somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"স্কুলশিক্ষক-এর মাইর" কথন

১৪ ই জুন, ২০১১ রাত ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্কুলে থাকতে স্যার এর মাইর খায় নাই এমন আদম সন্তান বঙ্গদেশে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কত রঙ্গের ঢঙ্গের মাইর যে উনারা জানতেন এখন চিন্তা করলে উনাদের সৃষ্টিশীলতায় অবাক হই!

আমার স্কুল জীবনে মাইর খাওয়া শুরু হয় শহীদ স্যার এর “স্পেশাল মাইর” খাওয়ার মধ্য দিয়ে। শুধু পড়া না পারলেই না, কোন পিচ্চি ক্লাসে কথা বললেও স্যার “স্পেশাল মাইর” দিতেন। এটা প্রয়োগ করা হত কপালে। অনামিকা আর মধ্যমা আঙ্গুলের নখ দিয়ে কপালে প্রচণ্ড জোড়ে টোকা দাওয়াটাই ছিল শহীদ স্যারের “স্পেশাল মাইর”। খাওয়ার পর মাথা ঝিন ঝিন করত।

ক্লাস টু-তে আমার জন্য গৃহশিক্ষক রাখা হয়। নাম মহসীন স্যার। উনার মাইর দেওয়ার টেকনিক অনেকটা কনভেনশনাল হলেও নতুনত্বের ছোঁয়া ছিল। পড়া না পারলে জুলফির কাছে চুল জোড়ে টান দিয়ে থপাস করে থাবড়া মারতেন। থাবড়া খাইতে খুব বেশি খারাপ লাগতো না কিন্তু জুলফির চুলে টান খাইলে ইহকাল পরকাল চক্ষের সামনে ভাইসা উঠত। স্যার আরেকটা শাস্তি দিতেন, সেটা হল আঙ্গুলের ফাঁকে কলম রেখে আঙ্গুল চাপ দাওয়া। আমার মনে হইত আঙ্গুল ভাইঙ্গা যাইব কিন্তু ভাঙ্গত না। ভাঙলেও মনে হয় এর চেয়ে কম কষ্ট পাইতাম না।

এরপর ক্লাস থ্রি তে স্কুল চেঞ্জ করলাম, স্যার চেঞ্জ হইল, স্যারদের মারার স্টাইলও চেঞ্জ হইল। ওই স্কুলে সমাজ বিজ্ঞান নিত খালেদ স্যার। স্যার দেখতে যেমন ভয়ানক তেমন মাইর দাওয়ার কায়দাও অভিনব। স্যার প্রতিদিন পড়া ধরতেন, কেউ পড়া না পারলে শাস্তি দিতেন। প্রতিদিন নতুন নতুন কায়দার শাস্তি। একদিন স্যার ঘোষণা দিলেন, যে আজকে পড়া পারবে না তাকে বাম হাত চাটতে হবে। ভাগ্যের অসীম কৃপায় সেদিন আমাকে বাম হাত চাটতে হয় নাই কিন্তু যারা পড়া পারে নাই তাদের বাঁ হাত চাটা দেখে আমার ছোট মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল।

প্রাইমারি শেষ করে হাই স্কুলে উঠলাম। এখানে ধর্ম স্যার সবগুলা ছিল কসাই। অন্য সাবজেক্ট পড়ি না পড়ি ধর্ম ঠিক পড়তাম। কিন্তু পড়লেও পারতাম না। আরবি ব্যাকরন, মুখস্ত কি আর থাকে? একদিন না পারলেই কেল্লা ফতে। বেত্রাঘাত কত প্রকার, কি কি, প্র্যাক্টিকাল নলেজ পাইসিলাম উনাদের কাছে। কেউ পড়া না পারলে ৩ মিনিট ধরে স্যারেরা তার উপর বেত্রাঘাত করতেন। আবার বলতেন স্যার মারলে বেহেস্তে যায় মানুষ। হক স্যার এর কথা না বললেই নয়। স্যার ছিল থুরথুরা বুড়া, গাল ভাঙ্গা, মুখে সাদা দাঁড়ি। যখন কাউকে মারা শুরু করতেন তখন হয়ে উঠতেন টগবগে যুবা। তখন হিন্দু ছাত্রদের দেখে হিংসা লাগতো, মনে হত ওরা কত্ত সুখি!

ক্লাস এইটে বিজ্ঞান নিতেন কালাম স্যার। স্যার এমনিতে ভালো পড়াতেন শাস্তিও কম দিতেন। একদিন স্যারের কি ভীমরতি উঠল, ক্লাসে বললেন যে পড়া পারবে না তারে চরম শাস্তি দিবেন। শাস্তি হইল বগলের সামনের মাংসপিণ্ড ধরে জোড়ে চাপ দাওয়া। পড়া ধরা শেষ, যারা পারে নাই তারা দা৺ড়ায় আছে। স্যার এইবার শুরু করলেন শাস্তি পর্ব। আমিও দাঁড়ায় আছি, পড়া পারি নাই। স্যার দাঁড়ানো ছেলের সামনে গিয়ে বদল চাপ দিচ্ছে আর ছেলেটা চিৎকার দিয়ে উঠছে। আমি ভাবলাম তেমন ব্যথা লাগে না, পোলাপাইন ওভাররিয়াক্ট করতাছে। কিন্তু যখন আমার উপর প্রয়োগ করল আমার মনে হইল আমি দম বন্ধ হয়ে মারা যাইতাছি।

আমাদের সবারই ছেলেবেলার সুন্দর স্মৃতির সাথে এমন বেদনাদায়ক কিছু স্মৃতি মিশে আছে। যেগুলো না থাকলে হয়ত ছেলেবেলাটা পারফেক্ট হত। আমি আবার আমার সেই ছোটবেলায় ফিরে যেতে চাই যদি না সেখানে কোন শিক্ষক রূপি কসাই থাকে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×