে?
আচ্ছা, স্বর্গে গেলে তো তাও মনে হয় দেখা হওয়ার সুযোগ থাকে। কিন্তু নরকে গেলে কেবল আগুন আর আগুন। নাদিয়া শক্ত করে ধরে রহমানের হাত।
কথাটা শুনে রহমানের ছোটবেলায় হুজুরের কথা মনে পড়ে যায়, মনে পড়ে নরকের ভয়াবহ শাস্তিগুলোর কথা। সে কেঁপে ওঠে তবে শাস্তির কথা ভেবে নয়, প্রিয়জনবিহীন নরকের কথা ভেবে।
রেস্টুরেন্টের ভীড়ের ভেতর নেমে আসে নীরবতা। আমরা নামাজ পড়ি না।

তারপর তারা দুজন মিলে ধীরে ধীরে আবিষ্কার করল স্বর্গে যাওয়ার জন্য যা যা প্রয়োজন কোনো কিছুই তারা করে না। নামায পড়ে না, টিভি দেখে, ছবি আঁকে, নিজেদের ভেতর মানুষের গীবত করে। সবচেয়ে বড় কথা বিবাহপূর্ব সময়ে তারা একে অপরের হাত ধরে, নির্জনতা পেলে চুমু দিতে ভুল হয় না, হাত অবাধ্য হয়ে উঠে এদিক-সেদিক চলে যায়। কথাটা ভাবার সময় তাদের হাতের ভেতর হাত ছিল। ভাবনা শেহ হওয়ার পর সেই বন্ধন আরো জোরালো হলো।

এখন কী হবে? আমি তো মৃত্যুর পর তোমার সাথে থাকতে চাই। কথাটা অনেকের কাছে ন্যাকামি মনে হতে পারে কিন্তু সেই মুহূর্তে নাদিয়ার কাছে সবচেয়ে বড় সত্য।
আরে কিছুই হবে না। আমরা কারো ক্ষতি করি? আমরা কখনো অন্যায় করেছি। এগুলো করলেই স্বর্গে যাওয়া যায়। রহমান আসলে নিজেকেই যেন বোঝায়।
নাদিয়া বলে, তাতে কী? আমরা তো মানুষের ভালো কিছু করছি না।
করার সময় হলে করব। রহমান কিছুটা রেগে যায়, সেই রাগ কার উপর ঠিক বুঝে উঠতে পারে না।

অবশেষে কিছুক্ষণ তর্ক-বিতর্কের পর তারা সিদ্ধান্ত নেয়, তারা ভালো হয়ে যাবে। ভালো তারা আছে, এখন ধর্মীয় উপায়ে তারা ভালো হবে। বিয়ের পর তারা একসাথে থাকতে পারবে, তাই কিছুদিন কষ্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। সবুরে মেওয়া ফলে, পুরোনো ক্লিশে হয়ে যাওয়া এই প্রবাদের উপর ভরসা রেখে তারা মৃত্যু পরবর্তী জীবন যেখানে তারা নিশ্চিত নরকের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তার পথ পরিবর্তনের ব্যাপারে ঐক্যমতে পৌছাতে পারে।
এই ব্যাপারে কোন পথে আগাতে হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। তখন মনে পড়ে তার এলাকায় পরিচিত ছেলে আছে, কওমি মাদ্রাসায় পড়ে। তাকে ফোন দিয়ে ভবিষ্যত ইচ্ছের কথা বলে।

প্রথমে ছেলেটি মুসলিম বিশ্বের দুর্দশার সময়ে তার এই সময়োচিত সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। সে জানায় স্বর্গপ্রাপ্তি নিশ্চিত করার সবচেয়ে ভালো পথ হচ্ছে জিহাদে অংশগ্রহন করা।
এরপর সে সহপাঠি শিবিরের এক সদস্যকে ফোন দেয়। সেও উল্লাসিত হয় রহমানের কথা শুনে। সে বলে মহান পাকিস্তানকে এক করার মাধ্যমে এবং রাজবন্দী নিজামি,সাঈদির মুক্তির জন্য আন্দোলন তাদের দিতে পারে স্বর্গের নিশ্চিত একটি স্থান।
এলাকার মসজিদের হুজুর শুনে বলে, তোমার বাবার এই স্বপ্ন ছিল, যদিও বাবা এমন কোনো স্বপ্ন দেখেছিল কি’না এই ব্যাপারে কিছু মনে করতে পারে না। হুজুর তাকে উপদেশ দেয়, সমাজে বেড়ে যাওয়া বেল্লেলাপনার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করতে। উদাহরণ হিসেবে সে রুমানা- সাইদের ঘটনা টেনে আনে এবং সাইদের কাজের প্রতি তার সমর্থন জানায়।
হতাশ হয়ে সে আর কাউকে ফোন দেয় না। কী হলো? নাদিয়ার প্রশ্নের জবাবে সবার উত্তরগুলো বলে।
নাদিয়া ক্ষেপে যায়। ক্ষেপে গিয়ে বলে, সবগুলা ভন্ড।
রহমান যোগ করে, নারীনীতির বিরুদ্ধে হরতাল হয় আর নারী নির্যাতন হলে বায়তুল মোকাররম থেকে কিংবা কোনো জায়গা থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে একটা মিছিল পর্যন্ত বের হয় না। আমার কবিবন্ধু আজাদের স্ট্যাটাসে দেখেছিলাম এটা।

শেষ পর্যন্ত তারা সিদ্ধান্ত নেয়, তারা নামাজ পড়বে একটু নিয়মে আসার জন্য। সামনা-সামনি দেখা করবে না, তবে ফোনে কথা বলবে সবচেয়ে আসল কাজ মানুষের ভালোর জন্য কিছু করবে। তারা দুজনেই শেষোক্ত প্ল্যানের উপর জোর দেয়।
#

যেকোনো নতুন কাজ মানুষ অনেক উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে শুরু করে, তাদের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটার ব্যতিক্রম হলো না।
প্রথমদিন রাতে, রহমান নাদিয়াকে ফোন করে বলে, কী করলে আজ?
নাদিয়া তার কাজের ফিরিস্তি দেয়। বাসায় কাজে সাহায্য করেছে, রিকশা-ওয়ালাকে কিছু টাকা বেশি দিয়েছে। কারো সাথে রাগ দেখায়নি।
রহমান শুনে খুশী হয়। সে বলে, আমি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কিছু করব ভাবছি, ভার্সিটির বন্ধুদের সাথে মিলে।
আচ্ছা, এসব ভালো কাজ করলে আমাদের তো এম্নিতেই স্বর্গে যাওয়ার কথা। দেখা না করে থেকে কী লাভ? নাদিয়ার প্রশ্নে রহমানের মন বিষণ্ণ হয়ে ওঠে। সে বলে, জানি না তো।

এভাবে দিন কাটতে থাকে, তাদের দেখা হয় না। মৃত্যুর পর একসঙ্গে থাকার চিন্তা, তাদের এই ত্যাগ মেনে নিতে বাধ্য করছে।
একসময় রহমান দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, ওদের ফোনে কথা বলাও কমে যায়।
রহমান ধীরে ধীরে তখন বিখ্যাত হয়ে উঠছে। মাঝে মাঝে টক শো’তে অংশ নেয়। তার সুন্দর সাবলীল বচন ভঙ্গি নিয়ে সে দ্রুত মন জয় করে নিতে থাকে সবার। নাদিয়া তখন ঘরের ভেতর চুপচাপ বসে থাকে, মুগ্ধ হয়ে দেখে তার ভালোবাসার মানুষকে। অনুষ্ঠান শেষ হলে ফোন দেয়। রহমান ফোন ধরে না। ধরলে, বলে ব্যস্ত আছি।

রহমান অনেক যাচাই বাছাই করে একসময় একটি রাজনৈতিক দলে যোগ দেয়। তার অনেক আদর্শ ছিল, যা সে জলাঞ্জলী দেয়। স্বর্গ-প্রাপ্তি থেকে পরবর্তী ইলেকশনে নমিনেশনের ব্যাপারে সে চিন্তিত হয়ে ওঠে।
এবার বিয়ে করে ফেল।
মা’র কথায় বিরক্ত হয় সে। এখন আমার ক্যারিয়ারের উঠতি সময়।

বিষণ্ণ করা এক দুপুরে ছেয়ে আছে ঢাকা নগরী। বিষণ্ণ সেই সময়ে গ্রুপিং রাজনীতিতে পর্যদুস্ত রহমানের হঠাৎ নাদিয়ার কথা মনে পড়ে যায়। ততদিনে দুই বছর কেটে গেছে। ট্রেন গন্তব্য ছেড়ে চলে গেছে আকাবাকা কোনো পথে। তখন সে ভাবতে থাকে স্বর্গপ্রাপ্তি নিয়ে তার সাথে নাদিয়ার কথোপকথনের কথা। নাদিয়ার ট্রেন সে কোথাও খুঁজে পায় না। সে তার পুরোনো বন্ধুদের ফোন দেয়। সবাই দায়সারাভাবে কথা বলে রেখে দেয়। নাদিয়াকে ফোন দিতে গিয়ে দেখে নতুন দামি সেটে নাদিয়ার ফোন নাম্বার সেইভ করা নেই। নতুন পাওয়া বন্ধুরা দামহীন এক উঠতি পলিটিক্যাল নেতার ফোন পেয়ে কাজ দেখিয়ে এড়িয়ে যায়।
সেদিন রাতে রহমান নিজেকেই স্বপ্ন দেখে। তাকে কে যেন বলছে, স্বর্গের চিন্তা করে ভুল করেছিলে।
কেন? স্বর্গ যেতে চাওয়াটাই মানুষের সর্বশেষ গন্তব্য নয় কী?
অদৃশ্য একটি কন্ঠ হাসতে থাকে। হাসতে হাসতে বলে, চাইলে তুমি আর নাদিয়া মিলে পৃথিবীটিকে স্বর্গ বানাতে পারতে না?
তবে মৃত্যুর পর?
এখন কী পৃথিবীটাই তোমার জন্য নরক হয়ে গেল না? এই নরকেই তো তোমরা আলাদা হয়ে গেলে।
ঘুম ভেঙে যায় রহমানের। এমন ঘুম অনেকের ভাঙে না। তারা জেগে থেকেও ঘুমোতে পছন্দ করে। অর্থহীন সম্ভাবনার আবর্তে ঘুরপাক খেতে খেতে পৃথিবীটাকেই নরক বানিয়ে ফেলে। রহমানের মনে হতে থাকে, পৃথিবীতেই হয়ত শাস্তিস্বরুপ মানুষকে নরকে পাঠানো হয়েছে, মানুষ যা জানে তা ভুল। ভুল থিওরীতে, ভুলভাবে চলছে সবকিছু।
ট্রেনকে পুরোনো গন্তব্য ফিরিয়ে নিতে চাইলে সে দেখে চারপাশ বদ্ধ এক পাথুরে গুহা, যেখানে বৃত্তাকারে আগুন জ্বলছে, উত্তাপে সে ঘামছে।

নাদিয়ার কী হলো, সেই ব্যাপারে কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। কেউ বলে বিয়ে করে দেশের বাইরে চলে গেছে, কেউ বলে একটি এতিমখানায় বাচ্চাদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রহমান ঠিক জানে, পৃথিবীর কোথাও না কোথাও তার জন্য অপেক্ষা করছে এক বিষণ্ণ তরুণী, যেই অপেক্ষার হয়ত কোনো শেষ নেই।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ২:১৪
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×