somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘ পিয়নের ব্যাগের ভেতর মন খারাপের দিস্তা

১৬ ই জুন, ২০১১ দুপুর ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি বাংলা গান শুনি না অনেক দিন....অনেক অনেক বছর বললেই ভাল বলা হয়। আমি আর এখন রবিন্দ্রনাথ পড়িনা, শুনিনা....অনেক বছর পরিয়ে গেল। তাই বলে কোন দিন শুনিনি বা পড়িনি তা নয়। ১১ বছর বয়সে দেশে ফিরে ফুফুর সাথে থাকতে গেলাম যখন আমার বাংলার প্রফেসর ফুফুর কারনে বুঝি না বুঝি রবিন্দ্রনাথ পড়ে শেষ করতে হলো সেই ১১ বছর বয়সে। শুধু রবিন্দ্রনাথ নয় পড়তে হয়েছে বঙ্কিম, শরৎ, বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ ও সুনীল। শেষ করতে হয়েছে শেক্সপিয়র। পড়েছি "দ্যা ইনফিবিয়ান ম্যান" সহ প্রচুর রাশান বই এর ইংরেজি ভার্শন। এগুলো শেষ করে যখন সারা তখন মাত্র আমি ১৩তে। আর এত পড়বার পরেও আমি ১৪তে গিয়ে বাংলায় বরাবর ফেল মারা শুরু করলাম। সে কথা আগেও বলেছি। তবে দুঃখ এত ছোট বেলায় এসব পড়বার কারনে এখন আবার সব ভুলে গেছি।

বাড়িতে বোনরা রবিঠাকুরের গান গাইত আর আমি নাচতাম। বড় হলাম যখন রবিঠাকুরের গান বা চমৎকার বাংলা গান যেগুলো তখন বাজতো শুনিনি তা নয়।

সুমনের গান শুনতে কাজের শেষে দৌড়াতে দৌড়াতে ১০ মিনিট দেরিতে যাদুঘরে পৌছাতেই সিড়িতে আসাদুজ্জামান নুর আমাকে দেখে বললেন দেরি করে ফেললে তো! আমিও আফসোসে ভাবি দেরি করে ফেললাম /:)

আমি এখন আর সুমনের গান শুনিনা। সুমনের গান শুনলেই এই কথাটা মনে আসে, "গান যদি হও আমার মেয়ের ঘুমিয়ে পরা মুখ.....তাকিয়ে থাকি সেটাই আমার বেঁচে থাকার সুখ"। সুমনের গান না শোনার কারনে আমি আর আফসোস করিনা এখন।

আবৃত্বি করি না এই গানটার সাথে সাথে, "তুমি সন্ধ্যার মেঘ মালা...." আমার এসব শুনতে আর ইচ্ছে করেনা।

সেদিন বন্ধু শীলার ফেসবুকে দেখলাম ও নাচচ্ছে এই গানটার সাথে, "আমি শুনেছি সেদিন তুমি সাগরের ঢেউয়ে ভেসে নীল জল দ্বিগন্ত ছুয়ে এসেছো..." আমি ওর পাতা বন্ধ করে দিয়ে অন্য পাতায় যাই। আমার আর ইচ্ছে করে না গানটা শুনতে।

আমি "ওয়ান ম্যান শো"র গন্ধ নিতে পারিনা, গভীর রাতে ঢাকার তিনচাকার ভ্যানে শুয়ে সারা শহর বেড়িয়ে আকাশ দেখতে মন চায় না আর, আমার এখন হাজি বিড়িয়ানি খেতে ইচ্ছে করেনা সে সব দিনের মতন, পূর্ণিমা দেখতে ভাল লাগে না আর এখন।

খোলা আকাশে ধুলো বিহীন বাতাসে আমি এখন শুধু প্রাণ ভরে বিশুদ্ধ নিশ্বাস নিতে চাই। তবু কি পারা যায় অনেক সময়? যে অশুদ্ধ ধুলো একবার ভেতরে ঢুকে বুকের ভেতর যে ক্ষত বানিয়ে গেছে তা কি আর এত সহজে সারে? বিশুদ্ধ বাতাস আজ প্রানে যে নিরাপদ অনুভুতি দেয় তাতে নতুন ক্ষত তৈরী হয়না বা পুরোনো ক্ষত আর বারে না তবে পুরোনো ক্ষত যে ধংস করে দিয়ে গেছে তা তো রয়েই যায়।

আমি বাংলা গান শুনিনা, শুনতে পারিনা, বাংলা গান আমাকে মন খারাপের দিস্তা এনে দেয়, এনে দেয় কুয়াশা, আর সেই সব দিস্তার ভাজে ভাজে জমে থাকা কালো কালো দিনরাত্রি গুলো আমাকে খনন করতে থাকে। সেই খনন থেকে বেড়িয়ে আসতে আমার ১০ বছর লেগেছে। আমি আর চাই না আমার মেঘ পিয়ন মন খারাপের দিস্তা নিয়ে আসুক আমার কাছে।


আমার মেঘ পিয়ন আমাকে এখন হাসি আর ভাললাগা এনে দেয়, বাঁচার আশা এনে দেয়, ভালবাসা এনে দেয় দারুন ভালবেসে। এনে দেয় আরাম চেয়ার আর মায়ায় ভড়া এক চিলতে গালিচা। এনে দেয় শীতের ভোরের মিষ্টি আলো। আর এর জন্য আমাকে একাই যেতে হয়েছে যুদ্ধে। আমি আমার জন্য যুদ্ধ করে আমাকে এনে দিয়েছি আরাম চেয়ার, গালিচা।


হাসান সাইদের মতন মানুষ দেশে সর্বত্র! এরা সর্বোচ্চো শিক্ষা নিয়ে পাপহীন ভাব চোখে মুখে মেখে সবার সামনেই চলে বেড়ায় আর কেড়ে নেয় অনেকের জীবন থেকেই রবিন্দ্রনাথ, সুমন, সুনীল, সুকান্ত, পূর্ণেন্দু, বিশুদ্ধ বাতাস, নাক, কান, কপাল, আংগুল, ঢাকার রাতের ভ্যান, ওয়ান ম্যন শো, গুচি রাশ, সকালের মিষ্টি রোদ, অরিত্র........আরো অনেক কিছু.....! এদের শাস্তি দরকার। আর কতকাল এরা এমন করে ক্ষত তৈরি করবে........আপনারা এর প্রতোরোধ করুন, রুমানাদের এনে দিন বিশুদ্ধ বাতাস। এনে দিন রোদ, অরিত্র। এনে দিন মেঘ পিয়নের ব্যাগ ভড়া শান্তুির দিস্তা।

মেঘ পিয়নের ব্যাগের ভেতর
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১২ সকাল ১০:৩৩
৪৩টি মন্তব্য ৪১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×