সাভারে ভবন ধসের সপ্তদশ দিনে মাথায় ধ্বংসস্তূপ থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে রেশমা বেগম নামে এক পোশাক শ্রমিককে।
Published : 10 May 2013, 10:30 AM
শুক্রবার বিকালে উদ্ধারের পরপরই তাকে সাভারের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ১৯ বছর বয়সী এই তরুণী আশঙ্কামুক্ত।
উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়া সেনাবাহিনীর মেজর মোয়াজ্জেম জানান, বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে দ্বিতীয় তলা ও বেইজমেন্টের মাঝের অংশের কংক্রিটের স্তূপ সরানোর সময় গোঙানির শব্দ পান তারা।
সঙ্গে সঙ্গে ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার বন্ধ করে আটকে থাকা মানুষটির সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। জানতে পারেন, ১৭ দিন ধরে ভেতরে আটকা পড়ে থাকা মেয়েটির নাম রেশমা।
এ খবর পেয়েই সাভারের জিওসিসহ উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপে ছুটে যান। রেশমার জন্য খাবার, পানি ও অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়।
একটি অ্যাম্বুলেন্স ও স্ট্রেচারও নিয়ে আসা হয় সেখানে। এ সময় উপস্থিত অনেককেই রেশমার জন্য প্রার্থনা করতে দেখা যায়।
বিকাল ৪টা ২৬ মিনিটে রেশমাকে নিরাপদে বের করে নিয়ে আসা হলে উপস্থিত সবাই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। অনেকেই এ ঘটনাকে অবিস্মরণীয় বলে উল্লেখ করেন।
অ্যাম্বুলেন্সে করে রেশমাকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।
এর আগে দক্ষিণ কোরিয়ায় স্যামপোং ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ধসের ১৭ দিন পর পার্ক সেউং হায়ুন নামে ১৯ বছরের এক কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়েছিল। ১৯৯৫ সালের ওই ঘটনায় মারা যায় ৫০২ জন।
মেজর মোয়াজ্জেম জানান, বেজমেন্ট খোঁড়ার সময় হঠাৎ ওয়রেন্ট অফিসার রাজ্জাক একটি পাইপ নাড়াতে দেখতে পান। কাছে গিয়ে গর্ত দিয়ে কাছে গেলে রেশমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
পরে রাজ্জাক জানান, একটি গর্ত করা হলে সেখান দিয়ে তিনি দেখতে পান কেউ একজন একটি ছোট পাইপ নাড়ছে। তিনি আওয়াজ দিলে মেয়েটি চিৎকার করে বলে উঠে, “স্যার আমাকে বাঁচান।
এ সময় ওই সেনাসদস্য কোনো খাবার বা পানি আছে খেয়েছে কি না জানতে চাইলে রেশমা জানান, মেঝেয় পড়ে থাকা পানি ও তার সহকর্মীদের ফেলে যাওয়া খাবারে ১৫ দিন পর্যন্ত চলেছেন। তবে গত দু’দিন তিনি অভুক্ত অবস্থায় আছেন।
এরপর তাকে গর্ত দিয়ে পানি ও খাবার দেয়া হয়। উদ্ধারের পর রেশমা সম্পূর্ণ অক্ষত থাকলেও তাকে দুর্বল দেখাচ্ছিল।
রাজ্জাক জানান, ধসের সময় রেশমা রানা প্লাজার তৃতীয় তলায় ছিলেন।
উদ্ধার অভিযানে থাকা লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইমরান বলেন, “সৌভাগ্যক্রমে সেখানে একটি ‘ক্যাভিটি’ ছিল, যার কারণে অক্সিজেনের প্রবাহ ছিল। ভেতরে ভাগ্যবান আর কেউ আছেন কি না তা আমরা খুঁজে দেখব।”
গত ২৪ এপ্রিল সকালে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন নয় তলা রানা প্লাজা ধসে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে সেনাবাহিনী, ফায়ার ব্রিগেড, রেড ক্রিসেন্টসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার অভিযান শুরু করেন।
উদ্ধার কার্যক্রম শুরুর ১১০ ঘণ্টা পর গত ২৮ এপ্রিল জীবিত কাউকে উদ্ধারের আশা ছেড়ে দিয়ে ভারী যন্ত্রপাতি দিয়ে ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ শুরুর ঘোষণা দেন অভিযানের নেতৃত্বে থাকা সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশনের অধিনায়ক মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সোহরাওয়ার্দী।
সেদিন পর্যন্ত ৩৩৭ জনের লাশ উদ্ধার করা হলেও ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে অভিযান শুরুর পর শুক্রবার নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেছে।