somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হোটেল (একটি আধা রম্য রচনা)

১৩ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অপূর্বঃ মামা ভাতের সাথে কি কি আছে?
হোটেল বয়ঃ শুঁটকি ভর্তা, তেলাপিয়া মাছ, রুই মাছ, গরু, মুরগী
অপূর্বঃ মামা তেলাপিয়া মাছ দাও।
হোটেল বয়ঃ মামা তেলাপিয়া মাছ ভাল হইব না, মুরগী খান।

হোটেলে খাবার খান না এমন লোক খুব কমই আছে। আর ভোজন রসিক হলেত কথাই নাই। তবে যারা ছাত্র বিশেষ করে অপূর্বর মত মেছে থাকে তাদের হোটেলে মাঝে মাঝেই খেতে হয়। কারোও বা বুয়া নাই কারো বা বুয়া না আসার কারনে। তবে কারন যেটাই হোক হোটেলে খাবার খেতে গেলে দামটাও দেখতে হয়। তাই মুরগী খাবার স্বাধ থাকলেও অপূর্বর সাধ্য হল তেলাপিয়া মাছ। আর তেলাপিয়া মাছ যেহেতু ভাল নেই তাই শুঁটকি ভর্তার অর্ডার দিল অপূর্ব।

খেতে খেতে অপূর্বের একটা কৌতুক মনে পড়ে যায়। একবার এক হোটেলে এক লোক খাবার খেতে ঢোকে। কিন্তু পকেটে টাকা নাই। তাই সে একটা বুদ্ধি করে সব ভাল ভাল খাবারের অর্ডার দেয়। খাবার খাওয়ার মাঝে লোকটা হটাৎ চিৎকার করে উঠে। হোটেলের বয়, মালিক সবাই উপস্থিত। সবার সামনে লোকটি চিৎকার করে বলতে থাকে, কত বছর হল ব্যবসা করিস, খাবারের মধ্যে তেলাপোকা দিয়ে রান্না করিস। পরে মালিক খাবারের মধ্যে তেলাপোকা দেখে নিজের ব্যবসার সুনাম নষ্ট হওয়ার ভয়ে লোকটির কাছ থেকে ক্ষমা চায় এবং টাকাও নেয়না বরং অসুস্থ হতে পারে এই কারন দেখিয়ে লোকটি কিছু টাকা নিয়ে যায়। লোকটার বুদ্ধি চিন্তা করে মনে মনে হাসে। অপূর্বর যে এরকম হয়নি তা নয়। এইতো কিছুদিন আগে খিচুরি খাবার সময় খাবারের মধ্যে মাছি পেল। মাছিটাকে আলতো করে ফেলে দিয়ে সে খেতে শুরু করে করল। প্রতিবাদ করতে চাইল কিন্তু কি লাভ সব খাবার তো ঐ একখানে রান্না হয়।

খাবারের রান্নার পরিবেশ কতটা নোংরা তা দেখার সৌভাগ্য নাকি দুর্ভাগ্য হয়েছিল অপূর্বর। চারিদিকে মাছি ভন ভন করছে, সবকিছু নোংরা, পাতিল গুলো ঠিকমত পরিষ্কার না, একি হাত দিয়ে নাক পরিষ্কার করে রান্না, ঘাম খাবারের মধ্যে যাচ্ছে, ধুলো বালু উড়ে যাচ্ছে রান্নায়, রাধক কখনই হাত ধোয় না, খাবার স্বাদ দেখে এঁটো খাবার আবার পাতিলে ফেলে দেয়া আরও কত কি? এগুলো দেখে হোটেলে বেশ কিছুদিন খায়নি সে। আর খাবারগুলো সব সময় খোলা থাকে।

সেবারেই সে জেনেছিল এক তেল এরা এক সপ্তাহ পর্যন্ত ব্যবহার করে। আর বাজারের মাছ যেগুলো নষ্ট হতে ধরে সেগুলো রাতে বাজার থেকে কিনে এনে ফ্রিজে রেখে কয়েকদিন ধরে বিক্রি করে। আর মুরগী যে জীবিত না মৃত তা তারাই ভাল জানে। খাসির বদলে দেয় ভেড়া। একবারত পত্রিকায় দেখেছিল আরিচায় কুকুরের মাংশ খাসির মাংস বলে বিক্রি করেছে। তবে অপূর্বর ভাগ্য ভাল যে হোটেলের বয়টা ভাল। খারাপ খাবার হলে সে খেতে নিষেধ করে। নাহলে কবে হয়তো জন্ডিস বাধিয়ে ফেলত।

অপূর্বঃ মামা গ্লাসটা ধুয়ে পানি দেনতো।
হোটেল বয়ঃ আচ্ছা মামা দিতাছি।

অপূর্ব মনে মনে ভাবে, বড় বড় ফাস্ট ফুড কিংবা রেস্টুরেন্ট এর খাবার কেমন? ওগুলো কি নোংরা? না ওরা তো অনেক টাকা নেয়, ওদেরটা নিশ্চয় অনেক পরিষ্কার। সেদিন মেহেদি বলল, ভ্রাম্যমাণ আদালত বড় বড় কয়েকটি ফাস্ট ফুড আর রেস্টুরেন্টকে নোংরা পরিবেশে খাবার রান্নার জন্য জরিমানা করেছে। তাহলে এরাও নোংরা ওরাও নোংরা। কিন্তু খাবারের দাম এত কম বেশি কেন? কারন একটাই ওদেরটা অনেক ভাল জায়গায়, ভালভাবে সাজানো আর এদেরটা একটু কম সাজানো।

হোটেল বয়ঃ মামা, কিছু লাগবো?
অপূর্বঃ হাফ প্লেট ভাত দেন।

একবার বড়মামা অপূর্বকে একটা গল্প বলেছিল, এক লোক হোটেলে এসে হালিমের অর্ডার করল। হালিমের সাথে বড় একটা মাংশ। লোকটা খুব খুশি হয়ে মাংশ খেতে গিয়ে দেখল সেটা মাংশ নয় হাড্ডি। কিছুক্ষন হাড্ডি খাওয়ার পর সে লক্ষ্য করল হাড্ডিতে কোন মাংশ নেই। বয়কে জিজ্ঞাসা করার পর হোটেল বয় এর সহজ উত্তর, এক হাড্ডি এতজন খাইলে মাংশ থাকে কেমনে?

অপূর্বঃ মামা বিল কত হল?
হোটেল বয়ঃ ৪২ টাকা দেন।
অপূর্বঃ কেন? ৩৭ টাকা না।
হোটেল বয়ঃ শুঁটকি ভর্তা ২৫ টাকা হইছে আজ থাইক্কা।


অপূর্ব চিন্তা করে, আবার বাড়িতে রান্না শুরু করতে হবে। অপূর্ব বাড়িতে নিজেই রান্না করে খায়। একটা রাইস কুকার আছে সেখানে ভাত রাধে, আর তরকারি রান্না করে গ্যাসের চুলায়। রান্নার ঝামেলা এড়ানোর জন্য একবার বুয়া রেখেছিল সে। কিন্ত দেখা গেলো বুয়া চাল, তরকারী আর তেল চুরি করে। আর বুয়ার রান্না ভালনা। তরকারিতে ইচ্ছামত তেল দেয়। সেই থেকে বুয়া বাদ। তবে নিজে রান্না করতে একটু কষ্ট হলেও খেয়ে মজা। কিন্তু যারা রান্না জানেনা তাদের আরও কত না কষ্ট।

(সমাপ্ত)

৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×