শিল্পী ভাব প্রায় সব মানুষেরই একটা সহজাত প্রবৃত্তি। তাইতো আমাদের বাসে-ক্লাসে, আড্ডায়, অথবা পরীক্ষার হলে চেতন অথবা অবচেতন মনে কিছু এঁকে ফেলাটা অস্বাভাবিক গণ্য করা যায় না। এইসব ফালতু এবং নিষ্পাপ আঁকিয়েদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ যে বিষয় সেটা হলোঃ শুরুতে এঁরা বেশিরভাগই "ফুল" অথবা "পাখি" দিয়ে অঙ্কন কার্য শুরু করেন। ইহা মানুষের মনের একটা স্বতস্ফুর্ত প্রকাশ। "ফুল" পবিত্রতা অথবা কমলতার প্রতীক আর "পাখি" মানুষের স্বাধীনচেতা স্বভাব প্রকাশের দাবী করে আসছে যূগ যূগ ধরে। আমি কাক আঁকতেই বেশি পছন্দ করতাম, তবে বিফলতার হারটা একটু বেশিই লক্ষ্য করা গেছে। কাক আঁকতে গিয়ে গাধা-ঘোড়া সদৃশ কিছু একটা হয়েছে কিনা ভেবে দেখার অবকাশ থেকে যেত।
শিক্ষাক্ষেত্রে আঁকা-আঁকি কি দিয়ে শুরু হয় সে বিষয়ে আমি বিজ্ঞ (বিশেষভাবে অজ্ঞ)। তবে শেষের দিকে অথবা সাফল্যের ছোঁয়া যারা পেয়েছেন তাদের মূল আকর্ষন হচ্ছে নারী। ভাবটা এমন যে, নারীর শরীরের গঠন সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। বিগত ৭ বছর ধরে যে সুপুরুষ বিরামহীনভাবে এবং বিশেষ সাফল্যের সহিত সন্তান উৎপাদনের ধারা বজায় রেখে চলেছেন সেই কীর্তিমান পুরুষকেও তাঁরা নারীর কোন্ ভাঁজ, কোন্ উপতক্যা, এবং কোন্ গিরিষ শৃঙ্গ বিশেষ উপাদেয় হতে পারে সেই সন্ধান দিয়ে থাকেন। অনেক শিল্পী-সাহিত্যিক আবার নারীর শরীরের ভাঁজের ফাঁকে অথবা বিশেষ কোন গুপ্তস্থানে ঈশ্বরের সন্ধানও পেয়েছেন। মানুষ খেকো বাঘকে নরমাংসের স্বাদ বুঝানোর মত বাৎসল্য এইসব আঁকিয়ে বা সাহিত্যিকদের মধ্যে প্রকটভাবে লক্ষ্য করা যায়। হাজার বছরের পুরনো চিত্র বা ভাস্কর্য দিয়ে যখন সভ্যতার বিবর্তন বোঝানো হয় তখনও দেখা যায় উহার সবই উল্লঙ্গ। এতে সভ্যতার উল্লঙ্গতা বা উল্লঙ্গতার সভ্যতা দুই-ই বূঝার সক্ষমতা যে অনেকেরই নাই তা আন্দাজ হয়।
আমাদের উপমহাদেশের প্রখ্যাত শিল্পী মকবুল ফিদা হুসেন একটু বেশিই এগিয়ে গেছেন উল্লঙ্গতার ক্ষেত্রে। তিনি খোদ দেব-দেবীকেই উল্লঙ্গ করে ছেড়েছেন। ফলশ্রুতিতে তার চার বছর ধরে হিন্দু মৌলবাদীদের হুমকি এবং স্বেচ্ছায় নির্বাসন শেষে কাতারের নাগরিকত্বলাভ।
সৌজন্যেঃ হুমায়ুন_কবির_হাকিম
ধন্যবাদ সবাইকে।