somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সংবাদপতে কালোদিবসে কলঙ্কিত আ.লীগ

১৬ ই জুন, ২০১১ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ ১৬ জুন, সংবাদপত্রে কালোদিবস। ১৭৭৫ সালের এই দিনে শেখ মুজিবের বাকশালী সরকার এক কালো আইন জারির মাধ্যমে সরকারের তল্পীবাহি মাত্র ৪টি সংবাদপত্র রেখে দেশের সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছিল। কবর রচিত হয়েছিল মত প্রকাশের স্বাধীনতা তথা গণতন্ত্রের। সেদিন বেকার হয়ে পড়েছিলেন শত শত সাংবাদিক। অনেকে উদরের জ্বালা নিবারনের জন্য বায়তুল মোকাররমের ফুটপাতে, কেউ শ্যামবাজারের মুদিখানায় সদাই বিক্রির পেশা গ্রহণে বাধ্য হয়েছিলেন।
মুজিব-রোষানলে পড়ে জেলে যেতে হয়েছিল পথিকৃৎ সাংবাদিক এজেডএম এনায়েতুল্লাহ খানকে। ‘সুপ্রিম-স্ট্রেট’ নামে বহুল আলোচিত সম্পাদকীয় লেখার কারণে বাংলাদেশ অবজারভার সম্পাদক আব্দুস সালামকে চাকরিচ্যুত করা হয়। অনুরূপভাবে পদচ্যুত হন দৈনিক বাংলা-এর প্রধান সম্পাদক কবি হাসান হাফিজুর রহমান ও সম্পাদক তোয়াব খানকে। তাদের অপরাধ ছিল ১৯৭৩ সালের ১ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসকাবের সামনে পুলিশের গুলিতে দুই ছাত্রের নিহতের খবরটি গুরুত্বের সাথে ছাপা! এর আগে অবজারভার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও দৈনিক পূর্বদেশ সম্পাদক মাহবুবুল হককে সরকার মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করে দেড় বছর জেলে আটকে রাখে।
১৯৭৪ সালের ২১ মার্চ দৈনিক ইত্তেফাক-এ প্রকাশিত একটি রিপোর্ট ছিল এরকম-‘গত ১৭ মার্চ রাত ৩টার সময় তিন ট্রাকবোঝাই রক্ষীবাহিনী ও পুলিশ দৈনিক গণকন্ঠ কার্যালয়ে প্রবেশ করে এবং সোমবার প্রকাশিতব্য শেষ ফর্মা (১ম ও অস্টম পাতার) মেশিন হইতে নামাইয়া ফর্মাটি ভাঙিয়া ফেলে। তারা কার্যালয়ের প্রতিটি কক্ষের জিনিসপত্র তছনছ করে এবং কর্মরত-কর্মচারীদের ওপর নির্যাতন চালাইয়া ৭জনকে গ্রেফতার করে। একই সময় বাসভবন হইতে গণকন্ঠ সম্পাদক কবি আল মাহমুদকেও গ্রেফতার করা হয়। একই সময় ছাপাখানা হইতেও সোমবারের শেষ ফর্মারও সিলোফিন পেপারসহ প্লেটটি আটক করে। সোমবারের পত্রিকা প্রকাশ কার্যত বন্ধ করিয়া দেওয়া হইয়াছে। সোমবার ও মঙ্গলবার সারাদিন ও রাত ধরিয়া পুলিশ ও রক্ষিবাহিনী কিছুক্ষণ পরপর গণকন্ঠ কার্যালয়ে যাইয়া সেখানে কর্মরত সাংবাদিক ও কর্মচারীদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হইয়াছে। পত্রিকার বার্তা সম্পাদকসহ অন্য সাংবাদিকরা বাড়িঘর ছাড়িয়া অন্যত্র রাত কাটাইতে বাধ্য হইতেছেন। রিপোর্টাররা সংবাদ সংগ্রহ করিতে যাইয়া হুমকির সম্মুখীন হইতেছেন। কারাগারে গণকন্ঠ সম্পাদকের সহিত সাক্ষাতের চেষ্টা ব্যর্থ হইয়াছে। তাহাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গে রাখা হইয়াছে বলিয়া খবর পাওয়া গিয়াছে। তাহা ছাড়া মফস্বল সংবাদদাতাসহ গণকন্ঠ কার্যালয় থেকে গ্রেফতারকৃতদের কোন সংবাদ পাওয়া যাইতেছে না।’
স্বাধীনতার পরপরই সরকারের পক্ষ থেকে সংবাদপত্রের কন্ঠরোধ করার চেষ্টা চলতে থাকে। ১৯৭২ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর হককথা, মুখপাত্র ও ঝঢ়ড়শবংসধহ সরকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেয়। পরের বছর সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্ট্রবিরোধী খবর ছাপানোর অভিযোগে ৫টি সাপ্তাহিক বন্ধের মুখ দেখে। একই বছরের ১৩ মে দৈনিক স্বদেশ ও ’৭৪ সালে চট্টগ্রামের দেশবাংলা বন্ধ করা হয়। নয়াবাংলা কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয় ১০জন।
সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে বাক, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়া হলেও প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন অর্ডিন্যান্স, বিশেষ ক্ষমতা আইনে পত্রিকা বন্ধের ক্ষমতা, জরুরি আইনের মতো কালো আইনে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের ওপর চালানো হয় নজীরবিহীন বর্বরতা। এরপর চূড়ান্ত আঘাত ১৯৭৫ এর ১৬ জুনে সব পত্রিকা বন্ধ করে দিয়ে। সেদিন জারী করা হয় ‘সংবাদপত্র (প্রকাশনা বাতিল) অধ্যাদেশ, ১৯৭৫। এর প্রতিবাদে এদেশের সাংবাদিক সমাজ ১৬ জুনকে সংবাদপত্রে কালোদিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
শেখ মুজিবের মতো তার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ এবারসহ দু’বার ক্ষমতায় আসার পর দেশের সংবাদপত্র এবং সাংবাদিক দলননীতি অব্যাহত রাখে। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর পিতার ধারাবাহিকতা অব্যাহত করে বন্ধ করে দেন দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ টাইমস ও সাপ্তাহিক বিচিত্রা। সরকারি গণমাধ্যমে চলে বেধড়ক ছাঁটাই। জয়নাল হাজারী, শামীম ওসমান ও আবু তাহেরের মতো আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে নির্যাতিত হন অসংখ্য সাংবাদিক। ফেনীতে অকথ্য নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক টিপু সুলতান আজও তার জ্বলন্ত প্রমাণ। সেদিন শেখ হাসিনা বিদ্রুপ করে বলেছিলেন, ‘টিপু সুলতান কি সরকারের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সাংবাদিক?’ যশোরে নির্মমভাবে হত্যা হয়েছিলেন দৈনিক রানার সম্পাদক আরএম সাইফুল আলম মুকুল ও দৈনিক জনকণ্ঠর বিশেষ প্রতিনিধি সামছুর রহমান কেবল। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নিজদলের অনুসারী সাতক্ষীরার দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক স.ম. আলাউদ্দিনকেও হত্যা করেছে।
শেখ হাসিনার বর্তমান শাসনামলে ৭ জন সাংবাদিক খুন হয়েছে সারাদেশে। নির্যাতিত হয়েছে ২ হাজার সাংবাদিক। মামলা ও হয়রানীর শিকার হয়েছেন ৭৬ জন। কক্সবাজার, কুমিল্লা, সিলেট, নরসিংদী প্রেসকাব ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির নির্বাচিত কমিটিগুলোকে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিগত নির্বাচনের সময় জাতীয় প্রেসকাব অপদখলের চেষ্ঠা চলে। আমারদেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে আটক ও অকথ্য নির্যাতনের ইতিহাস নিকট ইতিহাসমাত্র।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙালী মেয়েরা বোরখা পড়ছে আল্লাহর ভয়ে নাকি পুরুষের এটেনশান পেতে?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:২০


সকলে লক্ষ্য করেছেন যে,বেশ কিছু বছর যাবৎ বাঙালী মেয়েরা বোরখা হিজাব ইত্যাদি বেশি পড়ছে। কেউ জোর করে চাপিয়ে না দিলে অর্থাৎ মেয়েরা যদি নিজ নিজ ইচ্ছায় বোরখা পড়ে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×