somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভিমানী প্রয়াত মানূষটির শ্রদ্ধাঞ্জলীতে কিছুটা সময়

০৭ ই জুন, ২০১১ রাত ৮:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লাশবাহী গাড়ি পতাকা দিয়ে মোড়ানো।


শ্রদ্ধাঞ্জলী মঞ্চ


অন্তিম শয়ানে আজম খান


শ্রন্ধাঞ্জলী প্রকাশ সর্বস্তরের মানূষদের


লাইন এ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা শ্রদ্ধাঞ্জলীর জন্য সাধারন মানূষের।


সারিবদ্ধভাবে সবাই শেষ দেখা দেখে নিচ্ছেন পপ সম্রাট কে




বাবা-ছেলে ফুল হাতে শ্রদ্ধাঞ্জলী প্রকাশ করার জন্য অপেক্ষা লাইনে দাঁড়িয়ে




পপ সম্রাটের লাশবাহী গাড়িবহর সাথে সাধারন মানূষের হেটে চলা।


শহিদ মিনার থেকে এক প্রকার দৌড়ে দৌড়ে গেলাম বীর মুক্তিযোদ্ধা(গেরিলা) ও পপ সম্রাট আজম খান এর লাশ বাহী গাড়ির সাথে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উদ্দেশ্য। জানাজা পড়বো এই প্রবল ইচ্ছে থেকেই মনে ধারণ করা সে চেতনাভরা মানুষটির নিথর দেহটির সাথে আমি যেন আরও গতিময় হয়ে একটু হেটে, একটু দৌড়ে দৌড়ে চলছি। কেমন যেন হয়ে গিয়েছিলাম আমি! এমনিতেই অনেক গরম ছিল। অবাক করা ব্যাপার আমার কাছে মনেই হয়নি গরম এতটা। ঘেমে নেয়ে একাকার। এতটুকু ক্লান্তি বোধ করিনি। মনে হচ্ছিল যে মানুষটি এতটা অসাধারণ হয়েও সাধারণের কাতারেই থাকতেই পছন্দ করতেন। যে মানুষটির মনে এবং কণ্ঠে সারাটা বাংলাদেশ ঘুরে-ফিরে আসতো। তার মৃতদেহ এর সাথে সাথে কিছুক্ষণ নিজেকে সাথি করে। উদ্ভাসিত হই চেতনায়। বাসায় সবাই এক প্রকার অবাকই হলো। এমনিতেই আমি সকালে দেরিতে উঠি ঘুম থেকে। বাসায় সবাইকে বলে রেখেছিলাম শহিদ মিনার যাবো। কেউ যেন আমাকে জেগে তুলে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমি নিজেই নির্দিষ্ট সময়ের অনেক আগেই ঘুম থেকে উঠে দ্রুত তৈরি হয়ে নিলাম। এরপর তো দে ছুট শহীদ মিনার এর উদ্দেশ্যে। শহীদ মিনারে বাল্য বন্ধুর সাথে দেখা। ও আমার চেয়েও ক্রেজি বেশি ছিল। বোঝাই যাচ্ছিল যে ওর মন খুব খারাপ। ও গত রাতে অনেক কেঁদেছে। সারারাত ঘুমাতে পারে নি। সকাল হতে না হতেই শহীদ মিনারে হাজির হয়ে গিয়েছে। আমি বললাম- এতটা? ও যেন আমার কথায় মনক্ষুন্ন হলো। আমি আসলে ওর মনের ভাব টা একটু বেশিই বুঝতে চাওয়ার জন্য বলেছিলাম কথাটি। বন্ধুটির উত্তর- একজন আজম খান আমার কাছে অনেক কিছু। যার গান শুনতে শুনতে স্বপ্ন আর আশা বুকে ধারণ করতাম। তাকে শেষ একনজর দেখার জন্য এখানে আসাটাই শ্রেয় মনে করলাম। এর চেয়ে আমি সাধারণ আর কীইবা করতে পারি? মন তো চাচ্ছে অনেক কিছুই। আমি প্রকাশ করলাম না আমার আবেগ ওর কাছে। শুধু বললাম ঠিকই বলেছিস। এরকম হাজারও ভক্ত সাধারণ যারা আমাদের দুজনের চেয়েও ঢের বেশি আবেগি তাদের কে দেখতে থাকলাম আমরা।

বায়তুল মোকারম মসজিদের ভেতরে দাঁড়িয়ে আছি ওজু শেষে। এরই মধ্যে চোখ গেলো অনেকগুলো ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার ক্যামেরা দাঁড়িয়ে আছে একজনের দিকে তাক করে। সাংবাদিক গন সে মানুষটিকে একপ্রকার হাত ধরে টানাটানি করছেন। কাছাকাছি হলাম আরও সে দিকটায়। দেখি সাধারণ একটি পাঞ্জাবী পড়া তরুণ একটি ছেলেকে নিয়েই এতসব। সে আর কেউ নন প্রয়াত আজম খান এর ছেলে হৃদয় খান! কৌতূহল বশত দেখতে থাকলাম সে দৃশ্য। এক পর্যায়ে একজন সাংবাদিক বলছিলেন- আপনি না হয় একটি লাইন বলেন “ আমি দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই আমার বাবার জন্য”। হৃদয় খান বিনীত ভাবে বলছিল যে- আমি কিছুই বলবো না। কেউ একজন উনার হাত ধরে অনুরোধ করছিল তাদের নিজেদের স্বার্থে ( আমার কাছে মনে হলো)। এক প্রকার ছেলেমানুষির মতন আচরণ করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আবারও বলল আজম খান এর ছেলে- আমি কিছুই বলবো না। আমার ভালো লাগছে না। শেষ পর্যন্ত উনি সাক্ষাৎকার দেন নি। আমার কাছে মনে হলো অনেক অভিমান রয়েছে ছেলেটির বুকে। যে অভিমান কারণেই সে এই ব্যাপারে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে না। শেষ পর্যন্ত উনি কিছুই বলেন নি!
আমার কাছে মনে হলো আজম খানের মতনই অনেকটা ব্যাক্তিত্ববোধ সম্পন্ন হবে ছেলেটি। যে কিনা সস্তা মিডিয়ার প্রচারণায় বিরক্ত এবং হতাশ।

গুরুর ছেলে তো গুরুর মতোই হবে। আশা করি আর যাই হোক আজম খানকে নিয়ে সস্তা বাণিজ্যিক ভাবনাগুলো থেকে তার পরিবার যেন দূরে থাকে। ঠিক যেমন আমি দেখলাম ঘটনাটি। সাবাস হৃদয় খান। তুমি ঠিক কাজটিই করেছো। প্রকৃত চিকিৎসার ব্যয়ভার এর ব্যবস্থা যে মহান মানুষটির হয় নি ঠিকমত। যে মানুষটি নিজের আত্বসন্মান বিসর্জন দিয়ে আরেকজনের কাছে সহায়তা চান নি। সে মানুষটি এবং তার এই অসাধারণ পরিবারটির জন্য এই সাধারণের কাতারে থাকা আমার মতন একজন নগণ্য মানুষ। শুধু দোয়াই করে গেলাম মন থেকে।

আল্লাহ প্রয়াত আজম খান এর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত যেন করেন।
উনার পরিবারকে যেন আল্লাহ সবসময় ভালো রাখেন। সে দোয়াও মন থেকে করলাম।

৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×