somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঙালীর হাইকোর্ট

১৫ ই জুন, ২০১১ বিকাল ৩:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আসসালামু আলাইকুম। দিনে দিনে যত বয়স বাড়ছে ততই ছোট বেলার স্মৃতি গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সেই চিন্তাহীন আনন্দময় শৈশব কেউ কি আর ফিরে পায় ? কুটিলতা, জটিলতা আর প্রতিযোগিতার সময়ে তাল রাখা খুবই কষ্টকর। পৈতিকতার ঙ্খলন, মূল্যবোধের পতনে সমাজে ভালো মানুষের সংখ্যা কমতে কমতে বিন্দুতে নেমে গেছে। অথচ আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য নিয়ে পৃথিবীর বুকে মাথা উচিয়ে দাড়ানো খুব একটা কঠিন কাজ ছিল না। তবে ছোট বেলায় অনেক মজার মজার ঘটনা শুনতাম। তার মধ্যে একটি ছিল “ হাই কোর্ট দেখানো ”। আমি ৬০ দশকের কথা বলছি। এক ব্যক্তি এক বিদেশীনির সাথে পেন ফ্রেন্ডশীপ গড়ে তুলে। সেই ব্যক্তিটি ছিল নিম্ন মধ্যবিত্তের শিতি সন্তান। সেই বিদেশীনি যখন তার বাসার ছবি চায় তখন সেই ব্যক্তিটি বুদ্ধি আটে। তখনকার দিনে ক্যামেরা খুব বেশী জনপ্রিয় বা সহজলভ্য ছিল না। গুটি কয়েক ষ্টুডিও ছাড়া ছবি তোলার সুযোগ ছিল না। বাজারে তখন হাইকোর্টের পোষ্টকার্ড পাওয়া যেত। সে সেই পোষ্টকার্ডটি বিদেশীনির কাছে পাঠিয়ে বলে এইটাই তার বাসা। এথেকেই কাইকোর্ট দেখানো কথাটি প্রচলিত হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কথাটির আরেকটি মাত্রা পায় তা হলো, “ কি বাঙালীকে হাইকোর্ট দেখাও নাকি ” অর্থাৎ বিদেশীনিকে হাইকোর্টের ছবিকে নিজের বাসা বলে চালিয়ে দিলেও বাঙালীকে অত সহজে ধোকা দিতে পারবে না। দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪র্থ যুগে পদার্পণ করার পরও সেই হাইকোর্ট দেখানোর প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। প্রশাসন, সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে ব্যবসা বানিজ্যে সবখানেই রাজনীতি দখল করে ফেলেছে। এখন জনগণের শেষ আশ্রয় স্থল বিচার বিভাগ রাজনীতির করাল গ্রাসে আক্রান্ত। ’৯০ এর গণ অভ্যুথানে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতন হয়। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচরে মধ্যে দিয়ে এক নতুন গণতন্ত্রের যাত্রা শুরু হয়। মনে করা হয়েছিল দেশে আর সামরিক শাসনের প্রয়োজন হবে না। বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করে জনগণের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবে। আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে কঠিন আন্দোলন গড়ে তোলে এবং সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভূক্ত করার পর আইনগত ভিত্তি পায়। সর্বশেষ অবসর প্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হবেন - এরই পরিপ্রেেিত বিচার বিভাগে রাজনীতি আনুষ্ঠানিকভাবে স্থান পায়। যে সরকার মতায় থাকে তাদের মাথায় অবসর প্রাপ্ত শেষ প্রধান বিচারপতি অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ হয়ে দাড়ায়। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উপর নির্বাচন নির্ভরশীল। ফলে নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের সাথে সাথে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মনোনিত করা এক ও অন্যতম কাজ মনে করে। ফলে কোন বিচারপতি ডবল প্রমোশন দেওয়া বা অপছন্দের বিচারপতিকে ২/৩ বার করে ডিঙ্গিয়ে প্রধান বিচারপতি করা স্বাভাবিক ঘটনা হিসাবে পরিলতি করা গেছে। মুখে বিচার বিভাগ স্বাধীন বলা হলেও সরকার বিচার বিভাগকে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কোন ধরনের চেষ্টা বাদ দেয় না। এরকম অবস্থায় কোর্টের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অবৈধ ঘোষণা করার পর মহাজোটের অন্যতম শরীক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান স্বৈরশাসক এরশাদ বিচারপতি শাহাবুদ্দিনের বিচার দাবী করে বসেছেন। বিএনপি ও তার জোট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে নেওয়ার প্রতিবাদে ৩৬ ঘন্টা হরতাল পালন করেছে। এবারের হরতালে আরেকটি চমকদার ঘটনা ঘটেছে। মোবাইল কোর্ট বসিয়ে হরতাল পালনকারীদের তাৎণিক বিচার করে এক বছর পর্যন্ত কারাদন্ড প্রদান করেছে। এতে মনে হয়েছে বিচার বিভাগকে শেষ পর্যন্ত রাস্তায় বসাতে বাধ্য করা হয়েছে। দেশের প্রতিষ্ঠিত প্রতিয্শা আইনজীবিরা এর প্রতিবাদ করেছেন এবং এর পরিণতি ভালো হবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন। ব্যারিষ্টার রফিকুল হক বাংলাদেশে স্বীকৃত (জাতির বিবেক বলা হয়ে থাকে) আইনজীবি যিনি ১/১১ এর পর অত্যন্ত সাহসের সাথে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার মামলা নিয়ে লড়েছিলেন, সেই রফিকুল হকও হতাশা প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন। মজার বিষয় হলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “ রফিকুল হক আইনটি ঠিকমত জানেন না, ”প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য কিছুদিন পূর্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিউওয়ার্কে সাংবাদিকদের প্রশ্নে সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক ফানানী বাংলাদেশের নাগরিক নয় বলে বলেছেন। আমাদের দেশের অনেক মন্ত্রী মাঝে মধ্যে এমন কথা বলেন যা একজন সুস্থ মস্তিকের বিবেকবান মানুষের পে বলা বা চিন্তা করা সম্ভব নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, উপদেষ্টা মামলা চলার সময় লিমনকে সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করেছেন। দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি চিন্তা করলে বেশ সংকিত হতে হয় আর মনে মনে চিন্তা আসে এতটা সময়, এতটা পথ পেরিয়ে এসে এখনও আমাদের ‘ হাইকোর্ট ’ দেখতে হচ্ছে যা সত্যিই বিস্ময়কর।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×