somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অর্থনৈতক মুক্তি ৪র্থ পর্ব

১৬ ই জুন, ২০১১ বিকাল ৫:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অর্থনৈতিক উন্নয়ন দারিদ্র বিমোচনের পূর্ব শর্ত। আর্থিক প্রসার আর উন্নয়ন এক জিনিস নয়। তবে আর্থিক প্রসার অর্থনৈতিক উন্নয়নেরই একটা দিক। অর্থনৈতিক উন্নয়নের চরম লক্ষ্য হওয়া উচিত মানুষের সক্ষমতা সৃষ্টি। মানুষের উপর প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের অনিশ্চয়তা ও পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণের বদলে অনিশ্চয়তা ও পরিস্থিতিকে মানুষের নিয়ন্ত্রণে আনা বা আনতে পারাকে মানুষের সক্ষমতা সৃষ্টি বলা হয়।মানুষের আর্থ-সামাজিক ক্ষমতা প্রসারের প্রক্রিয়ায়ই অর্থনৈতিক উন্নয়ন। অর্থনৈতিক উন্নয়নের যাচাই জীবনধারনের বিভিন্ন অবস্থার( পুষ্টি, শিক্ষার হার, গড় আয়ু, শিশু মৃত্যুর হার, বয়স্কদের বঞ্চনা ইত্যাদি) উন্নয়ন দিয়ে করা হয়। উক্ত উন্নত অবস্থাগুলো অর্জনকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ধরা হয়।উন্নয়নের কর্মসুচী হওয়া উচিত উক্ত সক্ষমতার জন্য অর্থ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় সংস্কার করা। সংস্কার গুলো ধরা হয় বেকারত্ব দূর, দ্রুত মূলধন গঠন, অব্যবহৃত শ্রমের ব্যবহার, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগ ইত্যাদি। এজন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে যে বিষয় গুলো প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন তা হলোঃ

১। জনগণ যাতে নিজদের শ্রমে নিজদের মংগল সাধনের আর্থ-সামাজিক সকল প্রচেষ্টা নিরাপদে ও স্বাধীনভাবে করতে পারে তার জন্য জনগণের ক্ষমতায়ন বিশিষ্ট ও অংশ গ্রহন মূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা।

২। সমাজের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে( সঞ্চয়– বিনিয়োগ– উৎপাদন– বন্টন– বিনিময়– ভোগ) স্বাধীনভাবে ও সামর্থ অনুসারে অংশ গ্রহন করতে পারা এবং তার মাধ্যমে ন্যায্য আয় ( মজুরী, বেতন, ভাড়া, লাভ, সুদ) করে জীবনধারণ করতে পারে।

আর্থিক সামর্থ না থাকলে উন্নয়নের ভাগীদার হওয়া যায় না। সমাজে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশীদারিত্ব অর্জন করতে হলে সক্ষমতা অর্জন আবশ্যক।শোষণমুক্ত পরিবেশে সমাজে সবার সক্ষমতা অর্জন করতে হলে সকলের জন্য পুঁজি ভিত্তিক আয় ও স্বত্ত্বাধিকারের সাথে শ্রমভিত্তিক আয় ও স্বত্ত্বাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।সমাজের প্রত্যেক নরনারীর সক্ষমতা ও স্বত্ত্বাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ সাধন করতে হলে সেন্ট্রালাইজড অথরিটি বা কেন্দ্রীভূত কর্তৃপক্ষ (রাষ্ট্র, সরকার, পরিকল্পনা কমিশন) দ্বারা সম্ভব নয়।কারণ সমাজের সকল মানুষের কল্যাণ সাধনের সাথে যে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড জড়িত তার সমাধান কেবল সকল মানুষের সক্রিয় অংশ গ্রহনের মাধ্যমে করা যায়। তাই শোষণমুক্ত ও কল্যাণকর অর্থব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হলে জনগণের অংশ গ্রহন মূলক অর্থব্যবস্থা প্রবর্তন করা দরকার।

আর্থিক সক্ষমতা অর্জিত হয় আয়ের মাধ্যমে। সমাজে আয়ের উপায় সমূহ নিম্ন প্রকারেরঃ

১। শ্রমবিক্রয়কারীগণ আয় করেন মজুরী, বেতন, বোনাস ইত্যাদি।

২। পুঁজিপতি, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী গণ আয় করেন সুদ, লাভ, কমিশন ইত্যাদি।

৩। সম্পদ, সরঞ্জাম, যন্ত্রপাতি, অবকাঠামো প্রভৃতির মালিকরা আয় করেন খাজনা, ভাড়া, টোল ইত্যাদি।

৪। রাষ্ট্র বা সরকার আয় করে নানা প্রকার কর, শুল্ক, রাজস্ব, টোল,জরিমানা ইত্যাদি।

৫। রাষ্ট্র বা সরকার থেকে জনগণ আয় সহায়তা পায় ভাতা, ভর্তুকি, কর রেয়াত, ত্রাণ বা দাতব্য সাহায্য ইত্যাদি।

উপরোক্ত আয়ের উপায়ের মধ্যে জনগণের সক্ষমতা অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো শ্রমের আয়( মজুরী, বেতন, বোনাস ইত্যাদি) এবং সম্পদ, মূলধন ও উৎপাদনের উপায় সমূহের আয় (সুদ, লাভ, কমিশন, খাজনা, ভাড়া ইত্যাদি)। এবং উভয় প্রকারের আয়ের মালিকানা সকল জনগণের থাকতে হবে। নতুবা সমাজে শোষণ হবে এবং তার ফলে ধনী গরিবের সৃষ্টি হবে।কারণ উদ্বৃত্ত মূল্যের তত্ত্ব অনুসারে মূলধন শ্রমের অংশ আত্মসাত করে এবং সেটাই শোষণের মৌলিক কারণ। সুতরাং শোষণ বন্ধ করার উপায় শ্রম বিক্রয়কারীদের মূলধনের মালিকানা অর্জন। যেহেতু মূলধন শ্রমের অংশ শোষণ করে; সেহেতু অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আর্থিক প্রসারের সাথে শ্রমজীবীদের শোষণ বৃদ্ধি পায় এবং দারিদ্র দূর হওয়ার বদলে বেড়ে যায়।অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে জিডিপি গ্রোথ বা বৃদ্ধি হলে ও তা শ্রমজীবীদের কাছে যায় না।কারণ সমাজে আয় বন্টন হয় ফ্যাক্টর প্রাইস অনুসারে এবং ফ্যাক্টরের মালিকরা জিডিপির অংশ পায় ফ্যাক্টর প্রাইস অনুপাতে। সেখানে মূলধনের মালিকানা বিহীন শ্রমজীবীরা তাদের শ্রমের মজুরী ছাড়া অন্য কোন অংশ পেতে পারে না।জিডিপির এই ধনী মুখী বন্টন ফিসকাল পলিসি, মানিটারি পলিসি, বাজেট, সরকারি সহায়তা দ্বারা বন্ধ করা বা কম্পেনসেট করা সম্ভব হয় না। একমাত্র জনগণের মাঝে আয়ের উতস বা ফ্যাক্টর সমূহের মালিকানা বন্টিত হলে আয় বন্টন ও জিডিপির অংশ জনগণের ভাগে পৌছাবে এবং সেটাই হবে জনগণের আর্থিক সক্ষমতা অর্জনের সোপান।
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×