somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

‘চাকরি চাই দিতে হবে’...গেদু চাচাকে লেখা একজন চাকরি প্রত্যাশির আর্তনাদ।

১২ ই জুন, ২০১১ দুপুর ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চাচা,
আমার নিজেরি শান্তি নাই তাই আপনাকে আর সালাম দিলাম না। পকেটে আছে মাত্র ১০০টাকা...যা দিয়ে আমাকে এই মাসের পুরাটা সময় পার করতে হবে। আজকাল সকালের নাস্তা করিনা...একবারে দুপুরে ভাত খাই...রাতে ভাত খেয়ে দুই গ্লাস পানি এবং সাথে সাথে ঘুমাতে চলে যাই।আমি জেগে থাকলেই ক্ষুধা লাগে...কিন্তু খাব কি?চাচা,আমাকে একটা চাকরি দিতে পারেন?...চাকরি চাচ্ছি আমার বেলা বোসের জন্যে না...ও আগেই চলে গেছে...চাকরি চাচ্ছি আমার ঘরে থাকা ছোট্ট বোনটার পরীক্ষার ফি দিব তাই...মা কে একটা শাড়ি কিনে দেব তাই।চাচা জানেন...আমার ছোট বোন টা খুব বুদ্ধিমতি;ওকে আমি বেকুবের মত প্রশ্ন করেছিলাম,‘তোর কি জামা লাগবে?...বোন আমার,ভাইয়ের কষ্ট না বাড়িয়ে বলে...,‘আমি তোর মত হাড় কিপ্টা?...আমার একই রংয়ের অনেক পোষাক’।আসলে ওর একটাই পোষাক খুব যত্ন নিয়ে পরে।মা আর কিছু বলেন না আমাকে।।শুধই দোয়া করে যান...কবে মিলবে চাকরি...।

চাচা,
বাংলাদেশের এই বেকার অথচ তীব্র চাকরি প্রত্যাশিকে কেউ চিনল না অথচ চিনে ফেল্ল একজন মুচি দাদা।একটা ইন্টারভিউ দিতে যাব...মেস থেকে বের হয়েছি...দুই পা না হাটতেই জুতার তলা খুলে অন্যদিকে হাটা শুরু করল।তাড়াতাড়ি করে তলাটা হাতে নিয়ে গেলাম মুচি দাদার কাছে...তলাটা লাগিয়ে দিয়ে বল্লেন চাকরি পাইলে টাকা দিতে...দেশের সেরা একটা সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্ষ্ট ক্লাস প্রাপ্ত এই আমি একটা ক্ষুদ্র পেশাজীবির ভালোবাসার কাছে হেরে গেলাম। গেটের বাইরে হাজারো আমার মত মানুষ...সবার চাই চাকরি...গেটের দারোয়ান ভাই ও এখন আমাদের কাছে অন্য রকম গুরুত্বপুর্ণ মানুষ...অবাক হলাম একজন ব্যাচেলর ডিগ্রী প্রাপ্ত মানুষ চাকরির জন্যে তাকে বলছে...‘স্যার, কয়জন নেবে জানেন কিছু?’যেই লোকটা নিজেও জানেনা হয়ত কি চাকরির জন্যে সে এখানে আসছে।আচ্ছা চাচা,দেশের আনাচে কানাচে আমার মত কত মানুষ আছে বলতে পারেন?কি আমাদের পাপ?কেন এত মানসিক যন্তনা নিয়ে দিন যাপন করছি?মাঝে মাঝে মনে হয় মাছ কাটা বটি টা নিয়ে রাতের আঁধারে মাঝ রাস্তায় কোন প্রাইভেট গাড়িকে রুখে দেই...যদি পেয়ে যাই কোটি টাকা...।

চাচা,
বড় অদ্ভুত আমাদের প্রার্থী বাছাই পদ্গতি।২৮-তম বিসিএস প্রিলিমিনারী পরীক্ষা...রাত দিন সমান করে গেলাম পরীক্ষা দিতে...প্রশ্ন পত্র হাতে নিয়ে দেখি ১০০টা প্রশ্নই ইংরেজিতে করা...ব্যাপারটা এমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম সাল কবে(উদাহরন দিচ্ছি শুধু)...সেটাও ইংরেজিতে করা হয়েছে।আমার প্রশ্ন চাচা,...তাহলে সিলেবাসে বল্লি কেন বাংলা-ইন্রেজি-অংক?...যেই প্রশ্ন বাংলায় দেখে দ্রুত উত্তর দেয়া সম্ভব ঠিক সেই প্রশ্ন ইংরেজি দেখে কি একই সময় উত্তর দেয়া সম্ভব? পরীক্ষাতে ভাষার মাধ্যম টা কি হবে কেন একজন পরিক্ষার্থী আগেই জানবেন না? যাইহোক লোক মুখে শুনি পরম নীতিবান পিএসসি প্রধাণ সাদত হোসেন স্যারের মেয়ে সেই দুর্যোগের সময় ফরেন এফেয়ার্সে চাকরি পেয়ে গেছেন...আর আমি আমার প্রয়াত আব্বাজানের উপর রাগ আটকাতে পারিনা।

চাচা,
বড় আজব এই দেশ।আমরা এস এস সি পর্যন্ত সর্বশেষ জ্যামিতি,পাটি গণিত,শতকরা বা অন্যান্য অংক করেছি...কিন্তু আজব শিক্ষা ব্যাবস্থার কল্যানে বাকি ১০-১২ বছর ছুঁয়েও দেখতে পারিনাই(যারা প্রাইভেট টিউশনি করাতে পারেন তাদের কথা আলাদা...কিন্তু সবাই এই সুযোগটা পান না)...এখন প্রশ্ন হলো চাচা,কেন আমাকে কোন সময় না দিয়েই সেই ১০-১২ বছরের পুরাণ অংক করে চাকরি পেতে হবে?কেন জানতে হবে দেশের ইতিহাস?ইতিহাস কি মুখস্তের জিনিষ নাকি মনের ইচ্ছা নিয়ে জানার জিনিষ?আচ্ছা চাচা,একজন ডাক্তারি পড়া ছেলে-মেয়ের জন্যে সম্রাট আকবরের জন্ম সাল জানাটা কতটা জরুরি? আমার মাথায় এটা ঢুকেনা চাচা...জানিনা আমাদের মাথা মোটা নীতিনির্ধারকরা কি ভাবেন।শুনলাম পি এস সির কিছু দন্ডমুন্ড কর্তাব্যাক্তিরা নাকি দেশের টাকায় বাইশ টা দেশ ঘুরে আসছেন...কিভাবে চাকরির রিক্রুটমেন্ট প্রসেস পালটানো যায়...আজব লাগে...একটা দেশ স্বাধীন হবার ৪০ বছর পর এই চিন্তা?

চাচা,
ব্যাংক এর সিনিয়র অফিসার পদে পরীক্ষা দিতে গেলাম...সেখানে অনেক গুলা এন্টোনিম-সিনোনিম দিলো...যা আমি কোন কালে চোখেও দেখিনাই...শতকরার অংক করলাম ইংলিশ কোশ্চেন পড়ে।চাচা, বারো বছর আগে বাংলায় পাটি গণিত,শতকরা আরো নানা অংক করেছিলাম...সেই আমি বারো...বছর পরে কিভাবে তার উত্তর দেব ইংলিশে? কোন অধিকারে আমাকে এমন বঞ্চিত করা?আমি না হয় ইংলিশ মিডিয়ামে অনার্স করেছি কিন্তু যারা বাংলা মিডিয়ামে পড়েছে তাদের কি হবে?এটাকি তা হলে বাদ দেবার জন্যে পরীক্ষা নেয়া?চাচা, যদি বহির্বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে এই ব্যাবস্থা তাহলে আমাদের প্রস্তুতির কেন সময় দেয়া হয়না?আমরা তো অনার্স করেই দৌড় দিতে থাকি চাকরির পেছনে... রক্তপানি করা হাজার হাজার টাকা দিয়ে।


চাচা,

কোন ক্রমে একটা জায়গায় ভাইভা পর্যন্ত গেছিলাম...তো সেই বোর্ডে ছিলেন ষাটোর্ধ কিছু মানুষ...যারা আমাকে দেখেই বল্লেন..., ‘আপনার অনার্সে বিষয় কি ছিলো?...আমি উত্তর দিলাম, ‘কৃষি’...উনারা হো হো করে হাসি দিয়ে বল্লেন কৃষি সেক্টরের মানুষ তো আপনি এখানে কি করবেন? আপনাকে নিয়ে আমরা কি করব?...উনাদের হাবভাব দেখে মনে মাঠের গরু এই আমি ভুল করে ভাইভা দিতে আসছি।আমি বল্লাম, ‘স্যার, বিজ্ঞাপনের কোথাও লেখা ছিলো না কৃষিতে পড়া একজন ছাত্র বা ছাত্রী এখানে আবেদন করতে পারবে না...উনারা বলে ফেললেন ‘কমন সেন্স থেকে আবেদন করতেন’।যাইহোক শুরু হলো আমাকে নিয়ে মশকরার খেলা...আমাকে বল্লেন, ‘বলেন,আপনি কিভাবে আমাদের এখানে সেবা দিবেন?...আমি আমার যুক্তি থেকে বুঝালাম।এবার উনারা বল্লেন আপনি তো এখানে থাকবেন না...আমাদের এমন কাউকে দরকার...যার চাকরি চাইই চাই।আমি চেয়ার ছেড়ে এবার উঠে দাড়ালাম এবং বল্লাম , ‘ঠিক আছে স্যার,আমার মাথার চুল হালকা হয়ে টাক পরে গেলে আমি আসব...উনারা আমার দিকে হা করে তাকায় থাকলেন!!!!...চাচা, এইসুত্রে একটা ঘটনা না বল্লেই না...ব্যাঙ্কের ড্রাফট করতে হবে...অগ্রণী ব্যাংকের কোন একটা শাখায় সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত একজনের সামনে এক ঘন্টা বসে আছি...আর উনি ব্যার্থ চেষ্টা করে যাচ্ছেন ড্রাফটে কি লেখবেন...তাই ভেবে।একজন বয়স্ক লোক এসে সেই যাত্রায় উনাকে বাঁচালেন।আমি কাজ শেষ হলে বল্লাম , ‘ভাইয়া,কিছু মনে করবেন্না...অনার্স কোন সাবজ়েক্ট দিয়ে করেছেন?’...উনি আমাকে চমকে দিয়ে বল্লেন ‘রসায়ন’।চাচা, যেই দেশে রসায়নের ছাত্র-ছাত্রী ব্যাংকের কাজ করে...তাহলে ফিনাস্ন ব্যংকিঙ্গের ছাত্র-ছাত্রী কি রাসায়নিক বস্তু নিয়ে গভেষণা করতেছে?দেশত উন্নয়নের তোড়ে ভাসবে না চাচা,রিতিমত উড়ে যাবে।

চাচা,
জিবনে কোথাও কোঠার সুবিধা নিতে পারলাম না...কারণ আমার ঐ অস্ত্রটা নাই।অস্ত্র বল্লাম রাগ করবেন্না যেন।আজকাল কি হচ্ছে আপনি সবই জানেন।চাচা, আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধ করেন্নি...আবার রাজাকারো ছিলেন্না...তাহলে আমি কেন দেশে থেকে আর সবার মত আলাদা?আমার দাদা যদি দেশ স্বাধীনের জন্যে যুদ্ধ করে থাকে তো আমি কেন তার সুবিধা পাব?না পাইলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আলাদা সুযোগ...নাই পাইলাম চাকরিতে তো আমি কি বাংলাদেশি চাচা?আমার কি দেশের সচেতন নাগরীক হিসেবে কর দেয়া উচিত?চাচা, বিশ্বের কোথাও তো এমনটা শুনিনাই...তাইলে আজকে কেন দেশে এই বাণিজ্য?শুন্তেছি আগামি ৩১তম বি সি এস পরীক্ষা নাকি শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্যে আর মহিলা কোঠার জন্যে...চাচা, আমি মেয়েও না আবার মুক্তিযোদ্ধাও না...তাইলে আমি কি জারজ?জারজ তো তারেই বলে যার কোন জন্মের কোন স্বীকৃতি নাই...আমার যখন সেই বাংলাদেশি হবারই স্বীকৃতি নাই তাইলে আমি জারজ?

চাচা,
যখন মনে ছিলো দেশকে সেবা দেব...রক্ত গরম জান প্রাণ দিয়ে কাজ করব...পারলাম না।কারো কাছে মনে হলো না আমি তার অফিসে কাজ করতে পারি।আর এখন আমার চামড়া কুচকে যাচ্ছে...চুল পেকে সারা...ঠিকই আমি বুঝতে পারছি বয়স আমাকে অনেক কঠিন কাজে বাধা দিচ্ছে...এখন হয়ত চাকরি পাব।আমি বয়সে বৃদ্ধ...কাজে অলস...আমার দ্বারা যেই ব্যক্তি সেবা পাবে তারো সময় নষ্ট হবে...সব কিছুতেই দেরি হবে...এভাবেই বাংলাদেশ পিছিয়ে আসছে...পিছিয়ে যাবে।ভালো থাকবেন চাচা।

‘চাকরি চাই দিতে হবে’...গেদু চাচাকে লেখা একজন চাকরি প্রত্যাশির আর্তনাদ।
৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরূপের সাথে হলো দেখা

লিখেছেন রোকসানা লেইস, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৫



আট এপ্রিলের পর দশ মে আরো একটা প্রাকৃতিক আইকন বিষয় ঘটে গেলো আমার জীবনে এবছর। এমন দারুণ একটা বিষয়ের সাক্ষী হয়ে যাবো ঘরে বসে থেকে ভেবেছি অনেকবার। কিন্তু স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×