somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতিশোধ!

১৫ ই জুন, ২০১১ সকাল ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শাহেদের এক লাথীতে গেটের দরজাটা খুলে গেলো প্রচন্ড শব্দে। ডান হাতের রডটা শূন্যে ঘুরতে বা হাতে নিয়ে গেট থেকে বেরিয়েই দৌড়াতে শুরু করলো। এলাকার সরু গলিতে হাটতে থাকা ছোট ছোট ছেলে মেয়ের দল অবাক হয়ে দেখতে থাকলো এলাকার শান্ত ছেলেটির কি হয়েছে, সে এত বিক্ষুব্ধ অস্হির কেন! শাহেদের চোখ ঠিকড়ে পড়ছে প্রচন্ড এক ক্রোধ আর মুখে লেগে আছে জেগে ওঠা প্রতিহিংসা!
শাহেদ দৌড়াতে দৌড়াতে মোড়ে দাড়িয়ে থাকা টনির কলার খামচে ধরে শূন্যে ভাসিয়ে নেয় হেচকা টানে। মুদীর দোকানের ওয়ালে টনির পিঠ সজোরে আছড়ে,"মেয়ে মানুষ দেখলে মাথা ঠিক থাকে না, না?" শাহেদের চিৎকারটা হুংকারের মতোই মনে হলো। ছেলেটির চোখে বিস্ময়, ঠোট দুটো কাপছে, কাপা গলায় ডাকছে,"ঐ মনছুর, রইন্যা, আব্বাস, কই গেলি? ভুল করতাছোসরে, ছাইড়া দে আমারে!"

শাহেদ কলারটা ছাড়তেই শুকনো কালো টনির পা মাটির উপর দাড়ায়, তখনও ওয়ালে সে পিঠ ঠেকিয়ে আর চোখে মুখে জগতের আতন্ক আর বিষ্ময়। দুপা পেছায শাহেদ়, মুখে একটু হেসে এনে," আজকে তোর শেষ দিন!" এই বলে রডটা ডান পায়ে জোড়ে একটা আঘাত বসাতেই কাঠ ভাঙ্গার মতো আওয়াজ হলো, আর টনি ডানে ঝুকেই জোরে "বাবারে" বলে পড়ে গেলো! টনি পড়তে পড়তে শাহেদ ওর মাথাটা উপর একটা জোড়ে আঘাতে তরমুজের মতো ফেটে রক্ত বেরুতে লাগলো! তারপর আরো কয়েকটা আঘাত সম্পূর্ন গুড়ো না হওয়া পর্যন্ত আঘাত করতে লাগলো! ততক্ষনে রনি আর মনছুর পিছনে এসে দাড়ায়ে। কি করবে বুঝতে পারছে না, শুধু দাড়িয়ে দেখলো এরকম একটা ঘটনা।

এবার শাহেদ পিছনে ঘুরলো, রনির দিকে এভাবে তাকালো যাতে ও ওর শ্যেনদৃষ্টিতেই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। মনছুর দৌড়াতে উদ্যেত হলো!

দু'মাস আগের কথা
১.
: ভাইয়া, চা খাবি?

শাহেদ ল্যাপটপ থেকে চোখটা সরিয়ে বোনটার দিকে তাকিয়ে বললো,"কিরে, ইন্টারভিউ কেমন হলো?"
নিশা মুখ ভেংচি দিয়ে বললো,"আর ইন্টারভিউ, সবাই বলে অভিজ্ঞতা!"
শাহেদ ল্যাপটপে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে,"দিতে থাক, আর আমি চা খাবো না।জীম থেকে এসেই দুধ, ২ হালি কলা আর দুটো ডিম খেয়েছি। চা পোষাবে না!"
নিশা শাহেদের পাশে বসে,"ভাইয়া, তোকে একটা কথা বলি? তোর অফিসে দেখ না?"

শাহেদ নিশার দিকে তাকালো, আবার ল্যাপটপে চোখ ফিরিয়ে নিলো। নিশা দেখলো ওর ভাই জরুরী কোনো কাজ করছে না, কাউন্টার স্ট্রাইক খেলছে। একটা টেলিকমে ঢুকে অলটাইম বিজি। বাসায় আসলে কথা বলার টাইম নাই, গেম আর অফিসে গিয়ে যে কি করে খোদা জানে!

২.

: ভাইয়া, একটা কথা বলতাম।
শাহেদ শুয়ে আছে কানে এফএম লাগিয়ে, ওর দিকে তাকিয়ে বললো,"কালকে ৫০০ নিলি, আজকে কত?"
: ভাইয়া, টনি নামের ছেলেটাকে চিনিস?
: পরশু ওর সাথে কথা হলো। আমার সাথে হায় হ্যালো করলো। লীগের কি যেনো! ব্যাটা ট্যাম্পোস্ট্যান্ডে চাদাবাজি করে। কি হইছে?
: তেমন কিছু না। যখনই রাস্তা দিয়ে আসি, তখনই সালাম দেয়।
: সালাম দিলে উত্তর দিবি। সমস্যা কি?
: (একটু ভেবে বললো) না কিছু না।

৩.

শাহেদ অনেকক্ষন ধরে জুনিপার রাউটার টাকে মাউন্ট করার চেষ্টা করছে। লোকাল নেটওয়ার্কে বিজেপি কাজ করছে ভালো কিন্তু গেটওয়ে রাউটার পিংক করেও কোনো প্যাকেট পাওয়া যাচ্ছে না। ম্যাঙ্গোকে ফোন করা হয়েছে, বলছে ওদের এন্ড থেকে সমস্যা নেই, কিন্তু এখান থেকে পাচ্ছে না। একটু আগে মিটিং হয়েছে, শাহেদের ওপর পুরো দায়িত্ব পড়লো লিংক আপ করার। সবকিছু কাজ করছে, কিন্তু ঐ আইপিতে মাঝে মাঝে লিংকও হারিয়ে যাচ্ছে। দু'ঘন্টা ধরে ল্যাপীর সামনে বসে। ওদিকে কাউন্টার স্ট্রাইকের আজকে টুর্নামেন্টের ফাইনাল, অনলাইন ক্লানের সবাই বসে আছে।

এমন সময় ফোন। শাহেদ ফোনটা হন্ত দন্ত নিয়ে তুলে নাম দেখেই হতাশ। খুব এক্সপেক্ট করছিলো ম্যাঙ্গো থেকে একটা ফিডব্যাক পাবে, কিন্তু নিশার নাম দেখে মেজাজ খিচে গেলো।
: কিরে, এই অসময়ে?
ও পাশে কান্নার শব্দ) ভাইয়া তুই কখন আসবি?
শাহেদের মেজাজ চড়ে গেলো। একেতো এখানে লিংক ডাউন তার উপর আবার বাসার গ্যান্জ্ঞাম। এমন সময় পিছন থেকে মাসুদ এসে বললো,"ভাইয়া, খবর শুনেছেন?"

শাহেদের মাথা তখন দপদপ করছে, "ও হ্যা, মাসুদ কি খবর?"

মাসুদ হেসে বললো,"আগে বলেন সিগারেট খাওয়াবেন কিনা? শুনে আপনি হাসবেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে ওয়াসার লোকজন তার কেটে ফেলেছে। এটা ওরা কেবল ধরতে পেরেছে" এই বলেমাসুদ আরো জোরে হাসা শুরু করলো, মনে হলো সে থ্রি স্টুজেস দেখে এসেছে!

শাহেদ সামনে এসে বললো,"মাসুদ, সব কনফিগার করা, শুধু আইপি পিং করতে হবে। পারবে না? আমাকে এখন একটু যেতে হবে, বাসায় একটু প্রবলেম হয়েছে। উপরের ব্যাপারে ভেবো না, আমি ফোনে ম্যানেজ করে নেবো! কোনো প্রবলেম হলে আমাকে জানাবা। আমি টেলনেট করবো!"
: শাহেদ ভাই, সিরিয়াস কিছু? চিন্তা করবেন না। আই উইল ম্যানেজ!

শাহেদ একটা থ্যাংক্স দিয়ে দ্রুত অফিস থেকে বের হয়ে মোবাইলটা হাতে নিয়ে কিছু নাম্বার খুজতে লাগলো!

৪.

: ভাইয়া, আজকে ও আমার ওড়না ধরে টান দিয়ে খারাপ কথা বলেছে! আমরা এখানে থাকবো না। তুই নতুন বাসা দেখ!
শাহেদ কিছু বললো না, খালি দেখলো ওর বোনটা ওর বুকে জড়িয়ে ধরে কাদছে।
শাহেদ তার দুদিন পরেই মিরপুর ছেড়ে মহাখালীতে একটা বাসা ভাড়া করে। বেশ বড় ছিম ছাম।
ওর মনে হলো বেশ একটা ভালো কাজ হয়েছে। আসবার আগে একটা কাজ করেছে পরিচিত একজনকে ধরে থানায় জিডি করিয়ে এসেছে। দুদিন জেলে ছিলো দুরাত টনি জেলে ছিলো। পরে জামিন পেয়ে যায়।

৫.


ছুটির দিন শাহেদ ঘুমায়। দিন ভর ঘুমায়। কোনো গেম খেলে না, জীম ওয়ার্ক বাদ। খাওয়া টিভি দেখা আর ঘুম। এই চাকরীটা দিন দিন এতো আয়েষি করে ফেলছে যে জীম করে পোষাচ্ছে না, এ্যাবস হারিয়ে ভূড়ির উকি ঝুকি আজকাল।দৌড়ানো দরকার মাইলের পর মাইল প্রতিদিন কিন্তউ এশহরে তার উপায় নেই!

হঠাৎ বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো। শাহেদ উঠে দরজা খুলেই দেখে নীচ তলার জাহিদ।
: আরে জাহিদ কি খবর?
: (তোতলাতে তোতলাতে থাকলো জাহিদ, চোখে মুখে একটা আতন্ক) শাহেদ ভাই, নি-শা আ-পু-কে কা-রা যে-নো গা-ড়ি-তে উ-ঠি-য়ে নি-য়ে গে-ছে। ভা-ই পু-লি-শ-কে খ-ব-র দে-ন!
: হোয়াট?

শাহেদের বুকের হার্ট বিট এক লাফে ছটফট শুরু করে দিলো, মাথায় রক্ত চড়ে গেলো কিন্তু স হসাই মনে হলো, নিশাকে কারা উঠাবে ? কাকে ফোন দেবে? তানিম কে ফোন দেয়া যায়। ও ব্যাপারটা জানে,"তানিম, দোস্ত, বোনটাকে ওরা উঠিয়ে নিয়ে গেছে।"

: (ফোনের ওপাশ থেকে তানিম) কুল ডাউন শাহেদ, আমি আসছি এখনি়। তুই খবরদার বাসা থেকে বের হবি না। কোথাও যাবি না, আমি যতক্ষন না আসি!

৬.

দু সপ্তাহ পর নিশার খবর পেলো। ঢাকা মেডিকেল কলেজে বেডে ছিলো এক সপ্তাহ।বেচে গেছে এই যাত্রায়!। কিছু নাম বলে যার মধ্যে টনির নামটা ছিলো। তানিম এরেস্টও করে সবাইকে। তানিম জানায় নারী নির্যাতন আইনে জামিন পাবে না। কিন্তু দুদিন পর রিমান্ডের আবেদন করলে সেটা তো পেলোই না, উল্টো জামিনে ছাড়া পেয়ে গেলো!

নিশা বাসায় পড়ে আছে। সুস্হ কিন্তু কথা বলে না।

শাহেদ বসে আছে আর জানালা দিয়ে দেখছে একটা নারিকেল গাছ ঝুকে আছে। মাথায় অনেক ডাব, কিন্তু এতগুলো ডাব নিয়ে সে ভেঙ্গে পড়ছে না। বরংচ বাতাসে হেলে দুলে যায়!
_________________________
কিছুক্ষন ফোনটা বেজে উঠতেই শাহেদ কানে নিয়ে,"ওকি এখন এলাকায়?"
ওপাশ থেকে হ্যা সূচক কিছু জানালো!

শাহেদ জিন্সটা পড়লো। একটা সাদা শার্ট গায়ে জড়ালো। আস্তে করে দরজাটা লক করে বাইরে বেরিয়ে হাটতে থাকে। গাড়িটার দরজা খুলে একটানে মিরপুর। গাড়িটা গলির মাথায় দাড় করিয়ে রাখলো ধীর স্হির ভাবে। গলির মুখেই চলছে দুটো বিল্ডিং এর কনস্ট্রাকশন। ঢালাইয়ের জন্য সাইজ করা রড পড়ে আছে রাস্তার উপর। ওখান থেকে একটা মোটা রড হাতে নিলো শাহেদ!সান গ্লাসটা দিয়ে লাল চোখ দুটো ঢাকলো, আস্তে আস্তে করে গলির ভিতর এগিয়ে চললো টনির বাসার দিকে!
আর রডটা বাতাসে খেলাতে থাকলো। শাহেদের বাইসেপের রগটা নীল হয়ে জেগে উঠলো আর ডেল্টয়েড শার্ট টা ফেটে বের হয়ে আসতে চাইছে! মনে হলো স্বয়ং প্রমিথিউস আজ শৌর্যবীর্যে এগিয়ে চলছে একটা যুদ্ধের ঘোষনা করতে!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১৬ ভোর ৪:৪৭
৪২টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয় অংশ)

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:০৫


আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
আমাদের সদ্য খনন করা পুকুরটা বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেল। যা মাছ সেখানে ছিল, আটকানোর সুযোগ রইল না। আমি আর দুইবোন শিউলি ও হ্যাপি জালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×