somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বাজেট পেশ এবং বাজেট ঘাটতি

০৯ ই জুন, ২০১১ সকাল ১১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা ফিল্ম ইনস্টিটিউট থেকে কোর্স শেষ করেছি। নিজের মধ্যে পরিচালক ভাব ঢুকে গেছে। কিন্তু কেউ ডাকছেন না। টিভি চ্যানেলে যাচ্ছি। সেখানে মামা খালুওয়ালারা পকেটে বলপেন আর প্যান্ট ইন করে ঘুরে। দেখে বোঝা যায়, সদ্য গ্রাম থেকে এসে চাকরিতে জয়েন করেছে। তাদের কাছে গেলে বলে স্ক্রিপ্ট কি জিনিস চিনি না। সিডি নিয়ে আসুন। জমা দিন, আর মালপানি ছাড়ুন। ব্যবস্থা করব।
অনেক দেনদরবার করে সিদ্ধান্ত নিলাম নাটক একটা বানিয়ে দেখাব। আমাদের মধ্যে ফরহাদ ভাই টাকা-পয়সাওয়ালা মানুষ। শেয়ার মার্কেটে ভালো ইনভেস্ট আছে। তাছাড়া নাটক-সিনেমার প্রতি তার আলাদা দুর্বলতা আছে। ঘরভর্তি বাংলা ছবির সিডি। তাকে অনেক বোঝালাম। এক শর্তে রাজি হলেন তিনি। তাকে নায়ক বানাতে হবে। ফরহাদ ভাই চিকন মানুষ। তাছাড়া চেহারার মাঝে বলদ বলদ ভাব আছে। বলদ টাইপের স্বামী মেয়েদের নাকি পছন্দ! তাহলে তিনি হিট নায়ক হতে সমস্যা কি। কথা বলেন হেলেদুলে। আমরা রাজি হলাম। কারণ হিমেশ রেশমাইয়্যা নিজেই একজন সাইলেন্স প্রডিউসার। তাছাড়া ফরহাদ ভাই আমাদের পাড়ার হামিদাকে ভালোবাসে। তার রবিউল বডির কারণে হামিদা তাকে পাত্তা দিচ্ছে না। আমরা হামিদাকে অনেক বুঝিয়েছি। কাজ হয় না। এবার তিনি হামিদাকে দেখিয়ে দেবেন। আমাকে বললেন বাজেট তৈরি করে দিতে। সারারাত খেটে বাজেট তৈরি করলাম। দু’দিন অনেক কাটাকাটির পর বাজেট এক লাখ বিশ হাজার টাকায় এসে ঠেকল। আর এক্সট্রা খরচ সঙ্গে পাঁচ হাজার। ফরহাদ ভাই শেয়ার বেচে টাকা ম্যানেজ করে ফেললেন।
নাটকের শুটিং হবে। কীভাবে শুরু করব বুঝতে পারছি না। একজন খল অভিনেতাকে ধরলাম। তার নামটি বললে সবাই চিনে ফেলবেন। ধরুন তার নাম বশির খান। বশির ভাই নিজ কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিলেন সব ব্যবস্থার। শুটিং কক্সবাজারে হবে। প্রথম তাকে নিয়ে টিকিট কাটতে গেলাম। বশির ভাই বললেন, আর্টিস্টের জন্য এসি বাসের টিকিট কাট। আর স্টাফরা আসবে নন এসি বাসে।
—সবাই এক সঙ্গে যাই।
সবাই এসি বাসে গেলে ভিআইপির মর্যাদা থাকবে? আমরা আর্টিস্টরা হলাম ভিআইপি। আমাদের এসি বাসের ব্যবস্থা কর। নয়তো দেখবে নায়িকা যেতে চাইবে না। বশির ভাই, নায়িকা ও তার দুই বান্ধবীসহ এসি বাসে চড়ে চলে গেলেন। আমরা টাকা বাঁচিয়ে কম টাকার টিকিটের গাড়িতে উঠলাম।
হোটেলেও ভিআইপিদের জন্য এসি রুম। আর আমরা নন এসি। ফরহাদ ভাইকে চাইলাম ভিআইপির মর্যাদা দিতে। তিনি খরচে কোটেশন দেখে ভয়ে অস্থির। তিনি পারলে হোটেলের বারান্দায় থাকেন।
বশির ভাই আমাকে ডেকে বললেন, কক্সবাজার এসেছি কি নোনা পানি খাইতে?
—আমি মিনারেল ওয়াটারের ব্যবস্থা করছি।
—তুই পানি আনতে তিন হাজার টাকা দে।
—এখানে মিনারেল ওয়াটারের এত দাম!
—এই লাইনে আসছ জান না। পাগলা পানি ছাড়া এই লাইন অচল।
বশির ভাই দু’বোতল পাগলা পানি নিয়ে নায়িকার রুমে ঢুকলেন। আর বের হচ্ছেন না। তাকে রিকয়েস্ট করেও লাভ হলো না।
আমি হলাম বই পড়া ডিরেক্টর। কোথাও পাইনি। পাগলা পানি খেয়ে শুটিং করতে হবে। নায়িকার এক বান্ধবী আমাকে একটু পরপর বলে চলেন সাগর থেকে গোসল করে আসি। আপনি পেরেশানির মধ্যে আছেন। মাথা ঠাণ্ডা করেন। আমার পেরেশানি ধরতে পারল মেকআপম্যান আব্বাস ভাই। তিনি বললেন, যান মাথা ঠাণ্ডা করে আসেন। আমি ডিরেকশন দিই। আমি একটা রিকশা নিয়ে একজন নায়িকাসহ চলে গেলাম সাগরের দিকে।
মেকআপম্যান আব্বাস ভাইয়ের ডিরেকশনে শুটিং চলছে। তিনি গুণী মানুষ, চালিয়ে যাচ্ছেন। ফরহাদ ভাই অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছে।
মাঝরাতে নতুন নাটক শুরু হলো। প্রোডাকশন বয় আর সহকারী ক্যামেরাম্যান পাশাপাশি রুমে শুয়েছে। তাদের টয়লেট একটা। এই টয়লেট নিয়ে দুই দলের মধ্যে শুরু হলো মারামারি। মারামারি করে হোটেলের আসবাবপত্র ভাংচুর করেছে নির্বিচারে। আতঙ্কিত লোকজন হোটেল ছেড়ে পালাল। পুলিশ এলো। রুম তল্লাশি। শেষে ৬ জনকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেল থানায়। শুটিং বন্ধ। আমরা থানায় গিয়ে হাতে-পায়ে ধরে ক্ষতিপূরণ দিয়ে ছাড়িয়ে আনলাম। যেখানে এক্সট্রা খরচ ধরেছিলাম ৫ হাজার টাকা, শুটিং শেষে দেখি ৭৫ হাজার টাকায় ঠেকেছে।
ঢাকা শেয়ারবাজার শুয়ে পড়েছে। ফরহাদ ভাই অলরেডি নিঃস্ব হয়ে গেছেন। টাকার অভাবে এডিটিং করাতে পারছি না। ফরহাদ ভাই থামবার পাত্র না। তিনি চাচার বাসায় থাকেন। চাচার কাছ থেকে আরও ৩৫ হাজার টাকা ধার নিলেন। চাচাকে কথা দিলেন, নাটক অনএয়ার হলেই তার টাকা ফেরত দেবেন। এখন নাটক নিয়ে আমরা সমানে বিভিন্ন চ্যানেলে দৌড়াচ্ছি। চ্যানেলগুলো আমাদের যা টাকা দিতে যাচ্ছে তা দিয়ে নাটক বানানো তো দূরের কথা, পাগলা পানির দামও উঠবে না।


কৃতজ্ঞতায়ঃ আমার দেশ
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বর্গের নন্দনকাননের শ্বেতশুভ্র ফুল কুর্চি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৭


কুর্চি
অন্যান্য ও আঞ্চলিক নাম : কুরচি, কুড়চী, কূটজ, কোটী, ইন্দ্রযব, ইন্দ্রজৌ, বৎসক, বৃক্ষক, কলিঙ্গ, প্রাবৃষ্য, শক্রিভুরুহ, শত্রুপাদপ, সংগ্রাহী, পান্ডুরদ্রুম, মহাগন্ধ, মল্লিকাপুষ্প, গিরিমল্লিকা।
Common Name : Bitter Oleander, Easter Tree, Connessi Bark,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচলের (সচলায়তন ব্লগ ) অচল হয়ে যাওয়াটই স্বাভাবিক

লিখেছেন সোনাগাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬



যেকোন ব্লগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর, একটি ভয়ংকর খারাপ খবর; ইহা দেশের লেখকদের অদক্ষতা, অপ্রয়োজনীয় ও নীচু মানের লেখার সরাসরি প্রমাণ।

সচল নাকি অচল হয়ে গেছে; এতে সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

হরিপ্রভা তাকেদা! প্রায় ভুলে যাওয়া এক অভিযাত্রীর নাম।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২২ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৩


১৯৪৩ সাল, চলছে মানব সভ্যতার ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। টোকিও শহর নিস্তব্ধ। যে কোন সময়ে বিমান আক্রমনের সাইরেন, বোমা হামলা। তার মাঝে মাথায় হেলমেট সহ এক বাঙালী... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×