somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলাম কোন পণ্য নয়

১৬ ই জুন, ২০১১ বিকাল ৪:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইসলাম চলমান পুঁিজবাদী বিশ্বের বাজার অর্থনীতির কোন প্যাটেন্টকৃত পণ্য নয়। ব্র্যান্ড নেম হিসেবে একে ব্যবহার করার অধিকারও শরীয়ত কাউকে প্রদান করেনি। বাণ্যিজ্যিকভাবে তো নয়ই। রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবেও ইসলাম শব্দের যথেচ্ছ ব্যবহার শরীয়ত অনুমোদন করে না। এজন্য শরীয়তের কিতাবে কিংবা তারও আগে সাহাবায়ে কেরামের সময়ের কোন দলিল বা হাদিসে ইসলামী সমাজ বলে কোন কিছুর স্থান হয়নি। ইসলামী আইন, ইসলামী খাদ্য বা ইসলামী পোষাক বলেও কুরআন, হাদিস বা শরিয়তে কিছু পাওয়া যায় না। শরিয়ত প্রবর্তিত হওয়ার আগে মুসলমানদেও আইন বলতে কুরআন হাদিস ও সাহাবায়ে কেরামের গৃহীত সিদ্ধান্তবলীর অনুসরণ করার অলিখিত নীতি সমাজে চালু ছিল। তবে শরিয়ত প্রবর্তিত হবার আগে বা পরে কখনো ইসলামী আইন শব্দ ব্যবহার হয়নি। কুরআনের বিধান, হাদিসের বিধান হিসেবে সমাজে হালাল হারমের বিধান কার্যকর ছিল। হালাল খাদ্য, সুন্নাতী পোশাক, সুন্নাতের খেলাফ ইত্যাদি শব্দ শরীয়ত প্রবর্তিত হবার পরও সমাজে চালু ছিল। এমনকি মুসলমানদেও আমলী জিন্দেগী প্রশ্নে দার্শনিক ও তাত্তিকভাবে মুসলিম সমাজে চারটি পৃথক মাযহাবের সৃষ্টির পরও বিভক্ত মুসলিম সমাজ কোন ইসলামী নাম ধারন করেনি। তারা কেউ হানাফী হয়েছেন, কেউ শাফেয়ী, কেউ মালেকী, কেউ হাম্বলী নামে নিজেদেও পরিচিত করেছেন। নিজ নিজ ইমামদেও নামে মুসলিম সমাজ নিজেদেও বিভক্ত করেছে। কিন্তু ইসলামকে বিভক্ত করার স্পর্দা কেউ দেখায়নি। এমনকি যারা এই চার ইমামের কাউকেই অনুসরণ যোগ্য মনে করতেন না, তারা সমাজে নিজেদেরকে লা মযহাবী হিসেবে চি‎িহ্ণত করেছেন। উপমহাদেশেও তারা লা মাযহাবী হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। স্বাধানীতার পর তারা প্রথমে মোহাম্মদী ও পরে আহলে হাদীস নাম ধারণ করেন। কিন্তু কেউই সরাসরি নিজেদেরকে ইসলামী বলে দাবি করেনি বা ইসলামকে ব্যবহার করেনি।
বিশ্ব মুসলিম আমলী জিন্দেগীতে চার ইমামের অনুসারী হলেও কার্যত শিয়া সুন্নী দুইভাগে বিভক্ত মুসলিম বিশ্ব। কিন্তু কেউ নিজেদেও ইসলামী বলে দাবী করেনা শিয়া বা সুন্নী হিসেবেই উল্লেখ করে।
দার্শনিকভাবে প্রথম ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার দাবি তোলেন সুন্নী সম্প্রদায়ের এযুগের ইসলামী চিন্তাবিদ ইমাম ইবনে তাইমিয়া। রাজনৈতিকভাবে এ দর্শনের প্রথম বাস্তবায়ন ঘটে সৌদি আরবের বাদশাহ আবদুল আজিজ ইবনে সউদের আমলে। পরবর্তীতে ইরানে ইসলামী বিপ্লবের পর ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানেও নব্য ইসলামী সমাজের ধারনার বিকাশ ঘটে। এরপর উপমহাদেশেও রাজনৈতিকভাবে এ ধারনার বিকাশ ঘটতে শুরু করে। এতে সবচে’ বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয় শরিয়ত ও মুসলিম সমাজ।
মুসলিম খেলাফত বা সালতানাত পতনের পর বিগত শতাব্দীর শুরুতে আমরা প্রথম মুসলমানদের রাজনৈতিক ভাবে সংগঠিত হতে গিয়ে ধর্মীয় পরিচয় ব্যবহার করতে দেখি। ১৯০৬ সালে উপমহাদেশের রাজনীতিতে মুসলিম লীগের আত্ম প্রকাশের মধ্য দিয়ে। এর আগে মুসলমানরা রাজনীতি বলতে খেলাফত বা খেলাফত ফিওে পাবার আন্দোলনকে বুঝত। ধর্মীয় নেতারা তখন রাজনীতি করতেন উলামায়ে হিন্দ, উলামায়ে সিন্ধ, উলামায়ে দেওবন্দ, জমিয়তে উলামা, নিখিল ভারত উলামা লীগ ইত্যাদি নামে। এরপর শুরু হয় সরাসরি ইসলামী শব্দের ব্যবহার কওে রাজনীতি। যেমন জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম ইত্যাদি।
বাংলাদেশে পাকিস্তান আমল থেকেই জামায়াতে ইসলামী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, নেজামে ইসলাম ইত্যাদি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন থাকলেও ১৯৭২ সালে এসব দল ও সংগঠন নিষিদ্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক অবস্থান ও যুদ্ধকালীন সময়ে ইসলামের নামে বিতর্কীত ভ’মিকার কারণে তাদেও ওপর এই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। ১৯৭৬-৭৭ সালের দিকে বাংলাদেশের ওয়াজ মাহফিলগুলোর চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য বদলে যেতে শুরু করে। পোষ্টারগুলোতে এসময় লেখা হতে শুরু করে তিনদি ব্যাপী বিশাল ইসলামী মাহফিল, ৭দিনব্যাপী ইসলামী মহাসম্মেলন ইত্যাদি।
আর একুশ শতকের বাংলাদেশে দেখছি ব্যাংক, বীমা, হাসপাতাল, সমাজসেবা, রেডিও, টিভি, পত্রিকা, ব্যবসা-বাণিজ্য সরাসরি ইসলামের নামেই পরিচালনা শুরু হয়ে গেছে। ইসলাম এর বাণিজ্যিকীকরণ কারা করলো? কোথায় এর প্যাটেন্ট নিবন্ধিত হলো? এমনকি এজন্য শরিয়াহ কাউন্সিল নাম দিয়ে শরীয়তকে পর্যন্ত ব্যবহার করা শুরু হয়ে গেছে। শুধু তাই নয় বাণিজ্যেও স্বার্থে ব্যবসার উপকরণ হিসেবে মনোগ্রাম বা বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবে সরাসরি ব্যবহৃত হচ্ছে, পবিত্র ক্কাবাঘর বা মদীনার রওজা শরীফের প্রতিচ্ছবি। যা শরীয়ত অনুমোদন করে না। উদাহরণ হিসেবে প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ এ যুগের মুজাদ্দেদ ড. জাকির নায়েকের প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন টিভির নামটি খেয়াল করি। তাদের টিভির নাম পিস টিভি। ইসলামী টিভি নয়। অথচ পিস টিভিতে ২৪ ঘন্টা ইসলামেরই চর্চা হয়। কিন্তু কোন অন্ঠুানের নাম ইসলামী শব্দসহযোগে নয়। অতএব, বুঝ হে সুজন যে জান সন্ধান।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কোথায় বেনজির ????????

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:০৫




গত ৪ মে সপরিবারে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে। গত ২৬ মে তার পরিবারের সকল স্থাবর সম্পদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×