মামার হাত থেকে রঙ পেন্সিল পেয়ে খুশির চোটে লাফ দিয়ে ওঠে তানিম। কতদিনের চাওয়া পূর্ণ হলো আজ। মেলা থেকে দুই টাকা দিয়ে এক তা কাগজ কিনে রেখেছিল আগেই। কিন্তু কাগজের রং বড্ড বেশি সাদামাটা লাগে তার কাছে। তাই সেই কবে রঙের আবদার করে রেখেছিল মামার কাছে!
পাশের বাড়ির নাহিদদের ভয় পায় সে। কাঁচের গুড়ি আর গাবের আঠা দিয়ে কড়া মানজা দেয় তারা। এই মানজা একদমই পছন্দ না তানিমের, কাটা খেলায় একবিন্দুও আগ্রহ নেই তার। নিরীহ সাদা সূতোই তার ভরসা।
বন্ধু রাহাতকে নিয়ে কাজে হাত দিয়েছে তানিম। তল্লাবাঁশ চাঁছতে চাঁছতে সে মামাকে জিজ্ঞেস, “কাটা ঘুড়িগুলো কোথায় যায় মামা?” মামা কোন উত্তর না দিয়েই হেসে চলে যায়। তবে মামা তাকে শিখিয়েছে, ঘুড়ির আসল জিনিস হচ্ছে ধনুক, তাই খুব যত্ন নিয়ে চাঁছতে হয়।
বিকেলে দুই বন্ধু ঘুড়ি নাটাই নিয়ে বের হয় স্কুলের মাঠে। আজ বেশ ভালো বাতাস হচ্ছে। আকাশে ঘুড়ির মেলা বসে গেছে। রাহাত দৌড়ে গিয়ে উপরে ছুড়ে দেয় ঘুড়ি, তানিমের হাতে নাটাই। মেঘের কাছাকাছি যেতে সময় লাগে না ঘুড়িটার।
হঠাৎ কোথা থেকে এক দস্যি ঘুড়ি এসে হাজির। নাহিদের ঘুড়ি। গায়ে পড়ে ঝগড়া শুরুর মতো গোত্তা খেতে খেতে এগিয়ে আসে তানিমের ঘুড়ির দিকে। সরিয়ে আনার আগেই ফোঁস করে নেমে আসে নিরীহ সুতোর উপরে। মুহুর্তে ঘ্যাচ করে কেটে যায়। হাওয়ার টানে দোল খেতে খেতে ঘুড়ি চলে যেতে থাকে উত্তর আকাশের পানে।
দৌড়াতে থাকে তানিম। কাটাঘুড়ি ধরবে বলে...
****
বজ্রপাতের বাজখাঁই আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় তানিমের। মোবাইলে সময় দেখে নেয়, বিকাল ৪টা ২৩ মিনিট, ৩টি মিস্ড্ কল। মোবাইল সাইলেন্ট করে ঘুমানোর অভ্যাস তার।
সাধারণত ঘুম ভাঙার কিছুক্ষণের মধ্যেই সে স্বপ্নের অর্ধেকটা ভুলে যায়। কিন্তু প্রায় বিশ বছর আগের শৈশবের স্মৃতিগুলো তার কাছে মনে হতে থাকে এইমাত্র ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা। কয়েক মুহূর্ত পায়চারি করে সে। উদাসভঙ্গিতে তাকায় উত্তর আকাশের পানে। কিন্তু সেখানে কালো মেঘ ছাড়া আর কিছু দেখতে পায় না।