somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুরগীর মাংস

১০ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৪:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে সবচেয়ে উপাদেয় যে খাবারটি পরিবেশিত হয় তা বোধহয় মুরগীর মাংস। যেদিন মুরগীর মাংস রান্না হয় সেদিনটা নিঃসন্দেহে আনন্দের দিন। বিশেষ করে পরিবারটার আণ্ডা বাচ্চাদের জন্য। বিশেষ করে যাদেরকে এখনও ‘খুব বড়’ গ্রুপে ধরা হয় না। মোটামুটি মাঝারি সাইজের হয়ে গেছে এমন সব বাচ্চাদের বায়না ধরার অধিকার অনেকটাই কম। ‘মুরগীর মাংস’ ছাড়া ভাত খাব না বললে একটা কড়া উত্তর অপেক্ষা করে থাকে, ‘এখন বড় হয়েছ। সব খেতে শিখতে হবে।’
একেবারে ছোট অবস্থায় আদেশ, উপদেশ খুব একটা কাজে দেয় না। ‘সব খেতে শিখতে হবে।‘ বলে উপকার হয়েছে এমন নজির খুব কম। ভীতি বরং কিছুটা কাজে দেয়। ‘বেশী মিষ্টি খেলে পেটে পোকা হবে’ এমন কথা অনেক সময় কাজে দেয়। হয়তো এক আধ দিন চকলেট খাওয়ার বায়না বন্ধ থাকে এই যা। তবে এই শিশুদের মুরগীর মাংস দিতে না পারার জন্য পরিবারের প্রধান নিঃসন্দেহে একটা মনঃকষ্টে ভোগেন। সামনে মাসে একটু বেশী করে মুরগী কিনে রাখবো কিংবা দুএকদিন অফিস থেকে হেঁটে বাসায় ফিরে কিছু পয়সা বাঁচানোর উদ্ভট ছক আঁকেন।
মুরগীর মাংস খাওয়ার ও একটা মজার নিয়ম আছে। মাংস গুলোর টুকরো এমন ভাবে করা হয়ে যেন একটা টুকরা দিয়েই পুরো ভাত শেষ হয়ে যায়। শিশু গ্রুপের জন্য সাধারণতঃ বরাদ্দ থাকে দুই টুকরা, যার মধ্যে অবশ্যই একটা থাকে রান। দুটি সন্তানের বেশী থাকলে শুরু হয় ছেলে ভোলানো খেলা। ‘ও ছোট, ওকে খেতে দাও’ কিংবা ‘আগের দিন তো তুমি খেয়েছো’। ‘বড় হয়ে গেছ’ বলে বড় জনকে সামলানো গেলে গৃহকর্ত্রী হাফ ছেড়ে বাঁচেন।
এরপরে শুরু হয় জ্যামিতি আর অংকের মিশ্রণ। ভাতের প্রতি লোকমায় কতটুকু করে মাংস রাখলে ভাত এবং মাংস একসঙ্গে শেষ হবে তাঁর একটা অদৃশ্য হিসেব চলতে থাকে। পুরো খাওয়ার সময় জুড়ে অবশ্য এমনটা হয় না। প্রথম কয়েকটা গ্রাসে বড় বড় মাংসের টুকরা নেয়া হয়। সে গ্রাস গুলো কেমন অমৃত মনে হয়। এরপর মাংসের টুকরো টায় মাংস কমে আসতে শুরু হলে টনক নড়ে। শুরু হয় রেশনিং। খুব ছোট টুকরা দিয়ে একটা বড় গ্রাস। আপ্রাণ চেষ্টা চলে কিভাবে ভাত শেষ হওয়ার পরেও এক টুকরো মাংস থেকে যায়। খালি মুখে, ভাত ছাড়া সেই টুকরো খাওয়ার মজাই আলাদা।
এই ফর্মুলায় সবাই চলে না। কিছু বিটকেল টাইপ শিশু থাকে। যারা জানে তাঁদের পাতে দেয়া মাংসের টুকরো শেষ হওয়ার পরে তারস্বরে একটা চিৎকার জুড়ে দিলে আরও একটা টুকরো পাওয়া যাবে। কিংবা মাংস শেষের সঙ্গে খাওয়া শেষ বললে বাকী ভাত শেষ করার জন্য আরও একটা টুকরো দেয়া হবে। সেই টুকরো হয়তো পছন্দ মাফিক হবে না। এক্ষেত্রে অবশ্য সেই শিশু উদারতা দেখাবে। প্রথমটায় রান মাংস খাওয়ার জন্য যতটা বায়না ধরেছিল, তা ধরবে না। গৃহকর্ত্রী হয়তো অবাক হয়ে লক্ষ্য করবেন তাঁর সন্তান রান ছাড়াও অন্য মাংসের টুকরা খেতে জানে।
মায়ের সেই মুগ্ধ দৃষ্টি। মুরগীর মাংস পাওয়ার জন্য সন্তানের গোগ্রাসে পুরো ভাত খেয়ে ফেলার পেছনে একটা কষ্টও থাকে। প্রতিদিন না দিতে পারার কষ্ট। মাছ দিয়ে খেতে চায় না দেখে ছেলেটার গ্রোথ ঠিক মত হচ্ছে না। কখনও হয়তো নিজের ভাগের টুকরো টা রেখে দেন। পরের দিন সন্তানকে অবাক করে দেবেন বলে। পরের দিনের ব্যঞ্জনে শাক আর মাছ দেখে যখন সন্তানটি মুখ গোমড়া করে খেতে বসবে তখন ছোট্ট একটা বাটিতে করে গতদিনের বেঁচে যাওয়া মাংসের টুকরা হাজির হবে। সন্তানের আকর্ণ বিস্তৃত হাসির চেয়ে মায়ের আনন্দ অনেকগুণ বেশী হবে।
বাড়ীর এক কোনে পড়ে থাকে বৃদ্ধ সদস্যটাকে কোন টুকরোটা দেয়া হয়? রান এর টুকরোটা খেতে ইচ্ছে করলেও উনি হয়তো কখনই মুখ ফুটে বলবেন না। ‘আমার দাদাভাইকেই দাও রান টা।’ এতে গৃহকর্ত্রীর মন রক্ষাও হবে আর বাড়ীতে আরও কিছুদিন নির্ঝঞ্ঝাটে থাকাও হবে। মোটামুটি গোছের একটা টুকরা পেলেই তিনি বর্তে যান। কিছু দাঁত অবশিষ্ট থাকলে সেগুলো দিয়েই খুব আনন্দ নিয়ে উপভোগ করেন সেই ‘মুরগীর মাংস’টা।
মুরগীর মাংসের একটা উচ্চবিত্তীয় সংস্করণ আছে। বিভিন্ন ফাস্ট ফুডের দোকানে ‘মুরগী ভাজা’ খাওয়া। সঙ্গে আলু ভাজা কিংবা কোমল পানীয়। কখনও বন্ধু বান্ধব মিলে যাওয়া কখনও প্রেমিকা সহ। প্রেমিকা এখনও হয় নি, এখন ইম্প্রেস করার চেষ্টা চলছে কিংবা পরীক্ষা পাস করার পার্টি। আধা উচ্চবিত্তের গৃহকর্ত্রীর হঠাৎ একদিন বাইরে খেতে যাওয়ার শখ। এই চলটাও খুব কম দেখা যায় না।
‘মুরগী ভাজা’ খাওয়ার এই চলটা বেশ দ্রুত প্রসার পাচ্ছে। ঢাকা শহরের প্রায় প্রতি পাড়ায় এখন ফাস্ট ফুডের দোকান। একটু নামী দামী ব্র্যান্ডের দোকান গুলো গুলশান বনানী বারিধারা ছেড়ে অন্য এলাকায় ও তাঁদের শাখা খুলছে। খদ্দেরও কম হচ্ছে না। একটা ক্রেজ তৈরি হয়ে গেছে। কেউ তাঁর বন্ধু বান্ধবদের বিদেশী ব্র্যান্ডের কোন দোকানে নিয়ে ‘মুরগী ভাজা’ খাওয়াতে না পারলে তাঁকে ‘গরীব’ তকমা দেয়া হবে। কিছু টিটকারীও হয়তো সহ্য করতে হতে পারে। কৃপণ না বলে হয়তো ‘আনকালচার্ড’ বলা হবে।
আচ্ছা, হেফাজতী সেই শিশুগুলো কতদিন পর পর মুরগীর মাংস খেতে পায়?
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×