somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রশ্নঃ যদি ধর্ম আল্লাহ্‌ এবং তাঁর বান্দার মধ্যবর্তী বিষয় হয় তবে কেন আমরা অন্যের কাছে ধর্মের বাণী পৌঁছে দেব? ধর্ম তো যার যার নিজের ব্যাপার।

১৭ ই জুন, ২০১১ রাত ৮:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উত্তরঃ কোরআনে আল্লাহ্‌ মুসলিমদের আদেশ দিয়েছেন সত্যের পথে থাকতে এবং অন্যকে সৎ উপদেশ দিতে, অর্থাৎ সৎ কাজ করতে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার উপদেশ দিতে। কোরআনে আল্লাহ্‌ বলেছেন “সময়ের কসম। মানুষ আসলে বড়ই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে।তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করতে থেকেছে এবং একজন অন্যজনকে হক কথার ও সবর করার উপদেশ দিতে থেকেছে. (সূরা আল আসর)
তাই অপরকে সত্যের বাণী পৌঁছে দেয়া প্রত্যেক মুসলিম বা বিশ্বাসীর কর্তব্য। কারন বিশ্বাসীরা জানে অবিশ্বাসী এবং ধর্মের নৈতিকতা যারা সঠিক ভাবে পালন করেনা তাদের পরিণাম। তাই অন্যকে সত্যের বাণী জানানো তাদের দায়িত্বের মধ্যে পরে। এটি অনেকটা এমন মানবীয় গুনাবলির মত যেমন ধরুন, কিছু লোক বিপদ থেকে বাচার জন্য পাহাড়ে উঠার চেষ্টা করছে কারন তারা জানে সমতলে থাকলে তারা ভয়ংকর বিপদে পরবে। যারা পাহাড়ের চুড়ায় বা নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে গেছে বা বা উঠছে এটা তাদের মানবিক দায়িত্বের মধ্যেই পরে যে তারা আর যারা চুড়ায় উঠতে চেষ্টা করছে তাদের সাহায্য করা এবং যারা সমতলে আছে এবং বিপদ সম্পর্কে সচেতন নয় তাদের তা জানানো বা সাবধান করে দেয়া। এর পর যাকে বলা হচ্ছে সে আসবে কি আসবে না সেটা তাঁর একান্তই নিজের ব্যাপার। সূরা আসর এর কথা অনুযায়ী অন্যের কাছে সত্যের বাণী পৌঁছে দেয়া প্রতিটি মুসলমানের জন্য ফরয। এটি আমাদের অন্যান্য ইবাদতের মতোই ( নামাজ, রোযা ইত্যাদি ) ফরয একটি ইবাদত। কোরআন এ সম্পর্কে বলছে...
আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ তা’আলা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী।(৯:৭১)
তারা তওবাকারী, এবাদতকারী, শোকরগোযার, (দুনিয়ার সাথে) সম্পর্কচ্ছেদকারী, রুকু ও সিজদা আদায়কারী, সৎকাজের আদেশ দানকারী ও মন্দ কাজ থেকে নিবৃতকারী এবং আল্লাহর দেওয়া সীমাসমূহের হেফাযতকারী। বস্তুতঃ সুসংবাদ দাও ঈমানদারদেরকে।(৯:১১২)
আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম।(৩:১০৪)
তারা আল্লাহর প্রতি ও কিয়ামত দিবসের প্রতি ঈমান রাখে এবং কল্যাণকর বিষয়ের নির্দেশ দেয়; অকল্যাণ থেকে বারণ করে এবং সৎকাজের জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করতে থাকে। আর এরাই হল সৎকর্মশীল।(৩:১১৪)
আপনি হয়তো ভাবতে পারেন যে আগে নিজে সম্পূর্ণ ভাবে সত্যের অনুসারি হবো তারপর অপরকে বলবো। কিন্তু তা সঠিক নয়। কোরআনে আল্লাহ্‌ বলেছেন যদি তুমি এর একটি আয়াত জানো এবং বুঝ তা অন্যকে জানাও। এর মানে যে সত্যটা আমি জানতে থাকব তা নিজে মানতে এবং সাথে সাথে অন্যকে মানার উপদেশ দিতে থাকব।কোনো মুসলিম ই নিখুত নয়। সব মুসলিম ই পাপ বা ভুল করতে পারে। অজ্ঞতা এবং অনিচ্ছাকৃত করা ভুলগুলো আল্লাহ্‌ ক্ষমা করেন। বিশ্বাসী এবং অবিশ্বাসীদের মধ্যে পার্থক্য হলো, বিশ্বাসীরা ভুল বুঝতে পারার সাথে সাথেই সেই ভুল কাজ ত্যাগ করে সঠিকটি গ্রহন করে, ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং একই ভুল আর না করার সংকল্পবদ্ধ হয়। এ সম্পর্কে কোরআন বলছে
তারা কখনও কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কোন মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের উপর জুলুম করে ফেললে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবেন? তারা নিজের কৃতকর্মের জন্য হঠকারিতা প্রদর্শন করে না এবং জেনে-শুনে তাই করতে থাকে না।(৩:১৩৫)
তাই অন্যের কাছে সত্যের বাণী পৌঁছে দেয়া প্রত্যেক মুসলমানেরই দায়িত্ব। আর এ কাজটি এবং ইসলামের অন্যান্য নিয়ম মেনে চলার জন্য সব বিশ্বাসীদের একত্রে বা ঐকে থাকা জরুরী। কোরআনে অনেকবারই বিশ্বাসীদের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে একটি বন্ধনে আবদ্ধ হতে বলা হয়েছে।
তোমরাই হলে সর্বোত্তম উম্মত, মানবজাতির কল্যানের জন্যেই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজের নির্দেশ দান করবে ও অন্যায় কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। আর আহলে-কিতাবরা যদি ঈমান আনতো, তাহলে তা তাদের জন্য মঙ্গলকর হতো। তাদের মধ্যে কিছু তো রয়েছে ঈমানদার আর অধিকাংশই হলো পাপাচারী। (৩:১১০)
আর যাদেরকে আমি সৃষ্টি করেছি, তাদের মধ্যে এমন এক দল রয়েছে যারা সত্য পথ দেখায় এবং সে অনুযায়ী ন্যায়চিার করে।(৭:১৮১)
আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহবান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে গাফেল করে দিয়েছি, যে, নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্য কলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার অনুগত্য করবেন না।(১৮:২৮)

হযরত মুহাম্মদ (সঃ) একই কথাই বলেছেন যে বিশ্বাসীরা একে অপরের অভিভাবক। “ তোমরা প্রত্যেকেই একে অপরের অভিভাবক এবং তোমাদের প্রত্যেককেই এই দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাস করা হবে।“ বিশ্বাসীদের একে অপরের সাথে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে খুবই যত্নবান হতে হবে এবং একে অপরকে সাহায্য ও সহযোগিতা করতে হবে যাতে একটি ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে। কোরআনে আল্লাহ্‌ বলছেন আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেন তারা সীসাগালানো প্রাচীর। (৬১:৪)
এই আয়াতটির মাধ্যমেই পরিষ্কার যে ধর্ম শুধু নিজে নিজে পালনের বিষয় নয়। এটা ইসলাম সমর্থন করে না। কোরআনে বলা আছে মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। (৪৯:১০)এবং ভাই কখনো ভাইয়ের কাছ থেকে দূরে থাকতে পারেনা।
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×