somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামি ব্যাংক !২ পর্ব

১৬ ই জুন, ২০১১ বিকাল ৪:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধারের বিনিময়ে সুদ গ্রহণ এবং হারাম ব্যবসায়ে অর্থ বিনিয়োগকে ইসলাম অবৈধ করেছে। শরীয়তের এই রীতি মেনে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পরিচালনার নীতিগত ধারণাটিকেই ইসলামী ব্যাংকিং বলে। খুলাফায়ে রাশেদীনের পর থেকে শুরু করে ৮০০-১২০০ খৃষ্টাব্দ পর্যন্ত বিস্তৃত ইসলামের স্বর্ণযুগে যে ব্যাপকভিত্তিক ইসলামী অর্থনীতির বিকাশ ঘটে তারই অনুপ্রেরণায় ৬০ এর দশকের মাঝামাঝি মিশরে প্রথম এই ইসলামি ব্যাংকিং পদ্ধতির প্রচলন শুরু হয়। পরবর্তীতে ইরান, সৌদি আরব এবং মালয়শিয়ায় বিস্তৃত হয় ইসলামি ব্যাংকিং।

ইসলামি ব্যাংকিং বলে সুদভিত্তিক প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিপরীতে তাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা পরিচালিত হয় লাভ-ক্ষতি ভাগাভাগির শর্তানুসারে। মুদারাবা, মুশারাকা, মুরাবাহা ইত্যাদি নানা নামের অর্থনৈতিক লেনদেনের নিয়ম রয়েছে তাদের। এখন প্রশ্ন হলো, পারস্পরিক নির্ভরশীল বর্তমান বিশ্ব অর্থব্যবস্থায় কোনো বিশেষ ব্যাংকিং ব্যবস্থার পক্ষে কি বাদবাকি ব্যাংকিং ব্যবস্থার সাথে লেনদেন না করে থাকা সম্ভব? আর যখন একই দেশে অন্যান্য ব্যাংকিং ব্যবস্থা রয়েছে এবং যেখানে তাদের সবাইকে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বাধ্যতামূলক লেনদেন করতে হয় তখন সেখানে শরীয়াভিত্তিক ব্যাংকিং কীভাবে হবে? আমাদের দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বাধ্যতামূলক একটা জামানত রাখতে হয়, লেনদেন করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক কি ইসলাম ভিত্তিক লেনদেন করছে না বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন অনুযায়ী করছে? অর্থাৎ একটা দেশের সব ব্যবস্থা যখন ধর্মনিরপেক্ষ, তখন শুধু ব্যাংকিং ব্যবস্থা ইসলামী হওয়া সম্ভব নয়।

দ্বিতীয়ত, কুরআনে যে রিবা বা সুদকে হারাম করা হয়েছে আলেমদের একটা বড় অংশ যাদের মধ্যে আল্লামা ইউসুফ আলীও রয়েছেন, মনে করেন বর্তমান ব্যাংক ব্যবস্থার সুদ তার আওতায় পড়ে না। করআনের এই রিবা হলো মহাজনী সুদ যা অনেকসময় আসলের চেয়েও অনেক গুণ বেশি হয়ে যেতো এবং তা শোধ করতে না পারলে আমাদের চিরায়ত সাহিত্যের সেই উপেন কিংবা গফুরের মতো ভিটেবাড়ি সব খোয়াতে হতো। শেক্সপিয়ারের মার্চেন্ট অব ভেনিসের শাইলকের মতো এই মহাজনেরা দেনাদারের ওপর খড়গহস্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো।

আর সাধারণ ব্যাংক যাকে সুদ বলে ইসলামি ব্যাংক তাকেই বলে মুদারাবা বা প্রফিট শেয়ারিং। অর্থাৎ আপনার টাকা খাটিয়ে ব্যাংক যদি প্রফিট করে তাহলে আপনি তার ভাগ পাবেন, কিন্তু লস করলে আপনি কিছু পাবেন না। কিন্তু আপনি যদি ব্যাংকের টাকা নিয়ে লস করেন তাহলে ব্যাংক আপনার এই লস শেয়ার করবে না। তাহলে এটা ব্যবসা হলো কীভাবে? অর্থাৎ সবই এক, শুধু নামগুলো আরবি। যেমন, একসময় লাইফ ইন্সুরেন্সকে শরীয়ার পরিপন্থি গণ্য করা হতো। এখন এটাকে বলা হয় ইসলামিক ইন্সুরেন্স বা তাকাফুল। সবই এক শুধু ব্যাখ্যাটা বদলে গেছে যে একজনের ঝুঁকিকে যখন অনেকে মিলে বহন করেন তখন এর লাভ পেতে অসুবিধা নেই।

আমাদের কারো কারো বাতিক আছে ব্যাংকে টাকা রেখেছি, সুদ নেবো না। কিন্তু কারা ব্যবহার করছে এই টাকাটা, একটু ভেবে দেখবেন কি? এখন সারা বিশ্বের ব্যাংকিং অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে ইহুদীরা। আপনি তাদেরকে আপনার টাকা দিচ্ছেন আরো টাকা বানাবার জন্যে। আপনি সুদ না নিলে তাদের জন্যে আরো ভালো। তাদের টাকা বাড়বে। অতএব আমরা যেন আত্মপ্রতারণার শিকার না হই। যা বাস্তব, তাকে যেন বাস্তবানুগভাবেই গ্রহণ করি। কারণ আমাদের সমাজ, রাষ্ট্র হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষ। এখানে শুধু ব্যাংকিং ইসলামী হতে পারে না। তাহলে আমাদেরকে ইসলামি খিলাফত ব্যবস্থায় যেতে হবে। যেখানে সবকিছু শরীয়াসম্মত হবে। তখন আপনি ব্যাংকিং ইসলামী করতে পারবেন।

অতএব আমরা দেখেছি যে, তথাকথিত ইসলামি ব্যাংকিং আর অন্যান্য ব্যাংকিং- এর মধ্যে প্রকৃতপক্ষে কোন পার্থক্য নেই। সবাইকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মের অধীনে কাজ করতে হচ্ছে। তারা একই কাজ করছেন শুধু ভিন্ন নামে ডাকছেন ।

সূতরাং যেহেতু প্রত্যেক মুসলমানের জন্য হালাল রুজী-রোজগার তথা ইনকাম করা ফরয সূতরাং অন্তত নিজে ও পরিবারকে হারাম থেকে বাচানোর জন্য ব্যাংক বীমা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যদিও বর্তমানে ব্যাংকে চাকরি করাটা স্ট্যাণ্ডার্ড ক্যারিয়ার হিসেবে গন্য হয়ে থাকে তথাকথিত সুশীল সমাজে। কিন্তু আপনি যদি হারাম থেকে বাচতে চান তবে এই সেক্টর পরিহার করুন। কেননা হালাল রুজী হচ্ছে সর্ব প্রকার ইবাদতের মূল, যে হারাম রুজী উপার্জন করে তার কোন ইবাদতই কবুল হবেনা্।
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×